Loading..

ম্যাগাজিন

০৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০৯:২০ পূর্বাহ্ণ

"একাত্তরের দিনগুলি" (বুক-রিভিউ)

বুক রিভিউ
একাত্তরের দিনগুলি
মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা এক সোনালী দলিল শহীদ জননী জাহানারা ইমামের "একাত্তরের দিনগুলি"।বইটিতে ১লা মার্চ ১৯৭১ থেকে ১৭ ই ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত তাঁর জীবন ও বাঙ্গালীর ভাগ্যাকাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী ডায়রি আকারে অত্যন্ত সুচারুরূপে তুলে ধরেছেন। সুখ-দুঃখ,হাসি-কান্নার ঘটনাবলী তিনি আবেগ তাড়িত না হয়ে শৈল্পিক ভাবে উপস্থাপন করেছেন।
"একাত্তরের দিনগুলি" তার পাঠকদের সামনে বাঙ্গালীর অসহযোগ আন্দোলন, ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর জ্বালাময়ী ভাষণ,২৫শে মার্চের কালরাত্রির বিভীষিকা, দেশ ছেড়ে বাঙ্গালীর পরভূমে আশ্রয়, টগবগে তরুণদের যুদ্ধে যাওয়ার বীরত্ব গাঁথা, মৃত্যুকে পায়ে ঠেলে এক হাতে প্রাণ আর আরেক হাতে গ্রেনেড নিয়ে শত্রুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়া সবকিছুই তিনি দিবালোকের মত তুলে ধরেছেন।
আমার মনে হয়েছে ঢাকার গেরিলাযুদ্ধ এরচেয়ে আর সুন্দরভাবে কেউ তুলে ধরতে পারেননি।
লেখিকার ইঞ্জিনিয়ার হতে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অসীম মেধাবী পুত্র রুমী দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দিলেন।হানাদারদের বন্দীশালায় নির্মম নির্যাতনের স্বীকার তাঁর ছোট ছেলে জামী।তাঁর আপাদমস্তক ভদ্র ইঞ্জিনিয়ার পতি যিনি তাঁর উপর অমানুষিক নির্যাতনের ক্ষত লজ্জায় তাঁর স্ত্রীর কাছে গোপন রেখেছিলেন।এতসব দুঃখ-যাতনা বুকে ধারণ করে ও তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার,আশ্রয়, টাকাপয়সা, চিকিৎসা সামগ্রী সবি দিয়ে গেছেন।চূড়ান্ত বিজয়ের ২ দিন আগে হানাদার বাহিনীর নির্যাতনে তাঁর অসুস্থ স্বামী হার্ট এটাক করে মারা যান।মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কিনে রাখা বিপুল পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী যা দেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ায় তাদের আর দেওয়া হয়নি তাই দিয়ে ১৬ই ডিসেম্বর বিকেলে তাঁর স্বামীর কুলখানির আয়োজন করেন।
বিজয়ের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন,
"সারা ঢাকার লোক একি সঙ্গে হাসছে আর কাঁদছে।স্বাধীনতার জন্য হাসি।কিন্তু হাসিটা ধরে রাখা যাচ্ছেনা।এত বেশি রক্তে দাম দিতে হয়েছে যে কান্নার স্রোতে হাসি ডুবে যাচ্ছে।ভেসে যাচ্ছে।"
মুক্তিযোদ্ধা বীর সেনানীদের বুকে ধারণ করে তিনি তাঁর শহীদ স্বামী-সন্তানের কথা ভুলে থাকতে চেয়েছেন। আর জাতী তাঁকে হৃদয়ে ধারণ করে রেখেছে "শহীদ জননী "রূপে।
ডঃ জাফর ইকবাল যথার্থ ই বলেছেন "তোমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের মাত্র একটি বই পড়তে চাও তাহলে একাত্তরের দিনগুলি পড়।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি