Loading..

খবর-দার

১৯ মে, ২০১৯ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইসলামের দৃষ্টিতে সদকাতুল ফিতরের বিধান ও পরিমান

সদকাতুল ফিতর প্রত্যেক মুসলমান নারী-পুরুষ, আযাদ গোলাম, ছোট-বড় সকলের ওপর ওয়াজিব। সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হওয়ার সময় ঈদের দিনের প্রভাতকাল। অতএব যে ব্যক্তি ফজর হওয়ার পূর্বে মারা যায় অথবা ধন দৌলত থেকে বঞ্চিত হয় তার ওপর ওয়াজিব হবে না। যে শিশু ফজরের পর জন্মগ্রহণ করবে তার ওপরও ওয়াজিব হবে না। তবে যে ঈদের রাতে জন্মগ্রহণ করবে তার ওপর ওয়াজিব হবে। এমনিভাবে যে ফজরের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করে অথবা ধনের মালিক হয় তাহলে তার ওপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হবে। ঈদের কিছু দিন পূর্বে তা অভাবগ্রস্তদের কাছে পৌছিয়ে দেয়া উচিত, যাতে করে গরীব লোকজন কিছু অন্ন-বস্ত্র ক্রয় করে সকলের সাথে ঈদগাহে যেতে পারে। যাকাতের খাতসমূহই সদকায়ে ফিতরের ব্যয়ের খাত।
সদকাতুল ফিতর সম্পর্কিত হাদীসগুলো পর্যালোচনা করলে এ বিষয়ে মোট পাঁচ প্রকার খাদ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়। যব, খেজুর, পনির, কিসমিস ও গম। এ পাঁচ প্রকারের মধ্যে যব, খেজুর পনির ও কিসমিস দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করতে চাইলে প্রত্যেকের জন্য এক ‘সা’ দিতে হবে। কেজির হিসাবে যা তিন কেজি ৩০০ গ্রাম। আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে আধা ‘সা’ দিতে হবে। কেজির হিসাবে ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম হয়। এ পাঁচটি দ্রব্যের যে কোনটি দ্বারা ফিতরা আদায়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে যেন মুসলামনগণ নিজ নিজ সামর্থ্য ও সুবিধা অনুযায়ী এর যে কোন ১টি দ্বারা তা আদায় করতে পারে। কিন্তু সকল শ্রেণির লোক যদি সবচেয়ে নিম্ন মূল্যমানের দ্রব্য দিয়েই নিয়মিত সদকায়ে ফিতর আদায় করেন, তবে হাদিসে বর্ণিত অন্য চারটি দ্রব্যের হিসাবে ফিতরা আদায়ের উপর আমল করাটা উপেক্ষিত থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে উচিত হলো, যে ব্যক্তি উচ্চ মূল্যের পণ্য দিয়ে সদকা ফিতর আদায় করার সামর্থ্য রাখে, সে তা দিয়েই আদায় করবে। যার সাধ্য আরো কম সে তাই দিবে। এটিই উত্তম নিয়ম। এ নিয়মই ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম, সাহাবা-তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের স্বর্ণযুগে।

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, আমরা সদকা ফিতর আদায় করতাম এক ‘সা’ খাদ্য দ্বারা অথবা এক ‘সা’ যব অথবা এক ‘সা’ খেজুর, কিংবা এক ‘সা’ পনির বা এক ‘সা’ কিসমিস দ্বারা। আর এক ‘সা’ এর ওজন ছিল নবী করীম সা. এর ‘সা’ অনুযায়ী। -(মুআত্তা মালেক)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. সারা জীবন খেজুর দ্বারাই সদকা ফিতর আদায় করেছেন। তিনি মাত্র একবার যব দ্বারা আদায় করেছেন। -(আল ইসতিযকার হাদীস)

ইবনে কুদামা রহ. আবু মিজলাযের বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, এ বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায় যে, সাহাবায়ে কেরাম অধিকাংশই যেহেতু খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করতেন তাই ইবনে উমর রা. সাহাবাদের তরীকা অবলম্বন করে সারা জীবন খেজুর দ্বারাই আদায় করেছেন।
সাহাবায়ে কেরামের যুগে আধা সা গমের মূল্য এক সা খেজুর সমপরিমাণ ছিল। নবী কারীম সা. এর যুগে মদীনাতে গমের ফলন ছিল না বললেই চলে। পরবর্তীতে হযরত মুআবিয়া রা. এর যুগে ফলন বৃদ্ধি পেলেও মূল্য ছিল খুব বেশি। সদকা ফিতরের জন্য নির্ধারিত খাদ্যসমূহের মধ্যে গমের মূল্য ছিল সবচেয়ে বেশি। একাধিক বর্ণনায় এসেছে যে, সেকালে আধা ‘সা’ গমের মূল্য এক সা খেজুরের সমপরিমাণ ছিল।
হযরত মুআবিয়া রা. এর যুগে গমের ফলন বৃদ্ধি পেলে আধা সা গমকে সদকা ফিতরের অন্যান্য খাদ্য দ্রব্যের এক ‘সা’র মত গণ্য করা হত। -(আল ইস্তিযকার)
লক্ষণীয় বিষয় হলো, হযরত মুআবিয়া রা. এর যুগে গম দ্বারা সদকা ফিতর আদায়ের প্রচলন বেড়েছিল। এর কারণ হল, তখন গমই ছিল সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যমানের খাদ্য।
সাহাবায়ে কেরাম গম দ্বারা এজন্যই সদকা ফিতর আদায় করতেন যে, এর মূল্য সবচেয়ে বেশি ছিল। উপর্যুক্ত পাঁচ প্রকারের খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে বর্তমানে গমের মূল্য সবচেয়ে কম। তাই এ যুগে সর্ব শ্রেণীর জন্য এমনকি সম্পদশালীদের জন্যও শুধুই গম বা তার মূল্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা উচিত নয়।
যারা স্বচ্ছল বা ধনী তারা অন্তরের প্রশস্ততা অনুসারে বেশি মূল্য মানের দ্রব্যের দাম অনুসারে সদকাতুল ফিতর আদায়ের চেষ্টা করবেন। পনির, কিসমিস, খেজুর কোনটির হিসাব যেন বাদ না পড়ে। ধণী শ্রেণীর মুসলিম ভাইদের জন্য পনির বা কিসমিসের হিসাবে ফিতরা আদায় করা কোনো সমস্যাই নয়। যারা এই তিনটির হিসাবে পারবেন না, তারা খেজুরের মূল্য হিসাব করে দিবেন। যেখানে রমযানে ইফতার পার্টির নামে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়, বিলাসবহুল মার্কেটে চড়া দামে ঈদ শপিং করা হয়, সেখানে কয়েক হাজার বা কয়েক শত টাকার ফিতরা তো কোন হিসাবেই পড়ে না। অথচ এই সামান্য টাকা ঈদের দিনে একটা দরিদ্র পরিবারের হাসির কারণ হতে পারে। তাই আসুন সর্বোচ্চ বা মধ্যম পর্যায়ের রেটে সদকাতুল ফিতর আদায় করি।
ফিতরার সর্বোচ্চ পরিমাণ পনির বা কিসমিস ৩ কেজি ৩০০ গ্রামের মূল্য। মধ্যম পরিমাণ খেজুর ৩ কেজি ৩০০ গ্রামের মূল্য। সর্বনিম্ন পরিমাণ গম ১ কেজি ৬৫০ গ্রামের মূল্য। তাই আসুন সবাই সর্বনিম্ন পরিমাণ ফিতরা না দিয়ে যাদের আর্থিক অবস্থা মোটামুটি ভালো তারা খেজুর দিয়ে ফিতরা আদায় করি। এতে ফিতরা আদায়ের সাথে সাথে রাসুলুল্লাহ (সা) ও সাহাবায়ে কেরামের একটি অতিরিক্ত সুন্নাত আদায় হবে।