Loading..

প্রকাশনা

১৭ ফেব্রুয়ারি , ২০১৪ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাপ্তাহিক ছুটি নিয়ে ভাবতে হবে- দৈনিক যুগান্তর-১৭-০২-১৪
http://www.jugantor.com/window/2014/02/17/69970 সাপ্তাহিক ছুটি নিয়ে ভাবতে হবে মোঃ মুজিবুর রহমান প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ২০১৩ সালে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের যতটুকু ক্ষতি হয়েছে তার কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়ার জন্য সাপ্তাহিক ছুটি দুদিনের পরিবর্তে একদিন করার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। কয়েক সপ্তাহ আগে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তারা এ দাবি জানান। ব্যবসায়ীরা বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশে সাপ্তাহিক ছুটি রোববার। কিন্তু আমাদের শুক্র ও শনিবার দুদিন ছুটি। ফলে বিশ্ব থেকে তিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছি আমরা। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সাপ্তাহিক ছুটি কমিয়ে দেয়ার ব্যাপারে সরকার এখন কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটাই দেখার বিষয়। সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন থাকবে নাকি একদিন করা হবে, তা নিয়ে অনেক দিন ধরে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। আমাদের দেশে অনেক আগে সপ্তাহে একদিন সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। তখন ছুটি থাকত রোববার। পরে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর শুক্রবারের সঙ্গে শনিবারও যুক্ত করে সপ্তাহে দুদিন ছুটি চালু করা হয়েছে। এ নিয়ে অতীতে অনেক আলোচনাও হয়েছে। সপ্তাহে দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে একসময় বলা হয়েছিল, দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতির কারণে দেশজুড়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। ফলে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সপ্তাহে দুদিন ছুটি বহাল রাখা জরুরি। বিদ্যুতের ঘাটতির মুখে এ ধরনের বক্তব্য তখন অনেকাংশে গ্রহণযোগ্য হলেও বর্তমানে তা কতটা যুক্তিসঙ্গত সেটা ভেবে দেখতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে সপ্তাহে দুদিন ছুটির কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা সেটাও ভাবতে হবে। দেশে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও লোডশেডিং আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে। যদিও এরই মধ্যে বোরো মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। গ্রীষ্মকালও এগিয়ে আসছে। এ সময়টাতে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। তারপরও বর্তমানে গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি থাকলেও শহরাঞ্চলে খুব একটা ঘাটতি নেই। এ অবস্থায় সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন বহাল রাখার কোনো যুক্তি আছে বলে মনে হয় না। বর্তমানে আমাদের দেশে দুধরনের ছুটির অস্তিত্ব দেখা যায়। এক ধরনের ছুটি শিক্ষা বিভাগের জন্য প্রযোজ্য। আরেক ধরনের ছুটি সরকারের সাধারণ প্রশাসন বিভাগের জন্য প্রযোজ্য। শিক্ষা বিভাগের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সপ্তাহে একদিন শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি ভোগ করছে। অবশ্য সাপ্তাহিক ছুটির বাইরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আরও নানা উপলক্ষে অনেকদিন ছুটি ভোগ করে থাকে। ফলে স্কুল-কলেজগুলোয় বছরে ছুটির সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় চার মাস। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ শিক্ষা প্রশাসন পরিচালনাকারী অধিদফতর, বিভাগীয় শিক্ষা অফিস, আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস ও উপজেলা শিক্ষা অফিসগুলো সপ্তাহে দুদিন ছুটির আওতায় রয়েছে। ফলে ছুটি নিয়ে দেশজুড়ে এক ধরনের বৈষম্য বিরাজ করছে বলে অনেকে মনে করেন। এ কারণে শিক্ষা প্রশাসন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতারও সৃষ্টি হয়। সরকারের প্রশাসন বিভাগের অফিস সপ্তাহে দুদিন বন্ধ থাকায় মাঠপর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও শিক্ষা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে বিঘ্ন ঘটছে। দেখা যায়, শনিবার স্কুল খোলা থাকলেও নিজেদের সাপ্তাহিক ছুটি থাকার কারণে শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা স্কুল পরিদর্শনের জন্য স্কুলে যান না। এর ফলে বিপুলসংখ্যক স্কুল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিদর্শন করা সম্ভব হয় না। এ সুযোগে অনেক স্কুলে নানা ধরনের অনিয়ম বাসা বাঁধে। সাপ্তাহিক ছুটির হিসাব করলে দেখা যায়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে ১০৪ দিন ছুটি ভোগ করছে। অথচ সপ্তাহে একদিন ছুটি থাকলে তা ৫২ দিন হতো। সব বিভাগের জন্য সাপ্তাহিক ছুটির বাইরে আরও নানা ধরনের ছুটি রয়েছে। শুধু সাপ্তাহিক ছুটির কারণেই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে সাড়ে তিন মাস বন্ধ থাকছে। অন্যান্য ছুটির হিসাব করলে বছরে ছুটির সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় সরকারি কাজকর্মে প্রত্যাশিত গতি আসতে পারে না। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশ এমনিতেই অনেক দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। কাজেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আনতে হলে সপ্তাহে কর্মদিবসের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আর এটা করা যায় সাপ্তাহিক ছুটি একদিন কমিয়ে দিয়ে। সরকারি অফিসের সময়সূচি নিয়েও নানা ধরনের অভিমত রয়েছে। যতদূর মনে পড়ে, অনেক বছর আগে রাজধানী ঢাকায় সরকারি অফিসের সময়সূচি ছিল সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। এর ফলে সরকারি চাকরিজীবীরা অফিসের কাজকর্ম করে বিকালের দিকে পারিবারিক কাজে ৬-৭ ঘণ্টা সময় দিতে পারতেন। এখন অফিস শুরুর সময় সকাল ১০টা হওয়ায় তারা আর আগের মতো পরিবারের জন্য সময় বের করতে পারেন না। এখন তারা না পারেন সকালে সময় দিতে, না পারেন বিকালে সময় দিতে। অন্যদিকে দেখা যায়, ভোর হওয়ার পর থেকে সরকারি দফতরে কাজকর্ম শুরু করতে করতেই ৪-৫ ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়ে যায়। আবার সবাই যে ঠিক ১০টায় অফিসে আসেন তা-ও নয়। যানজটসহ নানা কারণে অনেকের এক-দেড় ঘণ্টা দেরিও হয়। এর ফলে নষ্ট হয় বহু কর্মঘণ্টা। অফিস শুরুর আগেই সরকারি চাকরিজীবীদের যে কয়েক ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়ে যায়, সে সময়টা বাস্তবে কোনো কাজে লাগে না। কাজেই এখন চাকরিজীবী মানুষের কর্মঘণ্টার যুক্তিসঙ্গত ও বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে গতি আনতে হবে। এখানে বলা দরকার, সরকারি প্রশাসন পরিচালনার প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ে প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। অনেক সময় তাদের চাপে মন্ত্রণালয়গুলোর অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে, সরকারের দৈনন্দিন কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবে পরিচালনায় বিঘœ ঘটে ব্যাপকভাবে। সরকারি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ব্যক্তির সাক্ষাৎ দিতে হয় প্রায় প্রতিদিন। দেখা যায়, অফিস সময় সকাল ১০টায় নির্ধারিত থাকায় অনেক তদবিরকারী সরকারি কর্মকর্তাদের প্রায় পেছনে পেছনেই মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করেন। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অফিসের কাজ শুরু করার আগেই মুখোমুখি হন সাক্ষাৎপ্রার্থীদের। এ অবস্থায় দৈনন্দিন কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিঘ্ন ঘটে। অথচ অফিস শুরুর সময় সকাল সাড়ে ৭টা বা ৮টায় হলে মন্ত্রণালয়ে তদবিরকারীদের আসার আগেই অনেক কাজ দিনের পূর্বভাগেই শেষ করা সম্ভব হতো। শুধু তাই নয়, দাফতরিক কাজকর্ম শুরু করার জন্য আরও কমপক্ষে ৩-৪ ঘণ্টা সময় বেশি পাওয়া যেত। এছাড়া অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সময়সূচি ও সরকারি অফিসের সময়সূচি একই হয়ে যাওয়ায় রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের ওপরও চাপ পড়ে। ফলে সৃষ্টি হয় যানজটের। এসব দিক সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে। সরকার যদি সাপ্তাহিক ছুটি দুদিনের পরিবর্তে একদিন এবং আগের মতো শুধু ঢাকায় সরকারি অফিস শুরুর সময় সকাল সাড়ে ৭টা বা ৮টায় নির্ধারণ করে, তাহলে সরকারি কাজকর্মে গতি আসবে বলে মনে করি।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি