সহকারী শিক্ষক
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০২:৪৪ অপরাহ্ণ
করোনার পৃথিবীতে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি
করোনার পৃথিবীতে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি
সঙ্গরোধ ও সামাজিক দূরত্ব ডেকে আনা করোনা পরিস্থিতিতে প্রকৃতি থেমে থাকেনি। শীতের ঝরা পাতা ফেলে নতুন পত্র, পুষ্প, পল্লবে নবসাজে সজ্জিত হয়েছে বাসন্তী আবহে। মানুষের চলাচল হ্রাস পাওয়ায় কমেছে দূষণ। বাতাস হয়েছে শুদ্ধতম। আকাশ আরও অনেক নীল। প্রকৃতি উপহার দিয়েছে পূর্ণতায় আচ্ছাদিত এক নিটোল বসন্ত।
জনমানুষের পদচারণা না থাকায় প্রকৃতি নিজের মতো বিকশিত হয়েছে কোনও প্রতিরোধ ছাড়াই। সৈকতের প্রলম্বিত ভূগোলে শৈবাল, লতা, গুল্ম ছড়িয়ে পড়েছে। বালুকা বেলায় নির্বিঘ্নে খেলা করেছে শামুক, ঝিনুক, কচ্ছপ। উপকূলের সুনীল জলে আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছে শুশুক, ডলফিন।
বনে বনে অবারিত সৌন্দর্যে জেগেছে প্রকৃতির প্রতিটি সদস্য। বৃক্ষের শাখায়, পাতায়, ফুলে, মুকুলে প্রাণের বন্যা। লতায়, ঘাসে, ঝোপঝাড়ে জীবনের নতুন স্পর্শ ।
দূষণমুক্ত অবারিত আকাশে শুধু নীলের মেলা আর পাখিদের কোলাহল। মানুষের অবিমিষ্যকামিতায় যেসব পাখি হারিয়ে গিয়েছিল, ফিরে আসছে তারাও। সঙ্গে নিয়ে আসছে একঝাঁক প্রজাপতি, পতঙ্গ, মথের উচ্ছ্বলতা।
শুধু প্রাচ্যের পৃথিবীতে নয়, প্রতীচ্যের ভূমিতটের নিরবতায় দেখা পাওয়া যাচ্ছে এক আদি ও অকৃত্রিম বসন্তের। ইউরোপকে ঘিরে রাখা সমুদ্র ও হ্রদগুলো এবং প্রসারিত কানন ও বনাঞ্চলে দৃশ্যমান হয় এক পরিপূর্ণ বসন্তের। করোনাভাইরাস আক্রান্ত পৃথিবীতে ঘরবন্দী মানুষ বিস্ময়ের চোখে দেখে এক সর্বাঙ্গসুন্দর বসন্ত ঋতু।
এতো অনাবিল, এতো পরিস্ফুট, এতো বিকশিত, কখনো না দেখা এমন পরিপূর্ণ বসন্ত ধীরে ধীরে অতিক্রান্ত হয় চরম নিঃসঙ্গতায়। স্মরণীয় এই বসন্তকে মনে হয় বড়ই অতৃপ্ত। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সংযোগ না হলে কিংবা উৎসবের আমেজ না মিশলে কোনো ঋতুই সফল হতে পারেনা। অরণ্যের বিশালতায় একজনও শকুন্তলা না থাকলে সুন্দর প্রকৃতিও প্রাণ পায় না। কোনো পথিক যদি পথ না হারায় সেই অরণ্যে, তাহলেও জীবন্ত হয়না প্রকৃতি।