Loading..

ভিডিও ক্লাস

২৪ জানুয়ারি, ২০২০ ১০:৫২ অপরাহ্ণ

ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বীর মুক্তিযুদ্ধার আকাল প্রয়ানে তাঁর জবানিতে শুনা গল্প।

গতকাল ঝরে পড়লো আরও একটি টকটকে লাল গোলাপ ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের। এভাবেই ঝরে পড়ছে একে একে লাল গোলাপগুলো, পড়তে... পড়তে......... হয়তোবা একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে এই গোলাপগুলো। আমি বলছিলাম ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান মিন্টু সাহেবের কথা। যিনি গতকাল রাতে এই বাংলা মায়ের বুক খালি করে চলে গেছেন পরপারে। খুব কষ্ট হচ্ছিল, বার বার মনে পড়ছিলো তাঁর শেষ কথাটি। " থাকলে তো দেখা হবে", অর্থাৎ তিনি মনে হয় জানতেন আর কখনো দেখা হবে না উনার সাথে। 
২০১৭ সালের শুরুর দিকের কথা। আমার এক নিকট পরিচিত মুক্তিযোদ্ধা হঠাৎ করে মারা যান। উনার সাথে আমার কথা হয়েছিলো উনি আমাকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনাবেন। কিন্তু তাঁর নিকট থেকে আমার আর গল্প শোনা হল না। তখনি আমার মনে হল এভাবেই হয়তবা প্রতিদিনই হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা, হারিয়ে যাচ্ছে তাদের অসংখ্য বীরত্বগাথা গল্পগুলো। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমার ক্ষুদ্র পরিসরে যথটুকু সম্ভব আমাদের দেশের বীর মুক্তিযুদ্ধাদের গল্পগুলো সংগ্রহ করার ও সংরক্ষণ করার। 
এ কাজে আমি আমার প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীদের সাথে পাই। আমি আমার শ্রেণী কাজের এসাইনমেন্ট হিসেবে " এসো মুক্তিযুদ্ধাদের গল্প শুনি" এই কাজ দেই। এক্ষেত্রে আমি প্রথমে বেছে নেই আমার প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলো। এ কাজে আমি মহান মুক্তিযুদ্ধা আব্দুর রহমান মিন্টু সাহেবের সহায়তা নেই। আর তখন থেকেই উনার সাথে আমার পরিচয়। তিনি আমাকে ময়মনসিংহ জেলা স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলো তাদের নাম দেন। 
তারপর থেকে শুরু হয় আমার কাজ। আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুলের ৯ জন মুক্তিযুদ্ধার গল্প সংগ্রহ করি। 
তারপর আমি আরও বৃহৎ পরিসরে মুক্তিযুদ্ধাদের গল্প সংগ্রহ শুরু করি এবং ২০১৭ সালে আমি মোট ১৩৮ জন মুক্তিযুদ্ধার গল্প সংগ্রহ করি। 
যার মধ্যে আব্দুর রহমান মিন্টু অন্যতম। এবার আমাদের মাউশির মাননীয় মহা-পরিচালক মহোদয় যখন " এসো বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনি" এই বিষয়ে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এসাইনমেন্ট প্রদান করেন তখন আবারও আমি আমার শিক্ষার্থিদের নিয়ে উনার কাছে যাই। তার কাছ থেকে গল্পশুনে ফেরার আগে আমি বলেছিলাম আপনারা যতদিন বেছে থাকবেন ততদিন আমরা আমাদের শিক্ষার্থিদের নিয়ে আপনাদের কাছে আসবো। তখন তিনি আমাকে এই উত্তরটি দিয়েছিলেন। তাই আজ থাকে খুব মনে পড়ছে। তা হলে তিনি কি জানতেন, আর তাঁর সাথে আমাদের আর দেখা হবে না। 
দোয়া করি হে মহান মুক্তিযুদ্ধা আপনি যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন। হে মহান রাব্বুল আলামিন আপনার কাছে কায়মনোবাক্য প্রার্থনা করি আমাদের মহান এই মুক্তিযুদ্ধাকে আপনি বেহেস্তের সর্বোচ্চ মোকামে তাঁকে স্থান দিন।