Loading..

প্রকাশনা

১৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০৩:৩৫ অপরাহ্ণ

শিশুদের মানসিক, আবেগিক বিকাশে শিক্ষক অভিভাবকদের করনীয়

শিশুদের মানসিক, আবেগিক বিকাশে শিক্ষক অভিভাবকদের করনীয়:

      মা বাবা ছেলে বা মেয়ের উপর কোন ব্যাপারে বিরক্ত হলেই বলেন যে, ‘ এর দ্বারা কিছুই হবে না ‘ বা ‘ এ একেবারে গোল্লায় গেছে’ । হয়তো সময়মতো দু’চারদিন পড়তে বসেনি , ওমনি ‘তোর দ্বারা তো পড়াশুনা হবে না, খামোকা তোর পেছনে পয়সা নষ্ট করা । ’ মা-বাবা হয়তো রাগ বা ক্ষোভ সামলাতে না পেরে কথাগুলো বলছেন, কিন্তু এর প্রতিক্রিয়া যে কত মারাত্মক ও কত সুদূর প্রসারী তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না । তাঁরা বুঝতে পারছেন না ,তাদের এই ক্রমাগত নেতিবাচক কথা কিভাবে সন্তানের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে দিতে পারে । ক্রমাগত শুনতে শুনতে একসময় তার মনেও ধারণা বদ্ধমূল হয়ে যেতে পারে যে, তার দ্বারা কোন কিছু করা সম্ভব নয় । এ ধরনের নেতিবাচক কথা শুনে অভ্যস্ত সন্তানদেরকেই দেখা যায় পরীক্ষা বা ইন্টারভিউর দিন দেরি করে ঘুম থেকে উঠে, পরীক্ষা বা ভাইভাবোর্ডে জানা প্রশ্নের উত্তরও ভুলে যায় । পরীক্ষার হল বা ভাইভা বোর্ড থেকে বেরুনোর পর জানা উত্তর মনে পড়ে । কারণ তার অবচেতনে প্রোগ্রামড হয়ে আছে যে, আমার দ্বারা তো ভালো কিছু হওয়ার নয় । এরাই পেশা, বৃত্তি, ব্যবসা বা বিভিন্ন উন্নয়নের ক্ষেত্রে আত্মঘাতি কথা বলে বা আচরন করে সবকিছু ভন্ডুল করে ফেলে ।

     শত শত প্রতিশ্রুতিশীল তরুনের ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করে জানা গেছে যে, মা-বাবারা এদের বুজতে ভুল করেছেন, এদের সম্পর্কে প্রায়শই নেতিবাচক কথা বলেছেন অথবা কোন ব্যাপারে একবার ব্যর্থতার জন্যে পিতামাতার কাছ থেকে ‘অপদার্থ’ , ‘অকর্মণ্য’, ’নালায়েক’ ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত হয়েছে । বাবা অথবা মা কোন ব্যপারে আবেগপ্রবণ হলেই ব্যর্থতার প্রসঙ্গ তুলে বারবার খোঁটা দিয়েছেন । সন্দেহ নেই, মা কখনও সন্তানের অমঙ্গল চান না । কিন্তু কোন ব্যাপারে সন্তানের সাথে মতের অমিল হলে বা সন্তানের কোন আচরণে ক্ষুব্ধ হলে মায়েরা অনেক সময় প্রচণ্ড সব নেতিবাচক উক্তি করে ফেলেন । তিনি হয়তো কিছুক্ষণ পরে তা ভুলে যান । কিন্তু এ ধরনের প্রচণ্ড নেতিবাচক উক্তির পুনরাবৃত্তি যে তার প্রিয় সন্তানের জীবনেই ‘অভিশাপ ‘ রূপে দেখা দিতে পারে তা তারা কখওে ভাবেন না । শুধু অশিক্ষিত মা নয়, বহু শিক্ষিত ম-ও আবেগপ্রবন হলে প্রচণ্ড নেতিবাচক কথা বলে থাকেন , যার সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া তার সন্তানের ওপরই পড়ে ।

     ছোটবেলা থেকে বারবার নেতবিাচক কথা শুনতে শুনতে আমাদের মন-মাসিকতা এমনকি ব্রেনও সেভাবে কম্পিউটারের মত প্রোগ্রামড ( Programmed) হয়ে যায় । তখন সত্য না হওয়া সত্বেও এই কথাগুলোই নতুন বাস্তবতা সৃষ্টি করে । এর অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে । যেমন সাধারণ ধারণা হচ্ছে, বৃষ্টিতে ভিজলে ঠাণ্ডা লাগে বা জ্বর আসে । বৈজ্ঞানিকভাবে বৃষ্টিতে ভেজার সাথে ঠাণ্ডা লাগা বা জ্বর আসার কোন সম্পর্ক নেই । কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমরা শুনে আসছি, ‘আরে বৃষ্টিতে ভিজিসনে, সর্দি লাগবে।’ শুনতে শুনতে ব্রেন এমনভাবে প্রোগ্রামড হয়ে গেছে যে, বৃষ্টির পানি গায়ে লাগার সাথে সাথে সর্দি বা ঠাণ্ডা লেগে যায় । বৃষ্টির পানি অনেকের কাছে রীতিমত এলার্জিতে পরিণত হয়েছে। অথচ গ্রামের লক্ষ লক্ষ মানুষ বৃষ্টিতে ভিজে দিনভর কাজ করছে, তাদের ঠাণ্ডা সর্দি লাগে না । কারণ বৃষ্টির সাথে জ্বর বা সর্দির কোন সম্পর্ক নেই । 

শিশুদের এ ধরনের কথা বলা বর্জন করুন :-

·         ওর পা ধোয়া পানি খা !

·          হাতের লেখা তেলাপোকার মতো ।/ ’কাকের ঠ্যাং বগের ঠ্যাং’  ।

·         গাধা/ছাগল কোথাকার ।

·         তুই একটা ’বদের বদ’ ।

·         শয়তান  ! ফাজিল ! বেয়াদব ! ইত্যাদি

পক্ষান্তরে মা-বাবার উৎসাহ সন্তানের ব্যর্থতাকেও সাফল্যে রূপান্তরিত করতে পারে । এরূপ অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে ।

জাপানকে শিশুদের স্বর্গ বলা হয় ; কারণ সে দেশে মায়েরা কোন কারণেই শিশুদেরকে বকাঝকা করেন না । শিশুরা দুষ্টুমি করলেও সেটাকে তারা আমলে নেন না। জাপানের শিশুরা যখন কোন অটোতে চড়ে বিদ্যালয়ে যায় তখন মনে হয় যেন তারা  ঘুমুচ্ছে । আসলে তারা ঐ সময় কল্পনা করে বড় হয়ে সে কি হবে বা কি করবে। কারণ তাদের মায়েরা শিশু মনে স্বপ্ন বুনে দেন । আধুনিক মনোবিজ্ঞানের বহু গভেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, শিশুকালে শিশু যে কল্পনা করতে পারে বা ভাবতে পারে বড় হয়ে সে ঠিক তা-ই হয় । আর মনের গহীণে এই স্বপ্ন বুনে দেয়ার দায়িত্ব মা-বাবা/ অভিভাবক ও শিক্ষকদের।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি