Loading..

ম্যাগাজিন

০৫ জুলাই, ২০১৯ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দ্যা এনশিয়েন্ট মেরিনার
প্রসঙ্গঃ ‘দ্যা রাইম অফ দ্যি এনশিয়েন্ট মেরিনার’ এস. টি. কোলরিজ রচিত সবচেয়ে বিখ্যাত তিনটি কবিতার একটি। এটি ‘লিরিকাল ব্যালাড’ কাব্যগ্রন্থের ২য় কবিতা। এটি কোলরিজের সর্বশ্রেষ্ট ও একমাত্র সম্পূর্ন কবিতা। এই কবিতার অনুপ্রেরণা দেন কোলরিজের বন্ধু ক্রুইকশ্যাংক, যিনি স্বপ্নে একটি জাহাজের অবয়ব দেখেছিলেন। এই ঘটনা শোনার পর কোলরিজের বন্ধু প্রখ্যাত কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ শীঘ্রই তার রচনা থেকে নিজেকে বিরতি দিয়ে কোলরিজের সাথে এই কবিতার পরিকল্পনা করেন এবং ২৩ মার্চ, ১৭৯৮ এই কবিতা সম্পন্ন হয়। এই কবিতা ব্যালাড স্তবক এর পরিবর্তিত নতুন আকারে লেখা হয়। এই কবিতাটি এর দক্ষতাপূর্ণ ঐক্য, প্রাণবন্ত বাক্যাংশ এবং ‘কল্পনার ছায়া’ তে লেখার জন্য সমাদৃত। এটি অপরাধ ও শাস্তির একটি সহজ কাহিনী। এ কবিতার কেন্দ্রীয় উপলব্ধি হচ্ছে যে, সত্যিকারের ঈশ্বরের প্রার্থনা ঈশ্বরের সৃষ্টি কে ভালোবাসার মধ্যে নিহিত। সংক্ষিপ্ত ঘটনাপ্রবাহঃ একজন বৃদ্ধ নাবিক (এনশিয়েন্ট মেরিনার) এর অপরাধ এবং অপরাধবোধ। অপরাধবোধের সঙ্গে শাস্তি এবং এর প্রতিটি অংশে প্রায়শ্চিত্যের দিকে একটি নতুন পদক্ষেপ নেয়া। পরিশেষে, বৃদ্ধ নাবিকের পাপমোচনের দ্বারা এর সমাপ্তি। বিস্তারিত ঘটনাপ্রবাহঃ তিনজন যুবক, একটা বিয়ের অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে একসঙ্গে হাঁটা শুরু করে। তখন একজন বৃদ্ধ বয়সী নাবিক তাদের পথ আটকায় এবং তাদের একজনের হাত ধরে ফেলে। সেই তরুণ যুবক ক্রুদ্ধভাবে বৃদ্ধ নাবিককে তার হাত ছেড়ে দিতে বলে। বৃদ্ধ নাবিক তার হাত ছেড়েও দেয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে যুবকটি বৃদ্ধ নাবিকের এর “উজ্জ্বল চোখ” উপেক্ষা করে একটুও নড়তে পারে না এবং একটি পাথর উপর বসে পড়ে এনশিয়েন্ট মেরিনারের অদ্ভুত কাহিনী শুনতে থাকা ছাড়া অন্যকিছু করতে পারে না। এনশিয়েন্ট মেরিনার সেই যুবক বিয়ের মেহমানকে তার জীবনের গল্প শোনায় যে তার যৌবনকালে একবার সে একটি জাহাজে যাত্রা শুরু করেছিল নিজদেশের বন্দর থেকে। সমুদ্র ছিল শান্ত ও প্রাণবন্ত। বিবাহ হল থেকে ভেসে আসা সংগীতের শব্দ শুনে যুবক মনে করে যে নববধূ হলে প্রবেশ করেছে, কিন্তু সে তখনো বৃদ্ধ নাবিকের এর গল্পশোনা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারে না। মেরিনার স্মরণ করে বলতে থাকে যে, সেই যাত্রা দ্রুত অন্ধকারে ছেয়ে যায় যখন একটি দৈত্যাকার ঝড় সমুদ্র উঠে এবং দক্ষিণ দিকে জাহাজটিকে ধাওয়া করে নিয়ে যায়। দ্রুত জাহাজটি একটি হিমশীতল “কুয়াশা এবং তুষার,” এর দেশে এসে পড়ে। যেখানে ” সবুজ বরফ, মাস্তুল সমান উঁচু ছিল। এই কিংকর্তব্যবিমূড় পরিবেশ দ্বারা জাহাজ পরিবেষ্টিত ছিল। ঠিক তখনি নাবিকরা আলবাট্রস নামের একটি সামুদ্রিক পাখি দেখতে পায়। এটি জাহাজের চারদিকে উড়তে থাকে এবং এর কর্কশ শব্দে বরফ ভেঙে বিভক্ত হয়ে যায়। দক্ষিণ থেকে বাতাস এসে জাহাজটিকে হিমশীতল অঞ্চলের বাইরে চালিয়ে নিয়ে যায়। এটা দেখে নাবিকেরা আলবাট্রসকে তাদের সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করতে শুরু করে। হঠাত মেরিনারের মুখে বেদনার ছাপ ফুটে ওঠে এবং বিবাহের-অতিথি এটা খেয়াল করে তাকে এর কারন জিজ্ঞাসা করলে, এনশিয়েন্ট মেরিনার স্বীকার করে যে সে তার ক্রস বো ছুড়ে আলবাট্রস কে হত্যা করেছিল। প্রথমে অন্যান্য নাবিকেরা এমন পাখিকে মেরে ফেলার জন্য এনশিয়েন্ট মেরিনারের উপরে প্রচন্ড রেগে ছিল। কিন্তু পরে যখন অচিরেই কুয়াশা কেটে যায়, তখন নাবিকরা নিষ্পাপ পাখিটির হত্যাকে সমর্থন করে বলে , ‘যে পাখি আসলে বাতাস বা কুয়াশা আসে তাকে হত্যা করাই শ্রেয়’। তারা বলে, “’Twas right, said they, such birds to slay, That bring the fog and mist.” তারা তখন মেরিনার কে অভিনন্দন জানায়। কিন্তু তারপরেই অতি দ্রুত বাতাস থেমে যায় এবং একটি নীরব শান্ত সমুদ্রে তারা আটকা পরে। অতিসত্বর তাদের সত্যিকারের জাহাজ যেন কোন ছবির আকা সমুদ্রের জাহাজের ন্যায় স্থির হয়ে যায় এবং তারা সবাই তীব্র পিপাসায় কষ্ট পেতে থাকে। মাথার উপরের কপারের মতো উষ্ণ রক্তাক্ত লাল সূর্য তার তাপ বর্ষণ করতে থাকে অনবরত। রাতে পচতে থাকা সমুদ্র থেকে কর্দমাক্ত প্রাণী বেরিয়ে আসে। সেখানে যেন মৃত্যু আগুনের আকৃতি নিয়ে নাচতে থাকে সবুজ, নীল, সাদা আরো নানা রং নিয়ে। তখন এটাকে মনে হয় ডাইনীর জ্বালানি তেল। পিপাসায় বৃদ্ধ নাবিকের গলা শুকনো বালুরাশির মতো খাঁ খাঁ করে। নাবিকরা ভয় ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে তাদের দুর্দশার জন্য এনশিয়েন্ট মেরিনার কে দায়ী করে এবং গলায় আলবাট্রসের মৃতদেহ ঝুলিয়ে দেয়। হঠাত করে পশ্চিম দিগন্তে একটি ছোট রেখা দেখা দেয়। যেটি আসলে থাকে একটি ভৌতিক জাহাজ, যাতে করে মৃত্যু ও জীবন্মৃত (মহিলার বেশে) আসে এবং তাদের নিয়ে জুয়া খেলে। সেখানে জীবন্মৃত জয়ী হয়ে এনশিয়েন্ট মেরিনারকে পুরষ্কার হিসেবে পায়। মৃত্যু তখন, ক্রস বো দিয়ে বাতাস কাটার মত শব্দ কর্‌ সমস্ত নাবিকদের আত্মাকে বের করে নেয়। মেরিনার কেবল তার অপরাধের জন্য আরো কঠিন শাস্তিভোগের জন্য বেঁচে থাকে একাকী নির্জন বিশাল সমুদ্রে। যেহেতু সে স্রষ্টার সৃষ্টি কে হত্যা করে স্রষ্টার প্রতিও অবমাননা করেছে, তাই সে স্রষ্টা ও তার সৃষ্টি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। তখন হতাশ নিঃসঙ্গ মেরিনার বলে, “Alone, alone, all, all alone, Alone on a wide wide sea! And never a saint took pity on My soul in agony.” এনশিয়েন্ট মেরিনার আফসোস করে যে এত সুন্দর মানুষগুলো জাহাজের ডেকের উপর মরে পড়ে আছে আর তার আশেপাশে হাজার হাজার কর্দমাক্ত স্যাঁতস্যাঁতে কিছু জীব ভেসে বেড়াচ্ছে। সাতদিন এবং সাত রাত ধরে সে এই দুর্বিষহ শাস্তি ভোগ করে। আর ডেকে থাকা মৃত ব্যক্তিদের খোলা চোখগুলো যেন অনবরত তাকে অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছিল। তারপর তার জন্যে পরিস্থিতি কিছুটা ভাল মোড় নেয়, যখন সে চাঁদের আলোতে আশেপাশের জল সাপগুলোর সাদা জ্বলজ্বলে রং এবং তাদের সমৃদ্ধ আবরণের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পরে। সে তখন ওই জীবগুলোর প্রশংসা করে এবং ভালোবাসার একটি বাসনা তার হৃদয় প্রকাশ করে ওগুলোর জন্য এবং সে তাদের অজ্ঞাতসারে আশীর্বাদ করে। অবিলম্বে সে প্রার্থনা করতে সক্ষম হয় এবং তার ঘাড়ে ঝুলে থাকা মৃত আলবাট্রোসের সাগরে গিয়ে পড়ে। এখান থেকে, প্রায়শ্চিত্ত প্রক্রিয়া চলতে থাকে। নাবিক ঘুমাতে সক্ষম হয়, এবং যখন সে ঘুম থেকে জেগে ওঠে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বৃষ্টি যেন কাছে এসে তাকে সান্ত্বনা দেয়। এখন আর তার হৃদয় শুষ্ক ধূলির মতো অনুভূত হয় না। সে একটা শীতল অনুভূতি পায় মনে। একটি শক্তিশালী বাতাস শুরু হয় আর জাহাজ বাতাসের গর্জনের সাথে সাথে এগোতে থাকে। তার অন্য নাবিকদের মৃতদেহ গুলো জেগে ওঠে এবং যে যার কাজ করতে থাকে যদিও তাদের অশরীরী মনে হয় এবং তারা নিজেদের মধ্যে কোন বাক্যালাপ করে না। বৃদ্ধ নাবিক তার নিজের দেশে ফিরে আসে এবং সে একজন পবিত্র সাধুর কাছে তার অপরাধ স্বীকার করে তার অন্তরের অনুশোচনা থেকে মুক্তি চায়। তখন সেই সাধক তাকে তার এই ঘটনা প্রত্যেক জীবিত মানুষের কাছে পৌছে দিতে বলে। যখনই বৃদ্ধ নাবিক নিজের অনুশোচনায় কষ্ট পেতে থাকে তখনই কোন ব্যক্তিকে এই কাহিনী শোনালে তার কষ্ট লাঘব হয়। অনুধাবনঃ মানুষ যেমন স্রষ্টার অনবদ্য সৃষ্টি, ঠিক তেমনি স্রষ্টাই নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এই প্রকৃতি ও অন্যান্য সবকিছু। এই প্রকৃতি যে শুধু সৌন্দর্য দিতে পারে তাই না, এর উপরে আঘাত করলে এই প্রকৃতি অতিপ্রাকৃতিক বলে ভয়ংকর রুপ নিতে পারে। প্রত্যেক সৃষ্টির মধ্যেই স্রষ্টা বিরাজমান। তার সৃষ্ট কোন জীবে অবহেলা বা ক্ষতিগ্রস্ত করা তার প্রতি দ্বিমত পোষণের মতো জঘন্য অপরাধ। তাই ঘৃণা নয়, স্রষ্টার অন্যসব সৃষ্টিকে ভালবাসাতে হয়। স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালোবাসা তাকে ভালোবাসার সমান আর যে স্রষ্টাকে ভালোবাসে, স্রষ্টা তাকে ভালোবাসেন। আর স্রষ্টাকে ভালোবাসা তার কাছে প্রার্থনা করার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। কবি বলেন, “He prayeth best, who loveth best All things both great and small; For the dear God who loveth us He made and loveth all…” এই লাইনগুলো দিয়ে উক্ত ধারনা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ভালবাসা এবং স্রষ্টার সকল সৃষ্টির প্রতি সম্মান যে দেখায়, তিনি স্রষ্টার প্রিয় প্রার্থনাকারী। স্রষ্টা তাঁর সব সৃষ্টিকে সমানভাবে ভালোবাসে।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি