Loading..

ম্যাগাজিন

৩০ নভেম্বর, ২০১৯ ০৮:৫২ অপরাহ্ণ

কেন নৈতিকতার এত অবক্ষয়?



ছোট বেলায় সূর্য উঠার অাগেই মক্তবে উপস্থিত হওয়ার রেওয়াজ ছিল৷ মক্তবে শুধু অারবিই পড়ানো হতো না, নীতি বাক্য ও নীতিমূলক উপদেশ দেয়া হতো বারবার৷ ''রাস্তায় মুরব্বি দেখলে সালাম দিবে, বড়দেরকে সম্মান করবে৷'' এটি ছিল নিত্যদিনের কমন ছবক৷ এখন সে ছবকও নাই, সালাম-সম্মানও নাই৷

স্কুলে দুষ্টমি করতে মন চাইলেও শিক্ষকের বেত্রাঘাতের ভঁয়ে তা থেকে পিছপা হতে হতো; উচ্ছৃংখলা করা থাক দূরের কথা৷ পারিবার, সামাজ এবং খেলার মাঠসহ সর্বস্তরেই শিক্ষকের শাস্তির একটা প্রভাব ছিল৷ সে প্রভাবটাই শিক্ষার্থীদের অনৈতিকতার প্রধান অন্তরায় ছিল৷ এখন শ্রেণি কক্ষ থেকে বেত চলে গেছে শিক্ষার্থীর পকেটে মোবাইল ঢুকেছে সে মোবাইল কুরুচিপূর্ণ সিনেমা নাচ-গান, ছবিতে ভরপুর হয়ে শ্রেণি কক্ষ দখল করে নিয়েছে৷ যার খেসারত শিক্ষক নয় শিক্ষার্থী ও পিতা-মাতা দিতে হচ্ছে৷

পাঠ্য পুস্তক ভরপুর ছিল ধর্মভিত্তিক নীতিকথা, উপদেশমুলক গল্প, কবিতা ও ছড়া দিয়ে৷ পাঠ শেষে পাঠকের অন্যের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পেত, শ্রেষ্ঠ মহা ব্যক্তিদের পথ অনুসরন করা যেত, সত্য-মিথ্যা, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের একটা রূপ রেখা মনে সঞ্চালন হতো৷ ডাইরেক্ট কিংবা ইনডাইরেক্টভাবে প্রায় সকল বিষয়ের সকল পাঠেই ছিল ধর্মীয় চেতনা৷ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে অাপনা অাপনিই সম্পর্ক সৃষ্ট হতো পিতা পুত্রের ন্যায়৷ শিক্ষাকেরাও শ্রেণিতে নিজ নিজ দুরত্ব বজায় রেখে চলতেন৷ অার এখন বেত নেই, শাসন নেই, অাদর নেই, বিনিময় ছাড়া শিক্ষার্থীর নৈকট্যতা নেই বললেও চলে৷ কারো প্রতি কারো মায়া নেই৷ শিক্ষক যা পড়ান তাতে যেমন অাবেগ নেই, ভালোবাসা নেই, কান্না নেই, তেমনি অান্তরিকতা নেই৷ ফলশ্রুতি শোনতে হয় লজ্জা ও নেক্কারজনক মিডিয়ার খবর৷

প্রেম প্রীতি ভালোবাসার জন্য ছেলে মেয়েরা কত অাবেগ দিয়ে হৃদয়ের গহীন থেকে ছন্দ মিলিয়ে প্রেম পত্র লিখত৷ প্রেম পত্রে ছিল হৃদয়ের ছোয়া৷ কোনো চাওয়া পাওয়ার ছিল৷ হৃদয়ের গহীন থেকে ভালোবাসা উজার করে দিয়ে লিখত৷ একে অপরকে রক্ষা করত৷ এটা শুধু প্রেমই ছিল না; ছিল দু'জন দু'জনকে নিরাপত্তার বাধন৷ এখন প্রেম নেই, প্রেম পত্রও নেই৷ সকালে একটা মিস কল, বিকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চেটিং৷ পরের দিন প্রেমের নামে প্রতারনা৷ পরিণামে ধর্ষণ কিংবা জীবন হানি৷ কেন রকম হলো? কে কাকে শাসন করার সামর্থ কিংবা ক্ষমতা রাখে? সন্তান কথা শোনে না বলে পিতা-মাতা বিচার দেন শিক্ষকের কাছে৷ শিক্ষক মশাই নখ ও দন্তহীন এক বাঘ৷ কিছুই বলতে পারেন না, করতেও পারেন না৷ শিক্ষকের অসহাত্ব শিক্ষার্থীরাও জানে৷ সে জন্যে তারা অারো বেপরোয়া হয়ে উঠে৷

গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে যেন সবাই নেতা! রাজনীতি নিয়ে এত অালোচনা সমালোচনা পৃথিবীর অার কোন দেশে অাছে কিনা অামার জানা নেই৷ চায়ের দোকানে বসলে মনে হয় এটি একটি রাজনৈতিক ক্লাশ, অার এ ক্লাশে সবাই শিক্ষক৷ রাজনীতি প্রভাব বিস্তার করে না এমন ক্ষেত্র এ দেশে অাছে বলে মনে হয় না৷ ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া, স্বামি-স্ত্রীর মধ্যে মনমালিন্যতাসহ দোয়া পড়াতেও রাজনীতিকে সামনে টেনে অানা হয়৷ সে প্রভাব কিশোরদের ক্ষেত্রে চরমভাবে বিস্তার করে৷ তারাও বুঝে যে তারা যা-ই করুক তাদের পেছনে বড় ভাই অাছে৷ অপরাধ ঢাকতে পেছন থেকে স্ব-স্বার্থে কেউ কেউ খুটি হিসেবে কাজ করে৷  তাদের অপরাধ থামাবে কে?

একদিন একটি বাস স্টেশনের পাশে ২০জন ছাত্রকে জড়ো হতে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম তারা সেখানে কেন জড়ো হয়েছে৷ উত্তর পেলাম তারা এক নেতার শোডাউনে যাবে৷ সেজন্য তাদের এক বড় ভাই তাদেরকে ডেকেছে৷ ১০টি হুন্ডা, ২০ জন ৯ম-১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্র, বাকি ১০জন ছোট খাটো নেতা বা কর্মী৷ শিক্ষক ক্লাশে যেতে চাপ দিচ্ছেন; অন্যদিকে তথাকথিত বড় ভাই শোডাউনে যেতে ডাকছেন৷ শিক্ষার্থী কার কথা প্রাধান্য দিলো? শিক্ষক কি বেত দিয়ে দৌড়ানো দিতে পারছেন? যে শিক্ষার্থীগুলোর পেছনে বড় ভাই থাকে তারা কি অপরাধ করতে দ্বিধাবোধ করে? বড় ভাই তো নিজ স্বার্থে হাতে একটি অস্ত্র তুলে দিবে৷ 

একটি অপরাধ হাজারো অপরাধের জন্ম দেয়৷ অার এ তরুন বয়সে সবচেয়ে বেশি অপরাধ করে মেয়েলী সংক্রান্ত বিষয়ে৷ তাদের দ্বারা কোন মেয়ে নিরাপদ থাকে? তাদের দ্বারা সংগঠিত অপরাধ দমন করবেই বা কে?

পুরুষ শাসিত সমাজ বলা হলেও নারীর ক্ষমতা এ দেশে কোনো অংশেই কম নয়৷ কিন্তু ঈর্ষান্বিত হয়ে একজন অন্যজনকে কাবু করতে নারীরা কখনো পুরুষকে ব্যবহার করে না৷ কিন্তু পুরুষ নারীকে শুধু হেয়ই করে না, সহকর্মি বা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নারীকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে৷ এমনকি এক শিক্ষক অন্য শিক্ষককে ঘায়েল করতে নিজ সন্তান তুল্য ছাত্রীকে দিয়ে নাটক করা নতুন কিছুই নয়৷ এর পরিণতি যে কত ভয়াবহ হয় তা বলার অবকাশ রাখে না৷ প্রতিক্ষের রোষানলে পড়ে সংসারের হাল ছেড়ে রাস্তায় বসতে হয়৷ 

কেন নৈতিকতার এত অবক্ষয়? কেন মানুষ নারীকে নিয়ে এত বিদ্রুপ করে? কেন নারীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে? কেন স্বাধীন দেশের ছোট্র শিশুটি ধর্ষিতা হয়ে কবরে যায়?

সুষ্টু বিনোদনের অভাব৷ একটি এন্ড্রেয়েড মোবাইল যতটা উপকারি, একজন কিশোর-কিশোরীকে বিপদগামী করতে তারচেয়ে অধিক ভয়ংকরী হয়ে উঠছে৷ নৈতিক শিক্ষা, শিক্ষার চর্চা ও সঠিক পথে পরিচালনায় শৈশব কাল থেকেই শাসনের অভাব বাধামুখীতায় শিশু অধিকারের নামে অন্যের অধিকার গ্রাস করে দিচ্ছে৷ নৈতিকতা তৈরি করাতে হবে, নয়ত অারো ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য৷


মোহাম্মদ মহসিন মিয়া

সহকারি প্রধান শিক্ষক

খেড়িহর অাদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়

শাহরাস্তি, চাঁদপুর৷

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি