Loading..

প্রকাশনা

০৫ এপ্রিল, ২০২০ ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ

চায়ের কাপই একমাত্র ভরসা চানমিয়ার।

এইচ,এম,মোবারক, 

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত একটি গ্রাম কোয়ালীপাড়া। ছোট্ট গ্রামে প্রায় দেড় হাজার লোকের বসবাস, এই গ্রামের -্্্ই এক স্থায়ী বাসিন্দা চাঁনমিঞা ওরফে (হবুল) দীর্ঘ চল্লিশ বছর বিভিন্ন শহরে রিক্সা চালিয়ে বয়সের ভারে এখন নুইয়ে পড়েছেন। শারিরিক অসুস্থতা ও ভগ্ন চেহারার কর্মহীন হবুলের ঘরে এক প্রতিবন্ধি কন্যা সহ ছয় ছেলে মেয়ে। এ নিয়ে পরিবারের খাদকের সংখ্যা মোট আট। ছেলেদের ও তেমন রুজি রোজগারের ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থায় হবুল নাড়ীর টানে দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর তার আপন মাতৃকুলে ফিরে আসেন বছর খানেক আগে। এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তার বাড়ির পার্শ্বে কোয়ালীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের এক কোণায় টং দোকানে চা বিক্রি শুরু করেন। প্রায় ছয় মাস হলো কোন মতে পেটে ভাতে অবস্থা। পাড়ার প্রায় সব মানুষই তার কাছে চা খায়। প্রতি সপ্তাহে ৭০০ শত টাকা কিস্তি দিয়ে দোকানের ভাড়া কারেন্ট বিল সব মিলিয়ে কোন রকমে চলে তার সংসার। ইতি মধ্যে দেশ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত । সারা দেশের বেহাল অবস্থা অঘোষিত লকডাউনে বাংলাদেশ। সরকার পক্ষ থেকে কড়া নির্দেশনা কেউ জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহির হবেননা, আইন অমান্য করলেই ব্যবস্থা। হবুলও তার ব্যাতিক্রম নয়। পুলিশের তাড়া খেয়ে হবুল নিজেও বুঝে গেছে যে, তার দোকান আর চলতে দেওয়া হবেনা। কিন্তু হবুলের পেট তো আর পুলিশের চড় লাত্থি খেয়ে ভরবে না। তাই পুলিশের চোখ আড়াল করতে গিয়ে নিজের বাড়ির বারান্দায় চায়ের দোকান পেতে বসেছেন এই চাঁনমিঞা। মানুষ কে চা খাবার জন্য একে একে ডেকে নিয়ে যাচ্ছেন আবার অনেকে কোথাও চা খেতে না পেয়ে হবুলের বাড়িতেই চা খেতে যাচ্ছেন। তবে চেষ্টাও করছেন নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখার। দোকানে কাউকে বসতে দেওয়ার ব্যবস্থা নেই । ওয়ান টাইম কাপে চা নিয়ে চলে যেতে বলছেন সবাইকে।

বাড়িতে চায়ের দোকান ও আইন অমান্য করে জনসমাগম সৃষ্টি করার অপরাধের ছবি তুলতে গেলে আমাদের প্রতিনিধির সাথে হবুল যে কথা গুলো বলেন:

হামার পেটত লাত্তি মারোনা বাবা, এ ছাড়া হামার আর কিচু করার নাই। দুকান দিচনু মুড়ের উপুর, টেকা লিচি কিস্তির উপুর, করুনা আসে জুলুম শুরু হলো হামার উপুর। তুমরা আবার এটিও আলচেন, তুলো যত পারেন ছবি তুলো। তুমরা খালি ছবি তুলবের আলচেন, কিন্তুক কো হামারে নামে কি লিয়্যা আলচেন। সরকারতো মানসোক মেলা কিচু দিততে । এ পর্যন্ত হবুল তো কিচুই পালোনা। ঘরোত থিনি বারে বের হওয়া হবে না, কারেন্টের মধ্যে থাকা লাগবে ভালো কতা, হামরা খামু কি? কিস্তি দিমু কুনটেনি?

কিন্তুু চাচা মিঞা এই রোগে একবার ধরলে তো যে কোন সময় মারা যাবেন! তালে তো বাঁচেই গেনুনিরে বাবা, এ ভাবে বাঁচে থাকার থিনি মরে যাওয়া মেলা ভালো।

কিসক বুলনু ? তার এক মেয়ে শারীরিক প্রতিন্ধী তাকে দেখিয়ে বলেন, এই দেকো গরীবের ঘরে আল্লাহ কেমন ছাওয়াল দিচে। বাকী কথা গুলো হবুল যেন আর বলতে পারছিলনা।

প্রিয় পাঠক, এই অবস্থায় হবুলের দোকান বন্ধ করা উচিৎ কিনা? তার বিচার ভার আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম।
আর যদি বন্ধই করতে হয় তা হলে হবুলের মত মানুষেরা কোথাই যাবে, কি করবে? তাদের মুখে দুমুঠো অন্ন যোগাবে কে বা কারা? বিষয়টি যথাযথ কতৃপক্ষের দৃষ্ঠি আকর্ষন করছি, হবুলেরা যেন করোনায় মারা না গিয়ে না খেয়ে মারা না যায় ….


আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি