সহকারী শিক্ষক
০১ আগস্ট, ২০২২ ১২:৩৯ পূর্বাহ্ণ
মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ----জন্ম ও শিক্ষাজীবন
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মুহাম্মদ
শহীদুল্লাহ ১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই, পশ্চিম বাংলার চব্বিশ পরগনা জেলায় জন্মগ্রহণ
করেন। তার পিতা মফিজ উদ্দিন আহমদ ছিলেন মধ্যযুগীয় পীর গোরাচাঁদের দরবার শরিফের
খাদেম। মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর জন্মকালীন নাম ছিল মুহাম্মাদ ইব্রাহিম। কিন্তু তার মা
হুরুন্নেসা মনে করলেন, যেহেতু তার সন্তান শহীদে কারবালার চাঁদে গর্ভে
এসেছে, তাই নামটা শহীদুল্লাহ হলেই ভালো হয়। তাই তিনি
ছেলেকে 'শহীদুল্লাহ' বলেই ডাকতে লাগলেন। পরে এ নাম স্থায়ী হয়ে গেল।
তখনকার সময়ে গ্রামীণ শিক্ষাব্যবস্থা ছিল মক্তবকেন্দ্রিক। মুহাম্মদ শহীদুল্লাহও
ছোটবেলায় বই আর শ্লেট হাতে নিয়ে মক্তব যেতে লাগলেন। সেখান থেকে তিনি মীর মোশাররফ
হোসেনসহ বিভিন্ন লেখকের বই পড়া শুরু করেন। তার জ্ঞানের ফোয়ারাও প্রস্ফুটিত হতে
লাগল।
মক্তবের পড়া শেষ করে তিনি ভর্তি হন হাওড়া জেলা স্কুলে। ১৯০৪ সালে তিনি
এন্ট্রান্স (বর্তমান এসএসসি-র সমমান) পাশ করেন। সেই সময় থেকেই তিনি বিভিন্ন ভাষার
প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। নিজে নিজে শুরু করে দেন ভাষা শিক্ষা। এন্ট্রান্স পাশ করে
তিনি ভর্তি হন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৯০৬ সালে এফ.এ. (বর্তমান এইচএসসি-র
সমমান) পাশ করেন তিনি।
ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ ছিলেন দক্ষিণ
এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষাবিদ; image source: daily star
এরপর তিনি ভর্তি
হন কলকাতা সিটি কলেজে। ১৯১০ সালে সংস্কৃতে সম্মানসহ বি.এ. পাশ করেন। কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত নিয়ে এম.এ-তে ভর্তি হতে চাইলে সেই বিভাগের এক অধ্যাপক
মুসলিম ছাত্রকে সংস্কৃত পড়াতে অস্বীকার করেন। সত্যব্রত সামশ্রমী নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষক জেদ ধরে বসেন, হিন্দু নন এমন কাউকে তিনি বেদ পড়াবেন না।
শেষপর্যন্ত এ বিতর্ক গড়াল আদালত পর্যন্ত। তখন দিল্লি হাইকোর্ট নির্দেশ দিল, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্ব নামে একটি
বিভাগ খোলা হবে। শেষমেশ বাধ্য হয়ে তৎকালীন উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সহায়তায়
তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে ভর্তি হন মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। ১৯১২ সালে তিনি কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে এম.এ. পাশ করেন।
পড়াশোনা চলাকালে ১৯০৮-০৯ সালের দিকে যশোর জেলা স্কুলের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন
শুরু করেন তিনি। ১৯১৩ সালে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় জার্মানিতে
উচ্চশিক্ষার বৃত্তি পান শহীদুল্লাহ। কিন্তু স্বাস্থ্যগত কারণে তার আর বিদেশে
যাওয়া হলো না। তবে ঘরে বসে না থেকে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১৪ সালে
বি.এল. পাশ করেন। ১৯১৫ সালের শুরুর দিকে কিছুদিন সীতাকুণ্ড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক
হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে নিজ এলাকায় ফেরত এসে আইন ব্যবসা শুরু করেন। এতে এলাকায়
তার ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা তৈরি হয়।
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরে মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সেখানে
সংস্কৃত এবং বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়া ১৯২২ সাল থেকে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
কয়েক বছর শিক্ষকতা করার পর ১৯২৬ উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য তিনি ফ্রান্সে পাড়ি
জমান। ১৯২৮ সালে ফ্রান্সের বিখ্যাত সোরবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রী
অর্জন করেন। এটি ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলিমদের মধ্যে প্রথম ডক্টরেট। ওই বছরই
ধ্বনিতত্ত্বে গবেষণার জন্য সোরবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। দেশে
ফিরে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেন।