Loading..

খবর-দার

১৭ জুন, ২০২২ ১১:৫১ অপরাহ্ণ

বৈদ্যুতিক

কর্মস্থলে বৈদ্যুতিক ঝুঁকি এড়িয়ে নিরাপদে কাজ করার উপায়

কর্মস্থলে দুর্ঘটনার বড় কারণগুলোর মধ্যে ইলেকট্রিসিটি এবং আগুন অন্যতম। এ দুটি উৎস থেকে বড় ধরণের দুর্ঘটনা এবং ক্ষতি হয়ে থাকে। আজ আমরা ইলেক্ট্রিক্যাল রিস্ক (electrical risk) বা বৈদ্যুতিক ঝুঁকি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।

বৈদ্যুতিক কারেন্ট কর্মক্ষেত্রে একটি গুরুতর ঝুঁকি। ইহা কর্মীদের প্রতিনিয়ত ঝুঁকির সম্মুখীন করে। অনেক শ্রমিক তাদের দৈনন্দিন কাজ বা দায়িত্ব পূরণের সময় কর্মস্থলে বৈদ্যুতিক কারেন্ট এর সংস্পর্শে আসেন/থাকতে হয়। কিন্তু অনেকেই বিদ্যুৎ সংক্রান্ত বিপদসমূহ সম্বন্ধে জ্ঞাত নন। এতে করে তাদের তড়িতাহত হয়ে মারাত্বক দুর্ঘটনাসহ অন্যান্য ক্ষতি / বিপদের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

ইলেক্ট্রিসিটি বা বিদ্যুৎ কেন বিপদজনক?

আমাদের জীবনে বিদ্যুৎ খুবই পরিচিত। ঘরে-বাইরে, কর্মস্থলে সকল স্থানে বিদ্যুতের ব্যবহার দেখা যায়। এই জন্য অনেক সময় বিদ্যুতের বিপজ্জনক দিকটি যথেষ্ঠ সতর্কতার সাথে মোকাবেলা করার কথা স্মরণে থাকে না। যার ফলশ্রুতিতে বিদ্যুৎ / বৈদ্যুতিক কাজ দুর্ঘটনা ডেকে আনে।
আমাদের শরীরে শতকরা প্রায় ৬৫ ভাগ পানি। এই কারণে আমাদের শরীর খুব ভাল তড়িৎ প্রবাহী। অর্থাৎ, আমাদের শরীরের ভিতর দিয়ে সহজেই বিদ্যুৎ চলাচল করতে পারে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, যে কোন কিছু বা বস্তুর ভিতর দিয়ে অতিমাত্রায় ইলেকট্রিসিটি / বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে তাপ উৎপন্ন হয়। এভাবে, আমাদের শরীরের ভিতর দিয়ে ইলেকট্রিসিটি প্রবাহিত হলে শরীরের ভিতরে তাপ তৈরি হয় যার কারণে শরীর পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি হৃদযন্ত্রের বা শ্বাসযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রতি বছরে গড়ে প্রতিদিন একজন শ্রমিক কর্মস্থলে বিদ্যুতায়িত হয়!

বৈদ্যুতিক ঝুঁকির কারনে কি কি দুর্ঘটনা বা ক্ষতি হতে পারে?

Advertisements
REPORT THIS AD

সাধারণত চার ধরণের দুর্ঘটনা হতে পারে। যেমন-
ক) বিদ্যুৎ স্পৃষ্টকরণ বা ইলেকট্রোকিউশন (electrocution)
খ) বৈদ্যুতিক শক (electrical shock)
গ) পুড়ে যাওয়া বা দগ্ধ হওয়া (burn)
ঘ) বৈদ্যুতিক শক্তির আঘাতের দরুন পড়ে যাওয়া (falls caused as a result of contact with electrical energy)

বৈদ্যুতিক ঝুঁকি এড়িয়ে কিভাবে নিরাপদে কাজ করা যায়?

১. প্রতিটি বৈদ্যুতিক লাইন সুইচ, সার্কিট ব্রেকার, ফ্যান, কাটআউট, বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রপাতি, জেনারেটর; মোট কথা বৈদ্যুতিক লাইন আছে এমন স্থান দৈনিক ভিত্তিতে পরীক্ষা করতে হবে।
২. কাজের শুরু ও শেষে ইউনিট / ফ্লোরে বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করে দিতে হবে।
৩. কোথাও কোন বৈদ্যুতিক তার (wire) খোলা রাখা যাবে না এবং তারগুলি সুন্দরভাবে ড্রেসিং থাকতে হবে। বৈদ্যুতিক তারে কোন প্রকার টেপ মোড়ানো / ভাঁঙ্গা বা পোড়া প্লাগ, সকেট, সুইচ ব্যবহার করা যাবে না।
৪. ইলেকট্রিক তার (wire) যথাযথ মান ও ডিজাইনের এবং সেফটি রিলে, ওভার লোড ট্রিপিং ও আর্থিং ব্যবস্থা (earthing বা grounding) সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন।
৫. ডি.বি বোর্ড (distribution board) তালাবদ্ধ থাকবে, এতে বিপদজনক সংকেত লাগানো থাকবে এবং ডি.বি বোর্ডের নিচে রাবার ম্যাট থাকতে হবে।
৬. যেকোন যন্ত্রে কাজ করার সময় লাইন ও যন্ত্র সামগ্রীর বৈদ্যুতিক সংযোগ আছে কিনা তা কাজ শুরু করার পূর্বে পরীক্ষা করে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন করে নিতে হবে। কাজ চলাকালীন সময় যথাযথভাবে ইলেকট্রিসিটি বিচ্ছিন্ন রাখার ব্যবস্থা (lock out tag out বা LOTO) করতে হবে। যেমন, জেনারেটরে কাজ করার সময় প্রথমে অবশ্যই গ্রাউন্ডিং করতে হবে।
৭. নির্দিষ্ট কাজের জন্য যথার্থ যন্ত্রপাতি, সেফটি টুলস, পিপিই এবং কাজের প্রসিডিউর বা নিয়ম-কানুন মেনে কাজ করতে হবে। কাজের সময় প্রত্যেক কর্মীকে উপযুক্ত পোশাক, জুতা, হেলমেট, গ্লাভস এবং অনুমোদিত নিরাপত্তা বেল্ট ও স্ট্র্যাপ ব্যবহার করতে হবে।
৮. কার্যক্ষেত্রে ব্যবহারের যন্ত্রপাতি সমূহ সঠিক ভাবে কাজ করছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে এবং যথাপোযুক্ত ভাবে সংরক্ষন করতে হবে। ভেজা শরীরে বা হাতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ধরা যাবে না।
৯. যেসব জায়গা খোলা থাকলে দুর্ঘটনা হতে পারে, সে সব জায়গায় নিরাপদ ঘের প্রদান করতে হবে। বহনযোগ্য মই দিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে মই বেধে কাজ করতে হবে।
১০. একাকী কাজ করা যাবে না। কাজ করার সময় অন্ততঃ একজনকে সাথে থাকতে হবে, যাতে করে সে দুর্ঘটনা আক্রান্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারে এবং তার এ কাজে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
১১. ইলেকট্রিক লাইন বা যন্ত্রে কাজের জন্য ব্যক্তিকে অবশ্যই যথেষ্ট জ্ঞান ও দক্ষতা সম্পন্ন হতে হবে।
১২. প্রয়োজনীয় ট্রেনিং এবং প্রশিক্ষণ ছাড়া ইলেক্ট্রিসিটি বা বৈদ্যুতিক কাজ করা যাবে না। এজন্য মালিকপক্ষ অবশ্যই কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করবেন।