Loading..

প্রকাশনা

১৯ অক্টোবর, ২০১৯ ১০:৪৮ অপরাহ্ণ

যে কথা যায় না বলা

যে কথা যায় না বলা

ছোট কালের কথা। আমার বাবার প্রায় তিনশত গরু,ভেড়া এবং দুই জোড়া মহিষ ছিল। এড়ে গরুকে বলদ করা হত। কারণ আমার বাবার ২৫০ বিঘা জমি ছিল, যা দিয়ে চাষবাদ করা হত। প্রায় ২০/২৫ জন রাখাল কৃষাণ থাকত ।যাকে বলি দুধে ভাতে বাঙ্গলী ।আমার পরিবারে কখনও দুধ-ভাতের অভাব হয়নি। রাখাল-কৃষানের কাজ ছিল আজানের সময় উঠে বলদ গরুদের খাওনোর পর প্রায় ৬/৭ মাইল হেটে জমি চাষ করতে যেতে হত।তখণ রাস্তা কাঁচা  এবং বর্ষাকালে রাস্তায় শুধু কাদা আর কাদা । তারপরও যেতে হবে, তাই আর কি করা, সখের বশত আমি আমার বাবার সাথে গরুর গাড়িতে যেতাম । যেতে যেতে দেখতাম কিছু বলদ গরু রাস্তার ধারে থাকা গু খেত । তখণ আমার বাবা যে গরু গু খেত তার মুখে ঠুসি লাগাতো । তারপরও ঐ জিনিসে মুখ দেওয়ার চেষ্টা করত । আসলে কথায় আছে খাজলিত যায় না মলে, আর কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। তেমনি বর্তমান সমাজে আমার বাবার ঐ ধরনের গরুর মত পরের সমালোচনা করাই তাদের কাজ। যাকে বলে পর নিন্দা ।পর চর্চা করে হয়তো তারা আরাম বা সুখ পায়।এক দিন ট্রেনে রায়টায়  যাওয়ার সময় ট্রেনের মধ্যে দেখতে পায় নিজের বাছা বাদ দিয়ে অন্যর পাছা চুলকাচ্ছে, প্রথমে আস্তে আস্তে, তখন ঐ ব্যক্তি সরে নড়াচড়া করছে, তারপরও একই কাজ করে যাচ্ছে, কিছুক্ষন পর দেখা গেল একটু জোরে একই কাজ করছে । তখন ঐ ভদ্র লোক বলল কেন ভাই আমাকে ডিস্টাপ করছেন, তখন  লোকটি বলল তাইতো বলি কেন আমি আরাম পাচ্ছি না । আসলে যার যে স্বভাব , সে সেই কাজই করবে। সমাজে কিছু মানুষ আছে অন্যর দোষ খুজা বা দোষ ধরা, যেহেতু তার চির দিনের স্বভাব সেই কাজটি করবেই । কারন সে কখনও ভাল কাজ করে নিতো, আবার অনেকে আছে অন্যর ভাল দেখতে পারে না। আমরাতো সাধু আর চোরের গল্প সবাইতো জানি, যার যে কর্ম, সেতো তাইতো ভাববে। যে কখনো সৃষ্টি করেনি, সে সৃষ্টির মর্ম কিভাবে বুঝবে। যাকে বলে পরের ধণে পুৎদারী । আমরা দেখতে পায় যে কাজ করে, সে শূধু কাজ করেই যায় । অন্যর দিকে তাকানোর সুযোগ নেই, আর যে সমালোচনা করে সে কখনও ভাল কাজ করে না বা করতে পারে না বা করার অভাস্ব নেই ।আমি একটি গল্প পড়ে ছিলাম ছোট কালে, গল্পটি এমন ছিল ছেলে পরীক্ষা উপলক্ষে শিখেছে গরু সম্পর্কে রচনা। কিন্তু পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে এসে গেছেনদী অতএব, কী আর করা? সে গরুকে নদীর তীরে নিয়ে এল; লিখল, ‘আমাদের গ্রামে একটি নদী আছে। নদীর তীরে অনেক গরু চরে অতঃপর জুড়ে দিল গরু সম্পর্কিত শেখা রচনাটা। আর পরীক্ষার খাতায় দুই ভাইয়ের গরু সম্পর্কিত রচনায় হুবহু মিল পরিলক্ষিত হলে পরীক্ষকের জিজ্ঞাসার জবাবে দুই ভাই সমস্বরে বলে উঠেছিল, ‘তা তো হবেই; কারণ আমরা যে একই গরুকে দেখে লিখেছি।এই গল্প থেকে বুঝতে পারছি যার যার যে ভাবনা, সেতো সেই ভাবে ভাববে । তার জ্ঞানের গভীরতা তত টুকুই। আবার আরাকটি গল্প পড়ে ছিলাম,  গ্রামের এক লোকের গরু হারানো গিয়েছিল; বহু চেষ্টা করেও সেটার খোঁজ পাওয়া গেল না। প্রয়াত চাটুকার  সাহেবের মতে, প্রতিটি গ্রামেই একজন করে পাগল থাকে। তো সেই পাগল এক ঘণ্টার মধ্যে গরুটি খুঁজে বের করে নিয়ে এসে বলল, ‘আমি চিন্তা করে দেখলাম, আমি গরু হলে কোথায় কোথায় যাইতাম। সেই সব জায়গায় গেছি, গরু পাইয়া গ্যাছিগা।আর গ্রামের অপর একজনের গরু হারালে পরে সে সকালে খুঁজতে বেরিয়ে দুপুরে শুষ্ক মুখে বাড়িতে প্রত্যাবর্তনের পর পুত্রকেভাইসম্বোধন করে এক গ্লাস পানি আনতে বললে স্ত্রীর জিজ্ঞাসার জবাবে নাকি বলেছিল, ‘মা, গরু হারালে এমনই হয়।

ছাত্রাবস্থায়জরাসন্ধরচিত কারাগার সম্পর্কিত গ্রন্থ লৌহকপাট- পড়েছিলাম, গরু চুরির অপরাধে ধৃত অপরাধীকে কারাগারে সবচেয়ে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখা হয়। কেননা, গরু চুরি নাকি সবচেয়ে সহজ কাজ, গরুকে গোয়ালঘর থেকে বের করে রাতটা কোনোরকমে ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে রেখে ভোরের আলোয় মানুষের হাঁটাচলার রাস্তায় তুলে দিয়ে গরুর পেছনে পেছনে হাঁটা দিলেই ব্যস, আর কিছু করার দরকার নেই। এই সব গল্প থেকে আমাদের বুঝতে হবে, অন্যর সমালোচনা  না করে, তার কাজের সহযোগিতা করা । হীন মানুষের পরিচয় না দিয়ে পর নিন্দা বন্ধ করা অপিরহার্য ।



আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি