Loading..

খবর-দার

২৯ জুলাই, ২০২১ ০৯:০৫ অপরাহ্ণ

নতুন জাতের ধানে কৃষকের মুখে হাসি যুগান্তর প্রতিবেদন, ভোলা

ভোলা জেলায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত নতুন ব্রি হাইব্রিড ধান-৭ জাতের আউশ ধান কাটা উপলক্ষে মাঠ দিবস পালন করা হয়েছে। নতুন জাতের এ ধানে কম খরচে বেশি উৎপাদন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি দেখা গেছে।

বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ ধান কাটা শুরু করে ভোলার কৃষি বিভাগ। ধান কাটার পর পরিসংখ্যানে দেখা যায়- প্রতি হেক্টরে সাত মেট্রিক টন ধান হয়েছে।

কৃষি বিভাগ জানায়, দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তাই গত এপ্রিল মাসে ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইয়ানুর রহমান বিপ্লব মোল্লার ‘সবুজ বাংলা কৃষি খামারে’ পরীক্ষামূলক ৮ হেক্টর জমিতে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের নতুন উদ্ভাবিত ব্রি হাইব্রিড ধান-৭ জাতের আউশ ধান চাষ করা হয়।

বীজ ফেলানো থেকে শুরু করে মাত্র ১১০ দিনের মাথায় এ ধান কাটা হয়। পরে পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতি হেক্টরে সাত মেট্রিক টন করে ধান হয়েছে। এ ধান উৎপাদনে বেশি সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা লাগে না বিধায় খরচও কম হয়। তাই এ ধান চাষ করে কম খরচে বেশি উৎপাদন করা সম্ভব। 

ধান চাষকারী সবুজ বাংলা কৃষি খামারের স্বত্বাধিকারী চেয়ারম্যান ইয়ানুর রহমান বিপ্লব বলেন, এ বছর আমার খামারের ১৫ একর জমিতে ব্রি হাইব্রিড ধান-৭ জাতের আউশ ধান রোপণ করেছি। আলহামদুলিল্লাহ আমন ধানের মতো আউশ ধানেও ভালো ফলন হয়েছে। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনাবৃষ্টির কারণে এ ধান উৎপাদনে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। তারপরও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন হওয়ায় আমি খুশি। তাই সব কৃষক এ উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদের পাশাপাশি আধুনিক কৃষিতে এগিয়ে আসলে একদিকে নিজেও লাভবান হবেন, অপরদিকে দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে। 

ভোলা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, এ বছরই নতুন ব্রি হাইব্রিড ধান-৭ জাতের আউশ ধান ভোলায় আবাদ করেছি। এ ধান রোপণের ১১০ দিনের মাথায় কর্তন করা হচ্ছে। আমাদের হিসেবে দেখা গেছে, প্রতি হেক্টরে সাত মেট্রিক টন করে ধান হয়েছে; যা বাজারে কাঁচা অবস্থায়ই ৭৫০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করতে পারছি। এতে প্রতি হেক্টরে ধান বিক্রি করে আয় হচ্ছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। আর আউশ মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ধান আবাদে খরচ হচ্ছে ৬৫ হাজার টাকা। আমাদের আগামী আউশ মৌসুমে এ ধানের জাতটি কৃষকদের মাঝে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু মো. এনায়েত উল্লাহ জানান, এবছর ভোলায় ৮৫ হাজার ১১ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সবুজ বাংলা কৃষি খামারের ১৫ একর জমিতে ব্রি হাইব্রিড ধান-৭ আবাদ করা হয়। ধান কর্তনের পর দেখা গেছে, প্রতি হেক্টরে সাত মেট্রিক টন কোনো কোনো জায়গায় এর চেয়ে বেশি ফলনও হয়েছে। আমরা সাধারণত আউশ ধান হেক্টর প্রতি ৩-৪ মেট্রিক টন ফলন পাই। কিন্তু নতুন জাতের এ ধানে সাত মেট্রিক টনের উপরে ফলন হয়েছে; যা আমাদের লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ প্রায়। আমরা আশাবাদী আগামী বছরে ৮৫ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ২০ শতাংশ জমিতে এ জাতের ধান আবাদ করব। এতে আমাদের ভোলায় ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২.৫ থেকে ৫.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

ধান কর্তন ও মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে টেলি-কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে টেলি-কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবির।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলার শ্যামপুর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল, কৃষি পরিসংখ্যান কর্মকর্তাসহ স্থানীয় কৃষকরা।