Loading..

প্রকাশনা

০২ মার্চ, ২০১৪ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

উৎপাদনের আওতা বা পরিধি
উৎপাদন হচ্ছে বস্তুর আকার পরিবর্তন করে দ্রব্য বা সেবা সৃষ্টির একটি প্রক্রিয়া। তাই উৎপাদনের আওতা বা পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। আমাদের জীবনের সকল অর্থনৈতিক কার্যক্রম উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে পারিশ্রমিকযুক্ত মানুষের সকল কর্মপ্রচেষ্টা উৎপাদনের আওতাধীন। এই প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে উৎপাদনের আওতা বর্ণনা করা যায় : ১। উপযোগ সৃষ্টি (Creating utility)ঃ- উৎপাদনের মাধ্যমে বস্তুর আকার-আকৃতি রূপান্তর করে বিভিন্ন ধরনের উপযোগ সৃষ্টি হয়। উপযোগ সৃষ্টির ধরন অনুসারে উৎপাদনকে পন্য ও সেবা এ-দুভাগে ভাগ করা যায়। আর উপযোগ সৃষ্টি হয় বলে মানুষ পন্য বা সেবা ক্রয় করে, যা তার প্রয়োজন ও অভাব পূরন করে। তাই যে কোন ধরনের পন্য ও সেবা সৃষ্টি উৎপাদনের আওতাধীন। ২। কারখানার অবস্থান (Factory Location)ঃ- যেকোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্য পরিচালনার জন্য অফিস, স্টোর ও কারখানার জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন, কাজের প্রবাহ অনুসারে নির্বাচিত যন্ত্রপাতি স্থাপন করার উপযুক্ত স্থান নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। তাই সঠিক স্থান নির্বাচনের বিষয়টি উৎপাদনের আওতায় পড়ে। কেননা স্থান ছাড়া উৎপাদন সম্ভব না। ৩। কারখানা বিন্যাস (Factory layout)ঃ- উৎপাদন সম্পাদনের জন্য কারখানা ভিতরে ধারাবাহিক ভাবে যন্ত্রপাতি সাজানোকে কারখানা বিন্যাস বলে অর্থ্যাৎ কোথায় কোন যন্ত্র কিভাবে বসবে, কোনটার পর কোন যন্ত্র বসবে, কাজ করার জন্য কাজের “ফ্লোর” কেমন হবে এসবই উৎপাদনের আওতাভূক্ত। কারখানা বিন্যাসের উপর পন্যের সঠিক উৎপাদন নির্ভর করে। ৪। উৎপাদন ও পন্য পরিকল্পনা (Production & Product Planning)ঃ- কোন পন্য, কাদের জন্য, কত পরিমানে, কখন উৎপাদন করা হবে তার সব পরিকল্পনা করাও উৎপাদনের আওতাভূক্ত। ক্রেতা বা ভোক্তদের চাহিদা অনুযায়ী সেই সকল পন্যের রং, ডিজাইন বা নকশা করা, মান নিয়ন্ত্রন, পন্যের ব্রান্ড নির্বাচন, পন্যের মোড়কীকরন ইত্যাদি সকল কার্যবলীর পরিকল্পনা উৎপাদনের আওতাধীন। পরিকল্পনা ছাড়া কাঙ্খিত পন্য উৎপাদন সম্ভব না। ৫। উপকরন সংগ্রহ (Collecting materials)ঃ- পন্য উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন উপকরন সংগ্রহ করতে হয়। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কাচামাল, যন্ত্রপাতি, শ্রমিক, পুজি ইত্যাদি উপকরনগুলো চুড়ান্ত পন্যে পরিনত হয়। তাই এ সকল উপকরন সামগ্রী সংগ্রহ করা উৎপাদনের আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ৬। মজুত নিয়ন্ত্রন (Inventory control)ঃ- পন্য উৎপাদন কমর্কান্ড নিয়মিত চালিয়ে যাওয়ার জন্য কাচামাল, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য দ্রব্য সংরক্ষন করা এবং প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করার প্রক্রিয়াকে মজুত নিয়ন্ত্রন বলে। কত মজুত থাকবে, কি পরিমান পন্য কখন কিনতে হবে, মজুতের নিরাপদ স্তর কত ইত্যাদি কার্য এখানে সম্পাদন করা হয়। মজুত শর্ট হলে যেমন উৎপাদন ব্যাহত হয় তেমনি অতিরিক্ত মজুদ উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি করে । তাই মজুত মালের সুষ্ঠ নিয়ন্ত্রন উৎপাদনের আওতাভূক্ত বিষয়। ৭। উৎপাদন পদ্ধতি (Production method)ঃ- উৎপাদনের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে এর মধ্যে একটি সুনিদির্ষ্ট পদ্ধতিতে পন্য উৎপাদন করা হয়। প্রতিষ্ঠানের অর্থ, সময় ও শ্রমের ভিত্তিতে পন্য ও সেবা উৎপাদনের পদ্ধতি নির্ধারন করা হয়। ৮। উৎপাদন নিয়ন্ত্রন (Production control)ঃ- উৎপাদন কর্মকান্ড সঠিকভাবে চলছে কিনা তা তদারকি করাকে উৎপাদন নিয়ন্ত্রন বলে। পন্য উৎপাদনের জন্য রুটিং বা গতিপথ নির্ধারন, সিডিউলিং বা সময়সূচিকরন, ডিসিপ্যাচিং বা কার্যাদেশ প্রদান এবং ফলো আপ বা অনুগমনের কার্যসমূহ উৎপাদনের আওতাধীন গুরুত্বপূর্ন বিষয়। ৯। মান নিয়ন্ত্রন (Quality control)ঃ- মান নিয়ন্ত্রন উৎপাদনের আগে, মাঝে ও পরে করা যায়। মান হলো পন্যের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা যা ভোক্তার সন্তুষ্টি বিধান করে। পন্য উৎপাদনের সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রন করা হয় এবং মান উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালানো হয়। সংগৃহীত কাচামাল ও উৎপন্ন দ্রব্যের মান নিয়ন্ত্রনের জন্য যে সকল কার্যাবলী সম্পাদন করা হয় তা উৎপাদনের আওতাধীন। পন্যের প্রকৃতির ওপরই মান নিয়ন্ত্রনের পর্যায় নির্ভর করে। ১০। গবেষনা ও উন্নয়ন (Resource & Development)ঃ- উৎপাদন কার্যপদ্ধতি নির্বাচন ও তার সুষ্ঠ ব্যবহার, কার্য বিশ্লেষন, সময় নিরীক্ষা, গতি নিরীক্ষা, কার্যপদ্ধতি সহজীকরন, গবেষনা ও তার বাস্তবায়ন ইত্যাদি কাজও উৎপাদনের আওতাভূক্ত। এছাড়াও নতুন নতুন পন্য উদ্ভাবনের জন্য গবেষনা করা এবং প্রচলিত পন্যের মান উন্নয়ন করার জন্য গবেষনাও এর আওতাভূক্ত বিষয়। এরূপ পন্য প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অর্জনে সাহায্য করি। ১১। কর্মী উন্নয়ন ও প্রশিক্ষন (Training)ঃ- প্রশিক্ষন উৎপাদন কর্মকর্তা ও কর্মীদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। উৎপাদনকার্যে নিয়োজিত শ্রমিকদের কার্যদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য, কার্যপদ্ধতি শেখার জন্য ও সবোর্চ্চ কার্য পারদর্শিতা লাভের জন্য প্রশিক্ষন দিয়ে কর্মী উন্নয়ন ব্যবস্থা করতে হয়। উৎপাদনের নতুন পদ্ধতি, কৌশল, প্রযুক্তি ইত্যাদি সম্পর্কে উৎপাদন কর্মকর্তা ও কর্মীদের প্রশিক্ষন দিতে হয়। তাই প্রশিক্ষনের মাধ্যমে কর্মী উন্নয়ন বা মানব সম্পদ উন্নয়ন উৎপাদনের আওতাভূক্তা। ১২। ক্রয়-বিক্রয় (Buying and selling)ঃ- পন্য উৎপাদনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উপকরন ক্রয় করা হয়। আবার পন্য উৎপাদনের পর তা বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। আর ক্রয় ও বিক্রয়ের কাজ যদি সঠিকভাবে সম্পাদিত হয় তাহলে উৎপাদন কর্মকান্ড সচল থাকে। তাই ক্রয়-বিক্রয় উৎপাদনের আওতাভূক্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১৩। শ্রেনী ভিত্তিক আওতা ()ঃ- উৎপাদনের প্রথম ও প্রাচীন খাতই হলো কৃষি খাত। শিল্প বিপ্লবের পর কৃষিখাতকে পিছনে ফেলে উৎপাদনের ক্ষেত্রে শিল্পখাত এগিয়ে এসেছে। একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির, অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদির সাথে পাল্লা দিয়ে সেবাখাতের উৎপাদন বাড়ে। তাই উৎপাদনকে কৃষিখাত, শিল্পখাত ও সেবা খাত এই তিন শ্রেনীতে বিভক্ত করা যায়। সকল প্রকার কৃষিজ ও শিল্পপন্য উৎপাদনের আওতাভূক্ত। অনুরূপভাবে সকল প্রকার সেবাকর্ম উৎপাদনের আওতাধীন। ১৪। রক্ষনাবেক্ষন ও নিরাপত্তা (Maintaines & Security)ঃ- স্থাপিত যন্ত্রপাতির রক্ষনাবেক্ষন ও প্রয়োজনে পরিবর্তনের ব্যবস্থা করা উৎপাদন কার্যের মধ্যে পড়ে। সঠিক যন্ত্রপাতি নির্বাচন ও রক্ষনাবেক্ষন সময়ের অপচয় রোধ করে। কারখানার নিরাপত্তা ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা উৎপাদনের আওতায়ভূক্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১৫। ক্ষমতার ব্যবহার (Use capacity)ঃ- কারখানার ও শ্রমশক্তির সবোর্চ্চ উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগানোর জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহন উৎপাদনের আওতাভূক্ত। উপরের আলোচনা থেকে উৎপাদনের আওতাধীন বিভিন্ন বিষয় আমরা দেখতে পাই। প্রকৃত প্রদত্ত সম্পদের আকার পরিবর্তন করে দ্রব্য সৃষ্টির প্রক্রিয়াই হল উৎপাদন। সুতরাং উৎপাদনের সাথে জড়িত সকল প্রকার কার্যাবলী, কর্মচেষ্টা এবং তাদের অর্জিত ফল দ্বারাই উৎপাদনের আওতা বিস্তৃত।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি