সহকারী অধ্যাপক
২৫ মে, ২০২২ ০১:০২ অপরাহ্ণ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক্স
কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক্স
যে সকল মেশিন বা
যন্ত্রের কাজ করার বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বয়ংক্রীয় ব্যবস্থা বা বুদ্ধিমত্তা আছে তাদের
আমরা বুদ্ধিমান মেশিন বলে থাকি। কারণ তারা বুদ্ধিমত্তার সাথে জটিল জটিল কাজ সহজে ও
নির্ভুলভাবে সম্পদন করে। আর এই সকল যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তা কৃত্রিম, অর্থাৎ মানুষের প্রদত্ত।
এদের নিজস্ব কোনো বুদ্ধি নেই। মানুষ যতটুকু বুদ্ধি বা ক্ষমতা দিয়ে এদের তৈরি করবে,
এরা ততটুকু বুদ্ধিমত্তা বা ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারবে। আমরা এদেরকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন
মেশিন বা বুদ্ধিমান মেশিন (smart
machines) বলে থাকি। বুদ্ধিমান মেশিনের মধ্যে কম্পিউটার, স্মার্টফোন, রোবট ইত্যাদি
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এদের বুদ্ধিমত্তাকে আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (artificial intelligence-AI) বলে থাকি। কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তা কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা,
যেখানে মানুষের তৈরি বুদ্ধিমান যন্ত্রগুলো যেন মানুষের বুদ্ধিমত্তার মতো আচরণ করতে
পারে, সে সম্পর্কে গবেষণা করা হয়। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে মানুষ যেভাবে কাজ করে, চিন্তা
করে কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, সেভাবে কাজ করা, চিন্তা করা, কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণের
ক্ষমতাকে কম্পিউটারের মাধ্যমে রূপদান দেয়া হয়। কোনো বিষয় সম্পর্কে ধারণা বা জ্ঞান অর্জন,
সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা, সমস্যা সমাধানে ক্ষমতা, অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেয়া, অর্জিত
জ্ঞানকে কাজে লাগানো, নতুন পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেয়া, ভাষা বুঝতে পারা মানুষের প্রভৃতি
বুদ্ধিমত্তার কাজকে কম্পিউটারের মাধ্যমে বাস্তবায়নের গবেষণা হচ্ছে এ শাখায়। কম্পিউটার
কীভাবে মানুষের মতো আচরণ করবে, কীভাবে অসম্পূর্ণ তথ্যের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রদান
করবে, কীভাবে কোন সমস্যার সমাধান দিবে, কীভাবে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করবে ইত্যাদি বিষয়
নিয়ে গবেষণা চলছে। রোবট তৈরি ও এদের কার্যপদ্ধতি সম্পর্কিত, প্রাকৃতিকভাবে ভাষার প্রক্রিয়াকরণ,
নিপুণ ব্যবস্থাপনা, নিরপেক্ষ নেটওয়ার্ক, যুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার
ব্যবহার লক্ষ করা যাচ্ছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
প্রয়োগের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ক্ষেত্র হচ্ছে:
১। গেইম খেলা (Game
Playing): কম্পিউটারকে মানুষের সাথে গেইম খেলার সক্ষমতা অর্জনে প্রোগ্রাম
তৈরি;
২। এক্সপার্ট সিস্টেম (Expert
System): বাস্তব জীবনের
পরিস্থিতির বা উপস্থিত ঘটনার প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহনের প্রোগ্রাম তৈরি;
৩। স্বাভাবিক ভাষা (Natural Language): মানুষের স্বাভাবিক ভাষা উপলব্ধি
করার প্রোগ্রাম তৈরি;
৪। নিউরাল নেটওয়ার্ক Neural Networks): প্রাণির মস্তিস্কে সংঘটিত বিভিন্ন
ধরনের শারীরিক সংযোগ তৈরির মাধ্যমে বুদ্ধিমত্তার অভিব্যক্তি প্রকাশের সিস্টেম তৈরি
এবং
৫। রোবটিক্স (Robotics): দেখে, শুনে ও পারিপার্শিক পরিবেশে
সাড়া প্রদানকারী বুদ্ধিমান যন্ত্র বা রোবট তৈরির যন্ত্র ও প্রোগ্রাম তৈরি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
যেমন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিদ্যার একটি শাখা। তেমনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের
একটি ক্ষেত্র বা শাখা হচ্ছে রোবটিক্স, যেখানে রোবটের ডিজাইন ও কাঠামো তৈরি এবং রোবটের
কাজ ও ব্যবহার সম্বন্ধীয় বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। তবে ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার
বিজ্ঞান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেকাট্রনিক্স, ন্যানোটেকনোলজি, বায়োইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি
ক্ষেত্রেও এই টেকনোলজি ব্যবহৃত হয়। রোবটিক্স শব্দটি এসেছে রোবট শব্দ থেকে, আর রোবট
একটি রোবট একটি পুরানো চার্চ স্লাভোনিক শব্দ robota থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে "দাসত্ব,"
"জোর করে শ্রম"। রোবট (Robot) শব্দটি সর্বপ্রথম প্রবর্তিত হয় ১৯২০ সালে প্রকাশিত
চেক সাংবাদিক, নাট্যকার ও উপন্যাসিক কারেল
কাপেক (Karel Capek) এর লেখা RURবা Rossum's Universal Robots নামের নাটক হতে। আর রোবটিক্স (Robotics)
শব্দটি প্রিন্টে প্রথম ব্যবহার করেন ১৯৪০ সালে আমেরিকার বিজ্ঞানভিত্তিক কল্পকাহিনীর
লেখক ও বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আইজ্যাক আসিমভ (Isaac
Asimov)-এর লিখিত লায়ার নামক ছোট গল্পে। উক্ত বইতে তিনি রোবট বা স্মার্ট মেশিনের আচরণ
সম্পর্কিত ৩টি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। তবে আজকের তথ্যপ্রযুক্তির দিনে রোবটিক্স হলো
দ্রুত পরিবর্তনশীল একটি শাখা। রোবটিক্সের ক্ষেত্রে কম্পিউটার বর্তমানে যন্ত্রপাতি তৈরি
ও অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্টে ব্যবহৃত হচ্ছে। কম্পিউটার নির্দিষ্ট কিছু কাজ করতে এবং কম্পিউটার
মানুষের মতো সমস্যা সমাধানে সক্ষম। তথাপি বর্তমানে সম্পূর্ণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শনে
সক্ষম কোনো কম্পিউটার নেই। অবশ্য কম্পিউটার গেইম তৈরিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি। দাবা খেলায় পারদর্শী কম্পিউটার মানুষকে হারাতে সক্ষম হয়েছে।
১৯৯৭ সালের মে মাসে Deep Blue
নামক সুপার কম্পিউটার
বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ান গ্যারি কাসপারভকে একটি ম্যাচে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছে।
এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নীতিতে তৈরি, যা মানুষ কিংবা বিভিন্ন বুদ্ধিমান প্রাণির মতো কাজ করতে পারে। রোবট অত্যন্ত দ্রুত, ক্লান্তিহীন ও নিখুঁত কর্মক্ষম একটি যন্ত্র। বর্তমানে গৃহাস্থলী কাজ, কল-কারখানা, হাসপাতাল, সামরিক বাহিনী, খনি, শিক্ষা, গবেষণা, বিনোদন প্রভৃতি ক্ষেত্রে রোবট ব্যবহার করা হয়। কাজের ধরন বা ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের রোবট রয়েছে। এদের মধ্যে Industrial robots Domestic ev household robots, Medical robots, Service robots, Military robots, Entertainment robot, Mobile robots, Walking robots, Space robots, Hobby & competition robots বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের অন্যতম নিরাপত্তা বাহিনী র্যাব বোমা শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় কাজে বিশেষ ধরনের রোবট ব্যবহার করছে।
রোবটের কাজকে কীভাবে
আরো সহজ করা যায় এবং কীভাবে বেশি পরিমাণ কাজের নির্দেশনা দেয়া যায়, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা
রাতদিন গবেষণা করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি ব্রিটেনের কয়েকজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী মনোবিজ্ঞানীদের
সহায়তায় এমন কিছু রোবট তৈরি করেছেন, যা মানুষের আচার-আচরণ, ব্যবহার, কর্মপ্রক্রিয়া
প্রভৃতি অনুসরণ করে সে মোতাবেক কাজ করতে পারবে। সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন রোবট দিয়ে
জটিল জটিল নির্দেশনা প্রয়োগ করে রোবটকে নিখুঁত কাজ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেকটা
মানুষের বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানো যাবে।