Loading..

ম্যাগাজিন

৩০ নভেম্বর, ২০১৯ ০৮:৪৪ অপরাহ্ণ

অনুশোচনা




ক্লাশের মেধাবী ছেলে অাশিক দিমজুরের সন্তান৷ টাকার অভাবে তার বাবা তার অপর দুই ভাইকে স্কুলে পাঠাতে পারেনি৷ অাশিক পড়াশোনায় ভালো৷ ক্লাশে তার একটা সুনাম অাছে৷ পিতা না পড়াতে চাইলেও সে নিজেই অাগ্রহ করে পড়াশোনা করে৷ তার এ অাগ্রহ দেখে ছুটে এলো তার শ্রেণি শিক্ষক মিজানুর রহমান৷ বাবার অবাধ্য হয়ে স্কুলে অাসে তাই বাবা তাকে কোনো টাকা পয়সা দেয় না৷ তিন ছেলে বাবা মিলে কাজ করলে সংসার ঘুরবে এজন্য বাবা তাকে পড়াতে নারাজ৷ মিজান সাব সব কিছু বুঝে অাজিম সর্দারের বাড়ি তাকে লজিং ঠিক করে দিল৷ সর্দার সাহেব প্রচুর টাকা থাকলেও কোনো ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে পারেনি৷ তাই অাশিককে তিনি খুবই অাদর করেন৷ মেট্রিক পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সকল টাকা সর্দার সাব দিতে চাইলেও মিজান স্যারের ঘোর অাপত্তি৷ তাঁরও তো অাশিকের প্রতি একটা দায়িত্ব অাছে৷ দুজন মিলেই ফরম ফিলাপের টাকাটা দিয়ে দিলো৷

কলেজে ভর্তি হয়ে সর্দার সাহেবের বাড়ি ছেড়ে যেতে চাইলেও তিনি কিছুতেই অাশিককে ছাড়েননি৷ পুত্র স্নেহে তাকে মানুষ করছে৷ তাই বাড়ি ছাড়তে চাইলেই সর্দারের বুক কাঁপে৷ তাই তার বাড়িতে থেকে কলেজের পড়াটা সারলো অাশিক৷ অাজিম সর্দারের হাত লম্বা৷ অনেক বড় বড় মানুষের সাথে তার উঠাবসা৷ তার সহায়তার অাশেক তহশিলদার পদে একটা চাকরি পেয়ে গেল সহজে৷ অাশিক এখন নায়েব সাব৷ গ্রামে থাকলে তার মান বাঁচে না৷ তাই বয়সে অনেক ছোট জেরিনকে বিয়ে করে শহরে সংসার শুরু করলো৷ 

সংসার চালাতে অাশিকের অনেক টাকা লাগে; তাই দু'হাত ভরে তিনি ইনকাম করেন৷ টাকা ছাড়া কোনো কাজই হয় না তার দ্বারা৷ স্ত্রী বহুবার তাকে অবৈধ পথ পরিহার করার কথা বললেও কোনো কর্ণাপতই করেনি নায়েব সাহেব৷ রীতিমত সকলেই তাকে স্যার বলে সম্ভোধন করতে হয়, নয়ত তিনি মানুষের সাথে ক্ষেপে যান৷ কয়েক বছর যেতে না যেতেই কোটিপতি বানে যান তিনি৷ গ্রামের কারো সাথে যোগাযোগ নাই৷ মিজান স্যার চিকিৎসা করাতে বিদেশ যেতে হবে৷ শিক্ষক মানুষ এত টাকা পাবে কই৷ বাবার কালের জমিটা বিক্রি করতে হবে৷

সকালে তহশিল অফিসে হাজির মিজান স্যার৷ ভাইদের কাছ থেকে জমি খারিজ না করলে বিক্রি করা যায় না৷

-অাশিক জমিটা খারিজ করা লাগবে৷

-দেরি হবে স্যার৷ হাতে অনেক কাজ অাছে৷ রহমতের(পিয়ন) সাথে কথা বলেন৷ 

রহমত: স্যারের মেজাজ অাজ খুবই কঠিন! কথা বলতে পারবেন না৷ কিছু খরচপাতি না দিলে কাজ তাড়াতাড়ি হবে না, স্যার৷

মিজান: সারা জীবন অনৈতিকতার বিরোদ্ধে সংগ্রাম করেছি৷ অার এখন...? জমি অামার খারিজ লাগবে না৷ বিক্রি করা লাগবে না, চিকিৎসাও লাগবে না৷ অাক্ষেপ করে চলে গেলেন মিজান স্যার৷

-রহমত মিয়া, স্যার কি চলে গেলেন? ফ্রির জন্য ছাত্র খুজে৷ এ হলো শিক্ষকদের কাজ৷ সব জায়গাই তারা মাস্টারি করে৷

ঈদ অাসছে৷ সর্দার সাবের স্ত্রীর খুবই মনে পড়লে সেই অাশিকের কথা৷ মহিলা সেকালের হলেও ডিজিটাল মানুষ৷ ইমুতে ফোন করলো অাশিকের কাছে৷

- বাবা, অাশিক এবার ঈদটা স্ত্রী সন্তান নিয়া অামাদের সাথে করবা৷

- অামি মার্কেট করতে দিল্লি অাছি অান্টি! দেশের জামা বাচ্চাটা পছন্দ করে না৷

কে ফোন করলো? স্ত্রী জিজ্ঞাসা করলো৷

এগুলো শোনার সময় নাই৷ ইন্ডিয়া অাসছি মার্কেট করতে৷ কেমনে যেন গন্ধ পেয়ে গেছে৷ বেশি কথা বললে কিছু একটা চেয়ে বসবে৷ তাই ফোন কেটে দিলাম৷

- তুমি কাজটা একবারে ঠিক কর নাই৷

- কোনটা ঠিক অার কোনটা ঠিক না তা তোমার কাছে জানতে হবে না৷ নায়েব সাব বললেন৷

হঠাৎ একদিন সকালে বড় ভাই মনুর ছেলে জনি নায়েব সাবের বাড়িতে হাজির৷ ফরম ফিলাপ করতে পারে না৷ কয়েকটি টাকা চাইতে গেল৷

''অামি নিজে কামাই করে পড়াশোনা করেছি৷ অন্যের করুণা নিতে অাসছো কেন? জমিতে কাজ করে টাকা জোগাড় করো,'' জোড় সাজেসান্স দিয়ে দিল নায়েব সাব৷ কিছু না খেয়েই সাতসকালে নায়েব সাহেবের বাড়ি ত্যাগ করলো জনি৷ ভিতরে ভিতরে খুব কষ্ট পেলো৷ চাচার কাছে অাসাটা ঠিক হয় নি৷ চাচা হাই সোসাইটির মানুষ৷ ভাবতে ভাবতে হাটলো জনি৷

নায়েব সাহেবের দুই ছেলে ফজলু ও জমির একজনও নুন্যতম একটি সনদ অর্জন করতে পারেনি৷ হুন্ডা নিয়ে বন্ধুদের নিয়ে ঘোরে বেড়ানো, ক্লাবে যাওয়া প্রধান কাজ৷ 

চাকরি থেকে অবসর নিয়েছে নায়েব সাহেব৷ নানান রোগে অাক্রান্ত৷ বাড়ি ভাড়া থেকে ব্যাংক বেলেন্স এমনকি অবসরকালীন মাসিক ভাতাটিও স্ত্রীর কাছে দিতে হয়৷ সবই নিয়ন্ত্রণ করে স্ত্রী৷ ছেলেরা মায়ের পক্ষে৷ বাবা যেন সংসারের বোঝা! চিকিৎসার টাকাও পায় না স্ত্রীর কাছ থেকে৷ ছেলেরা বাবা যে একজন অাছে তাও মনে করে না৷ মা-ই সবকিছুর মালিক৷ অন্যদিকে নায়েব সাহেবএখন সংসারের বোঝা৷ রোগ-শোক নিয়ে সেই ভাইদের বাড়িতেই অবস্থান৷ সর্বদা চোঁখের জলে বুক ভাঁসে অার বলতে থাকে,''হায়! অামি কী করলাম! অামি কী করলাম!''

জনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি ছোটখাটো চাকরি করে৷ যা বেতন পায় তাই দিয়ে কোনোরকম সংসার চালায়৷

জনির মা :  জনি, দেখিস তোর চাচার যেন অযত্ন না হয়৷


(অসমাপ্ত)



আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি