Loading..

খবর-দার

১২ অক্টোবর, ২০২১ ০৪:৪৩ অপরাহ্ণ

পারমাণবিক শক্তির যুগে বাংলাদেশ

পারমাণবিক শক্তির যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল বা চুল্লি স্থাপনের কাজ উদ্বোধন করেছেন। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালুর বা কমিশনিং প্রক্রিয়ায় এ চুল্লি স্থাপন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। পরমাণু বিজ্ঞানীরা এ চুল্লিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের হার্ট বা হৃৎপিণ্ড বলে অভিহিত করে থাকেন। নির্মাণ কাজ শেষ হলে রূপপুর কেন্দ্রের দুটি ইউনিটে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা রয়েছে। রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের মাধ্যমে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল রূপপুর প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। দেশবাসী আশা করছে, শিডিউল অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই প্রকল্পের কাজ শেষে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। রূপপুর প্রকল্পে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ভিভিআর-প্রযুক্তির রিঅ্যাক্টরের দুটি ইউনিট তৈরি হবে। শিডিউল অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ইউনিট-১ এবং ২০২৪ সালে ইউনিট-২ চালু হওয়ার কথারয়েছে.

জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে রাশিয়ার সেরা কর্মকৌশল চর্চা, বহু বছরের অভিজ্ঞতা এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাকে কাজে লাগানো হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ ইউনিটের অ্যাকটিভ ও প্যাসিভ ব্যবস্থার অনন্য সংমিশ্রণ কেন্দ্রের নিরাপদ পরিচালনা নিশ্চিত করবে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পিত মাত্রার নিশ্চয়তা দেবে। আমরা আশা করছি, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেবল বাংলাদেশে জ্বালানি সরবরাহের সমস্যার সমাধানই করবে না, দেশবাসীর সার্বিক জীবনমানের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে প্রাথমিকভাবে১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। মহামারির মধ্যেও হাজার হাজার শ্রমিক দিনরাত সেখানে কাজ করছেন। বস্তুত এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশে ক্লিন এনার্জির মডেল হিসাবে বিবেচিত হবে, যা থেকে দীর্ঘমেয়াদে পাওয়া যাবে সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য ও মানসম্মত বিদ্যুৎ।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লির নিরাপত্তা নিয়ে সব সময় কিছুটা উদ্বেগ থেকেই যায়। এ বিষয়ক তথ্য যারা যত কম জানে, তাদের ভয় ততবেশি। কাজেই এ বিষয়ক বিস্তারিত তথ্য যাতে মানুষ জানতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। জাপানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনার পর এ ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, রাশিয়ার ভিভিআর ১২০০ মডেলের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনা রোধে পাঁচ স্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকৌশলগত দিকসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাজ বিদেশি দক্ষ কর্মীরাই করবেন। উল্লিখিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উচ্চতর প্রযুক্তিবিষয়ক কাজ আয়ত্তে আনার কাজটি বেশ কঠিন। এ কঠিন কাজে আমাদের দেশীয় প্রকৌশলীরা যাতে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজের মধ্য দিয়ে দেশে উচ্চতর প্রযুক্তি চর্চার নতুন পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এ ধরনের বড় বড় প্রকল্প আমাদের দেশীয় কর্মীরা সম্পন্ন করবেন, এমন দিনের অপেক্ষায় রইলাম আমরা।