Loading..

খবর-দার

১৯ অক্টোবর, ২০২১ ০৫:৪৫ অপরাহ্ণ

পাহাড়ে এখন জাম্বুরার বাজার

পাহাড়ি এলাকার আনাচে-কানাচে উৎপাদিত হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে জাম্বুরা। এ কারণে রাঙামাটির পাহাড়ি হাটে প্রচুর জাম্বুরা দেখা যাচ্ছে।

স্থানীয় ভাষায় এ ফলটি বহুল পরিচিত ‘কন্ডাল’ নামে। তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপকহারে চাষাবাদ হয়ে আসছে এটি। এখানে ফলন প্রচুর হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। ফলে রাঙামাটি জেলার ১০ উপজেলায় প্রায় পাহাড়ি এলাকায় জাম্বুরার আবাদ করছেন বহু মানুষ। জাম্বুরার যেমন প্রচুর উৎপাদন, তেমনি চাহিদাও অনেক। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাহাড়ের জাম্বুরা বাজারজাত হয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সাম্প্রতিক করোনা তাণ্ডপের পর জাম্বুরার চাহিদা আরও বেড়েছে বলে জানান স্থানীয় কৃষিবিদরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একসময় পার্বত্য অঞ্চলের উৎপাদিত জাম্বুরা বিক্রি করতে না পেরে পচে নষ্ট হয়ে যেত। এখন চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রচুর পরিমাণে বাজারে আসছে এটি। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এ ফলটি এখন করোনার কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা প্রতি জাম্বুরা বিক্রি হচ্ছে ১০-৩০ টাকায়। অর্থাৎ বড় আকারের জাম্বুরা সর্বোচ্চ ৩০ টাকায়, মাঝারি আকারের ২০ টাকায় এবং ছোট আকারের ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জাম্বুরা এখন চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

চাষিরা জানান, রাঙামাটির ১০ উপজেলাতেই জাম্বুরার আবাদ হলেও সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে— সদর, লংগদু, বরকল, বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর, জরাছড়ি, বিলাইছড়ি উপজেলায়। তুলনামূলকহারে এসব উপজেলায় উৎপাদন অন্য জায়গার চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে। জাম্বুরা চাষ লাভজনক হওয়ায় অন্যান্য ফলের পাশাপাশি মিশ্র ফল হিসেবে আবাদ হচ্ছে পাহাড়ে। পাহাড় থেকে পাইকারি দামে সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

বর্তমানে বাজারে আকার অনুযায়ী প্রতি হাজার জাম্বুরা পাইকারি পাঁচ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকায়। প্রতিদিন হাটবাজারে হাজার হাজার জাম্বুরা নিয়ে আসছেন চাষিরা। রাঙামাটির সদর উপজেলা, লংগদু, মাইনি, বরকল, জুরাছড়ি, সুবলং, মারিশ্যা নানিয়ারচর, বিলাইছড়িসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে রাঙামাটি শহরের সমতাঘাট এবং পৌরট্রাক টার্মিনালে প্রচুর জাম্বুরা নিয়ে আসছেন কৃষকরা। সেখান থেকেই পাইকারি দরে এ ফলটি সংগ্রহ করছেন ব্যবসায়ীরা।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃঞ্চ প্রসাদ মল্লিক বলেন, উপযুক্ত আবহাওয়ার কারণে এ বছর রাঙামাটি জেলায় জাম্বুরার ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। জেলায় জাম্বুরার আবাদ হয়েছে ১২১০ হেক্টর জমিতে। এর প্রতি হেক্টরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ টন।

তিনি জানান, রাঙামাটির সদর, নানিয়াচর, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই উপজেলায় জাম্বুরা উৎপাদন বেশি হয়েছে। করোনার কারণে এই ফলের চাহিদা বেড়েছে। সহজ শর্তে কৃষকদের ঋণসহ কৃষি সহায়তা দিতে পারলে এবং পাহাড়ে উৎপাদিত ফলমূল সংরক্ষণে হিমাগার স্থাপন করা গেলে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবেন।

কৃষকরা জানিয়েছেন, তারা নিজেদের উৎপাদিত জাম্বুরা অনেক পরিবহণ ব্যয়ে বাজারে নিয়ে এলেও সরাসরি ভালো দাম পাচ্ছেন না। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, জাম্বুরা ফল এবার আকারে কিছুটা ছোট হয়েছে। তাই একটু কম দামে নিতে হচ্ছে। এ ছাড়া পথে পথে পুলিশকে চাঁদা দিতে হয় বলে তাদের লাভের অংশ অনেকটা কমে যায়।