Loading..

খবর-দার

০৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০৮:১১ পূর্বাহ্ণ

♣প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে জুতা কিনতে ৫০০ টাকা, স্কুল ড্রেস বাবদ ১ হাজার ও স্কুল ব্যাগ কিনতে ৫০০ টাকা মোট ২ হাজার টাকা দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে

♣প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে জুতা কিনতে ৫০০ টাকা, স্কুল ড্রেস বাবদ ১ হাজার ও স্কুল ব্যাগ কিনতে ৫০০ টাকা মোট ২ হাজার টাকা দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে

তৃণমূলে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা। এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আগামী বছর থেকে উপবৃত্তির টাকা দ্বিগুণ করতে যাচ্ছে সরকার। এতে করে প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধ এবং উপস্থিতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে বর্তমানে ১০০ টাকার স্থলে ২০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও বছরের শুরুতেই ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে শিক্ষাসামগ্রী (খাতা, কলম, স্কুল ব্যাগ) কিনতে ৫০০ টাকা করে দেয়া হবে। অনিয়ম রোধ করতে পুরো টাকা দেয়া হবে শিক্ষার্থীর মায়ের মোবাইল অ্যাকাউন্টে।

প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও উপবৃত্তি প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলেন, প্রাথমিক উপবৃত্তি প্রকল্পের (৩য় পর্যায়) আওতায় বর্তমানে প্রাথমিকে এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থী মাসে ১০০ টাকা করে উপবৃত্তি পায়। ডিসেম্বরে এ উপবৃত্তি প্রকল্পের (৩য় পর্যায়) মেয়াদ শেষ হবে। আগামী জানুয়ারিতে শুরু হবে উপবৃত্তি প্রকল্পের ৪র্থ পর্যায়। সেই উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তাবনা (ডিপিপি) উপবৃত্তির টাকা ১০০ টাকার স্থলে ২০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়াও বছরের শুরুতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে জুতা কিনতে ৫০০ টাকা, স্কুল ড্রেস বাবদ ১ হাজার ও স্কুল ব্যাগ কিনতে ৫০০ টাকা মোট ২ হাজার টাকা দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে। এতে পাঁচ বছরে উপবৃত্তি খাতে ১৫শ কোটি ও শিক্ষাসামগ্রী বাবদ ১৪শ কোটি টাকাসহ মোট ২৯শ কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর সেখানে কিছু কাটছাট করে তা গ্রহণ করেছে।

মন্ত্রণালয় উপবৃত্তি মাসিক ২০০-র স্থলে দেড়শ টাকা ও শিক্ষাসামগ্রী বাবদ ৫০০ টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে পাঁচ বছরে ১৬ হাজার কোটি টাকা দরকার হবে। এভাবে উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রস্তাবনা (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী ডিসেম্বরে উপবৃত্তি প্রকল্পের (৩য় পর্যায়) মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নতুন ডিপিপি তিন মাসের মধ্যে পরিকল্পনা কমিশন হয়ে তা একনেকে পাস হতে হবে। না হয় জানুয়ারি থেকে উপবৃত্তি দেয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, বর্তমান জীবনযাত্রার মানের কথা চিন্তা করে উপবৃত্তির পরিমাণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আপাতত ১০০ টাকার পরিবর্তে দেড়শ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ডিপিপি খসড়া প্রস্তুত, তা যেকোনো সময় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। যদি প্রধানমন্ত্রী মনে করেন ২০০ টাকা করবেন তা হলে অনেক ভালো। এছাড়াও আগামী বছরের শুরুতে শিক্ষাসামগ্রী কিনতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৫০০ টাকা করে দেয়া হবে।

এদিকে উপবৃত্তি প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপবৃত্তি চালুর ফলে শিক্ষার্থী ঝরেপড়া কমে গেছে। প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা ও ঝরেপড়া রোধে উপবৃত্তি প্রকল্প দারুণভাবে সফল হয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় উপবৃত্তির টাকা বাড়ানোর পক্ষে সরকারের নীতিনির্ধারকরা সায় দিয়েছেন। এ অবস্থায় উপবৃত্তি টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

কর্মকর্তারা বলছেন, উপবৃত্তির টাকা সরাসরি শিক্ষার্থীর মা’র হাতে যাওয়ায় এ সুফল পাচ্ছে শিক্ষার্থী ও তার পরিবার। কারণ উপবৃত্তির টাকা সরাসরি শিক্ষার্থীর মায়ের মোবাইল অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয়া হয়। টাকা উঠাতে কোনো সার্ভিস চার্জ লাগে না। পুরো টাকা কোনো হয়রানি ছাড়াই তুলতে পারছেন মায়েরা। এর বাইরেও প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি-৪ (পিইডিপি-৪)-এ আরও অনেক সুযোগ-সুবিধার আওতায় আসছে শিক্ষার্থীরা। নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেস দেয়ার প্রস্তাব থাকলেও ড্রেসের পরিবর্তনে ৫০০ টাকা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেনাকাটায় নানা অনিয়ম ও হয়রানি রোধে ৫০০ টাকা শিক্ষার্থীর মায়ের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এর সঙ্গে মা আরও কিছু যোগ করে স্কুল ড্রেস বানানোর নির্দেশনা থাকবে।

জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তার ও মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালে শিক্ষার জন্য খাদ্য কর্মসূচি চালু করে তৎকালীন বিএনপি সরকার। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প চালু করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বধীন আওয়ামী লীগ সরকার। শিক্ষার জন্য খাদ্য কর্মসূচি ও উপবৃত্তি প্রকল্প প্রাথমিক শিক্ষায় ইতিবাচক ফল বয়ে আনে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার দেশব্যাপী উক্ত কর্মসূচি সম্প্রসারণ পূর্বক কর্মসূচি দুটিকে একীভূত করে ২০০২ সালে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প চালু করে। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্পের সফলতায় ২০০৮ সালে পুনরায় প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প (২য় পর্যায়) গ্রহণ করা হয়।

প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্পে (২য় পর্যায়) সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভা এলাকা ছাড়াও গ্রামের অসচ্ছল পিতা-মাতার সন্তানকে উপবৃত্তি সুবিধা দেয়া হয়। উপবৃত্তি সুবিধাভোগীর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৮ লাখ ৭০ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থী। ২০১৫ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর আরও দুই বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তৃতীয় পর্যায়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ৩য় পর্যায়ে প্রকল্পে সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় এক কোটি ৩০ লাখ। এরপর প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। নতুন করে ১০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির সুবিধায় নিয়ে আসা হয়। প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল তিন হাজার ৮৫৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলে মোট ব্যয় ধরা হয় ছয় হাজার ৯২৩ কোটি ছয় লাখ টাকা।

প্রকল্প সূত্র জানায়, যে পরিবারে একজন শিক্ষার্থী আছে সে পরিবারকে মাসে ১০০ টাকা, দুইজনের পরিবারকে ২০০ টাকা, তিনজনের পরিবারকে ২৫০ টাকা ও চার শিক্ষার্থীবিশিষ্ট পরিবারকে মাসে ৩০০ টাকা দেয়া হয়। প্রতি তিন মাস পরপর এই টাকা বিতরণ করা হয়।

স্বচ্ছভাবে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করতে শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মোবাইলে রূপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশের মাধ্যমে দেয়া হয়। এতে কোনো ধরনের কমিশন দিতে হয় না অভিভাবকদের। আগে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ নিয়ে নানা অভিযোগ থাকলেও বর্তমান সরকারের ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিতরণ করায় দুর্নীতি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।