সহকারী শিক্ষক
২৪ মে, ২০১৯ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
ডিম পাহাড়
থানছির পথে
পাহাড়ের টানে
পর্ব - ডিম পাহাড়
ডিম পাহাড়ের নাম তোমরা অনেকেই শুনে থাকবে। ইহা পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার আলীকদম ও থানছি উপজেলার মাঝা মাঝি স্থানে অবস্থিত। এই পাহাড়টি উপজেলা দুইটির সীমানা নির্ধারণ করেছে। ডিম্বাকৃতির জন্য পাহাড়টির ডিমপাহাড় নাম করণ। এক সময় পাহাড়টি খুবই দূর্গম ছিল। এই দূর্গমতার কারণে এখানকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্টি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মাঝে এই পাহাড় নিয়ে একটি ধর্মীয় বিশ্বাস বিদ্যমান। বর্তমানে আলিকদম- থাংছি সড়ক এই ডিম পাহাড়ের বক্ষ-বেয়ে চলে গেছে। এই সড়কটি যে পাহাড় শ্রেণি দিয়ে গেছে সে পাহাড় শ্রেণিতেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চুড়ার অবস্থান। রাস্তাটি নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর।সময় লেগেছে দশ বছর।
সড়কটির দৈর্ঘ প্রায় তেত্রিশ কিলোমিটার। উপজেলা দুটির সদর দপ্তর পাহাড়ের পাদতলে অবস্থিত । সংযোগ সড়কটি আলীকদম হতে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উপরে ঊঠেছে । ডিম পাহাড়ের স্থলে সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠে আবার নামতে নামতে থানছি গিয়ে শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতায় নির্মিত সড়ক এটি । ডিম পাহাড়ের কাছাকাছিতে সড়কটি সমুদ্র পৃষ্ট হতে প্রায় দুহাজার পাঁচ শত ফিট উঁচুতে। আঁকা বাঁকা পাহাড়ী পথটি পুরোটাই ঝুঁকি পূর্ণ।
এখানে আদীবাসিদের বাস। অধিকাংশ ত্রিপুরা , আর কিছু ম্রু । আদিবাসী জনগোষ্টীর নারি-পুরূষেরা কঠোর পরিশ্রমি । তারা পাহাড়ের ঢালে বাঁশঝাড়, গাছপালা কেটে, পূড়িয়ে খড়কুটা পরিষ্কার করে ত্বক ফুঁড়ে সোনালী ধানের হাসির ঝলক ফোটায় । ধান উৎপাদনের এ পদ্ধতিকে জুম চাষ বলে।এখানে ধান ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ফল মূল উৎপাদিত হয়। আদিবাসী নারিরা কঠোর পরিশ্রম করে।তারা পিঠে কপালটানা থ্রুং বহন করে। আহরিত ফলমূল এ থ্রুং ভরে তাদের ঘরে নিয়ে আসে। বাঁশের সুক্ষ্ম বেত দিয়ে থ্রূং তৈরি করা হয়।
সৃষ্টি কর্তার অপরূপ সৃষ্টি পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম।এখানে পথ দিয়ে চলতে গিয়ে প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্য চোখ কে আটকিয়ে রাখবে প্রতি মূহুর্ত। নানান জাতের চেনা অচেনা হাজারো পাখির কলকাকলীতে মুখরিত । এখানে কান পেতে শুনলে শুনতে পাবে পাহাড়ি ঝিরি হতে উৎসারিত হচ্ছে ঝর্ণাদের ঝম ঝম সুরের সুমধুর মূর্ছনা। এখানে কখনও মেঘ রাশি ছুয়ে যাবে তোমাকে । তখন মনে হবে তুমি যেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে আছ । ডিম পাহাড় পেরিয়ে আর্মি ক্যাম্পের চেক পোষ্টের পাশে দাঁড়িয়ে পঁশ্চিম দিকে তাকালে দেখবে , প্রকৃতির পাঁচটি রুপ। কারও জুমে ঝলমলে রোদে দোল খাচ্ছে সোনালী ধান,পাশের অন্য জুমে আবছা আলো, অপর জুমে কালোমেঘের ছায়া , তার পাশেই ঝরছে ঝমাঝম বৃষ্টি, ঐ পাশে সাদামেঘের ভেলা। দু ঢালের বুক চিরে অ্যালোকেশি খাল দিয়ে বয়ে চলছে চিক চিক ঝর্ণা ধারা। একটু দক্ষিণে ঘুরলে থাংচির বাড়ি ঘর গুলো যেন কাগজে আঁকা ছোট্ট ছবি। সোজা দক্ষিণে উঁচু উঁচু পাহাড় চুড়া, ঢালে জুম চাষ। পূর্ব ঢালে আবছা আলো । যতই দৃষ্টি নিচের যাবে,আলো কমতে কমতে গাঢ় অন্ধকার। এ বুঝি রাত্রি নেমে এলো। ফেরার পথে যতই নিচে নামবে ,অনুভব করবে- তাপমাত্রা আস্তে আস্তে বাড়ছে, ঠিক যেন এ সি রুম থেকে বের হওয়া।