Loading..

প্রকাশনা

১৫ নভেম্বর, ২০২১ ০৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ

মোজকারা_বাদ ফজর, শনিবার, 2৪/০৬/১৮ ইং বাংলা ওয়ালী মসজিদ

নবির কাজে বাধা সৃষ্টি করার জন্য কাফেররা দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতো

হযরতজী মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ ছাহেব কান্ধলভী দামাত বারাকাতুহুম

বাদ ফজর, শনিবার, 2৪/০৬/১৮ ইং বাংলা ওয়ালী মসজিদ

বস্তি হাযরত নিজামুদ্দিন মার্কাজ, দিল্লী, ভারত।

 


বলা হতো, এখন তো এ জিনিস নেই, এখন তো সেই ব্যাপার নেই। এখন তো সেই লোক নেই। এখন তো সেই ব্যক্তিত্ব ও বুযুর্গ আর নেই যার উসিলায় তোমাদের মদদ করা হয়েছিল । মোনাফিকরা ঈমানদারদেরকে আল্লাহর মদদ ও নুসরত থেকে নিরাশ করার জন্য সর্বপ্রথম এই হাতিয়ার অবলম্বন করেছিল । যাতে করে তারা নিরাশ হয়ে কমজোর হয়ে পড়েন। এসব কথা তখন সব জায়গায় প্রচার করা হয়েছিল ।“রাসুলুল্লাহ সা: থাকা অবস্থায় যে মদদ ও নুসরত এদেরকে করা হয়েছিল এখন আর তা করা হবেনা (নাউজুবিল্লাহ)। যেই মদদ মুহাম্মদ সা: থাকা অবস্থায় হয়েছিল তা এখন আর হবেনা”। নিরাশায় যেন তাদের কদম পিছলে যায় । একদিকে তো মদদ না হওয়া বুঝিয়েছে। আরেকদিকে দুশমনদের সংখ্যার আধিক্যতা এবং আকছারিয়ত (সংখ্যাগরিষ্ঠতা) ও তাদের শক্তি দেখিয়েছে । অথচ আল্লাহপাক কোরআন শরীফে ওয়াদা করেছেন, .’ইন্না’ লানাংছুরু রুসুলানা…’ আমি যেভাবে মদদ করবো নবিদের সেভাবে মদদ করবো কেয়ামত পর্যন্ত ঈমানদারদের জন্য ।

الحمد لله نحمده وسويته و سوره وتؤمن به ونتوكل عليه وتعود بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا من يهده الله فلا مضل له ومن يضله ق های له ونشهد أن لا إله إلا الله وحده لاشريك له وأشهد أن سيدنا و بینا ومولانا محمدا عبده ورسوله صلى الله تعالی عليه وعلى اله وصحبه و بارك وسلم تسليما كثرا كرا و اما بعده او پالله من الشيطان الرحیم بسم الله الرحمن الرحيم و إن تنصروا الله ينصرم ویت اقدام کم و وقال الله سبحانه وتعالى وما ارسلنا من رسول إلا إيطاع بإذن الل ) وقال عليه الصلاة والسلام المؤمنون هيون ص رو استئاخ أو كما قال عليه الصلاة والسلام ليون كالحمل الآنفوان ود القاد وان أبي على

মেরে মুহতারাম দোস্ত বুযুর্গ আর আজিজো!

আল্লাহ রাবুল ইজ্জত দীনের মেহনত করনেওয়ালাদের সাথে নুসরতের ওয়াদা বড় তাকিদের সাথে করেছেন। আর এই তাকিদ এজন্য করেছেন যেন এই কাজ করার সময় আনেওয়ালা হালাত তাদেরকে বিচলিত না করে। আল্লাহপাকের মদদ ও নুসরতের আশা করা থেকে তাদেরকে নিরাশ না করে। কেননা আল্লাহ রব্বল ইজ্জত নুছরতের ওয়াদা অনেক বেশী বেশী করেছেন। কেননা পা তখন পিছলে যায় যখন আল্লাহপাকের মদদ ও নুছরতের ওয়াদার উপরে একিন টলমলে ও তাতে দুর্বলতা পয়দা হয়। অন্তরে আল্লাহর ওয়াদার উপর সন্দেহ এ কাজের থেকে বসিয়ে দেয়। সর্বপ্রথম মোনাফিকরা ঈমানদারদেরকে দাওয়াতের কাজের থেকে হটানোর জন্য যেই অস্ত্র ব্যবহার করেছিল এবং সাহাবায়ে কেরামকে দাওয়াতের কাজের থেকে আলাদা করার জন্য সর্বপ্রথম যেই হাতিয়ার ব্যবহার করেছিল তা হলো, তাদেরকে বলা হয়েছিল- যেই কাজ আগে ছিল সেটা এখন নেই। আর নুসরতের যেই আসবাব আগে ছিল এখন সেই আসবাব আর নেই। সুতরাং মুহাম্মদ সা: থাকা অবস্থায় তোমাদের যেই মদদ করা হতো সেই মদদ এখন আর তোমাদের করা হবেনা।

মোনাফিকরা কৌশলে হিম্মত কমিয়ে দিয়েছিল। নুসরত আর মদদকে এমন জিনিসের সাথে মওকুফ করে দিয়েছিল- যেটা করার সাহস করা আর মানুষের সাধ্যের ভেতরে ছিলনা। কথা একটু ধ্যানের সাথে শুনতে হবে। বলা হতো, এখন তো ঐ জিনিস নেই, এখন তো সেই ব্যাপার নেই। এখন তো সেই লোক নেই। এখন তো সেই ব্যক্তিত্ব ও বুযুর্গ আর নেই যার উসিলায় তোমাদের মদদ করা হয়েছিল।

মোনাফিকরা ঈমানদারদেরকে আল্লাহর মদদ ও নুসরত থেকে নিরাশ করার জন্য সর্বপ্রথম এই হাতিয়ার অবলম্বন করেছিল। যাতে করে তারা নিরাশ হয়ে কমজোর হয়ে পড়েন। এসব কথা তখন সব জায়গায় প্রচার করা হয়েছিল, রাসুলুল্লাহ সা: থাকা অবস্থায় যে মদদ ও নুসরত এঁদেরকে করা হয়েছিল এখন আর তা করা হবেনা। যেই মদদ মুহাম্মদ সা: থাকা অবস্থায় হয়েছিল তা এখন আর হবেনা। নিরাশায় যেন তাদের কদম পিছলে যায়।

একদিকে তো মদদ না হওয়া বুঝিয়েছে। আরেকদিকে দুশমনদের সংখ্যার আধিক্যতা এবং আকছারিয়ত (সংখ্যাগরিষ্ঠতা) ও তাদের শক্তি দেখিয়েছে। অথচ আল্লাহপাক কোরআন শরীফে ওয়াদা করেছেন, ৪০_৫১ (গাফির) ’ইন্না’ লানাংছুরু রুসুলানা…’ إِنّا لَنَنصُرُ رُسُلَنا وَالَّذينَ آمَنوا فِي الحَياةِ الدُّنيا وَيَومَ يَقومُ الأَشهادُ আমি যেভাবে মদদ করবো নবিদের সেভাবে মদদ করবো কেয়ামত পর্যন্ত ঈমানদারদের জন্য । ‘ওয়া কাজালিকা হাক্কান আলাইনা নুংজিল মু’মিনিন’ যেভাবে ঈমান ওয়ালাদের সাথে নাজাতের ওয়াদা সেভাবে ঈমান ওয়ালাদের সাথে নুসরতের ওয়াদা ।‘ওয়া কাজালিকা হাক্কান আলাইনা’ নুংজিল মু’মিনিন’,আমি সেভাবে মু’মিনদের সাথে ওয়াদা করেছি যেভাবে নবিদের সাথে ওয়াদা করেছি।

বহুত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেন হালাত আর মুশকিলাত ও দুশমনদের আধিক্যতা মু’মিনদের নিরাশ না করে। অপরদিকে আল্লাহর দ্বীন ও দাওয়াতের মেহনতকে বাধাগ্রস্থ করতে মুশরিকদের বিভিন্ন দেশে দেশে ছফর ও দৌড়াদৌড়ি করা মু’মিনদের ধোকায় না ফেলে। হুজুর সা: এর দাওয়াতের মেহনতকে বন্ধ করার জন্য কাফেররা দেশে দেশে সাক্ষাৎ করতে যেত। বাদশাহদেরকে বড় বড় উপঢৌকন পেশ করতো। যাতে করে ওখানকার বাদশাহগণ কাফেরদের সঙ্গ দেয়। কুফর ও নেফাকের সাহায্য করে। যেন সাহাবায়ে কেরামের মেহনত বন্ধ হয়ে যায়।

হুজর সা: এর ফিকির ছিল আমার কাজের কি হবে। আমি চাই বাদশাহদের পর্যন্ত আমার দাওয়াত পৌঁছে। কিন্তু এরা দেশে দেশে গিয়ে আমার কাজের খেলাফ ষড়যন্ত্র করে। এখন কাজের কি হবে? বর্তমানেও যারা কাজকে ছেড়ে দেয়। রোকাওট (প্রতিবন্ধকতা) সৃষ্টিকারীদেরকে রোকাওট থেকে ফিরানোর বাহানায় কাজ ছেড়ে দেয়। বলে, ভাই! কাজ তো পরে করা যাবে এই মুহুর্তে কাজের ভেতরে ঝামেলা হয়ে গেছে এটা আগে সমাধান করে নিই। হযরতজী ইলিয়াস রহ: ফরমাতেন, যারা ঝামেলা বা সমস্যার কারণে কাজ ছেড়ে দেয়। তাদের সমস্যার সমাধান হয়না। কেননা কাজের উপর আসন্ন সমস্যার সমাধানই হলো এই কাজকে বাড়িয়ে দেওয়া। যেহেতু “সাহায্য কাজের সাথে”। ‘ ইং তাং সুরুল্লাহা ইয়াং ছুরুকুম ওয়া ইউছাব্বিত আক্বদা’মাকুম’ (47_মুহাম্মদ-৭) إِن تَنصُرُوا اللَّهَ يَنصُركُم وَيُثَبِّت أَقدامَكُم যদি তোমরা দ্বীনের মদদগার হও তাহলে আল্লাহপাক তোমাদের মদদগার হবেন। যদি তোমরা দ্বীনের মদদগার হও তাহলে আল্লাহপাক দ্বীনের উপর তোমাদের কদম জমাবেন। নবির কাজে বাধা সৃষ্টি করার জন্য কাফেররা মুলুকের সফর করতো। নবির কাজে বাধা সৃষ্টি করার জন্য কাফেররা দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতো। আল্লাহপাক বলেন, ‘লা  ইয়া গুররান্নাকা তাক্বল্লুবুল্লাজিনা কাফারু ফিল বিলাদ’ (3_ইমনান-১৯৬) لا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذينَ كَفَروا فِي البِلادِ আপনার কাজে বাধা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কাফেরদের দেশে দেশে আনাগোনা যেন আপনাকে কাজের ব্যাপারে ধোঁকায় না ফেলে। এখন কাজের কি হবে? বরং আপনি আপনার কাজে আল্লাহপাকের মদদ ও নুছরতের একিন রাখুন। আল্লাহপাকের নুসরত কাজের সাথে শতভাগ সত্য। বরং এমনও বলেছেন যে, যে ব্যক্তির অন্তরে সন্দেহ আছে যে আল্লাহপাক তার বান্দার সাহায্য করবেন না। তার উচিৎ সে যেন নিজের ঘরের ছাদে রশি ঝুলিয়ে তার ভেতরে নিজের গলা ফাসিয়ে আত্মহত্যা করে নেয়। এটা তার চিকিৎসা বলেছেন। যার অন্তরে খটকা রয়েছে যে, আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত সাহায্য করবেন কি না। তার জন্য নিজের ঘরের ছাদে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করা উচিৎ। ‘ইউযহিবান্না কাইদুহুমা’ ইয়াগি’জ’ (22_হজ্জ্ব-১৫)هَل يُذهِبَنَّ كَيدُهُ ما يَغيظُ “সে ধারণা করে যে, আল্লাহ কখনই ইহকালে ও পরকালে রাসূলকে সাহায্য করবেন না, সে একটি রশি আকাশ পর্যন্ত ঝুলিয়ে নিক; এরপর কেটে দিক; অতঃপর দেখুক তার এই কৌশল তার আক্রোশ দূর করে কিনা।“তার অন্তরে খটকা, আল্লাহপাক তার নবির কাজকে সাহায্য করবেন না। তার চিকিৎসা এটা। আল্লাহপাকের মদদ ও নুসরত কাজের সাথে, এটা হক। যত ধরণের যত কিছিমের মদদ ও সাহায্য হতে পারে আল্লাহপাকের নবির সঙ্গে ছিল। একটি ঘটনা দিয়ে অনুমান করুন। হুজুর সা: নিজের বিবি হযরত যয়নবের গৃহে মধু পান করলেন। এতে তার দেরী হয়ে গেল। আছরের পরে হুজুরের মামুল ছিল আঝওয়াজে মুতাহহারাতের (বিবি ছাহেবানদের) কাছে যাওয়া। ঘুরে ঘুরে সকলকে খোজ খবর নিতেন। আজ দেরী হয়ে গেল। হযরত আয়েশা রা: তাহকিক করলেন, দেরী কেন হলো। জানা গেল, হুজুর সা: যয়নবের ওখানে মধু পান করেছেন। আঝওয়াজে মুতাহহারাত এই ব্যাপারে বুদ্ধি আঁটলেন, আগামীতে যেন তিনি যয়নবের ওখানে মধু পান করতে না পারেন।

এই চেষ্টার ধারাবাহিকতায় তাঁরা একটি ছক নির্ধারণ করলেন। যখনই রসুলুল্লাহ সা: অন্য বিবি সাহেবানদের সাক্ষাতে যাবেন সকলেই একই কথা বলবেন আপনার মুখ থেকে গন্ধ আসছে। কেননা এটা সর্বদা ফেরেশতাদের আনাগোনা ও জিবরাঈল আ: এর আসা যাওয়ার প্রতিবন্ধক হবে। যখন জিজ্ঞেস করবেন মুখ থেকে গন্ধ আসছে কেন? বলা হবে, হয়ত: আপনি এমন কোন মধু পান করেছেন। যখন সবাই এমন বলবে হতে পারে তিনি মধু পান করা ছেড়ে দিবেন। বিবিগণ এমন করেছেন। হযরত আয়েশা ও হাফসা রা: এই ফন্দি এঁটেছিলেন। এই যাকিছু করেছেন তারা হুজুর সা: এর মহব্বতেই করেছেন। প্রত্যেকেই তার প্রতি মহব্বত ছিল। শুনুন ভালো করে, তার মহব্বতেই তাকে মধু পান করা থেকে বিরত রাখতে চেয়েছেন। তার মধুপানের খেলাফ পদক্ষেপ নিয়েছেন। অথচ মধুপান করা ফরজও নয় ওয়াজিবও নয়। এমনও নয় যে, পান করলে সওয়াব হবে। পান না করলে গুনাহ হবে কোন কিছুই না। শরিয়তের হুমও নয়, এটা অভ্যাসের জিনিস । হযরত উমর রা: এর সামনে মধু মিশিয়ে পানি পেশ করা হয়েছিল তিনি তা পান করলেন ও বললেন, কি দরকার ছিল সাদা পানি হলেই হতো। বলেন, এত নাজ-নেয়ামতের মাঝে জীবন কাটানোর দরকার কি আমাকে সাদা পানিই পান করাও।

মধু পান কোন ফরজ ওয়াজিব নয়। অথচ এর বিপরীতে বিবি সাহেবান রা: একটু চিন্তা ভাবনা ও চেষ্টা করেছেন। এ কারণে আল্লাহপাক হুঁশিয়ারী করেছেন, আপনাকে মধুপান করা থেকে বিরত রাখার জন্য যেই দুই বিবি চেষ্টা চালিয়েছেন বা (যদি চালাতে থাকেন তাহলে) আল্লাহপাক তাদের বিরুদ্ধে আপনার কিভাবে মদদ করনেওয়ালা দেখুন। যদি এই দুই বিবি আপনার মধুপানের খেলাফ দলীল দাঁড় করায় তাহলে দেখুন তাঁদের বিপরীতে আল্লাহপাক আপনাকে কিভাবে মদদ করেন। সর্বপ্রথম তো আল্লাহ আপনার সাহায্যকারী। কারো দরকার নেই আল্লাহ আপনার মদদগার। তারপর জিবরাঈল আ: আপনার মদদগার। তারপর সমস্ত মুমিন আপনার মদদগার। তারপর সকল ফেরেশতা আপনার মদদগার।।

তারা যদি আপনার বিপক্ষে মধু না খাওয়ার চেষ্টা করে তাহলে কি হবে? তাহলে কি হবে!! ‘ইন্নাল্লাহা হুয়া মাওলা’হু ওয়া জিবরি’লু ওয়াসা’য়িরুল মু’মিনিনা  ওয়াল মালা’ইকাতু বাআ’দা জা’লিকা জহির‘ (৬৬_তাহরীম-৪) فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ مَولاهُ وَجِبريلُ وَصالِحُ المُؤمِنينَ ۖ وَالمَلائِكَةُ بَعدَ ذٰلِكَ ظَهيرٌ মদদের চার প্রকার স্তরঃ- আল্লাহ, জিবরাঈল, মোমিনিন, সকল ফেরেশতা। এরা আপনার মদদ করবে। নবির তবীয়তের ও মনের চাহিদা মধু পান করার খেলাফ যদি নিজের বিবিগণ চেষ্টা করেন তাহলে তার সাথে এত ধরণের মদদ! আর যে কাজের জন্য স্বয়ং রসুলুল্লাহ সা: এর আগমন তার বিপক্ষে চেষ্টা বা অবস্থান নিলে সেই সময় কি পরিমান মদদ হতে পারে? এটা চিন্তা করা চাই।

আপনাদের বলছি, এমন ধারণা আসা যে, কাজের কি অবস্থা হবে আর কাজ করনেওয়াদের কি অবস্থা হবে!! এই ধারণা তখন আসে যখন ক্বলব আল্লাহপাকের গায়েবী মদদ ও সাহায্যের একিন থেকে খালি হয়ে যায়। আমি আরজ করছিলাম, কাফের এবং মোনাফিকিনদের সর্বপ্রথম বুনিয়াদি কাজ এই হয় যে, মু’মিনদেরকে আল্লাহপাকের নুছরত ও মদদের থেকে নিরাশ করে। যাও তাদেরকে বলো মদদ আর হবেনা। হুজুর সা: এর ইন্তেকালের পরেও এমনি হয়েছিল। তাদেরকে বলো যার কারণে তাদের উপর মদদ করা হতো তিনি এই দুনিয়া থেকে চলে গেছেন।

হযরত আবু বকর রা: মজমাকে সামলিয়েছেন। বলেছিলেন, যে মনে করে। সে মুহাম্মদ সা: এর এবাদত করে তাহলে সে যেন জেনে রাখে তার খোদা ও মাবুদ দুনিয়া থেকে চলে গেছেন।(৩_ইমরান-১৪৪) আর যে মনে করে, সে এবাদত করে এক আল্লাহপাকের “ইন্নাল্লাহ হাইয়ু লা ইয়া মুতু” (২৫_ফুরকান-৫৮) الحَيِّ الَّذي لا يَموتُতাহলে তিনি চিরঞ্জীব। চিরকাল আছেন চিরদিন থাকবেন। এই কাজের সাথে আল্লাহপাকের মদদ থাকা দিলে একিনী ও সত্য হতে হবে। এজন্য আল্লাহপাক বড় বড় নুসরত ও মদদ বাদশাহদের মোকাবালায় সাহাবায়ে কেরামকে করেছেন। এরজন্য শর্ত হলো দাওয়াত। যেটা আল্লাহ তায়ালা শর্ত করেছেন। “ইন তাং সুরুল্লাহা ইয়াং সুরুকুম ওয়া ইউ সাব্বিত আক্বদামাকুম” (৪৭_মুহাম্মদ-৭) إِن تَنصُرُوا اللَّهَ يَنصُركُم وَيُثَبِّت أَقدامَكُمআল্লাহপাক শর্ত লাগিয়াছেন কায়েনাতের যেকোন শক্তির বিরুদ্ধে, কায়েনাতের যেকোন ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে তোমাদের মদদ এই শর্তের উপর করবো যে তোমরা দাওয়াতের উপর কায়েম থাকো। এটা কোরআনের ফায়সালা। আমার কথা একটু মনযোগ দিয়ে শুনতে হবে । “দাওয়াত ছাড়া গায়েবী মদদ হবেনা”।

দ্বিতীয় কথা এটাও, মুসলমানদের ধারণা যদিও এই যে দাওয়াত ছাড়াও দ্বীনের সাহায্য সহযোগীতার অন্য রাস্তাও আছে। যেসবের দ্বারাও আল্লাহপাকের মদদ হয়ে যাবে। কিছু মুসলমানদের ধারণা দ্বীন প্রচারের জন্য দাওয়াতই একমাত্র রাস্তা নয় এছাড়াও অন্যান্য জারা’য়ে (মাধ্যম) আছে। দ্বীন প্রচারের জন্য দাওয়াতই একমাত্র জরিয়া নয় অন্যান্য আরো জারা’য়ে আছে মনে করেন। যদি তোমরা দাওয়াতের কাজ নাও করো তাহলে নুছরতের মাধ্যম সোর্স আরো আছে। অথচ এটা সত্য যে, যদি কেউ চোখ খুলে গভীরভাবে সীরতের মোতাআলা করে তাহলে গায়েবী নুসরতের জন্য দাওয়াত ছাড়া অন্য কোন জরিয়া পাবেনা।

মানুষ নিজেদের ব্যক্তিগত বা কারো এনফেরাদী সমস্যার সমাধানকে গায়েবী নুছরত মনে করে। অথচ নুসরত হলো মুসলমানদের মদদ আলমীভাবে এজতেমাঈ আকারে হতে হবে। যারা মনে করে থাকে আল্লাহপাকের মদদ ও নুছরতের আরো জারা’য়ে ব্যবস্থা আছে তারা এই কাজকে ছেড়ে দিবে। তারপর নুসরতের বহু শেকেল ও মাধ্যম তাদের নজরে আসতে থাকবে। তারা সেটাকে নছরত মনে করবে। যাদেরকে আল্লাহ মাল দিয়েছেন তারা বলবে যে, আমরা মাল দিয়ে মদদ করি। যাদেরকে আল্লাহ পদমর্যাদা দিয়েছেন তারা বলবে, আমরা পদ দ্বারা বা পদকে কাজে লাগিয়ে মদদ করি। যাদেরকে আল্লাহপাক মেধা-বুদ্ধি-বিদ্যা দিয়েছেন তারা বলবে আমরা এর দ্বারা মদদ করি। অথচ এগুলো সব দাওয়াতের শাখা।

দাওয়াতের দ্বারা এসব শাখাও জীবিত হওয়া উদ্দেশ্য। যেন উম্মতের যোগ্যতা হকের কাজে লেগে যায়। উম্মতের জান ও মাল আল্লাহর রেজামন্দির উপর খরচ হয়ে যায়। এসবই শাখা। নুসরত তো হলো এই যে, আল্লাহপাক বড় বড় শক্তিকে দাওয়াতের মাধ্যমে হয়ত: তাদেরকে দ্বীনের সাহায্যকারী বানিয়ে দেবেন আর নয়তো এসব শক্তিকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেবেন। এ জন্য আরজ করছি যে, নছরত দাওয়াতের সাথে। কেননা (সকল শক্তিকে দ্বীনের স্বপক্ষে আনা) এটাই আসল নুসরত। মালদার মনে করে আমাদের কাছে মাল আছে আমরা দ্বীনের জন্য মাল খরচ করি এটা দাওয়াত। যাদের কাছে বুদ্ধি ও আকল আছে তারা বলে আমরা রায় আর মাশওয়ারা দ্বারা দ্বীনের মদদ করি। আসলে এমন নয়।

বরং হাকিকতে দাওয়াত হলো খোদ নিজে গিয়ে দাওয়াত দেওয়া। এর উপর আল্লাহপাকের মদদ আসবে। আপনারা সাহাবাদের ঘটনার উপর ভেবে দেখুন। এতে জানা যাবে আসল দ্বীনের মদদ কি? খোদ নিজে গিয়ে দাওয়াত না দিলে জিম্মাদারী দায়িত্ব আদায় হয়না। এটা তো হুজুর সা: পরিস্কার করে বলেছেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা: কে সম্বোধন করে বলেন, যদি সারা দুনিয়ার মাল তোমার হয়ে যায় আর তুমি তা খায়েরের কাজে আর আল্লাহপাকের রেজামন্দি ওয়ালা রাস্তায় খরচ করে দাও তাহলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে যাওয়া ব্যক্তির পুরস্কার ও মর্যাদার বরাবর হতে পারবেনা।

মালের দ্বারা নুসরত হবে মুসলমানেরদাওয়াতের দ্বারা নুসরত হবে ইসলামের। অনেক বড় পার্থক্য। মুসলমানের আসল নুসরত হবে তাকে আল্লাহপাকের ফারায়েজের উপরে আনা হলে। হুজুর সা: ফরমান হাদিছে আছে, তোমরা মদদ করো মজলুমেরও জালেমেরও। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! মজলুমের মদদ তো বুঝে আসে জালেমের মদদ কিভাবে করা যায়? তিনি এটা বলেননি তোমরা মজলুমের মদদ করো জালেমের খেলাফ। বরং বলেছেন জালেমকে তার জুলুম থেকে ফিরানোর মেহনত করো। এটা তার মদদ।

খোদ নিজে গিয়ে দাওয়াত দেওয়া ছাড়া ইমামে হুজ্জত ও জিম্মাদারী পুরা হবেনা। আর যতক্ষণ জিম্মাদারী পুরা না হবে নুসরতের ওয়াদা নেই। নুসরতের ওয়াদা তাদের সাথে নেই। হযরত ইলিয়াছ রহ: ফরমাতেন, এই কাজ তাসখীরে আলমের নুসখা (আলমকে বশ করার ব্যবস্থাপত্র)। নেজামে কায়েনাত মুছাখ্বার হবে (বিশ্বব্যবস্থা কাবুতে আসবে) দাওয়াত ও এবাদত দুটিকে একসঙ্গে করলে। এবাদতের দ্বারা কেরামত জাহের হতে পারে কিন্তু নুসরত নাজিল হবেনা। ওলীর কেরামত হলো আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত নিজের দোস্তের ইকরাম করেন। এটা ওলীর কেরামত। যে আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহপাক তার ইকরাম করবেন ওয়াদা আছে। ) “ইন্না আকরামাকুম ইন্দাল্লাহি আতক্বাকুম” (৪৯_হুজুরাত-১৩) إِنَّ أَكرَمَكُم عِندَ اللَّهِ أَتقاكُم এখানে মাছআলা অলীর কারামত নয়। এখানে প্রশ্ন পুরা উম্মতের নুসরতের মাসআলা। এখানে একজন ফর্দের মাসআলা নয়। এক উম্মত হওয়ার কারণে পুরা উম্মতের মাসআলা কি? কোথাও উম্মত ধরাশায়ী। কোথাও উম্মত ইসলামী আহকাম আদায় করতে অপারগ। তারা দ্বীনের উপরে চলতে পূর্ণ স্বাধীনতা কিভাবে পেতে পারে। এটা বলা যে, মুসলমানের সাধ্য নেই। (এই ধারণা ভুল) ।

কেননা আমি শুরুতেই আরজ করেছি। একটি সাধারণ হালাল খাবার থেকে ফিরিয়ে রাখার বিরুদ্ধে যদি এত ধরণের মদদ হয়! তাহলে যেই দ্বীন কায়েমের জন্য নবি তাশরীফ এনেছেন সেই দ্বীন বাস্তবায়ন করতে মুসলমান সম্মিলিত হবে। আর সম্মিলিত মুসলমানের পক্ষে আল্লাহর মদদ ও সাহায্য হবেনা!! এটা কিভাবে হতে পারে?

খোদ নিজে গিয়ে দাওয়াত দেওয়া জরুরী। হুজুর সা: বাদশাহদের কাছে দাওয়াত দিয়েছেন। এ জন্য জামাত পাঠিয়েছেন। ইসলাম লিখে পাঠিয়ে দেননি। দাওয়াত দেওয়ার জন্য জামাত পাঠিয়েছেন আর চিঠি পাঠিয়েছেন প্রমান হিসেবে। বাদশাহদের চিঠি দিয়েছেন দলীল হিসেবে, সঙ্গে জামাত পাঠিয়েছেন দাওয়াত দ্বারা ইতমামে হুজ্জতের জন্য। বলতে চাচ্ছি, মানুষ মনে করে যেকোন ভাবে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া জিম্মাদারী আদায়ের জন্য যথেষ্ট। অথচ খোদ নিজে গিয়ে দাওয়াত দেওয়া।

এর কোন বদল (বিকল্প) নেই। আর এটা করা ছাড়া মদদ হবেনা, পাকা কথা। এজন্য যত মাধ্যম ও জারা’য়ে আছে নশর ও এশাআতের (প্রচার ও পাবলিশিং) ও কথা পৌঁছানোর ব্যবস্থা আছে এগুলো খেলাফে সুন্নত হওয়ার কারণে কখনো মদদের উপযুক্ত হবেনা, এটা পাকা কথা। মদদের ওয়াদা শুধু তাতে যে আপনি খোদ নিজে গিয়ে দাওয়াত দিবেন। এই যুগে এসব কথা বুঝে আসা বড় মুশকিল, কেননা আসবাব ও ওছায়েল (মাধ্যম ও কমিউনিকেশন) প্রচুর ছড়াছড়ি। আর মানুষও আসবাব ও ওসায়েলকে আল্লাহর নেয়ামত মনে করে নিয়েছে। চোখ কান খলে বুঝতে হবে কথাটি ! মানুষ মনে করে, আমরা আল্লাহপাকের নেয়ামত ব্যবহার করছি। আল্লাহর দ্বীন প্রচারের জন্য। এটা অনেক বড় ধোকা। কেউ কেউ বলে- আসবাব ওসায়েল আল্লাহপাকের নেয়ামত, দ্বীন প্রচারের কাজে লাগাচ্ছি।

অথচ আল্লাহর দ্বীন প্রসার লাভ করার একটিই মাধ্যম একটিই উছিলা। আর সেটা কি? সেটা হলো মানুষ। কেননা মুজাহাদা মানুষের ছিফত। মুজাহাদা কোন যান্ত্রিক ছিফত নয়। আসবাব ও ওসায়েল কখনো মুজাহিদ হতে পারেনা। এমন নয় যে মুসলমান আসবাব ওসায়েল গ্রহন করবে আর এগুলো মুজাহিদ হয়ে যাবে। যত ধরণের আসবাব ও ওসায়েল আছে এগুলো দুনিয়ার জন্য ছামানা করা যায় কিন্তু দ্বীনের জন্য (আখেরাতের জন্য ছামানা) নয়।

আমি বারবার এ কথাটি দোহরাচ্ছি এজন্য যে, এ কথা জেহেন থেকে বেরিয়ে যায় যে- “খোদ নিজে গিয়ে দাওয়াত না দিয়ে অন্য বস্তু ব্যবহার করে দ্বীনের দাওয়াত দিলেও জিম্মাদারী ও দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে”। না, না খোদ নিজে গিয়ে দাওয়াত দিতে হবে। কোরআনে একেই উল্লেখ করা হয়েছে , “ক্বলু মায়াজি রতি ইলা রব্বিকুম” যেই জামাত ছিল তাদের দাওয়াত দেওয়ার জন্য যাদের ধ্বংসের ফায়সালা হয়ে গিয়েছিল, লোকেরা বলল এদেরকে দাওয়াত দিয়ে কি লাভ? এদের তো ধ্বংসের ফায়সালা হয়েই গেছে।

দাওয়াত দেনেওয়ালারা বলল, একতো আমরা শুধু এজন্য যাচ্ছি যেন আল্লাহর কাছে আমরা দায়িত্বমুক্ত হতে পারি। দ্বিতীয়ত: আমরা আশা রাখি, হতে পারে তারা তাওয়ার উপর এসে পড়বে। বর্তমানে এই গলত ধারণা তৈরী হয়ে গেছে, দুনিয়াতে তো দ্বীনের দাওয়াত ছড়িয়ে পড়েছে এজন্য ঘোরাফেরার কোন প্রয়োজন নেই। ঘোরাফেরা বড়জোর মোবাহ সমতুল্য হতে পারে। অথচ ঘোরাফেরা আল্লাহপাকের এমন হুকুম যে পুরো দ্বীন পুরো দুনিয়ায় পরিচিত ও চালু হয়ে গেলেও এই হুকুম স্ব-স্থানে অটল থাকবে। আল্লাহর রাস্তায় ঘোরাফেরা বহাল থাকবে।

“ইজা ইসতুংফিরতম ফাংফিরু” যখনই তোমাদেরকে বের হতে বলা হয় তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে যাও। সবার চেনা জানা হয়ে গেছে এজন্য ছেড়ে দেওয়া যাবেনা। আল্লাহ তায়ালার গায়েবী নুছরত খোদ নিজে গিয়ে দাওয়াত দেওয়ার মধ্যে নিহিত। হুজুর সা: কিছুরার বাদশার কাছে চিঠি লিখলেন। জামাতকে সাথে দিয়ে পাঠিয়েছেন। কিছরা চিঠি ছিড়ে ফেঁড়ে ফেলেছে। হুজুর সা: বললেন, সে তো চিঠি টুকরো করেনি বরং নিজের সাম্রাজ্য টুকরো টুকরো করেছে। তিন চারজনের জামাত গিয়েছিল কিছরাকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য।

জামাতে বড় মাপের কোন সাহাবা ছিলেননা। হযরত রিব্ঈ বিন আমের রা: একাকি দাওয়াত দিতে গেলেন। এমন বলেননি যে পোষ্ট অফিসে (ডাক বিভাগে) চিঠি দিয়ে দাওয়াত দিয়ে দাও। তখন ডাক বিভাগ ব্যবস্থাপনা ছিল। এক মনজিল থেকে আরেক মনজিলে ঘোড়ার মাধ্যমে ডাক পৌঁছানো হতো। না-বিভাগের মাধ্যমে দাওয়াত দেবোনা, জিম্মাদারী আদায় হবেনা। আল্লাহ পাকের কাছে পাকড়াও হবো। তাহলে আমাদের জেহেনে কিভাবে আসে যে দাওয়াতের কাজ শুধু এটাই নয় দ্বীনের দাওয়াতের জন্য আরো পদ্ধতি আছে। এই প্রশ্ন এজন্য তৈরী হয় যেহেতু এই জমানায়আসবাব ও ওসায়েল (মাধ্যম ও মিডিয়ার) ছড়াছড়িবেশী।

মানুষ এমন জ্ঞানহীনের মত কথা বলে আর নিজেকে খুব জ্ঞানী মনে করে বলে, ইসলামী চ্যানেল হওয়া চাই যেন সবকিছু এখানেই মিলে। হেদায়েত আম হওয়ার ও ইসলাম কায়েম হওয়ার জন্য যদি এরা খোদ নিজেকে ব্যবহার না করে- তাহলে বাতিলের প্রচার মাধ্যমকে দ্বীন প্রচারের মাধ্যম ও উন্নত ব্যাবস্থা মনে করবে। হযরতজী রহ: ফরমাতেন, হককে চালানোর জন্য যদি বাতিলের সাহারা (সহযোগীতা) নেওয়া হয় তাহলে বাতিল চালু হবে। বাতিল চাঙ্গা হবে। হক চলবেনা।

হকতো কায়েম হবে দাওয়াতের দ্বারা। দাওয়াত স্রেফ ঐটা যে আপনি খোদ নিজে গিয়ে দাওয়াত দিবেন। এই কথা এই যুগে বলাও মুশকিল বুঝাও মুশকিল। কেননা এসব কথা বলা মানে মানুষ কেউ কেউ মনে করে দ্বীনের অন্যান্য শাখাকে অস্বীকার করা হচ্ছে। দ্বীনের অন্যান্য অঙ্গনকে অস্বীকার করা নয় বরং পূন:জীবন উদ্দেশ্য। এসব কথা দ্বারা রেওয়াজী তরীকা ইনকার করা উদ্দেশ্য। রেওয়াজী তরীকা ইসলামের এশাআতের মাধ্যম নয়।

রেওয়াজী তরীকা এবাদতের উপর আনয়নের জরিয়া হতে পারেনা। তাহলে রেওয়াজী তরীকা দাওয়াতের বাস্তবায়নের জরিয়া কিভাবে হতে পারে? একটু খেয়াল করুন। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! বড় জটিল হয়ে গেছে মানুষকে নামাজের জন্য জমা করা। ঘরে ঘরে যেতে হয় জামাতের সময় হলে। ডেকে ডেকে জমা করতে হয়। হযরত বেলালের গাস্ত মদিনার ঘরে ঘরে গিয়ে সলাত! সলাত! সলাত! বলতে হয়। এমন ছিলনা যে আগে আসায় অভ্যস্ত ব্যক্তিরা এলেই নামাজ দাড়িয়ে যেত। সাহাবায়ে কেরাম বলেন, যতক্ষণ জুতার চলার আওয়াজ পাওয়া যেত নবিজী সা: নামাজে দাঁড়াতেন না। একটু দাড়াও লোক আসতেছে। একটু দাড়াও লোকজন আসতেছে। এমন ছিলনা যে ঘড়িতে সময় হয়ে গেছে সাথে সাথে নামাজে দাঁড়াও কেউ আসুক বা না আসক। বেলাল রা: নামাজের সময় গাস্ত করতেন নামাজের দিকে ডাকার জন্য।

ঐ ব্যক্তির মুজাহাদা মানুষের কলবকে নামাজের দিকে টেনে আনতো যিনি তাদের নামাজের জন্য ঘরে ঘরে গিয়ে চক্কর লাগাতে থাকতেন। এই কথা বুঝা বড় মুশকিল আর ব্যক্ত করা আরো মুশকিল। রেওয়াজী তরীকার সাথে মানুষের এত মহব্বত হয়ে গেছে যে সুন্নত তরীকার কথা শুনলে নারাজ হয়। বলে, দেখো- এই যমানার তরীকা এই; আর কিসের নতুন নতুন কথা বলছে। রেওয়াজের সাথে মহব্বত আর সুন্নতের সাথে নফরত (ঘৃণা)। মদিনার প্রত্যেক ঘরে ঘরে গাস্ত আচ্ছলাত! আচ্ছলাত ! আচ্ছলাত।।

সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, মদিনায় আমাদের এখানে বিভিন্ন সুখ দু:খ উৎসবে মানুষকে জমা করার এক তরিকা আছে। আমরা ঢোল বাজিয়ে দেই মানুষ আওয়াজের উপর জমা হয়ে যায়। নামাজের জন্য জমা করতে আমরা এই ঢোল ব্যবহার করতে পারি না? মসজিদে একটি ঢোল থাকলো নামাজের সময় বাজিয়ে দিলে লোকজন জমা হয়ে যাবে। ফরমান, না- এটা ইহুদীদের তরীকা। ঠিক আছে তাহলে আমরা সারঙ্গী (চোঙ্গা) বাজাই? লোক নামাজের জন্য জমা হয়ে যাবে। সারঙ্গীতে অন্য কোন আওয়াজ লাগানো হবেনা, শুধু নামাজের আওয়াজ লাগানো হবে। ছোট্ট করে ‘সলাত' শব্দটি বললেও পুরো মদিনায় আওয়াজ চলে যাবে। রাসুলুল্লাহ সা: বললেন, না- এটা নাছারাদের তরীকা।।

তিনি এটা বললেননা যে, তোমরা তো নামাজের জন্যই ব্যবহার করছো, ইহুদীরা ব্যবহার করে গুনাহের জন্য- তোমরা তো নামাজের কাজে লাগাবে। সমস্যা নেই। বরং বললেন, না এটা আমাদের তরীকা নয়। তাহলে কি করা যায়। আরেকটি রায় আসলো, আগুন জ্বলানো হোক এতে ধুয়া হবে। মসজিদের এরিয়া থেকে ধুয়া উঠতে দেখলে বুঝবে নামাজের সময় হয়ে গেছে। সকলে নামাজের জন্য এসে পড়বে। ফরমাইলেন, না আগুন জ্বালিয়ে জমা করা এটা মাজুসীদের (অগ্নিপুজকদের) তরিকা। এই তরীকা ইহুদীদের, এই তরীকা নাছারাদের, এই তরীকা মাজুসীদের। তিনি কারোরটা কবুল করলেন না।

এসব ঘটনা জেহেনে রাখুন, রেওয়াজী বস্তু দ্বারা দ্বীনের কথা পৌঁছিয়ে দেওয়া আর রেওয়াজী বস্তুকে ব্যবহার করে মানুষ জমা করা; এগুলো যদি এবাদতের কাজে ব্যবহার করার অনুমতি না হয় তাহলে দাওয়াতের কাজে কিভাবে ব্যবহার করা যায়? কিছু লোক বলছে, দ্বীনের কথা পৌঁছানোর আরো জারা’য়ে মাধ্যম আছে। হাঁ, জারা’য়ে তো অনেক আছে। কিন্তু মদদ ও নুসরত পাওয়ার জারা’য়ে- উপকরণ নয় এসব। এসব ছহুলতের জারা’য়ে (সহজ, আরামের ও খাহেশের উপকরণ)। খোদার কসম! নুছরতের তো একটিই জরিয়া- সাহাবাদের মত চলেফিরে দাওয়াত দাও। এ ছাড়া কোন ব্যবস্থা নেই পাকা কথা।

কেননা নুছরতের জন্য ইতমামে হুজ্জত জরুরী। আর ইতমামে হুজ্জতের জন্য চলেফিরে দাওয়াত দিতে হবে। এ কারণে বলছিলাম, দ্বীনের দাওয়াতের জন্য চলেফিরে নকল ও হরকত ছাড়াও যারা অন্যান্য জারা’য়ে ও মাধ্যম আছে মনে করেন তারা হয়ত; নকল ও হরকতের জরিয়াকে ছেড়ে দিবে আর নয়তো পেছনে রাখবে। এই ভেবে যে, (ছহুলত থাকতে) খামোখা কষ্টের দিকটা বেছে নেওয়ার কি দরকার? অথচ নুসরতের ওয়াদা নকল ও হরকতের সাথে। এজন্য নবি করীম সা: কিছরার নিকট জামাত সহ চিঠি পাঠালেন। কিছরা চিঠি ফেঁড়ে ফেলেছে। নবিজী সা: বললেন, চিঠি তো ফাড়েনি ফেঁড়েছে নিজের সাম্রাজ্য।

পুরো জামাত নয় জামাতের একটি অংশ গেছেন তাতেই পুরা মুলক (সাম্রাজ্য) টুকরো হয়ে গেছে! কেননা দুটি জিনিস আসল। যার বদৌলতে আল্লাহপাক নবির ভেতরে ঐ রু’ব (আতঙ্কভীতি) রেখেছেন যেই রু’ব দ্বারা আল্লাহপাক নবির মদদ করেছেন। এক, দাওয়াত দুই, ইত্তেবায়ে সুন্নত। উম্মতকে এই দুটির উপরে ছেড়েছেন। মানুষ আদায়ে ফারায়েজকে ইসলাম বুঝে। অথচ আদায়ে ফারায়েজ হলো ইসলামে প্রবেশের শর্ত। যদি আদায়ে ফারায়েজ নেই তাহলে তো সে মুসলমানই নয়, পাকা কথা। যেমন কোন দেশে প্রবেশের জন্য ভিসা শর্ত হয়। ভিসা নেই প্রবেশ নেই।।

ইসলামে প্রবেশের আগে নবিজী সা: কাফেরদের উপর শর্ত লাগাতেন, তোমরা ইসলামে প্রবেশ করতে হলে আদায়ে ফারায়েজ লাগবে। আদায়ে ফারায়েজ হলো, কলেমায়ে ঈমানের সাক্ষী দিতে হবে, নামাজ পড়তে হবে, রোজা রাখতে হবে, মাল হলে জাকাত দিতে হবে বায়তুল্লাহর হজ্জ করতে হবে। এই পাঁচটি মুসলমান থাকার বুনিয়াদ। আরজ করছিলাম, এক দাওয়াত দ্বিতীয় এত্তেবায়ে সুন্নত। জামাত গেলেন কিসরাকে দাওয়াত দিতে। কিসরা চিঠিও ফেঁড়েছে আর ইয়েমেনের গভর্ণর বাজান’কে হুকুম করেছে, শুধু দুইজন লোক পাঠাও ইয়াছরিবে (মদিনায়)। মাত্র দুজনই যথেষ্ট। তাকে গ্রেফতার করে আনুক যে এই চিঠিটি লিখে পাঠিয়েছে।

কিসরার নিয়োগকৃত গভর্ণর বাজান’ দুইজন লোক পাঠিয়েছে মদিনায়। তারা সন্ধান করতে করতে পৌঁছেছে। তারা গিয়ে সেখানে ভয়ে কাঁপতে লাগলো। রসুলুল্লাহ সা: বললেন, কি ব্যাপার কাঁপছো কেন? ভয় পেও না। কি জন্য আসা হলো? তারা বললো আমরা তো আপনাকে গ্রেফতার করতে এসেছি। ‘বাজান’ আমাদেরকে পাঠিয়েছে তার মালিকের হুকুমে-কিছরার হুকুমে। ‘বাজান’ এই কথা বলে পাঠিয়েছে যে, আমাদের ‘আক্বা' (মালিক কিছরা) হুকুম দিয়েছে আপনাকে গ্রেফতারের জন্য। হুজুর সা: ফরমাইলেন, তোমরা যেয়ে বাজান'কে বলে দাও আমার ‘আক্বা’ আজ রাতে তোমাদের আক্বা’ কে কতল করে দিয়েছেন। যেই ‘আক্বা’র ওয়ারেন্ট তোমরা আমাকে শুনাচ্ছো সেই ‘আক্বা’তো রাতেই খতম হয়ে গেছে।

চিঠি ফাঁড়ার সংবাদ শুনে নবিজি সা: বলেছিলেন, কিসরার পুরো সাম্রাজ্য আল্লাহ পাক চুর্ণবিচুর্ণ করে দিয়েছেন। এ তো বেচারা এই জমানার বে-আকল লোক, বলে ফেলে- চ্যানেলের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার করো তাহলে মানুষ হেদায়েত পেয়ে যাবে। অথচ আল্লাহপাক হেদায়েতের যে ওয়াদা করেছেন তা মুসলমানের নিজেদের মুজাহাদার উপর করেছেন। বস্তুর উপর হেদায়েতের ওয়াদা নেই। আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত মানুষকে হেদায়েত দেন আম্বিয়ায়ে কেরামের ছবরের উপর।

وَجَعَلنا مِنهُم أَئِمَّةً يَهدونَ بِأَمرِنا لَمّا صَبَروا“ওয়া জায়ালনা’মিনহুম আ’ইম্মাতাই ইয়াহদু’না বি আমরিনা লাম্মা ছবারু ” (৩২_সেজদা-২৪)  , কওমের হেদায়েত নবিদের ছবরের উপর। এজন্য আমি খুব জোর তাকিদ দিয়ে বলছি, নকল ও হরকত এবং খোদ নিজে গিয়ে দাওয়াত দেওয়া ছাড়া আর কোন জরিয়া নুসরতের নেই। হুজুরের এই দোয়া “হে আল্লাহ! এদেরকে সম্পূর্ণ চুর্ণবিচুর্ণ করে দাও”। হুজুরের দাওয়াত পৌঁছার পর কিছরার চিঠি ফেঁড়ে ফেলা ও হুজুর সা:কে গ্রেফতারের ইচ্ছাপোষণ করার ফলে কি পরিণতি হয়েছিল? তার পুত্র ছিল শেরওয়ে। পারভেজের পুত্র শেরওয়ে। পারভেজ নাম ছিল কিছরার বাদশার যে চিঠি ফেঁড়েছিল। সবচেয়ে বড় ছেলে ছিল শেরওয়ে। তার দিলে উদয় হলো, নিজের বাবাকে কতল করব। বাবাও টের পেয়েছিল ছেলে আমাকে কতল করে ফেলবে। বাবাও তার কতলের ব্যবস্থা করলেন। বাবা, নিজের খাজানার ভেতরে যৌন শক্তি বর্ধক ঔষধের নাম লিখে শিশিতে বিষ ভরে রাখলেন।

আল্লাহ রব্বল ইজ্জত যখন বাতিলকে তছনছ করতে চান তখন এদের পরস্পরের দিলকে ফেঁড়ে ফেলেন। এজন্য ঈমান ওয়ালাদের কে আল্লাহপাক তাছাল্লী (শান্তনা) দিয়েছেন। দ্বীনের কাজে বাধা দানকারীদের জমা হওয়া তাদের মধ্যকার বৈঠক ও তাদের ঐক্য দেখে প্রভাবিত হতে ও ঘাবড়াতে নিষেধ করেছেন। কেন? কেননা এদের জমা হওয়ায় দ্বীনের কোন ক্ষতি নেই। এদের পরস্পরে ফাটল রয়েছে। আজব কথা- বাতিল প্রথমে পরস্পরে দিল ফাটে। তোমাদের মনে হবে এরা পরস্পরে সংঘবদ্ধ। কিন্তু এদের ভেতরে দিলে দিলে ফাটল।

“তাহসাবুহুম জামিয়াও ওয়া ক্বুলুবুহুম শাত্তা” এটা আল্লাহ তায়ালার প্রথম মদদ। মুসলমান দাওয়াত নিয়ে চলবে ফিরবে আল্লাহপাক প্রথমে আহলে বাতিলের অন্তরকে ফেঁড়ে দিবেন। বাবা ও ছেলে একে অপরকে কতলের চেষ্টায়আছে। কিছুরার পারভেজ ছেলের জন্য গোপনে বিষ রেখেছে। শেরওয়ে বাবাকে কতল করে দিয়েছে। বাবাকে কতল করার পর সে ভেবে দেখল আমার তো আরো ভাই আছে। তারাও বাদশাহ হতে পারে। এজন্য সব ভাইকে কতল করে দিল । সব ভাই কতল হয়ে গেছে। শুধু সে একা রয়ে গেল। মানুষেরা বললো এখন তো শুধু আপনি। সুতরাং আপনি বাদশাহ। সর্বপ্রথম সে খাজানাঘর খুললো বাবা কি কি খেত শক্তি বর্ধকের। সে সেই শিশি নাগালে পেল আর সাথে সাথে শক্তিবর্ধক ঔষধ ভেবে বিষপান করলো। এরপর সেও মারা গেল।

রেওয়ায়েতে আছে, বাদশাহের পুরো খান্দানে কোন পুরুষ ছিলনা যাকে কিছরার জায়গায় বাদশাহ বানানো যেতে পারে। এটা হুজুরের বদদোয়া ছিল “আল্লাহুম্মা মাঝ্ঝাক্বহুম ক্বুল্লাল মুমাঝ্ঝাক” আয় আল্লাহ! এদেরকে পুরোপুরি ফেঁড়ে দিন। দুনিয়ায় সর্ব প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপ্রধান যেটা বানানো হয়েছিল কিছরার স্থলে সে তার মেয়ে ছিল। তার খান্দানে কোন পুরুষ বাকি ছিলনা। আজীবনের জন্য তার বংশ ওখান থেকেই শেষ হয়ে গিয়াছে। শুধু এক মেয়ে ছিল তার খান্দানের। বলাবলি হলো বাদশাহ তো এই খান্দান থেকেই হতে হবে। কাকে বানানো হবে ছেলে তো নেই। বাধ্য হয়ে মেয়েকে রাষ্ট্রপ্রধান বানানো হলো। (তার তো স্বামী অন্য খান্দানের সূত্রপাত)।

আমি এসব কথা এজন্য আরজ করছি যে ইনফেরাদী দাওয়াত আল্লাপাকের মদদের আসল ছবব। নিজে গিয়ে দাওয়াত দেওয়া। হযরত ইলিয়াস র: ফরমাতেন ইনফেরাদী দাওয়াত আর এবাদত জমা করার মাধ্যমে আল্লাহ পাকের মদদ আকৃষ্ট হয়। নেজামে কায়েনাত এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। তাহলে দুটি জিনিসই সাব্যস্ত হলো এক দাওয়াত অর্থাৎ নকল ও হরকত অর্থাৎ খুরুজ। দওরে রেসালতে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানোর জন্য নকল ও হরকত ছাড়া আর কোন জরিয়া ছিলনা। বাকি যত জরিয়া আছে সব খেলাফে সুন্নত। যেটা খেলাফে সুন্নত সেটার সাথে আল্লাহপাকের মদদ নেই।

মানুষ বলে আসল তো দ্বীন চাই। তাহলে সেটা যে প্রকারেই হোক হলেই হলো। এসব এমন গলদ কথা যা মুহুর্তে খুরুজের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। দ্বীনের কথা তো এভাবে পৌঁছানো যেতে পারে ওভাবে পৌছানো যেতে পারে। কতভাবে পৌঁছানো যেতে পারে- এর জন্য চলত ফেরত কি দরকার? শয়তান এমন রাস্তা দিয়ে মতামত ও বুদ্ধি দিবে লোক মনে করবে আমরা তো ঠিকই বলছি! কথার তো যুক্তি আছে! আরো তো ব্যবস্থা আছে! একটা ছোট মেছাল দিচ্ছি খেয়াল করুন।

মেছওয়াক দ্বারা দাঁত পরিস্কার করা মকসুদ। যদি এই মকসুদ ব্রাশ দিয়ে আদায় করা হয় তাহলে সত্য বলুন ব্রাশ কি মেছওয়াকের বদল হবে? কেয়ামত পর্যন্ত হবে না। মেছওয়াক সুন্নত। দাঁত পরিস্কার মাকসাদ মেসওয়াক দ্বারা। এই কাজ তো ব্রাশ দিয়েও হতে পারে। দাঁত ছাফ হতে পারে কিন্তু মৃত্যুর সময় কলেমা স্মরণ আসার ওয়াদা মেসওয়াকে আছে ব্রাশে নেই। মেসওয়াকের ফায়দা ব্রাশে নেই।।

ইলিয়াস র: ফরমাতেন কানে কথা দিয়ে দেওয়া তবলীগ নয়। বরং খোদ নিজে গিয়ে দাওয়াত দেওয়া হলো তবলীগ। “বাল্লিগু-আননি ওলাউ আয়াহ্” । এই জিম্মাদারী সাহাবা গণ কিভাবে আদায় করেছেন। সীরাত দেখে চলতে হবে। আমাদের মগজে আছে, সীরাত সাহাবায়ে কেরামের জমানার জন্য আর এই জমানার জন্য এই যুগের তরীকা। আসলে এমন নয়। বর্তমানের হোক আর আগামীর হোক সব যুগের জন্য সীরাতে সাহাবা রা:এই উম্মতের পরবর্তি ওয়ালাদের এছলাহ ও সংশোধন তাতে নিহিত আছে। যাতে সাহাবাদের এসলাহ হয়েছিল। আমি আরজ করেছিলাম ২টি ছবব নুসরতের। এক দাওয়াত ২রা এজতেমাঈয়াত। হযরত রহ: ফরমাতেন, এবাদত চায় আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে, আর এবাদতওয়ালারা সবাই মুখলিছ হয়। এখলাছ এহতেছাব সবই তাদের থাকে। আবার আল্লাহপাকের কাছে তাদের এবাদত মকবুলও হয়। তাদের এবাদত আরশেও পৌঁছে যায়। আর আল্লাহপাক তাদের এবাদতে রাজিও হয়ে যান। তবুও আল্লাহপাকের মদদ আসবেনা যদি এজতেমাঈয়াত না থাকে।।

পরস্পরে এজতেমাঈয়াত থাকলে মদদ আসবে যদিও আমল কম হয়। এবাদতের কামালিয়াত নুসরত আনতে পারবেনা যদি এজতেমাঈয়াতে কমি থাকে। কিন্তু পরস্পরের এজতেমাঈয়াত নুসরতকে টেনে আনবে যদিও এবাদতে কমি আমালে কমজোরী থাকে। এজতেমাঈয়াত আসে এজতেমাঈয়াতের আসবাবের দ্বারা। এজতেমাঈয়তের আসবাবের মধ্যে সবচেয়ে প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ হলো একে অপরের জন্য রহমত পরস্পরে নরমী নম্রতা এখতিয়ার করা। সাহাবাদের এজতেমাঈয়াতের প্রথম ছবব ছিল”রুহামাউ বাইনাহুম”তাঁরা পরস্পরে রুহামা (দয়া) বিধর্মীদের জন্য শক্ত ছিলেন। (৪৮_ফাতহ-২৯)  وَالَّذينَ مَعَهُ أَشِدّاءُ عَلَى الكُفّارِ رُحَماءُ بَينَهُم ۖ এখানে মুসলমানের মাঝে মোয়ামালা (ব্যবহারটা) পুরো উল্টো । এই সময় যত “জামিইয়াতুল খয়রিইয়াহ” (মুসলিম সংগঠন সমূহ) আছে নিজেদের মাঝে শক্ত অবস্থানে আর বিজাতিদের বেলায় অতি নরম, সহানুভুতিশীল। এটা বর্তমানের স্পষ্ট অভিজ্ঞতা। যাঁচাই করে দেখুন, গায়ের কওমের জন্য অতি সংবেদনশীল। আর মুসলিম দেশ ও সংগঠনের সঙ্গে সখ্যহীন, আপসহীন। নুসরত আসার জন্য প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মুসলমানদের নিজেদের বেলায় কাঠিন্যতা- কেউ কারো ছাড় নেই। আর বিজাতিদের বেলায় সহানুভবতা ও সংবেদনশীলতা।

চোখ ঘোরালেই আপনি দেখতে পাবেন, বিজাতিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব আর মুসলমানের সাথে লড়াই যুদ্ধ। যত মুসলিম জামাত, জমইয়্যত, তানজীম, সংগঠন, পার্টি অর্গানাইজেশন বা মতবাদ আছে এদের নিজেদের ভেতরে তুমুল লড়াই। সমাধানের নামে বিজাতিদের সাথে সখ্যতা একাত্মতা ও বন্ধুত্ব করছে। আল্লাহপাক বলেন, মু’মিনদের জন্য নরম হয়ে থাকো। এর উপর আল্লাহও রহমত করেন।

“ফাবিমা রহমাতিম্মিনাল্লাহি লিনতালাহুম” (ইমরান-১৫৯) فَبِما رَحمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنتَ لَهُم নবি তোমাদের উপর নরম রয়েছেন। এজন্য তোমরা একে অপরে মোয়াখাজা-ধরপাকড় করোনা। কেননা মোয়াখাজা-ধরপাকড়-জেরা এবং মোহাসাবা-তদন্ত-যাঁচাই এটা আল্লাহপাকের কাজ। হিসাব-নিকাশ আল্লাহপাকের হক।“ইনশা-য়া গফারু ওয়া ইনশা-য়া আযজাবাহ্” । চাই মাফ করবেন চাই গ্রেফতার করবেন তার ইচ্ছা। তোমরা এ কাজ করোনা। তোমাদের কাজ ধরপাকড় নয়।

তোমাদের জিম্মাদারী হলো গলত কাজ করনেওয়ালাকে সঠিক কথা বলে দাও। ব্যস ফারেগ হয়ে যাও। চিন্তা করুন যাদেরকে আল্লাহপাক এজন্য পাঠিয়েছিলেন যে তাদের এতাআত-আনুগত্য করা হবে। যাদেরকে আল্লাহপাক মানুষের হেদায়েতের জন্য নমুনা বানিয়ে পাঠিয়েছেন। “ইন্নাকা তাহদি ইলা সিরতিম মস্তাক্বিম”(৪২_শুরা-৫২) وَإِنَّكَ لَتَهدي إِلىٰ صِراطٍ مُستَقيمٍ” নিশ্চয় আপনি সরল পথ প্রদর্শন করেন-” আল্লাহপাক তাদেরকে বলেছেন , “লাসতা আলাইহিম বি মুছয়তির”(গশিয়াহ-২২) لَستَ عَلَيهِم بِمُصَيطِرٍ আমি আপনাকে দারোগা করে পাঠাইনি’ যে- আপনি ডান্ডা নিয়ে ঘুরবেন মানুষের এছলাহের জন্য। হায়! কি বলবো! পরস্পরের ঝগড়া ফাসাদের মূল কারণ ও জরিয়া হলো অপরের এছলাহ ও সংশোধনের এরাদা করা। সবচেয়ে বড় ফাসাদের জরিয়া হলো একে অপরের এছলাহের কোশেশ করা। এজতেমাঈয়ত পয়দা করার সবচেয়ে বড় জরিয়া হলো প্রত্যেকে নিজের এসলাহের ফিকির করা। হাঁ আমাদের কাজ হলো গলত করনে ওয়ালাকে সহি কথা বলে দেওয়া। তাজকির-আলোচনা-মুজাকারা আমাদের জিম্মাদারি। এই জমানায় তাজকির তো নেই তানকির-ইনকার-অপরকে দোষারোপ ও হামলা করা আছে। উনি একে ইনকার করে। ইনি উনাকে ইনকার করে। এ ওকে ইনকার করে। ও একে ইনকার করে।

নবিওয়ালা কাজে তানকির নেই । তাজকির আছে। ইয়াদ করিয়ে দেওয়া। হুজুর সা: এর মসজিদে কেউ পেশাব করে দিয়েছে। মসজিদে পেশাব! হাঁ দুনিয়ার সমস্ত মসজিদের চেয়ে হাজার গুণ উত্তম মসজিদে বায়তুল্লাহর পরেই যার মর্যাদা। হুজুর সা: সম্মানী মসজিদ হওয়ার প্রতি খেয়াল করলেন না। মসজিদের পবিত্রতার প্রতি খেয়াল করে অপরাধকে বড় করে দেখলেন না। এসব কোনদিকেই তিনি মনযোগ দেননি। সাহাবাগণ দৌড়ে এসেছেন পেশাবকারীকে বাধা দিতে। দেওয়া দরকার। যেহেতু সে গলত করতেছে। হুজুর সা: বললেন , তাকে ছাড়ো পেশাব পূর্ণ করতে দাও।

পেশাব পুরো করেছে। তিনি ফরমাইলেন, পেশাব করার পরে এক বালতি পানি এখানে ঢেলে দাও। মসজিদ পাক হয়ে যাবে। তার বে-উসুলীকে অপরাধকে হালকা করে দিয়েছেন মানুষের নজরে। এটা ফরমাননি যে, শীঘ্রই এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে। (অন্য ধর্মের লোক আমাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পেশাব করেছে!!) কোন মোকদ্দমা বা বিচার বসানো হবে। (মুখে কালি লাগিয়ে) তার এতবড় অপরাধের পাবলিসিটি ও নগরায়ন করা হবে। বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। এসব কিছুই বলেননি।

কোন এ্যাকশনে যাননি। এটা তার এসলাহের তরীকা। ফরমান, একে তালীম দাও। তাকে শেখাও মসজিদ কি কাজের জন্য। হুজুর সা: তাকে ডাকলেন বললেন, মসজিদ পেশাব পায়খানার জায়গা নয়। মসজিদ এবাদত জিকির ও তেলাওয়াতের জায়গা। হযরতজী রহ: ফরমাতেন, প্রত্যেক মুসলমানকে আজমতের দৃষ্টিতে দেখার মশক করো। কেননা একজন মুসলমানের মাকাম বায়তুল্লাহর চেয়ে উঁচু। মানুষ কত রকমের কতভাবে আশা করে বায়তুল্লাহ শরীফ দেখার জন্য। বলে ‘দোয়া করবেন আমিও যেন বায়তুল্লায় যেতে পারি। আল্লাহপাক যেন আমারও ব্যবস্থা করে দেন। বলুন, কোন মুসলমানের জেয়ারতের জন্য কি এমন কাইফিয়ত ও অবস্থা তৈরী হয়? এটা একিনী কথা, যেকোন ধরণের মুসলমানই হোক বায়তুল্লাহর চেয়ে উঁচু তার মাকাম।

বায়তুল্লাহকে সম্মোধন করে হুজুর সা: বলেন, তোমার সুগন্ধি অনেক উত্তম, তোমার সম্মান ওয়াজিব কিন্তু এটাও জেনে রেখো- একজন মুসলমানের মাকাম তোমার চেয়েও উঁচু। এজন্য বলা হয়েছে- ‘ক্রটিকারীদের সহি কথা বাতলাও'। আমাদের একাজে মোয়াখাজা-ধরপাকড় নেই। মোজাকারা আছে। প্রথম আদেশ আপনি নরম থাকুন।

গলতীকারীদের সঙ্গে কঠোরতা নেই। এর দ্বারা পরস্পরে মোকাবালা পয়দা হয়। তুমি তার ভুল ধরবে তাহলে সে তোমার ভুল ধরতে থাকবে। আদেশ করা হয়েছে মুসলমানের আয়েব (দোষ) তালাশ করোনা। মুসলমানের দোষের থেকে নজর এভাবে হটাতে হবে যেভাবে একজন ঘুমন্ত ব্যাক্তির ছতর (খোলা থাকলে) তার থেকে নজর হটাতে হয়। ঘুমন্ত ব্যক্তি ঘুমিয়ে আছে। সে পার্শ্ব পরিবর্তন করলো। তার ছতর খুলে গেছে। বলা হয়েছে তার ছতর ঢেকে দাও এমনভাবে যেমন তুমি দেখনি।

সে তো অপারগ। কারণ সে ঘুমন্ত। তার কোন গুনাহ হবেনা। কিন্তু জাগ্রত ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে দেখে বা অন্যকে দেখায় তাহলে সে গুনাহগার হবে। দ্বীনের আহকাম পালন করা না করা হিসেবে উম্মত ঘুমের ভেতরে আছে। অনেক হুকুমের ব্যাপারে তাদের কোন ধারণাও নেই। তুমি তাদের গুনাহের আলোচনা সমালোচনা করতেছ অথচ সে ঘুমে বিভোর। বাতেলের আলোচনা ছেড়ে দাও। যেটার নির্মূল হয়ে যাওয়া তুমি চাচ্ছো সেটার আলোচনা ছেড়ে দাও সেটা খতম হয়ে যাবে।

মানুষ মুস্তাকিল মজলিশ (স্বতন্ত্র আসর, সমাবেশ ও প্রেস) বানিয়ে নিয়েছে দোষের আলোচনার জন্য। কেননা গীবতের চেয়ে মজাদার কোন গোশত নেই। শয়তান এতে এত মজা রেখেছে যে কোন ধরণের খাবারে বা গোশতে এত মজা নেই। সব পাখির গোশত একদিকে আর গীবতের গোশত আরেক দিকে (গীবতই মজা লাগে)। কেননা শয়তানকে আল্লাহপাক শক্তি দিয়েছেন। যেকোন গুনাহকে অলঙ্কৃত করার ক্ষমতা তাকে দিয়েছেন।

“ইন্নামা খুলিক্বা মুজাব্বিনা” গোনাহকে সাজানো ও অলঙ্কৃত করা শয়তানের কাজ। গুনাহের স্বাদ ও মজাকে প্রকাশ করে দেয় আর এর পরিণাম ও ক্ষতিকে লুকিয়ে রাখে। মানুষ গীবতকে মুস্তাকিল মামুল (দৈনন্দিনের কাজ বা স্বতন্ত্র জীবিকার পেশা) বানিয়ে রেখেছে। দোকানে বসে আডডা দেয় গীবত করে। গীবত করা নিয়মিত খাবার খাওয়ার মত অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। গীবতের এই কাজটা ঐসব লোকই করে যারা তাদের অতিরিক্ত সময়টা (ফারেগ ও ফালতু সময়টা) এনফেরাদী দাওয়াতে লাগায়না। ফুরসৎ সময়টা কি করবে চিন্তা করে।

প্রত্যেকে নিজেকে নিজে দাওয়াতে এত ব্যস্ত রাখা চাই যে কোন সময়ই ফুরসৎ না মিলে। ভুলকারীদেরকে সহি জিনিস ইয়াদ করাও। আয়েব তালাশ করোনা। লোক ভুল সংশোধনের জন্য দোষ তালাশ করে। যারা সংশোধনের জন্য দোষ তালাশ করার পেছনে পড়ে তারা ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী। আল্লাহপাক ফাসাদ সষ্টিকারীদের থেকে এছলাহের কাজ নেন না। অনেকে এসলাহের নামে দোষ তালাশ করার জন্য ওঁৎ পেতে থাকে (গোয়েন্দাগীরী করে)। এটা আল্লাহর নিকট খব ঘৃণার কাজ। এদের দ্বারা এসলাহের কাজ নেন না। এ তো আল্লাহপাকের দৃষ্টিতে মুফসিদ (ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী)। একেবারে সহজ কথা।

হাদিসে এসেছে”ইন্নাকা ইনিত্তা বায়াতা আওরাতাল মুসলিমি-না আফসাদাত্তাহুম” যদি তুমি মুসলমানদের মাঝে দোষ তালাশ করতেছ (সংশোধনের উদ্দেশ্যে হলেও) তাহলে তুমি তাদের মাঝে ফ্যাসাদ চাচ্ছো। মুসলমানের দোষ খুঁজে বেড়াবেনা । হাঁ, তাঁদের গুণ তালাশ করো। তাদের গুণ নিজের ভেতরে আনয়ন করতে তাদের সাথে থাকো। তাদের দোষের কারনে তাদের ঘৃণা করোনা। তাদের থেকে আলাদা হয়োনা। এটা এজতেমাঈয়তের গুঢ় রহস্য। সাথে থাকা সাহাবাদের তরিকা ছিল । কারো কোন সৌন্দর্য শুনতে পেলে তার সাহচর্য লাভ করতেন। আবদুল্লাহ বিন আমের বিন আ’স রা: তিন দিন পর্যন্ত শুনছেন সা’দ রা: এর ব্যাপারে তিনি জান্নাতী। তিন রাত তার কাছে মেহমান হলেন। তার এবাদত তার রিয়াজত তার মোজাহাদা তার রাতের তাহাজ্জুদ রাতের দোয়া কান্নাকাটি লক্ষ্য করার জন্য। তার আমাল দেখবো আমিও তেমন এবাদত করবো। তিনদিন থাকলেন , হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস রা: জেগে থাকতেন। হযরত সা’দ রা: এশা পড়ে ঘুমিয়ে যেতেন ফজর পর্যন্ত। তিনি তাঁর গুণ দেখতে গিয়েছিলেন। না তেলাওয়াত, না তাহাজ্জুদ, না দোয়া। কোন বিশেষ কিছু দেখলেন না তিনদিনের ভেতরে। হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আ’স রা: মনে মনে ভাবলেন কিছুই তো করেনা। কিন্তু জান্নাতী মানুষ।

ওখান থেকে চলে যাচ্ছেন তার আমলকে তুচ্ছ ভেবে। আমাদের অবস্থা হলো এই যে, যদি আল্লাহপাক কারো ভেতরে ১০০টি ভাল গুণ রেখেছেন আর ১টি দোষ রেখেছেন- তাহলে ঐ ১টি দোষ দিয়েই ১০০টি গুণকে দাফন করে দেই। (গুণ আর চোখে পড়েনা)। হযরত সা’দ রা: তাকে ডাকলেন ও বললেন আমার কাছে তাই আছে যা আপনি দেখলেন। আমার ভেতরে একটি গুণ আছে সেটি হলো যদি আল্লাহপাক কাউকে কোন ভালাঈ দ্বারা পুরস্কৃত করেন তাহলে সে ব্যাপারে আমার দিলে কোন হাসাদ (হিংসা) হয়না।

দেখুন দোস্ত! কাজ থেকে পেছনে হটানোর সবচেয়ে বড় ক্ষতিকর শক্তি হাসাদ হিংসা। বড় বড় বাদশাহ আর বড় বড় মুশরিক ইসলাম থেকে মাহরুম ও বঞ্চিত হয়েছিল দুই কারণে। এক কারণ তো ছিল এই যে, আমরা হক তো বুঝেছি কিন্তু কওমকে জনগণকে কি জবাব দেব? কওমের লোকেরা বলবে, আমাদের সঙ্গ ছেড়ে দিচ্ছ? অথচ তাদের কাছে হক স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

তাদেরকে তাদের জোতিষীরাও বলে দিয়েছে তাদের গণকেরা বলে দিয়েছে। ইনি সত্য নবি, ইনি যা বলছেন ঠিক বলছেন। তারা বলতো কওমকে কি জৰাৰ দেব। আবু তালেবও বিলকুল ইসলামের কিনারায় এসেও ফেরত গেছেন । কওমকে কি জবাব দেব। বহুত জরুরী কথা খেয়াল করুন, অনেক লোক হক কথা বুঝে কিন্তু চিন্তা করে নিজের কওম, নিজের কবিলা, নিজের এলাকা কি করবো পরে! আমরা আপনজনদের কি জবাব দেব পরে !! এজন্য হক বুঝেও হকের দিকে আসতে পারেনা । কারণ কওমের ও দলের লোককে কি জবাব দিবে।

দ্বিতীয় কারণ ছিল, তাদের অন্তরের হাসাদ হককে কবুল করতে দেয়নি। কিছু কিছু মুশরিক ঈমান এজন্য আনেনি এবং হক কবুল করেনি- এই হিংসায় যে (নবুয়তের) এতবড় কল্যাণ ও খায়র এর কপালে কেন জুটলো? (কল্যাণ এর ভাগ্যে জুটেছে তাই এঁকেই মানতে হবে? তা মানা যায়না) এর অংশে নবুওয়ত কেন এলো? এসব মানসিক চিন্তা তাদেরকে তাড়া করতো।

এজন্য মুশরিক আমের বিন তোফায়েল হুজুর সা: এর কাছে এসে দাবি জানালো। আপনি আমার তিনটি কথার যেকোন একটি মেনে নিন । প্রথম দাবি এই যে, আমাকে আপনার খলীফা বানান। আমের বিন তোফায়েল মুশরিক খলিফা হতে চাইল। বলে, আমাকে লিখে দিন আপনার পরে আমি খলিফা হবো” । এটা কিভাবে হয়? এটা তো উপরের নির্বাচন, বাদশাহী নিয়ম তো না । ফরমাইলেন, না এটা হবেনা।

যদি এটা লিখে না দেন- তাহলে দ্বিতীয় হলো এলাকা বন্টন করুন। শহর আমার থাকবে গ্রামগুলো আপনার থাকবে। আর যদি এটাও আপনার পছন্দ না হয়। তাহলে তৃতীয় একটিই শেকেল বা একটিই পথ রয়ে গেছে। আমি হাজারো ঘৌড় সওয়ার নিয়ে আপনার মোকাবালা (প্রতিদ্বন্ধিতা) করবো । ফরমাইলেন, হাঁ এটা করো। কেননা তোমার মোকাবালা আমাদের সাথে হবে না। তোমার মোকাবাল আল্লাহর সাথে হবে।

সোজা কথা, খেলাফত নবুওয়ত এসব আমানত আমাদের কাছে। যাকে আলাহপাক যেই জিম্মাদারী দিয়েছেন সেই জিম্মাদারী তার কাছে আমানত। ঐ আমানতের যেন হেফাজত করে। আমানতের হেফাজত করতে গিয়ে আগত নাগাওয়ারীকে যেন বরদাশত করে। আমানতকে যেন নষ্ট না করে। এখলাছের সাথে যেন ঐ আমানতকে আদায় করে। এটাও আমানতকে নষ্ট করার অন্তর্ভূক্ত যে আমানতকে আদায় করতে অস্বীকৃতি জানায়। যদি তুমি আমানতের আদায়ে মুখলিছ হও তাহলে আল্লাহপাক তোমার মদদ করবেন। কাফেরকে তিনি খেলাফত দিতে ইনকার করেছেন। (কেননা এটা দাবীর বস্তু নয়। এটা আল্লাহ প্রদত্ত্ব এন্তেখাব। সুতরাং সে এর যোগ্য নয়)।

আর জমিন সবটাই আল্লাহপাকের “ইন্না আরদাল্লাহ্”। এতে কারো কর্তৃত্ব চলবেনা। দ্বীনের কাজের জন্য এলাকা তাকসীম (বন্টন) হয়না। দুনিয়ার কাজের জন্য তো মানুষ জমিন ভাগ-বাটোয়ারা করে রেখেছে। রাজত্বের জন্য জমিন তকসীম করে রেখেছে। দ্বীনের কাজের জন্য জমিন তাকসীম হয়না। এজন্য হুজুর সা: আমের বিন তোফায়েল মুশরিকের দাবি ‘জমিন তকসীম করুন’ কথাটিও মানেননি।

আমের বিন তোফায়েল মুশরিকের তৃতীয়দাবি মোকাবালার কথা মেনে নিয়েছেন। যেহেতু মোকাবালা আল্লাহপাকের সাথে। আরজ করছিলাম হাসাদকারী হিংসুক, হক জানা সত্বেও মাহরুম হয়ে যায়। আমাদের এই কাজে মোতালাবা-দাবী আদায় নেই। ইহতেজাজ-হারজিত- যুক্তি চালাচালি দলিল খন্ডাখন্ডি এসব নেই। ইতিয়াজ আছে (সাথীদের, কাজের, হেদায়েতের, নুছরতের ইত্যাদির) মুখাপেক্ষিতা আছে।

এহতেজাজ (উসুলের জন্য লড়াই) নেই। ইহতেয়াজ মোহতাজ হয়ে চলা। উসূল লড়ার জন্য দেওয়া হয়নি। ডর-ভয়ের জন্য দেওয়া হয়েছেউসুলের জন্য লড়াই করা সবচেয়ে বড় বে-উসূলী। লড়ছো কেন ভাই? বলে, উসুলের জন্য। এটাই বে- উসুলী। এজতেমাঈয়ত তৈরী হবে একে অপরের সঙ্গে নরম হয়ে থাকলে। এক হুকুম এটা। আরেক হুকুম দিয়েছেন, কেউ ভুল করলে তাকে মাফ করে দাও।

জিজ্ঞাসা করা হয়েছে গোলামকে দিনে কতবার মাফ করতে হবে। একদিনে ৭০ বার মাফ করো। বন্ধুকে বাবাকে ভাইকে ছেলেকে বলেননি। গোলামকে বলেছেন। তাহলে সন্তানদের কি মাকাম হতে পারে? এটাতো গোলামের হুকুম। হুজুর সা: সাহাবাদের এই মেজাজ বানিয়েছেন। তোমরা মাফ করো সাথীদের। এজন্য কোথাও তাকাবুল (মুখোমুখি) কম্পেয়ারের পরিস্থিতি তৈরী না হয়। তা’আউনের শেকেল যেন হয়। হকের তা’আউন। গলত কাজের তা’আউন নয়।

“তা’আউনু আলাল বিররা ওয়াত্তাকওয়া ওয়া লা তা’আউনু আলাল ইছমি ওয়াল য়ুদওয়ান” (মায়িদা-২) تَعاوَنوا عَلَى البِرِّ وَالتَّقوىٰ ۖ وَلا تَعاوَنوا عَلَى الإِثمِ وَالعُدوانِ সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।”গলদ কাজে তা’আউন সাহায্য করোনা। তাহকিক করে যেটা হক প্রমানিত হয় তার তা’আউন করো। হকের তাকাবুল (মুখোমুখি, প্রতিদ্বন্ধিতা) করোনা। একে অপরের মুয়াবিন (সহযোগী) হও একে অপরের মুকাবেল (প্রতিদ্বন্ধী) হয়োনা। মুকাবেল হলে দূরত্ব পয়দা হবে। মুয়াবিন হলে কাছে হয়ে যাবে।।

“ফাআফু আনহুম ওয়াসতাগ ফিরলাহুম” (ইমরান-১৫৯) فَاعفُ عَنهُم وَاستَغفِر لَهُم হুজুর সা: মাফ করেছেন কাকে? তার খাবারে ইহুদী বিষ মিশিয়েছে তাকেও মাফ করেছেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছে তুমি এমন কেন করেছো? বলে আমি দেখতে চেয়েছি আপনি সত্য নবি কিনা? সাহাবাগণ কতল করতে চাইলেন। বললেন, ছেড়ে দাও। যখন আল্লাহপাক গোশতের থেকে আওয়াজ দিয়ে ওহির জরিয়ায় সাবধান করে দিয়েছেন। তাহলে ধরপাকড়ে কি লাভ? কেন মাফ করলেন যেহেতু ঐ ইহুদি মহিলার হেদায়েতের আশাবাদি ছিলেন। যে মানুষের হেদায়েত চাইবে সে বড় থেকে বড় দোষ মাফ করে দিবে। অন্যের হেদায়েত চাচ্ছে কিন্তু মাফ করতে তৈরী না।।

হুজুর সা: কত মাফ করেছেন বিষ মিশানেওয়ালা যাদু করনেওয়ালা ইত্যাদি কত শ্রেণীর লোককে মাফ করেছেন। যদি মাফ করার উদারতা দেখাতে পারো তাহলে তারা ফেরৎ আসতে পারে বলে আশা করা যায়। মাফ না করলে ফেরৎ আসার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। মাফ করা মানে এস্তেকবাল করা। আবু জেহেলের ছেলেকে এস্তেকবাল করেছেন আবার একরামও করেছেন। তার আসার আগে ছাহাবাদেরকে নিষেধ করেছেন তার বাবার নামে কিছু না বলতে। আবেগের বশবর্তি হয়ে বাবার নামে কেউ কিছু না বলতে হুকুম করেছেন।

হযরত উমর রা: হুজুর সা:কে স্মরণ করাচ্ছিলেন সে এই করেছে। সে ঐ করেছে। অমুক করেছে। তমুক করেছে। হুজুর সা: নামাজই পড়তেছেন। নবিজি সা: আবদুল্লাহ বিন উবাই বিন সলুলের লাশের একরাম ও সম্মান করেছেন। কবর থেকে বের করেছেন। নিজের জামা মোবারক পরিয়ে দিয়েছেন। জানাজা পড়েছেন। হযরত উমর রা: বাধা দিচ্ছিলেন। এটা করবেন না ইয়া রাসুলাল্লাহ! বলেন, না। ওমর পিছে সরো।

যখন আলাহর পক্ষ থেকে পরিস্কার নিষেধাজ্ঞা এসেছে মোনাফিকদের জানাজা পড়তে। তাদের কবরের কাছে যেতে। এস্তেগফার করতে নিষেধ এসেছে তখন ছেড়েছেন। প্রশস্ত দিল চাই উম্মত বানাতে হলে । তঙ্গেদিলী দ্বারা ফেরকা তৈরী হয়। উম্মত তৈরী হয় এভাবে। তুমি কারো একরাম কওমী-এলাকার-ভাষার বনিয়াদে করোনা। আমার উপকার করেছে এজন্য একরাম করছি এমন না। হকের পক্ষ নাও যতই সে দুরের হোক। বাতিলের পক্ষ নিওনা যতই সে কাছের হোক, নিজের কেউ হোক। সাথীদের জন্য নির্জনতায় এস্তেগফার ও দোয়া করো। সাথীর কমজোরী থাকা স্বত্তেও সাথে নিয়ে চলো। আমরা তো কাজ করছি। তুমি আসতে চাইলে আসো আর না আসতে চাইলে না আসো- এমন নয়। সাথীকে কাছে করার চেষ্টা করো।

দুরত্ব পয়দা হয় বদগুমানী থেকে। শয়তান বদগুমানী পয়দা করে । বদগুমানী দূর করতে সাথীদের সাথে মোলাকাত করো। তারপর রাতে নামাজ পড়ে পড়ে মাঙ্গো। সকালে ফের মুলাকাত করো। ধীরে ধীরে আল্লাহপাক এই দুরত্ব খতম করে দিবেন। কেয়ামতে প্রশ্ন হবে, পরস্পরের দুরত্ব মিটানোর জন্য কি চেষ্টা করেছিলে। ওমর রা: আকাঙ্খ করতেন। হায়! যদি এই ইহুদি মুসলমান হয়ে যেত আমি তাকে হিসাব নিকাশের কাজে লাগাতাম। কেননা সে হিসাবে অঙ্কশাস্ত্রে খুব পাকা।

আমার সি.এ. বানাতাম। তার ছলাহিয়ত থেকে ফায়দা উঠানোর জন্য আশা। মুসলমানের মালের তাকসীম, ভাগবন্টন, বায়তুল মালের হিসাব নিকাশ করতে পারতো। যিনি একজন ইহুদি থেকে এই ফায়দা উঠাতে চাচ্ছেন। তাহলে একজন মুসলমানের দ্বারা কেমন কাজ নিতে চাইবেন। দায়ীর মেজাজে এস্তেগনা না হওয়া চাই। আল্লাহর মদদের একিন রাখো। এজতেমাঈয়তের আসবাব এখতিয়ার করো।

“ইয়াদুল্লাহি আ’লাল জামা-হ্” জামাত তাকে বলে যাদের সব আমল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একসাথে হয়। এজতেমাঈয়ত এতাআতের সাথে হয়। ইমামের তাকবীরের সাথে সাথে তাকবীর বলবে। ইমামের রুকুর সাথে রুকু করবে। ইমামের সালামের সাথে সালাম ফিরাবে। ইমামের আগে সালাম ফিরালে হবেনা। যারা আল্লাহর মদদের আশাবাদি বলে দাবি করে আর মদদের আসবাব এখতিয়ার করে না। আর বলে কিছু হবেনা। সেজন্য আযম করো আমাদেরকে এর পাবন্দ বানাতে হবে। আল্লাহপাক তার বান্দাদের মেহনত আর কোশেশ কদরদানী করেন। হরকতের উপর আসেন আর কাজে যত একাগ্রতা হবে তত তরক্কি করবে।

আগেকার লোক ঘোড়ার গাড়ী ‘তাংগা’ চালাত। ঘোড়ার চোখে পট্টি লাগিয়ে রাখতো যেন চতুর্দিকে নজর না যায়। এভাবে চতুর্দিক থেকে নজর সরিয়ে সামনে দেখো কোথায় তাকাজা কোথায় যেতে হবে। এদিক সেদিকের আলোচনায় কান না দিয়ে মেহনত করতে থাকো। নতুবা তোমাদের জান কমজোর হয়ে যাবে। তোমাদের আসল মনজিল দুরে পড়ে যাবে। কাজেই তাকাজা সারা আলামে এত পারিমান! হযরতজী রহ: বলতেন যতক্ষণ কাজের চাপ খানা খাওয়ার কথা না ভুলিয়ে দেবে নিজেকে কাজওয়ালা মনে করোনা।

বর্তমানে জরুরিয়াত তো দুরের কথা খায়েশাত কাজের কথা ভুলিয়ে দেই। যদি সারা আলমের তাকাজা দেখে দিলে ব্যথা না হয় (সে দায়ী নয়)। হযরতজি রহ: বলতেন, সারা আলমের এরতেদাদ (মুসলমান মুরতাদ হচ্ছে ) দেখলে হালাল কামাইয়ের কথা ভাবতে শরম লাগে। যদি কেউ মারা যায় তখন আশপাশে কেউ দোকান খুলেনা। পড়শীর ঘরে কেউ মারা গেলে মানুষ বিয়ে শাদির তারিখ পাল্টিয়ে ফেলে। এই ভেবে যে পশীর বাড়িতে কান্নাকাটি আর আমাদের এখানে খুশি।

ইলিয়াছ রঃ বলতেন, একজন মুসলমান জাহান্নামে যাওয়ার চেয়ে বড় হাদেছা (দুর্ঘটনা) আর নেই। উম্মতের হালাত কি? এর সমাধান কি নেসাবের উপরে ও মামুলের উপরে থাকলে কোনদিন হবে? যারা নেছাবী ও মামুলের চিল্লা দেয় তারা মনে করে তবলীগের উপরে এহছান করছে। আগের যুগের সাথীরা কুরবানী করতেন সাহাবাদেরকে দেখে । সাহাবাগণ এত কুরবানী করে নিজেদের মেহনতকে কোতাহ (খাটো) মনে করতেন। কোতাহীর এহসাস ( অনুভুতি) মানুষকে আগে বাড়ায়। আর নিজের কারনামা অন্তরে কিবির ( অহংকার) পয়দা করে। সে নিজের মেহনতের বিনিময়ে অধিকার মোতালাবা করবে। আমরা এত এত মেহনত করেছি এতে আমাদের কি মিলেছে।

এনফেরাদী দাওয়াতকে ওজিফা বানাও। নিজেকে মশগুলির মধ্যে রাখো। বেরুণ মুলুকে পুরানানো সাথীদের তাকাজা বেশী।  বেরুণ মুলুকের জন্য নাম পেশ করুন। পুরনানো সাথীদের এই তরতীব।

 

কিছু গোপন কথা, কাউকে বলবে না, শুধু আমলে আনবেঃ

¨ ক্ষুধায় খুলে দেমাগের তালা

¨ হাঁটাই খুলে শরীরের তালা

¨ জিকিরে খুলে আরশের তালা

¨ কান্নায় খুলে দিলের তালা

¨ সবরে খুলে ধন সম্পদের তালা

¨ ছদকায় খুলে রিজিকের তালা

¨ জবানের হেফাজতে খুলে মারেফাতের তালা

¨ নজরের হেফাজতে খুলে রুপে নুরের তালা

¨ জানা এলেমের আমলে খুলে অজানা এলেমের তালা

¨ বীর্জের হেফাজতে খুলে শক্তির তালা

কালেকশন

 

সংগৃহীত

শিক্ষক বাতায়ন

প্রোফাইল

Please, you are invited to the

Teachers Batayon

Profile

ppt content:

https://www.teachers.gov.bd/content/details/1161223

Video content:  https://www.teachers.gov.bd/content/details/1153040

Blog:

https://www.teachers.gov.bd/blog-details/627044

Publication:

https://www.teachers.gov.bd/content/details/1134641

 

 

 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি