Loading..

খবর-দার

২৭ নভেম্বর, ২০১৯ ১২:০৩ অপরাহ্ণ

বিলুপ্ত হচ্ছে সবুজ, বাড়ছে দূষণ,হুমকির মুখে সোনার বাংলাদেশ

 বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে ঢাকা শহরের রাস্তার ধারের গাছপালা। এসব গাছের টিকে থাকার ক্ষমতা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ৩০ শতাংশ কমে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের যৌথ গবেষণায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ঢাকা শহরে দূষণ যেমন বাড়ছে, তেমনি তা মোকাবিলার রক্ষাকবচ সবুজ গাছপালাও কমে আসছে। এবার কোনোরকমে টিকে থাকা সেই সবুজের জন্য নতুন বিপদের কথা শোনালেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, যানবাহনের ক্ষতিকর গ্যাস ও অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার দূষণের মাত্রা এতটাই যে ঢাকা শহরের গাছপালা টিকে থাকার ক্ষমতা হারাচ্ছে। যতটুক সবুজ টিকে আছে, তা–ও এ দূষণে কত দিন বেঁচে থাকবে, তা নিয়ে আছে আশঙ্কা।

গবেষণায় দেখা গেছে, শহরের দেবদারু, মেহগনি ও কাঁঠালগাছের ওপর যানবাহন থেকে নিঃসৃত নাইট্রোজেন ডাই–অক্সাইড গ্যাস ও অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএম ২ দশমিক ৫) ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।

গবেষকেরা বলছেন, গাছের পাতার পৃষ্ঠগুলো বাতাসের অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা, সালফার ডাই–অক্সাইড, নাইট্রোজেনের অক্সাইড ও কার্বন ডাই–অক্সাইডসহ দূষণকারী উপাদান শোষণ করে। এসব উপাদান শোষণে গাছের পত্ররন্ধ্রের বড় ভূমিকা থাকে। বাতাসে থাকা কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণের পাশাপাশি মাটি থেকে পানি নিয়ে সূর্যের আলো ও ক্লোরোফিলের উপস্থিতিতে সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় গাছ খাদ্য তৈরি করে এবং অক্সিজেন ছাড়ে। এই অক্সিজেন নিয়ে প্রাণী বেঁচে থাকে। 

বায়ুদূষণের কবলে পড়ে গাছ কীভাবে টিকে থাকার ক্ষমতা হারাচ্ছে, এ প্রশ্নের উত্তরে গবেষক দলের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন উদাহরণ দিয়ে বললেন, বেশ কিছুদিন কালো ছাতা ব্যবহার করলে একপর্যায়ে তা বিবর্ণ হয়ে পড়ে। তেমনি দূষণে গাছের সহনশীলতাও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বাতাসে নাইট্রোজেন ডাই–অক্সাইড ও অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার পরিমাণ বেড়ে গিয়ে তা গাছের মোট ক্লোরোফিল কমাতে বড় ভূমিকা রাখে। এই ক্লোরোফিল ছাড়া গাছ খাবার তৈরি করতে পারে না। আবার গাছের পত্ররন্ধ্র খোলা ও বন্ধ হওয়ার প্রক্রিয়াটিও অচল করে দেয় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা। এর ফলে সালোক সংশ্লেষণের হার কমে যায়। ব্যাহত হয় গাছের বৃদ্ধি ও ফলন। আবার সালফার ডাই–অক্সাইড পানির সঙ্গে মিশে সালফিউরিক অ্যাসিড তৈরি করে, যা ক্লোরোফিলের প্রধান উপাদান ম্যাগনেশিয়ামকে সরিয়ে দিতে পারে। এর ফলে পাতা বিবর্ণ হতে থাকে। গাছের পাতার আকার, আকৃতিরও পরিবর্তন ঘটে। ফুল-ফল ধারণক্ষমতা আস্তে আস্তে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একপর্যায়ে গাছ মারা যায়। তবে এগুলো দু-এক দিনের বিষয় নয়, দীর্ঘমেয়াদি দূষণের ফলাফল।

বৈশ্বিক বায়ুদূষণের ঝুঁকিবিষয়ক প্রতিবেদন ‘দ্য স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার-২০১৯’–এর তথ্য অনুযায়ী, বায়ুদূষণজনিত রোগে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ মারা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিকস অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন এবং হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে করা প্রতিবেদনটি চলতি বছরের ৩ এপ্রিল প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বায়ুদূষণে মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ পঞ্চম। আর গত ৩ মার্চ বিশ্বের বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এয়ারভিজ্যুয়ালের ‘বিশ্ব বায়ুমান প্রতিবেদন ২০১৮’ অনুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে বায়ুদূষণের কবলে থাকা রাজধানী শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। ঢাকা শহরের বাতাসে ক্ষুদ্র বস্তুকণার পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বেঁধে দেওয়া মাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি।

সুত্রঃ ইন্টারনেট