Loading..

শিক্ষায় অগ্রযাত্রা

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ

আদিবাসীদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা : অপেক্ষার শেষ কোথায় ?

ভূমিকা

মুরো দেজর সিজি আমি মুরোমুরিত্ থেই
বিন্ন্যে অলে পেক্কোনর লগে সমারে গীদ্ গেই।।

খুব সকালে যখন কোন স্কুলের পাশ দিয়ে যান অথবা কোন সময়ে যদি অনুরূপ কোন স্কুল দেখতে যান শুনতে পাবেন কচিকণ্ঠের এই কোরাসটি। আপাতদৃষ্টে খুব সাধারণ শব্দে সাজানো একটি ছড়াগান মনে হতে পারে এটিকে।

শব্দগুলো খুব সাধারণ হলেও কচিমনের শিশুদের হৃদয়ের ভেতর থেকে উঠে আসা এক একটি শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতিধ্বনি যেন অনুরনিত হয় এই ছড়াগানের এক একটি শব্দ আর সুরের মূর্ছনায়।

চাকমা শিশুদের গাওয়া এই গানে তাদের আত্মপরিচয়ের বর্ণনা উঠে এসেছে সাবলীলভাবে। অন্যদিকে আত্মপরিচয়ের সাথে গভীর দেশপ্রেমের বীজ বুননের প্রক্রিয়া এবং পরিবেশ ও প্রতিবেশের প্রতি মমতা সৃষ্টির প্রয়াস এই ছড়াগানের ব্যঞ্জনায় প্রতিধ্বনিত্ব হয়েছে।

অন্য একটি স্কুলে গেলে হয়তো শোনা যাবে-

চুং ফারিনাই চুং ফারিনাই
চুং ফারিনাই ওয়াইসা
বাখা বিসিংগ চুং সিঅ
চুং ফারিনাই ওয়াইসা

ডান হাতটি বাম বুকের উপর আড়াআড়িভাবে রেখে ত্রিপুরা শিশুরা যখন ‘উই শ্যাল ওভারকাম’ গানের এই ককবরক সংস্করণ গেয়ে উঠে, তখন সত্যি সত্যি বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে তারা একদিন পারবেই। কিন্তু সামগ্রিক বাস্তবতা আসলে তাদেরকে পারতে দেয় কি?

বলছিলাম মাতৃভাষায় পরিচালিত দু’টো প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিশুদের কথা। একটি চাঙমা ভাষায় পরিচালিত এবং অন্যটি ত্রিপুরা ভাষা ককবরকে পরিচালিত। লেখার সূচনার শেষের দিকে অকস্মাৎ একটি প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়ায় হয়তো আপনাদের মনে হঠাৎ একটি খটকা লেগে যেতে পারে।

কিন্তু আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রচলনের উদ্যোগ-এর বাস্তবতা আসলে তা-ই। অনেক সফলতা, উৎসাহ, উদ্দীপনা, অংশগ্রহণ, অর্জন, স্বপ্নপূরণ ইত্যাদির মতো উত্তাল এগিয়ে চলা পথের মাঝখানে অকস্মাৎ হোঁচট খায় যেন এসব উদ্যোগ।

গুপ্ত এসব ডুবোচরে হঠাৎ আটকে যাওয়া চলমান প্রক্রিয়ার তরীটিকে সেখান থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য হয়তো বড়ো কোন ক্রেইন বা উদ্ধার জাহাজের প্রয়োজন নেই।

তবুও যেন মাঝে মাঝে হোঁচট খেতে খেতে উদ্যোগগুলো ছোটখাটো ডুবোচরেই আটকে থাকে।

কেন একটি শিশুর তার নিজের মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করা দরকার- এই বিষয়ে নতুন করে আলোচনার কিছু নেই।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের আধুনিক গবেষণা বিজ্ঞান সবখানে এটি সর্বজন স্বীকৃত যে, ‘মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষায় হাতেখড়ি যে শিশুর হয়, সে অন্য যেকোন শিশু চেয়ে সামান্যতম ব্যবধানের জন্য হলেও এগিয়ে থাকে।’

মানুষের কয়েকটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম হল মানসম্মত মৌলিক শিক্ষাঅর্জন করা। কারণ মৌলিক শিক্ষার ভিত্তির উপরেই নির্ভর করে একটি শিশুর চিন্তার গতিপ্রকৃতি ও ভবিষ্যৎ শিক্ষার বুনিয়াদ।

আর একটি শিশুর মৌলিক শিক্ষার মূল সহায়ক শক্তি হল তার নিজের মাতৃভাষার মাধ্যমে শিখন- শেখানোর ব্যবস্থা। কেননা একটি শিশুরআজন্ম যে ভাষার সাথে পরিচয়, যে ভাষার মধ্য দিয়ে সে মাতাপিতা, আত্মীয় ও পরিজনবর্গের হৃদয়বৃত্তির অভিব্যক্তি উপলব্ধি করে, সেই ভাষা তার অস্থিমজ্জার সাথে মিশে থাকে।

প্রকৃতপক্ষে মাতৃভাষার মাধ্যমেই আমরা নিজেদের জীবনকে, কৃষ্টিকে ও চিন্তাধারাকে প্রসারিত করতে পারি এবং হৃদয়ের গভীরতম প্রদেশের শতমুখী ভাবধারাকে আমরা পরিস্ফুটন ঘটাতে পারি।

সুতরাং শিশুর মানসম্মত মৌলিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য মাতৃভাষাভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষা একটি অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। বলা বাহুল্য শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকে এ বিষয়ে একমত যে, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হলে তা সহজেই মানুষের হৃদয় জুড়ে থাকতে পারে; শিক্ষার্থীও শিক্ষা গ্রহণে আনন্দ খুঁজে পায়।

মাতৃভাষার মাধ্যমে গাঁথুনিটা খুব মজবুত করে দিতে পারলে যেকোন ভাষায় শিক্ষার্থী অতি সহজে পারদর্শিতা অর্জন করতে পারে। কঠোর সাধনা করেও যেক্ষেত্রে অন্য ভাষায় পুরোপুরি জ্ঞান লাভ করা যায় না, সে ক্ষেত্রে মাতৃভাষার মাধ্যমে সহজে হৃদয়ঙ্গম করা সহজ হয়।

বাংলাদেশে ৪৫ টির অধিক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী রয়েছে, যাঁদেরকে সরকারি দলিল, আইন, নীতি, ঘোষণা ও দাপ্তরিক নথিতে আদিবাসী, উপজাতি, নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠি, নৃ-গোষ্ঠী, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।

তিন পার্বত্য জেলা, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চল, বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা ও কক্সবাজার, বরগুনা, পটুয়াখালী, রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চল, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, বগুড়া, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, শেরপুর, জামালপুর, গাজীপুর, রাজবাড়ি, কুমিল্লা, চাঁদপুর ইত্যাদি অঞ্চলে এসব আদিবাসী জনগোষ্ঠির বসবাস।

প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ জনসংখ্যার এই আদিবাসী জাতিসমূহের প্রত্যেকের আলাদা ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে । তাঁদের সাক্ষরতার হার সঠিকভাবে জানা যায় না।

তবে সাম্প্রতিক জনগণনা জরিপ অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাক্ষরতার হার ৪৩.৯ শতাংশ, যা জাতীয় হার হতে ৭.৯ শতাংশ কম এবং চট্টগ্রাম বিভাগে হার থেকে ৮.৮ শতাংশ কম (জাতীয় হার ৫১.৮% এবং চট্টগ্রাম বিভাগের হার ৫২.৭%)।

 

মাতৃভাষায় শিক্ষার আইনগত ভিত্তি

আমাদের মহান সংবিধানে ‘শিক্ষা’-কে নাগরিকদের জীবন ধারনের মৌলিক উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে (অনুচ্ছেদ ১৫) এবং ‘শিক্ষা’-কে সার্বজনীন এবং নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে [অনুচ্ছেদ ১৭(ক)]।

এছাড়াও ‘সমাজের প্রয়োজনের সংগে শিক্ষাকে সংগতিপূর্ণ করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ’-এর কথাও মহান সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে [অনুচ্ছেদ ১৭(খ)]। আমাদের সংবিধান ‘ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদে বা জন্মস্থানের কারনে .. .. কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিকের কোন রকম অসমতা, বাধ্যবাধকতা বা শর্তের অধীন করা যাবে না বলে বিধিনিষেধ নির্ধারণ করে দিয়েছে [অনুচ্ছেদ ২৮(৩)] ।

সরকারী বিভিন্ন পরিকল্পনা ও কৌশলপত্রে প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক স্তরে আদিবাসী শিশুদের স্ব স্ব মাতৃভাষার মাধ্যমে গুণগত মৌলিক শিক্ষার অধিকার অর্জনেরনানা অভিপ্রায় আমরা দেখতে পাই। ১৯৯৭ সনে সম্পাদিত পাবর্ত্য চট্টগ্রাম চুক্তি, ১৯৯৭-এ ‘মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা’ [ধারা ৩৩(খ)(২)] দানের কথা বলা হয়েছে।

১৯৯৮ সনে গৃহীত রাঙ্গামাটি ঘোষনাপত্রেও মাতৃভাষার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত আদিবাসী শিশুদের শিক্ষাদানের বিষয় উল্লেখ রয়েছে (রাঙ্গামাটি ঘোষনাপত্র,১৯৯৮; শিক্ষা:৫৩)।

দারিদ্র বিমোচন কৌশলপত্রে (২০০৫) আদিবাসী ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য তাদের নিজস্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের সুযোগ সম্বলিত পাঠ্যসূচী প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে (চজঝচ ২০০৫, পৃষ্ঠা ১৫২-৫৩)।

দ্বিতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি’র অধীনে ‘ট্রাইবেল শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষার পরিস্থিতি বিশ্লেষন, কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা’ নামে একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

এ কর্ম পরিকল্পনায় আদিবাসী শিশুদের মধ্যে শিক্ষায় প্রবেশাধিকারের ক্রম-বৃদ্ধি, শিক্ষার মানের উন্নয়ন এবং তাদের মধ্যে শিক্ষার বিস্তরনের জন্য শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে তাদের স্ব স্ব মাতৃভাষার ব্যবহারের গুরুত্বকে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে।

পার্বত্য জনগোষ্ঠির শিশুরা যাতে নিশ্চিতভাবে শিক্ষা লাভ করতে পারে তার জন্য এটিই প্রথম সরকারী পরিকল্পনা, যেখানে- স্থানীয় ও আদিবাসী ভাষা জানা আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগ, নিয়োগকৃত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দান, প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাতৃভাষায় শিক্ষাদান, পাঠ্যসূচীতে আদিবাসী সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সংযুক্ত করা, বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা এবং নতুন বিদ্যালয় স্থাপন করা, স্কুল ব্যবস্থাপনায় আদিবাসী অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করা, স্কুলের পাঠক্রম তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণ করা ও স্থানীয় পরিস্থিতির সংগে মানানসই স্কুল পঞ্জিকা প্রচলন ।

২০১১ সালে গৃহিত এই কর্মসূচির তৃতীয় পর্যায়ের পরিকল্পনায়ও ‘জেন্ডার এন্ড ইনক্লুসিভ এডুকেশন একশন প্লান’ নামে প্রণীত বিশেষ পরিকল্পনায় আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সুনির্দ্দিষ্ট কিছু কর্মসূচী বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।

২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও নীতি হিসেবে আদিবাসীসহ সকল ক্ষুদ্রজাতিসত্তার ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো, আদিবাসী শিশুরা যাতে নিজেদের ভাষা(য়) শিখতে পারে সেজন্যে আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগ ও পাঠ্যপুস্তকের ব্যবস্থা করা এবং পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় আদিবাসী জনগোষ্ঠিকে সম্পৃক্ত করা, আদিবাসী এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা, প্রাথমিক স্তরে আদিবাসীসহ সকল জাতিসত্তার জন্যে স্ব স্ব মাতৃভাষা(য়) শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা, যেসব এলাকায় হালকা জনবসতি রয়েছে প্রয়োজন হলে সেসব এলাকার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্যে আবাসনের ব্যবস্থা করা এবং এলাকার জীবন-জীবিকা ও মৌসুম অনুসারে স্কুলপঞ্জিকা নির্ধারণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে।

ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অন্যতম কৌশল হিসেবে সুবিধাবঞ্চিত স্বল্প প্রাধিকারপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা প্রদানের কথা বলা হয়েছে, যার আওতায় বিদ্যমান কর্মসূচীগুলোকে পর্যালোচনা ও পূনর্বিন্যস্ত করে প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, উপজাতী, নারী ও শিশুদের মত স্বল্প প্রাধিকারপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীসমূহ যাতে সুবিধা বন্টনকালে অগ্রাধিকার পায় তার জন্য ‘সামাজিক নিরাপত্তাজাল কর্মসূচী’ গ্রহণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয় ।

 

মাতৃভাষায় শিক্ষার অগ্রগতি

অন্যান্য অনেক কারণের পাশাপাশি নিজস্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ না থাকায় আদিবাসী শিশুরা ব্যাপক হারে শিক্ষার কক্ষপথ থেকে ছিটকে পড়ে। বিশেষতঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের যে সমস্ত শিশুর মাতৃভাষা বাংলা নয়, তাদের বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার অন্যমত কারণ হিসেবে মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ না থাকা বা ভাষাগত সমস্যা অন্যতম হিসেবে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা ও কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠন তাদের নিজ নিজ প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রে নিজস্ব গন্ডিতে মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

তাদের কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে মাতৃভাষার মাধ্যমে সবার জন্য মানস্মত শিক্ষার জন্য জনসচেতনতা তৈরি, রাজনৈতিক এবং সরকারী বিভিন্ন নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য বিভিন্ন এডভোকেসী কার্যক্রম পরিচালনা, গবেষণা ও প্রকাশনা, মাতৃভাষাভিত্তিক (বহুভাষিক) প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও আঞ্চলিক দলিল বা আইন বা নীতিমালাসমূহ সংগ্রহ এবং সে বিষয়ে জনঅবহিতকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে।

উন্নয়ন সংস্থাগুলোর উদ্যোগে রাষ্ট্রের প্রাক-প্রাথমিক বা প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের অভিপ্রায়কে সামনে রেখে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে মাতৃভাষাভিত্তিক (বহুভাষিক) শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্ট ভাষাভাষি সমাজ ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পাঠক্রম তৈরি, প্রণীত পাঠক্রমের আলোকে উপকরণ তৈরি, শিক্ষক সহায়িকা তৈরি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, স্কুল স্থাপন, স্কুল ও শিখন কার্যক্রম পরিচালনা এবং শিক্ষা কার্যক্রম বা কোর্স শেষে নির্ধারিত প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন পরিমাপ বা পর্যালোচনা করা হয়ে তাকে। পাশাপাশি এ বিষেয়ে গবেষণা ও এডভোকেসি কার্যক্রম অব্যাহতভাবে পরিচালনা করা হয়।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও এনসিটিবি’র উদ্যোগে ২০১২ সাল থেকে মূলত মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষিক শিক্ষা (এরপর থেকে এমএলই হিসেবেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উল্লেখ করবো) কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ শুরু করে।

এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য সম্ভবত প্রথম সভা অনুষ্ঠিত ৩১ অক্টোবর ২০১২ তারিখে তৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব এম, এম, নিয়াজউদ্দিন-এর সভাপতিত্বে।

এই সভাতেই জনসংখ্যার পরিমাণ বিবেচনায় চাকমা, মারমা, গারো, সাঁওতাল, ত্রিপুরা ও সাদরি আদিবাসীদের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে এই কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয় এবং এই কার্যক্রম সার্বিকভাবে দেখাশোনা করার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন)এর সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জাতিগোষ্ঠির প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট সরকারী- বেসরকরী সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি হঠন করা হয়।

এই কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ৩ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে, যেখানে-

ক) আদিবাসী শিশুদের প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠ্য পুস্তক ও শিক্ষক নির্দেশিকা সম্পূর্ণ নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রণয়ন ও শিশুর ভর্তিযোগ্য বয়স ৫ বছর নির্ধারণ;
খ) মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের ক্ষেত্রে চাকমা ও মারমা নিজস্ব বর্ণমালা, গারো ও ত্রিপুরা রোমান বর্ণমালা এবং ওঁরাও-দের ক্ষেত্রে বাংলা বর্ণমালা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত (সাঁওতালদের ক্ষেত্রে বর্ণমালার ব্যাপারে জাতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানোনর জন্য অনুরোধ করা হয়);
গ) নির্দ্দিষ্ট কিছু উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিকে (পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আইসিডিপি প্রকল্পের পরিচালক, সেভ দ্যা চিলড্রেন, অক্সফাম ও গণসাক্ষরতা অভিযানের প্রতিনিধি) কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা;
ঘ) ইতোমধ্যে প্রণীত প্রাক প্রাথমিক শ্রেণীর কারিকুলাম ইত্যাদি আদিবাসীদেরনিজস্ব ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক কিনা পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনে সেগুলো সংশোধনের মাধ্যমে সমন্বয় করা ইত্যাদি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় অন্যান্য অগ্রগতির মধ্যে রয়েছে- শিক্ষক প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত কমিটি গঠন, টেকনিক্যাল কমিটি গঠন ও নিজ নিজ ভাষার লেখকদের সমন্বয়ে লেখক প্যানেল গঠন ইত্যাদি।

আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষার বিষয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের সম্মিলিত জোট হলো এমএলই ফোরাম।

সরকারি এই উদ্যোগে এমএলই ফোরামকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিভিন্ন পর্যায়ে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এমএলই ফোরাম তার সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে এই প্রক্রিয়ায় সরকারকে সহায়তা করে থাকে।

সরকারিভাবে বাস্তবায়িতব্য এই এমএলই কার্যক্রমে প্রাথমিকভাবে ৬টি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ভাষাগুলো হলো চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, সাঁওতাল, সাদরি (ওঁরাও ও অন্যান্য) ও গারো।

কিন্তু সাঁওতালরা তাঁদের বর্ণমালার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাতে না পারায় শেষ পর্যন্ত তাঁদের ভাষায় শিখন শেখানো উপকরণ প্রণয়ন প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়। তাই ১৪ জুলাই ২০১৩ তারিখে অনুষ্ঠিত এমএলই বিষয়ক সরকারের জাতীয় কমিটির সভায় আপাতত ৫টি ভাষায় উপকরণ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

দ্বিতীয় পর্যায়ে ম্রো, মণিপুরী (বিষ্ণুপ্রিয়া), মণিপুরী (মৈতৈ), তঞ্চঙ্গ্যা, খাসি ও বম; তৃতীয় পর্যায়ে কোচ, কুড়ুক (ওঁরাও), হাজং, রাখাইন, খুমি ও খ্যাং ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ভাষাগুলোও প্রাথমিক শিক্ষায় ব্যবহার করা হবে বলে আশা করা যায়।

আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু করার টার্গেট করা হয়েছিল, কিন্তু নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি।

এরপর ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে তা শুরু করার জন্য আবারও টার্গেট করা হয়। কিন্তু এবারও এই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। এখন আমাদের সামনে রয়েছে টার্গেট জানুয়ারি ২০১৬।

এবার কিন্তু আমাদের আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ২৬-২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে জাতীয়ভাবে আয়োজিত কর্মশালার মাধ্যমে ইতোমধ্যে এমএলই ব্রিজিং প্লান প্রণয়ন করা হয়েছে।

এ বছরের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়কালে কয়েক দফায় পাঁচ আদিবাসী ভাষার লেখক-গবেষকদের সমন্বয়ে গঠিত লেখক প্যানেলের মাধ্যমে প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ে শিখন শেখানো উপকরণ প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

এখন বাকি রয়েছে কেবল প্রণীত উপকরণসমূহের যথার্থতা যাচাই, উপকরণ প্রকাশ ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠে ছেড়ে দেওয়া বা স্কুল পর্যায়ে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা।

সংশ্লিষ্ট সকলে যদি সদিচ্ছা নিয়ে তাঁদের কর্মযজ্ঞ অব্যাহত রাখেন, তাহলে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন না হওয়ার কোন কারণ থাকার কথা নয়।

 

মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত পক্ষসমূহ

আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা পরিচালনার কাজে সরকারি বেসরকারি ও কমিউনিটি পর্যায়ের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ সম্পৃক্ত রয়েছে। আমি এই পর্যায়ে সেসব সম্পৃক্ত পক্ষগুলো সম্পর্কে কিছু তথ্য এখানে উপস্থাপন করবো, যেটি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি পূর্নাঙ্গ কোন তালিকা নয়।

আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য যেসব সরকারি কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, সেগুলো হলো-

ক) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও তার অধীনস্থ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড;
খ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরঅধীনস্থ স্পেশ্যাল এ্যাফেয়ার্স বিভাগ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্যাঞ্চলের অন্যান্য বিশেষায়িত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান- পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য জেলা পরিষদ- রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও বিশেষ ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, এবং
গ) অর্থ মন্ত্রণালয়, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও তাদের অধীনস্থ বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানসমূহ।

মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রমে নেতৃস্থানীয় কিছু নেটওয়ার্ক প্রথম থেকেই এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত রয়েছে। এসব নেটওয়ার্কেও মধ্যে- গণসাক্ষরতা অভিযান, এমএলই ফোরাম, ন্যাশনাল কোয়ালিশন ফর ইনডিজেনাস পিপলস (এনসিআইপি), বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ইত্যাদির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

যেসব ভাষা কমিটি তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষা উপকরণ প্রণয়নে স্বউদ্যোগে সম্পৃক্ত রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে চাকমা ভাষা কাউন্সিল ও চাঙমা একাডেমি, ককবরক রিসার্স ইনস্টিটিউট ও ককবর ভাষা কমিটি, মারমা ভাষা কমিটি ও মারমা ভাষা একাডেমি, তঞ্চঙ্গ্যা ভাষা কমিটি, ম্রো ভাষা কমিটি, বম ভাষা কমিটি.চাক ভাষা কমিটি, খুমি ভাষা কমিটি, নাংগ্রিমা গারো ল্যাংগুয়েজ কমিটি ইত্যাদির নাম উল্লেখ করা যায়।

সকলের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া, শিক্ষাক্রম ও উপকরণ একই রকম না হলেও যেসব সংস্থা মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে, তাদের মধ্যে আশ্রয়, জাবারাং কল্যাণ সমিতি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, সিপ্রাড, ব্র্যাক, মানুষের জন্যফাউন্ডেশন, সিডিএস, সেভ দ্যা চিলড্রেন, কারিতাস, এসআইএল, ইউনিসেফ, ইউনেস্কো, ইউএনডিপি, টংগ্যা, গ্রীণহিল, গ্রাউস, তৈমু, ইকো-ডেভেলপমেন্ট, বিএনকেএস, ম্রোচেট, ঢাকা আহসানিয়া মিশন, TWA,MAASUS, BNELC (Santal Education Centre) ইত্যাদির নাম আমরা বলতে পারি।

ভবিষ্যত করণীয়

– শিক্ষা বাজেটের সুনির্দ্দিষ্ট কিছু অংশ আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ রাখা জরুরি।

কারণ অনেক সময় বিভিন্ন আলোচনা ও সভা সেমিনারের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলো আর্থিক সংস্থান না থাকার কারণে এই উদ্যোগ ঝিমিয়ে পড়ার আশংকার কথা উল্লেখ করা হয়। তাই বাজেট অপ্রতুলতার অজুহাতে যেন এই বিশেষ উদ্যোগ থমকে না যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে।

– ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে প্রাথমিক স্তরে আদিবাসী ভাষারমাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক গঠিত বিভিন্ন কমিটি ও সাব-কমিটির কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

– জনঅংশগ্রহণের ভিত্তিতে আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ভৌগলিক অবস্থার আলোকে জাতীয়ভাবে গৃহিত আইন, নীতি ও কৌশলের সুপারিশগুলোকে “স্থানীয়করণ” বা স্থানীয় আকাংখার সাথে বাস্তবায়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা সেভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

– আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইন ও নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

– প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার জন্য শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় (অন্তত চুড়ান্তরণের পর্যায়ে) পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে।

– জাতীয়ভাবে একটি ভাষানীতি প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে বাংলা ভাষার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আদিবাসীদের মাতৃভাষার ব্যবহার ও এসব ভাষার উৎকর্ষ সাধনের জন্য করণীয় দিকগুলোও উল্লেখ থাকবে।

– আদিবাসী ভাষায় শিক্ষা চালু করার বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে ঐকমত্য সৃষ্টি তথা সরকার এবং বিভিন্ন দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে এগিয়ে আসতে হবে।

– জেলা পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গৃহিত প্রাথমিক শিক্ষা ও আদিবাসী ভাষা উন্নয়নের কার্যক্রম পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ কর্তৃক সমন্বয় সাধন করা। এ লক্ষ্যে পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহের নিজস্ব নীতিমালা তৈরী করতে হবে। সমতল অঞ্চলের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটগুলো এই ভূমিকা পালন করতে পারে।

– আদিবাসী ভাষায় শিক্ষা ব্যবস্থা বিষয়ে অব্যাহত গবেষণা পরিচালনার জন্য সরকার কর্তৃক প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা এবং সম্ভব হলে এই কার্য সম্পাদনের জন্য একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান/ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা।

– বিশেষায়িত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও মেধার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সাথে যৌথভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ।

– সরকারিভাবে শুরু করার ক্ষেত্রে কোন জটিলতা (আর্থিক, জনবল ইত্যাদি) থাকলে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থাকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের মাধ্যমে পাইলটিং শুরু করা।

—–

মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, নির্বাহী পরিচালক, জাবারাং কল্যাণ সমিতি

তথ্যসূত্র ও তথ্য বিশ্লেষণ:

– গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ-এর সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধনী); আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, অক্টোবর ২০১১।

– পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ১৯৯৭।

– The National Poverty Reduction Strategy Papers (PRSP) 2005.

– The Primary Education Development Plan II (PEDP II); Directorate of Primary Education, MOPME 2006.

– The Primary Education Development Plan II (PEDP II); Directorate of Primary Education, MOPME 2011.

– জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০।

– জাতীয় শিক্ষানীতিতে ‘মাতৃভাষা’ শিক্ষার কথা বলা হয়েছিল। বিভিন্ন সভা- সেমিনারে শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও ব্যক্তিবর্গ এটিকে এক ধরণের মুদ্রণ প্রমাদ বলে উল্লেখ করেছিলেন।

কিন্তু একই বানান (মাতৃভাষা শিক্ষা- ‘য়’ ছাড়া) আমরা শিক্ষা আইন (খসড়া) ২০১৩-তেও দেখি। পরে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সারা দেশের শিক্ষা বিষয়ে আন্দোলনকারী সংগঠন ও নেটওয়ার্কগুলো একযোগে এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সর্বশেষ পরিমার্জিত খসড়ায় (শিক্ষা আইন ২০১৩) ‘মাতৃভাষায় শিক্ষা’ বানানটি প্রতিস্থাপন করা হয়।

তাই এই আলোচনায় এই বানানটিই ব্যবহার করা হয়েছে। তবে জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে উদ্ধৃতির বেলায় তা বন্ধনীতে আবদ্ধ করেই ব্যবহার করা হয়েছে।

———–

গণসাক্ষরতা অভিযান-এর সাক্ষরতা বুলেটিন আগষ্ট ২০১৫ সংখ্যায় প্রকাশিত

Source : আদিবাসীদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা : অপেক্ষার শেষ কোথায় ?


আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি