Loading..

প্রকাশনা

২৮ মার্চ, ২০২০ ০২:১৫ অপরাহ্ণ

মুক্তিযুদ্ধের কথা এবং করোনা ভাইরাস আতঙ্ক

৪৯ বছর পর আবার বন্ধিজীবন
@@@@@@@@@@@@@
মুক্তিযুদ্ধের কথা এবং করোনা ভাইরাস আতংক
*******************************************
’৭১ সালে মহদিয়া গ্রামে কোন স্কুল ছিল না ।ফলে
আমাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ নিতে হয়েছে হক বাহাদুর হাই স্কুল সংলগ্ন উত্তর দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। তখন ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন মহদিয়ারই জনাব মরহুম নূরুল করিম ভূঁইয়া স্যার। শুকনো মৌসুমে প্রচুর ধূলাবালি এবং বর্ষায় এক হাঁটু কাদায় মেখে খালি পায়ে দল বেঁধে আমরা স্কুলে যেতাম । ক্লাস থ্রিতে উঠে প্রথম মহিলা শিক্ষক পেলাম , সবিতা এবং অর্চনা দিদিকে । এর আগে কোন মহিলা শিক্ষক ছিল না । রাজনৈতিক আন্দোলনে তখন ভীষণ তোলপাড় , কিন্তু সে সব নিয়ে আমাদের কোন মাথা-ব্যথা নেই । একদিন দেখলাম, আমার চাচাত ভাই ইকবাল মাথায় প্রচণ্ড আঘাত নিয়ে ৭ই মার্চের ভাষণ শুনে ফিরেছে । সে তখন হক বাহাদুর হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র । “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম--- যার যা কিছু আছে , তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা কর”। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের এই মন্ত্র ধারণ করে তখন সবাই মুক্তিযুদ্ধে যাঁপিয়ে পড়ে ছিল। একদিন দেখলাম, আমাদের এক সাথী ভাই আমির হোসেন(কালা) নেই । শুনলাম সেও নাকি গেরিলা যুদ্ধে যোগ দিয়েছে । পরে অবশ্য তার কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের অনেক কাহিনী শুনেছি । আমার বাবা হুজুর হয়েও আওয়ামিলীগ করতেন এবং মুক্তি যোদ্ধাদের সাহায্য করতেন । একদিন মুক্তিযোদ্ধাদের ভাত খাওয়ানোর সময় আমি তাদের অস্রগুলো নাড়াছাড়া করার সুযোগ পেয়েছিলাম । যুদ্ধের সময় আমাদের পড়ালেখা কিন্তু বন্ধ হয় নাই ; বরং শহর থেকে ধেয়ে আসা নতুন ছেলে-মেয়ে যুক্ত হল আমাদের মত লুঙ্গি পরা ,খালি পায়ে থাকা ছেলেদের সাথে । বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের নাচে-গানে আমরা মুগ্ধ হতাম। ‘ফাস্টবয়’ হিসাবে আমাকেও তারা সমিহ করত । রোকসানা নামের একটি মেয়ে এক অনুষ্ঠানে “শুকনো পাতার নূপুর পায়ে নাচেছে ঘূর্ণি বাঃয়ে”- নেচে নেচে গেয়েছিল । আজও তা ভুলিনি । বর্ষাকালের একদিন হাফপেণ্ট পরা সেই মেয়েটি যখন জামা উল্টিয়ে কোন মতেই তার বইগুলো বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে পারছিল না, তখন আমার ছাতার নিচে ঢুকেছিল । শিহরিত হয়েছিলাম আমি, গর্বও হয়েছিল একটু । এইতো গেল রোমাঞ্চকর মহূর্তগুলোর কথা । কিন্তু
অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতাও আছে । নু্রুল আফছার নামে আমাদের এক শিক্ষক রাজাকার ছিলেন । তাকে মুক্তিবাহিনীরা একদিন ধরে নিয়ে আসে মহদিয়া ভূঁঞা বাড়ির দরজার সেন্টার ঘরে। অনেক নির্যাতনের পর তাকে গুলি করে কালিদাশ পাহালিয়া খালে ফেলে দেয়া হয় ।

এভাবে অনেককেই মরতে দেখেছি, গুলি খেতে দেখেছি । থাক সেসব কথা । এভাবে ৯ মাস যুদ্ধের পর আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি ,সেটাই বড় কথা ।

পাক হানাদার বাহিনীর তাণ্ডবে আমাদেরকে তখন প্রায়ই ঘরে বন্ধি থাকতে হত। আর আজ করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধি। তখন ছিল দৃশ্যমান শত্রুর ভয়, আর আজ অদৃশ্য শত্রুর আতংক। আল্লাহ আমাদেরকে এই বিপর্যয় থেকে নিশ্চয়ই রক্ষা করবেন। আমিন।

Image may contain: text

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি