Loading..

প্রকাশনা

০৮ নভেম্বর, ২০২১ ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ

**মাশয়ারা_পরামর্শ_Meeting এর গুরুত্ব ও আদবের বয়ান**

দাওয়াত ও তাবলীগের মধ্যে মাশয়ারার গুরুত্ব অনেক বেশী। আল্লাহতা’লা এ সম্পর্কে কুরআন শরীফে বর্ণনা করেছেন,মাশয়ারা করে চলনেওয়ালারা আল্লাহ পাকের সবচেয়ে বেশী নৈকট্য হাসিল করেন। আর যারা মাশয়ারা মত চলে না তারা শয়তানের জালে পড়ে যায়। মাশয়ারার আদব বড় সুক্ষ্ম।  এই জন্য তারাই ঐসব আদবসমূহ পুরা করতে সক্ষম হবে যাদের মধ্যে দাওয়াতের ছিফাত পয়দা হয়েছে। ছিফাতগুলো নিম্নরুপঃ

১। মাশয়ারা করনেওয়ালারা আল্লাহ পাকের দিকে মুতাওয়াজ্জাহ হয়ে বসবেন যেন আল্লাহ পাক আমাদের মাশয়ারাকে শুনছেন। যদি আমরা দুজন মিলে মাশয়ারা করি তাহলে তৃতীয় হলেন আল্লাহতা’লা। যদি আমরা তিনজন হই তবে চতুর্থ হলেন আল্লাহতা’লা। ইহায় আল্লাহ কুরআন শরীফে বর্ণনা করেছেন। “অর্থাৎ আপনি কী  ভেবে দেখেননি যে, নভমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, আল্লাহতা’লা তা জানেন। তিন ব্যাক্তির এমন কোন পরামর্শ হয়না, যাতে তিনি চতুর্থ না থাকেন এবং পাঁচ জনেরও হয়না , যাতে তিনি ষষ্ঠ না থাকেন। এতদপেক্ষা কম হোক বা বেশী হোক, তারা যেখানেই থাকুক না কেন তিনি তাদের সাথে আছেন। তারা যা করে, তিনি কেয়ামতের দিন তাদেরকে তা জানিয়ে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।“-আল মুজাদালাহ-৭

২। আমাদের মাশয়ারা করনেওয়ালাদের দিলে আপোষে মহব্বত হবে, যেহেতু হাদিসে কুদছীতে আছে- “আপোষে মহব্বতকারীদের জন্য আমার মহব্বত ওয়াজিব করে নিলাম।

৩। আপোষে এমন মনকষাকষি না হয় যে উভয়ের দিলের মধ্যে এখতেলাফ হয়ে যায় এবং দিলের দিক দিয়ে একে অপরকে ঘৃণা করে।

৪। কেউ কাহারও উপর অসন্তুষ্ট এবং রাগ হবে না। নতুবা আলাহতা'লার রহমত হতে বঞ্চিত হয়ে যাবে এবং ঈমান দূর্বল হয়ে পড়বে । হযরত মাওলানা ইলিয়াস (রঃ) বলতেনঃ

কাম করনেওয়ালাদের উপর আমার দু’টি ভয়- “নিজের মধ্যে ছয় নম্বরের গুণকে পয়দা না করা এবং শুধুমাত্র জামাত বের করতে থাকা’, ফলে নিজেও ছওয়াব থেকে বঞ্চিত হতে থাকবে এবং ঈমান ও দুর্বল হতে থাকবে । নিজের মধ্যে ছয় নম্বরের হাকিকত পয়দা করা জরুরী । অর্থাৎ যাতে কলেমায়ে তাওহীদের মেহনতের দ্বারা নিজের ঈমান বাতে থাকে। নিজের নামাজের মধ্যে খুশু ও খুজু পয়দা হতে থাকে। নিজের মধ্যে হালের হুকুম পুরা করার জজবা পয়দা হতে থাকে এবং জিকিরের দ্বারা আল্লাহ পাকের নৈকট্য হাছিল হতে থাকে । একে অপরের প্রতি একরাম এবং হক আদায় করার ফিকির বাড়তে থাকে এবং বে-একরামী থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে থাকে। নিজের কারনে অন্য কাহারও দিলে কষ্ট না হয় । এবং আমাদের মাশওয়ারা আল্লাহতা'লার দরবারে কবুল হচ্ছে কিনা এ সম্পর্কে সর্বদা ভীত থাকা ।"

মাশওয়ার তরিকা ও করার নিয়মঃ

১। কেহ নিজের রায়কে একীনের সাথে সহি না ভাবে । নতুবা এটাই প্রমাণিত হবে যে, আল্লাহতা'লার পক্ষ থেকে আমার উপর সহি রায়ের ফয়জান হচ্ছে।। কেননা এই মোকাম সবার জন্য নয় ।

২। কেহ নিজের রায়ের উপর এছরার করবেনা এটার দ্বারা অহংকার প্রকাশ পাবে এবং নফস জয়ী হবে। শয়তান তাহলে মাশওয়ারা ওয়ালাদেরকে বিচ্ছেদ ঘটাবে ও আপোষে শত্রুতার সৃষ্টি করাবে।

৩। কোন মাশওয়ারা দেনেওয়ালা অন্যের রায়কে প্রত্যাখ্যান করবেনা এতে ঐ ব্যক্তি অপমানিত হয় বরং অন্যের রায়কে এই মনে করবে যে, হতে পারে এর মধ্যে খায়ের আছে । হার একরাম বজায় রেখে নিজের রায় পেশ করবেন । এটাই হল আল্লাহ তা’লা কে রাজী করার উপায় ।।

৪ । মুখে মিষ্টি ও দিলকে নরম রাখবে। আল্লাহতা'লা যেরূপ হুযুর (সঃ) এর ছিফাত বয়ান করেছেন এবং একটি জিনিসের প্রতি শতর্ক করেছেন যাহা আমাদের জন্য বড় শিক্ষামূলক । আল্লাহতা'লা হুযুর (সঃ) কে নরম বানিয়েছেন, যদি তিনি কটুকথা ও শক্ত দিল ওয়ালা হতেন, তবে তিনি নবী হওয়া সত্ত্বেও এবং সমস্ত ছিফাতের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও মানুষ হুযুর (সঃ) এর সাথে জোড়তেন না। বরং আলাদা হয়ে যেতো। এটা আখলাখের উচ্চ দরজার ছিফাত । যাহার মধ্যে উক্ত ছিফাত এসে যাবে সেই ব্যক্তি আল্লাহতালার প্রিয় বান্দাহ হয়ে যাবেন। উম্মত তার সাথে জোড়তে থাকবে এবং তার মধ্যে খেলাফতের ছিফাত হাছিল হবে। অর্থাঃ মানুষের দিলের মধ্যে তার খেলাফত হবে । সুতরাং মাশওয়ারা সূক্ষ আমল। এর দ্বারাই দুনিয়াতে দাওয়াত ছড়াবে এবং দায়ীর দরজা কায়েম হবে। দুনিয়াতে দাওয়াত উম্মতের মধ্যে কায়েম না হওয়ার কারনে শয়তান উম্মতের মধ্যে বিভিন্ন দল ও কওমী জবাব পয়দা করে দিয়েছে। আদল ও ইনসাফকে শেষ করে দিয়েছে। বাতেলকে জয় করে দিয়েছে। হক্বওয়ালাদের বাতেলদের অনুগত করে দিয়েছে। এই জন্য দাওয়াতকে সর্বপ্রথম জিন্দা করতে হবে। এবং প্রত্যেক মুসলমানকে তার জিন্দেগীর উদ্দেশ্য অর্থাৎ দাওয়াতের উপর আনতে হবে এবং প্রত্যেককেই দায়ী বানাতে হবে, যেন তার গোটা জীবন কুরআন ও হাদিসের বাতানো তরিকার উপর এসে যায়। তবে আল্লাহতা'লার তরফ থেকে রহমত, বরকত, দিলের শান্তি এবং মদদ ও সাহায্যের দরজাসমূহ খুলে যাবে এবং আল্লাহতা'লার গায়েবী নেজাম পক্ষে হয়ে যাবে। এই ব্যক্তি উভয় জাহানে কামিয়াব হবে ।।

আল্লাহতা'লা কুরআন শরীফে স্বীয় নবী (সঃ) এর শানে একটি আয়াত নাজেল করেনঃ

(আপনি সাহাবায়ে কেরামদের সাথে পরামর্শ করুন -আল ইমরান-১৫৯)

পরে অন্য আয়াত নাজিল করেন

(যারা তাদের পালনকর্তার আদেশ মান্য করে এবং নামাজ কায়েম করে, পারস্পরিক পরামর্শক্রমে কাজ করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। আশ-শুরা-৩৮)

কিয়ামত পর্যন্ত আনেওয়ালা উম্মত মাশওয়ারার সাথে চলবে তবে সঠিক পথে থাকবে । এজন্য বদরে খাব্বাব বিন মুনজার (রাঃ) এর রায়কে জিবরাইল (আঃ) এর দ্বারা সহি প্রমাণ করেছেন । বদরের কয়েদীদের ব্যাপারে হযরত ওমর (রাঃ) এর রায় মোতাবেক আয়াত নাজিল করেছেন এবং হুযুর (সঃ) অহুদের যুদ্ধে নওজোয়ানদের রায়কে কবুল করে নিয়েছেন এবং আল্লাহতা'লা উহাকে কোন ভুল বাতান নাই। এটা আমাদের জন্য উছুল কায়েম করেছেন। যখনই এই উছুল আমাদের মধ্যে জিন্দা হয়ে যাবে, তখন উম্মতে মোছলেমার মধ্যে ঈমান ও ইসলামের জজবা পুরাপুরি এসে যাবে এবং তারা বাতেলদের উপর জয় হবে। হযরত মাওলানা ইউসুফ সাহেব (রঃ) ও এরকমই ফরমায়েছেন। হয়তো আহলে বাতেলকে হকের দিকে ফেরাবেন এবং যারা হক্কের দিকে ফিরবেনা তাদেরকে আপোষে টকরাও পয়দা করে ছিন্ন-বিছিন্ন করে দিবেন । অথবা মুসলমানদের দ্বারা হারিয়ে দিবেন অথবা আপোষের মধ্যে লাগিয়ে দিবেন । সম্ভবতঃ এই আয়াতটির ইঙ্গিত এদিকেই

(বরং আমি সত্যকে মিথ্যা উপর নিক্ষেপ করি; অতঃপর সত্য মিথ্যার মস্তক চূর্ণ-বিচুর্ণ করে দেয়; অতঃপর মিথ্যা তৎক্ষণ নিশ্চিত হয়ে যায়। তোমরা যা বলছো তোমাদের জন্য তা দুর্ভেদ্য।-আম্বিয়া-১৮)

 প্রথমে দাওয়াত ওয়ালারা মোজাহেদার মধ্যে যাবে এবং আল্লাহতা’লা পরীক্ষা নিবেন। যাহা এই আয়াতে ফরমান-

(এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব । কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সংবাদ দাও ছবরকারিদের।-বাকারা-১৫৫)

এবং সর্বশেষ ফরমান-

(তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে, সে সমান নয়, এরূপ লোকদের মর্যাদা বড় তাদের অপেক্ষা, যারা পরে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে। তবে আল্লাহ্ উভয়কে কল্যাণের ওয়াদা দিয়েছেন।-হাদিদ-১০

মোজাহেদার পর খোশখবরীর ওয়াদা যে, যত জান ও মালের এবং নিজের দুনিয়াবী তাকাজার কুরবানী এমন ভাবে দিতে থাকবে যে, নিজের জান ও মাল আল্লাহর রাস্তায় বেশী বেশী লাগে এবং নিজের দুনিয়াবী তাকাজা ভঙ্গ হয় এবং দিল ও দেমাগ আল্লাহতালার দ্বীনের মধ্যে লাগে। তবে ছাবেকীনদের (অগ্রগামী) মধ্যে হবে এবং তাদের সাথে চলনেওয়ালারা আসহাবুল ইয়ামীন (ডানদিক ওয়ালা) দের মধ্যে হবে। আর এরা উভয়ই হবে কামিয়াৰ । তারপর আল্লাহতালা একটি আয়াতে মোজাহিদীনদের দু’টি দরজা কায়েম করেছেন । কখনো মক্কা বিজয়ের পরের ঈমান ওয়ালাদের দরজা আগের ঈমানওয়ালাদের বরাবর হতে পারে না। কারণ মক্কা বিজয়ের পর গণীমতের মাল ব্যাপক আসা আরম্ভ হলো এবং জয়ের আসা কায়েম হয়ে গেল ।

 


হযরত মাওলানা সাঈদ আহম্মদ খান ছাহেব ১৯৯৫ইং সনে হযরত জী (রহঃ) এর আখেরী হজ্জের সফরে এরশাদাত মদিনা মনোয়ারায় হযরতজী (রহঃ) এর কাছে লিখেন । হযরতজী (রহঃ) পড়ার পর উনার ছফর সাথীদের পড়ে শুনানো হয় ।

 ‘Shikkhok Batayon’.

 Profile

ppt content:

https://www.teachers.gov.bd/content/details/1161223

Video content:  https://www.teachers.gov.bd/content/details/1153040

Blog:

https://www.teachers.gov.bd/blog-details/627044

Publication:

https://www.teachers.gov.bd/content/details/1134641


আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি