Loading..

প্রকাশনা

১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ

১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১/ আমাদের স্বীকৃতি

  ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১        


http://bn.banglapedia.org/images/a/a9/SevenMarchAddress.jpg

রমনা রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ

যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে উদযাপিত হলো আমাদের মহান বিজয় দিবস। জাতি গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে স্মরণ করল সেসব শহীদকে, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা। আমাদের স্বীকৃতি। লাখো প্রাণের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত বিজয়ের আনন্দকে রোমন্থন করতে প্রতি বছর দেশজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে পালিত হয়ে আসছে আমাদের বিজয় উৎসব।

বিজয়ের ইতিহাস-

১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে

আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তরের বিরুদ্ধে নীলনকশা করেনপাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং সামরিক বাহিনীর অফিসারদের নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করেন  কিন্তু ১ মার্চ অনির্দিষ্টকালের জন্য অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র আন্দোলন ও বিক্ষোভ শুরু হয়। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারাদেশে হরতাল পালিত হয়। ৩ মার্চ পল্টন ময়দানের বিশাল জনসভায় তিনি সারা পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই আন্দোলনের পটভূমিতে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে সমবেত উত্তাল জনসমুদ্রে জাতির উদ্দেশ্যে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দান করেন।  

ভাষণটির একাংশ-

" রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দিব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা। জয় বাংলা।"

সারা দেশ যখন ক্ষোভে উত্তাল, তখন ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসে শেখ মুজিবের সঙ্গে সরকার গঠন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেন। কিন্তু একই সঙ্গে সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালানোর পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। বেলুচিস্তানের কসাই হিসেবে পরিচিত জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়, কিন্তু কোন বাঙালি বিচারপতি তাকে শপথ পাঠ করাতে রাজি হননি। পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র আনা হতে থাকে।

১০ থেকে ১৩ মার্চের মধ্যে পাকিস্তান এয়ারলাইন্স তাদের সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করে পূর্ব পাকিস্তানে জরুরীভিত্তিতে "সরকারি যাত্রী" পরিবহন করতে থাকে। এই "সরকারি যাত্রী" দের প্রায় সবাই ছিল সাদা পোশাকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সেনা।

সামরিক বাহিনীর বড় বড় অফিসারদের নিয়ে বৈঠকে ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করেন "তিরিশ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করো, তখন দেখবে বাকিরা আমাদের হাত চেটে খাবে।" সে পরিকল্পনা মতোই ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইট আরম্ভ করে যার উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেয়া। এরই অংশ হিসাবে সামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্যদের নিরস্ত্র করে হত্যা করা হয়, ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীদের নিধন করা হয় এবং সারা বাংলাদেশে নির্বিচারে সাধারণ মানুষ হত্যা করা হয়। যুদ্ধ চলতে থাকে।

৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানী বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য বাংলাদেশ ও ভারতের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারীভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।

 

 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি