Loading..

প্রকাশনা

২২ ফেব্রুয়ারি , ২০১৪ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বুদ্ধির জোর
সবাই বলে হারু মিয়া বেজায় কুড়ে। সারাটা দিন বেড়ায় ঘুরে। কাজের কথা শুনলে পরে তাকে খুঁজে পাওয়া ভার। বুদ্ধিতে সে বেজায় পটু। কথার বেলায় সেয়ান ঘুঘু। বুদ্ধিতে তাকে হারাতে পারে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। সারাটা দিন বুদ্ধি আটে। সকাল সন্ধ্যা দিন কাটে। এটা করব, ওটা করব; এভাবে নয় ওভাবে। ঐভাবে না এইভাবে। নতুন নতুন প্ল্যান আসে। সকাল যায়, দুপুর যায়; সন্ধ্যা নামে, কোন কাজই করা হয়না বার মাসে। তবে মানুষটা কিন্তু ভাল সে। ভাল কথা, ভাল বুদ্ধি দিতে পারে অনায়াসে। সমস্যায় পড়লে তাই সবাই আসে তার কাছে। দিন কেটে যায় রাত হয় বাড়ি ফেরে হারু ভাই। ক্ষুধার জ্বালায় রাবনের চিতা পেটে জ্বলে। তাতে কি আর উনুন জ্বলে? ঘরে কোন খাবার নাই। ক্ষুধায় সবার প্রাণ যায়। বউ বলে এমন ভাবে আর কতটা দিন যাবে। ছেলে পেলে বড় হবে লেখাপড়া শিখে মানুষ হবে। এমনি করে কি দিন যাবে? বুদ্ধিতে তুমি পটু, তবু কাজ করনা একটু। কাজ কর আর বুদ্ধি খাটাও। নিজে খাট মানুষ খাটাও। কপাল খুলবে, অর্থ আসবে সুখে শান্তিতে জীবন ভাসবে। বুদ্ধি তোমার মন্দ না। করা লাগবে কিছু একটা। সকাল বেলা বের হব কাজে। আমার মত লোকের কি আর- বসে থাকা সাজে। সকাল বেলা হারু মিয়া কাজের খোঁজে রওনা যখন দিল। বউটি তার হাতে একটা ছোট পুটলি দিয়ে ক’ল; "ঘরে তো আর খাবার নাই যা তোমাকে দিব। দুধের সর তুলে রেখেছিলাম। তাই তোমায় দিলাম ক্ষুধা লাগলে খেও।" পোষা পাখিটা সাথে নিয়ে হারু মিয়া কাজের খোঁজে রওনা এবার দিল। পথ চলে, চলে আর চলে। গ্রামের পর গ্রাম, মাঠের পর মাঠ। খুঁজে পায়না কোথাও সে মনের মত কাজ। দুপুর গড়িয়ে যায়। মাঠ পেরিয়ে তেপান্তরে। পাহাড় ঘেরা সবুজ প্রান্তরে। ঝর্ণার কলকল ধ্বনি পরাণ জুড়িয়ে যায়। পা আর চলে না ভাই; হেটেছে সে কত পথ আজ। তবুও সে পেল না কোন কাজ। পাথরের উপরে বসে কত কথা ভাবছে সে। ভাবছে একটু জলপান, সেরে নেওয়া যাক। নির্জন প্রান্তরের নিরবতা ভেঙ্গে শুরু হয় তোলপাড় আর হাঁকডাক। দানব একটা এসে, ‘‘হারু মিয়াকে বলে, ''কিহে ছোকরা আমার রাজ্যে এসে আরাম করে বসে হাওয়া খাচ্ছ সাহস তো তোমার কম না। ঘাড়খানা মটকে পা দুখানা ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দিয়ে এমন একটা চাপ দিব যে, বল বানিয়ে মাশরাফির মত দিব ছুঁড়ে। যেখান থেকে এসেছিস সেখানে গিয়ে পড়বি অনেক দূরে।'' হারু মিয়ার হাড়ে ধরল কাঁপন। রক্ষা পাওয়া বড় দায়, এখন বুদ্ধিটাই তো তার সবচাইতে আপন। সাহস করে বলল হারু। আরে ব্যাটা কাজটা কি আর এত সহজ ঘাড় মটকাবি আমার। আমি তো খুঁজছি তোকেই। তিন থাপ্পড়ে তোরে করব মানুষ। নিয়ে যাব কানটা ধরে, করবি তুই সাকিবের স্পিন বলের মত বাউন্স। দানব কয় সহজ নয়। শক্তি কি মোর কম? হারু কয় বুঝিস নি তুই, আমিই যে তোর যম। দানব কয় ‘বিনা রণে নাহি দিব শুচাগ্র মেদিনী’। হারু কয়, ‘লড়াই করে আমিও কখনো হারতে শিখিনি’। কয় দানবে, ‘‘ওহে মানবে লড়াই হবে তিনটা যে জিতবে সেরা সে হবে, হারবে যে সে হবে ভৃত্য; রাজী আছ কি? তব একটু কর চিন্তা।’’ হারু বলে আমি রাজী আছি। তবে লড়াই হবে কোনটা...? দানবে কয়, কোন কিছু নয়, শক্তি খাটাও পাথরে। পাথর চিপিয়ে পানি বের করে দেখাতে পারবে যে সেই পাহলোয়ান; শক্তিশালী সে। হারু কয় তবে শুরু হোক। দানব একটা পাথর নিয়ে শুরু করল চাপতে। প্রচন্ড শক্তিতে চাপছে সে, শক্তির জোরে পাথর চ্যাপ্টা হয়, দানব সহ চারপাশ থাকে কাঁপতে। তবু কি পানি বের হয় পাথরে? হারু মিয়া ভাবে হায় করি কি উপায়! বুদ্ধি একটা বের করা চাই। নইলে আজকে আর রক্ষা নাই। এত বুদ্ধির ঢেঁকি- খুলে দেখি। কি বুদ্ধি খুঁজে পাই। পেয়েছি পেয়েছি ভাই, আর কোন চিন্তা নাই। পাথর একটা হাতে নিয়ে, পকেটে তে রাখা দুধের সর তার সাথে লাগিয়ে এমন জোরে দিল চাপ। ফোটা ফোটা ঝড়ে পানি, দানব কয় বাপরে বাপ। প্রথম দফায় দানবের দফা রফা; হারুর হল জিত। এবার ২য় দফায় লড়াই হবে, কার হবে হার, কার হবে জিত। কয় দানবে, ‘‘ওহে মানবে শুন এবারে পাথর মারব ছুড়ে। দেখব কার বাহুতে শক্তির জোরে পাথর পাঠাবে দূরে।’’ কথা বলতেই দানবে তার হাতের বিশাল পাথর খানা ছুড়ে দিল তার সম্মুখের পানে। যেন পাথর নয় পাখি উড়ে গেল মিলিয়ে দিয়ে ডানা। বহু দূর গিয়ে পড়ল পাথর দৃষ্টির প্রায় শেষ প্রান্তে। দেখে তাই হারু মনে মনে ভাবে হায় বুক ফেটে চায় কানতে। মন তারে কয়, আরে হারু ভাবিস কেনরে? পোষা পাখিটা আছে না কাছে তোর ! ছুড়ে দিলে তারে উড়ে চলে যাবে ছাড়িয়ে তেপান্তর। যেই ভাবা সেই কাজ দেরি করা কি সাজে। ছুড়ে দিল পাখি উড়ে গেল ছাড়ি দীর্ঘ দিনের সুখ দু:খের সাথী। কোথায় গেল খুঁজে পেল না দানব হ্যাঁদারাম বোঝে নাই সে; মানবের ব্রেনে আজ তার কপাল হয়েছে বাম্। এবারে চুড়ান্ত খেলা, মানে ফাইনাল। জিততেই হবে নইলে রে ভাই দানব ব্যাটার হাতেই হবে জীবনটা পয়মাল! পাশেই ছিল বিশাল আকারের শত বছরের বট অশ্বথের গাছ বহু কষ্টে টেনে হিচড়ে, দুজনে মিলে উপরে ফেলল; ব্যাস। হারু কহে দানব ব্যাটা বুঝ নাই ঠ্যালা মানবের। এই গাছটা কাঁধে তুলে নাও এক দৌড় দিয়ে নিয়ে যাবে মাঠের ঐ প্রান্ত। তারপর যাব আমি ঐ গাছ আনতে। এক দৌড়ে ফিরব এই প্রান্তে। পারবেনা যে হারবে সে, কোন লাভ হবে না। করতে হবেই দাসত্ব, তখন যতই থাকনা কানতে। দানবে বলে ভাই, গায়ে আর জোর নাই। পারব না একা একা নিয়ে যেতে এত বড় গাছ। এস মোরা দুজনে, নিয়ে যাব ঐখানে। ভাগাভাগি করে সমানে সমান। নিয়ে যেতে দুজনে, পারবে না যে জনে। হারবে সে, হয়ে যাবে শক্তির প্রমাণ। ঊলে তোরে হারু মিয়া চিকন গোড়াটা কাঁধে নিয়া, সামনে চল তুই। আমি নেব বিশাল আগাটা, লাঘব করে তোর কষ্টটা চল মোরা দুজনে মাঠের ঐ প্রান্তটা ছুঁই। দানবে তুলে নেয় গাছটা, হারু মিয়া নেয় তার পিছুটা। উঠে বসে বড় এক ডালেতে, ছোট এক ডাল রাখে কাঁধেতে। মনের সুখে শুরু করে গান। দানবে টানে গাছ। নিস্তার নাই আজ এই বুঝি যাবে তার প্রাণ। কেঁদে বলে ভাইরে, আমি আর পারিনে, নামিয়ে ফেলব আমি। হারু বলে হবেনা, নামাতে দেবনা, চল যাই ঐখানে নইলে যে হেরে যাবে তুমি। বলে তারে দানবে শুন হে মানবে, আমি আজ মেনে নিলাম হার। হারু ভাবে; ফেলে দিলে গাছটা, যদি খাই চাপাটা, গাছের নিচেতে পড়ে। পৈত্রিক প্রাণটা হারাবে সে আজ বেঘোরে। বুদ্ধি এটে বলে, দিও না আগে ফেলে, তাতে তোমার ভাঙবে ঘাড়। যখন আমি বলব, এক সাথে ফেলব। এই বলে গাছ থেকে নেমে যায় হারু ভাই, নিরাপদে সরে যায় যেখানে ভয় নাই গাছে চাপা পড়ার। এক দুই তিন হাঁকে হারু, ভয় নাই কারো ফেলে দাও গাছ। ফেলে দিয়ে গাছটা, মনে নিয়ে আস্থা, কাছে এসে বলে এবার দানবে। তুমি হও মোর প্রভু, বেয়াদবী করবনা আর কভু, যথা আজ্ঞা পালন করব আদেশ। চলুন আপনার স্বদেশ। মেনে নিলাম শক্তিতে বড় শুধু মানবে। শিক্ষণীয়ঃ গোঁয়ার যে জন, গায়ের জোরের বড়াই করে, জ্ঞান বুদ্ধি আসল শক্তি; প্রাণে বাঁচায় ঘোর বিপদে। বুদ্ধির জোরে মানব জাতি, বশ করেছে গরু-ছাগল, কুকুর-বিড়াল, মস্ত হাতি। জ্ঞানে গুণে বড় যে জন ধন্য সে, ধন্য তার মানব জনম।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি