Loading..

মুজিব শতবর্ষ

০৪ জুলাই, ২০২২ ০১:৩০ অপরাহ্ণ

দেশ গঠন, তারুণ্য ও ধর্ম নিয়ে মুক্তিসংগ্রামী মহানায়কের ভাবনা

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বব্যাপী একজন মুক্তিসংগ্রামী মহানায়ক হিসেবে পরিচিত। রাজনীতির এ কবি বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ নেতা। যার নেতৃত্বে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে লাল-সবুজ পতাকার বাংলাদেশ।

রাজনৈতিক সত্তা বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় পরিচয় হলেও তিনি বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তি, ভাষা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম নেতা হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সদ্য স্বাধীন দেশের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে যে দূরদর্শী পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেন তা বুঝা যায়- উন্নত দেশ গঠন ভাবনা, যুবশক্তি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, গবেষণা, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী চিন্তায়।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের দায়িত্ব নিয়ে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। সেই স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তারই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে বঙ্গবন্ধুর স্বতন্ত্র ভাবনাকে সামনে রেখেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ আজ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এরই মধ্যে নিয়ে এসেছেন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে।

তারুণ্য ও যুবশক্তি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা

তারুণ্যের প্রতি বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস ছিল অবিচল। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রদত্ত ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষণ, আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচি, ১৯৭০-এর নির্বাচনী ইশতেহার, ১৯৭২-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনায় তার নেয়া পদক্ষেপ, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইসহ বিভিন্ন পত্রিকা ও নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাষ্ট্রচিন্তায় তরুণ ও যুবকদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা ও প্রায়োগিক দিকগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু রচিত ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থটি তরুণ ও যুবসমাজের জন্য অতি মূল্যবান দলিল। যা আজকের তরুণ প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশক। শেখ মুজিবুর রহমান তরুণ ও যুবসমাজকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে তরুণদের সঞ্জীবনী শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধু যুবকদের পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের তাগিদ দিতেন। ১৯৭৩ সালের ১৯ আগস্ট যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘বাবারা, একটু লেখাপড়া শিখ। যতই জিন্দাবাদ আর মুর্দাবাদ করো, ঠিকমতো লেখাপড়া না শিখলে কোনো লাভ নেই। আর লেখাপড়া শিখে যে সময়টুকু পাবে বাপ-মাকে সাহায্য করো। প্যান্ট পরা শিখছ বলে বাবার সাথে হাল ধরতে লজ্জা করো না। দুনিয়ার দিকে চেয়ে দেখ। ...গ্রামে গ্রামে বাড়ির পাশে বেগুনগাছ লাগিও, কয়টা মরিচগাছ লাগিও, কয়টা লাউগাছ ও কয়টা নারিকেলের চারা লাগিও। বাপ-মাকে একটু সাহায্য করো। শুধু বিএ-এমএ পাস করে লাভ নেই। ’


‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, ‘...এবং দেশের প্রায় শতকরা সত্তরটা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সক্ষম হলাম। যুবক কর্মীরা আমার দিকে ঝুঁকে পড়ল। কারণ আমিও তখন যুবক ছিলাম।’ ১৯৭৩-এর ১৯ আগস্ট যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন- ১৯৭৩-এ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী দিবসের বক্তৃতায় তিনি বলেছেন- ‘বাংলার মানুষ, বিশেষ করে তরুণ সম্প্রদায়কে আমাদের ইতিহাস জানতে হবে। বাংলার যে ছেলে তার অতীত বংশধরদের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে না, সে ছেলে সত্যিকারের বাঙালি হতে পারে না।’

দেশ গঠন ও উন্নয়ন ভাবনা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে অর্থনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ছয় দফার ভিত্তিতে একটি নতুন সংবিধানের খসড়াও করেন। এই ঘটনা পরম্পরা স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ গঠন ও প্রায়োগিক দেশ ভাবনায় বঙ্গবন্ধুর জন্য সহায়ক হয়েছিল। মাত্র সাড়ে তিন বছরে অজস্র সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, প্রশাসনিক বিন্যাস ও উদ্যোগ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাবলীল উপস্থিতি ও পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ ও শাসন ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস ইত্যাদি দ্রুত সময়ে করা সম্ভব হয়েছিল। তিনি তদানীন্তন বিশ্ব বাস্তবতার চেয়েও অগ্রবর্তী থেকে সমুদ্রসীমা আইনসহ রাষ্ট্র পরিচালনায় অত্যাবশ্যক আইন বিনির্মাণ ও অধ্যাদেশ জারি করেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে নেমে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, কৃষির উৎপাদন ব্যবস্থাকে তিনি বেশ সফলভাবেই সামলান। তিনি প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। যার লক্ষ্য ছিল মূলত দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান, আর্থিক উন্নয়ন, পণ্যের চাহিদা, কৃষির প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রযুক্তিগত কাঠামোতে সমসাময়িক রূপান্তর ইত্যাদি। দেশের কলকারখানার উৎপাদন বাড়ানো, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কেমন রূপ ধারণ করবে এসব বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ চিন্তা এবং বিশ্নেষণ তার কর্মধারার মধ্যে বিশদভাবে ছিল। এমনকি তার ভাবনার মধ্যে ছিল দেশের খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং কৃষিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি। বঙ্গবন্ধু জাপান সফরকালে সে দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তানাকার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে যমুনা বহুমুখী সেতু (বঙ্গবন্ধু সেতু) নির্মাণের স্বপ্নের কথা প্রথম সূচনা করেন, যা শুধু যাতায়াতের জন্য নয়, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের জুন মাসের এক ভাষণে বলেছিলেন, দেশের প্রতিটি মানুষ খেতে পাবে, আশ্রয় পাবে। প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবনের অধিকারী হবে। আর এটি ছিল স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য।

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও গবেষণা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব সময় শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে ভেবেছেন। দেশ গড়তে শিক্ষার সঙ্গে গবেষণার বিকল্প নেই, তা বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন। গবেষণা একটি দেশের মূল শক্তি হিসেবে কাজ করে, তা বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও ভাবনায় প্রভাব ফেলেছে। জাতির পিতার এ সমস্ত ভাবনার মধ্যে মৌলিকত্ব ও চিন্তাশীলতা ছিল। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ও গবেষণার দর্শনতত্ত্ব আধুনিক ও অগ্রসরমান চিন্তাধারার প্রতিফলন ছিল। বঙ্গবন্ধু মনে করতেন শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য অর্জনে শিক্ষার সঙ্গে গবেষণার বন্ধন সৃষ্টি করা দরকার। এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে শিক্ষা ও গবেষণা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সে দেশে পাঠিয়ে তাদের অর্জিত জ্ঞান ও গবেষণার অভিজ্ঞতাকে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করেছেন, যার সুফল আজও পাচ্ছে বাংলাদেশ।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি