সিনিয়র শিক্ষক
২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ
আব্বাস ইবনে ফিরনাস
আব্বাস ইবনে ফিরনাস
আব্বাস ইবনে ফিরনাস | |
---|---|
জন্ম | ৮১০ ইযন-রেন্ড ওন্ডা, আন্দালুস |
মৃত্যু | ৮৮৭ |
জাতীয়তা | আন্দালুসিয়ান |
জাতিভুক্ত | বার্বার |
আব্বাস ইবনে ফিরনাস (আরবী عباس بن فرناس) (৮১০-৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন বার্বার বংশদ্ভূত আন্দালুসিয় মুসলিম পলিমেথ বা বহুশাস্ত্রবিশারদ।[১][২] তার আসল নাম আব্বাস আবু আলকাসিম ইবনে ফিরনাস ইবনে ইরদাস আল তাকুরিনি। তিনি ছিলেন একজন আবিষ্কারক, প্রকৌশলী, উড্ডয়ন বিশারদ, চিকিৎসক, আরবি সাহিত্যের কবি এবং আন্দালুসিয় সুরকার।[২] তাকে বলা হয় বিমান এবং বিমানের পিতা।[৩][৪][৫] ইবনে ফিরনাস প্রথম মানব বহনকারী গ্লাইডার তৈরি করেছিলেন এবং দু'টি সফল উড়ানের চেষ্টা করেছিলেন।[৬][৭]
তিনি আন্দালুসের ইযন-রেন্ড ওন্ডায় (বর্তমান স্পেনের রন্ডা) জন্মগ্রহণ করেন এবং কর্ডোবা আমিরাতে বসবাস করতেন। উড্ডয়নের প্রচেষ্টার জন্য তিনি সমধিক পরিচিত।[৬][৭] চাঁদে ইবনে ফিরনাস গহ্বরটি ইবনে ফিরনাসের নামে নামকরণ করা হয়েছে।[৮]
কর্ম[সম্পাদনা]
ইবনে ফিরনাস আল-মাকাতা নামক জলঘড়ির নকশা করেন। এছাড়াও তিনি স্বচ্ছ কাচ নির্মাণের জন্য যন্ত্রের নকশাও প্রণয়ন করেন। তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানের জন্য প্ল্যানিস্ফিয়ার নামক যন্ত্র ও পাঠের উপযোগী লেন্স প্রস্তুত করেন। গ্রহ নক্ষত্রের ঘূর্ণন প্রদর্শনের জন্য কার্যকর মডেলও তিনি প্রস্তুত করেন। তার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হল পাথরের স্ফটিককে কাটার প্রক্রিয়া। তার এই আবিষ্কারের ফলে স্পেন কোয়ার্টজ কাটার জন্য মিশরের উপর নির্ভরশীলতা থেকে রেহাই পায়। ইতিপূর্বে স্পেন এই ব্যাপারে মিশরের উপর নিভরশীল ছিল।[৬][৭]
নিজের বাড়ির একটি কক্ষে নক্ষত্র, মেঘ,বজ্র, আলোকপাত এসব দেখার ব্যবস্থা করেন যা তার ভূগর্ভস্থ গবেষণাগারে যান্ত্রিক পদ্ধতির প্রয়োগের মাধ্যমে করা হয়েছিল।
উড্ডয়ন[সম্পাদনা]
আকাশে উড়ার প্রচেষ্টার জন্য তিনি অধিক পরিমাণে পরিচিত। বলা হয় তিনি একজোড়া পাখার মাধ্যমে আকাশে উড়েছিলেন। এই বিষয়ে একমাত্র মরোক্কান ইতিহাসবিদ আহমেদ মোহাম্মদ আলমাক্কারীর(আনুমানিক ১৫৭৮–১৬৩২) লেখায়। তিনি প্রায় সাত শতাব্দী পরে এই ঘটনা লিপিবদ্ধ করেন।[৯] আলমাক্কারীর লেখা অনুযায়ী:"তার অন্যান্য আগ্রহ উদ্দীপক পরীক্ষাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল, তিনি উড়ার চেষ্টা করেছিলেন। এজন্য তিনি নিজেকে পালকে আবৃত করে নেন এবং শরীরে একজোড়া পাখা যুক্ত করেন। এরপর উচুতে উঠে শুন্যে ঝাপিয়ে পড়েন। যেসব নির্ভরযোগ্য লেখক এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন তাদের মতে তিনি প্রায় পাখির মতই গ্রহণীয় মাত্রার দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম হন। উড্ডয়নের স্থানে অবতরণের সময় তিনি পিঠে মারাত্মকভাবে আঘাত পান। এর কারণ, পাখিরা অবতরণের সময় লেজের ব্যবহার করে যা তিনি করেননি।" [৭]
বলা হয় যে আলমাক্কারী তার ইতিহাসে এমন তথ্য লিখেছেন যার প্রথম দিককার সূত্রগুলো পাওয়া যায় না। কিন্তু ফিরনাসকে নিয়ে ৯ম শতকে লেখা কর্ডোবার আমির প্রথম মুহাম্মদের রাজকবি মুমিন ইবনে সাইদের একটি কবিতা পাওয়া যায়। এতে বলা হয়েছে : “তিনি ফিনিক্সের চেয়ে দ্রুত উড়েন যখন তিনি শকুনের পালকে আবৃত হন।”"[৯] তৎকালীন যুগের টিকে থাকে অন্যান্য সূত্রগুলোতে এ বিষয়ে উল্লেখ নেই।[১০]
ধারণা করা হয় যে তিনি ইবনে ফিরনাসের গ্লাইডারে উড়ার চেষ্টা একাদশ শতকে ইংল্যান্ডের ইলমার অব মালমেসবুরিকে অণুপ্রাণিত করে। তবে এই বক্তব্যকে সমর্থন করার মত কোনো প্রমাণ নেই।[৭]
আরমেন ফিরমান[সম্পাদনা]
আরমেন ফিরমানকে আব্বাস ইবন ফিরসাসের নামের ল্যাটিনরূপ বলে ধারণা করা হয়।[১১] ফিরনাস তার কাজের দ্বারা অণুপ্রাণিত হয়েছিলেন বলে কেউ কেউ মত প্রকাশ করেন।[৬]