Loading..

খবর-দার

১১ নভেম্বর, ২০২১ ০৫:৩৯ অপরাহ্ণ

রোহিঙ্গা ইস্যু নিরাপত্তা পরিষদে নিতে ফ্রান্সের প্রতি আহ্বান বাংলাদেশের

রোহিঙ্গা ইস্যু নিরাপত্তা পরিষদে নিতে ফ্রান্সের প্রতি আহ্বান বাংলাদেশের

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ফ্রান্স জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ হওয়ায় এই পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ফ্রান্সের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। 

বুধবার প্যারিসে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, ফ্রান্সের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনা চলাকালে এই আহ্বান জানানো হয়। খবর বাসসের

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে ফ্রান্স আশ্বাস দিয়ে বলেছে, তারা রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের পাশে থাকবে।


ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী জিন কাস্টেক্সসহ উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার আলোচনা চলাকালে ফ্রান্সের নেতাদের উদ্ধৃতি দিয়ে মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানে না পৌঁছানো পর্যন্ত আমরা আন্তরিকভাবে বাংলাদেশের পাশে থাকবো।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে পাঁচদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে এখন ফ্রান্সে অবস্থান করছেন।

মোমেন বলেন, ফ্রান্সের সব নেতার সঙ্গে বিশেষ করে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক চলাকালে রোহিঙ্গা ইস্যুর ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফ্রান্সের নেতাদের জানানো হয়, বাংলাদেশ এই সংকটের সমাধানে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা দ্বি-পাক্ষিক, ত্রি-পাক্ষিক ও বহুপাক্ষিকভাবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। এমনকি আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও (আইসিটি) গিয়েছি।

তিনি বলেন, মিয়ানমার এই সমস্যা সৃষ্টি করেছে এবং এর সমাধানও তাদের হাতে রয়েছে।

মিয়ানমারের সাম্প্রতিক সামরিক অভ্যুত্থান ইস্যুর ব্যাপারে তিনি বলেন, এই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ মিয়ানমারের সামরিক জান্তা শাসকদের সঙ্গে সরাসরি কোনো আলোচনা করেনি।

মোমেন বলেন, আমরা ফ্রান্সের নেতাদের বলেছি, পশ্চিমা বিশ্ব মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু তারা মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি বন্ধ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ফ্রান্সের প্রশ্ন, সামরিক সরকার চলাকালে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্য সংলাপের ব্যাপারে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে কি-না।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি যে, ১৯৭০ ও ১৯৯০ এর দশকে মিয়ানমারে সামরিক সরকার ছিল। কিন্তু ওই সময় তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করেছে।’

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৯২ সালে প্রায় ২ লাখ ৫৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে এবং তাদের মধ্যে ২ লাখ ৩৬ হাজার জনকে সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে ফেরত পাঠানো হয় এবং ১৯৭০’র দশকেও একই কাজ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ফ্রান্সকে বলেছি, গত চার বছর ধরে দেশটির রাখাইন রাজ্যে কোনো সংঘাত ঘটেনি। এখানে কোনো সহিংসতা হয়নি। কাজেই, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর এখন উপযুক্ত সময়।’

মোমেন আরও বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত আছে।

তিনি বলেন, ‘তারা বলেছে, তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। মর্যাদা সহকারে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত আসার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির ব্যাপারেও তারা রাজি রয়েছে। তবে তারা কোনো কিছু বাস্তবায়ন করছে না। আমরা আমাদের কষ্টের কথা বলেছি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফ্রান্সের নেতারা বাংলাদেশের কাছে জানতে চেয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যুর ব্যাপারে দ্য আসোসিয়েশন অব সাউথওয়েস্ট এশিয়ান নেশনসকে (আসিয়ান) কিছু জানানো হয়েছে কি-না।

তিনি বলেন,‘আমরা উত্তরে বলেছি-অবশ্যই, আমরা আসিয়ান’কে জানিয়েছি।  ফ্রান্স বলেছে, তারা আসিয়ানের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা আসিয়ানকে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।’

মোমেন বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এক্ষেত্রে আসিয়ানের ধীর গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং সংস্থাটি কোনো সদস্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কিছু বলতে পারে না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ফ্রান্সের নেতাদের পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন। সূত্র,১১ নভেম্বর,সমকাল।