Loading..

প্রকাশনা

০৫ এপ্রিল, ২০২০ ০৯:১২ অপরাহ্ণ

যাপিত জীবন: মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম ; সহকারী শিক্ষক ; হাবিব কাদের উচ্চ বিদ্যালয় ; টাঙ্গাইল

যাপিত জীবন:

   মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম

     আমাদের মধ্যে একদল আছে যারা চালাক এবং চতুর, যারা সংখ্যায় নগণ্য। বাকিরা বোকা, কথ্যভাষায় যাদেরকে বলা হয় 'ভোদাই'। এরা সংখ্যা গরিষ্ঠ হলেও তারা আপাতদৃষ্টে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে সংখ্যা লঘিষ্ট চালাক এবং চতুরদের দ্বারা। শিশুকালে বেড়ে ওঠার সময়ই চিহ্নিত করে দেওয়া হয় কে চালাক আর কে বোকা। একবার চিহ্নিত হয়ে গেলে সারাজীবন তকমার মতো সেই পরিচয় একজনের ব্যাক্তিত্বের সাথে সেঁটে থাকে।

আমাদের বিস্তৃত পরিবারে ( extended family) বা সমাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অলিখিত একচ্ছত্র অধিকার এইসব চালাক লোকদের। বোকা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে এমন কেউ স্রোতের বিপরীতে দাড়িয়ে সঙ্গত কিছু বললেই চালাকের দল তেড়ে আসে

-ঐ ভোদাই, তুই কি বুজোস!

তবে, ভোদাই হওয়ার অনেক সুবিধাও আছে, প্রথমত, এদের উপর কারো তেমন একটা এক্সপেক্টেশন তৈরি হয় না, আর দ্বিতীয়ত, অযথা চালাকি করে অন্যের ক্ষতির কারণ হতে হয় না। সুবিধার বাইরে, বোকাদের জন্য আত্মতৃপ্তির ব্যাপার হচ্ছে, এদেরকে যতটুকু বোকা ভাবা হয় এরা আসলে ততটুকু বোকা না, চোখের পর্দার খাতিরে এরা তাদের সাথে সেঁটে যাওয়া পরিচয়টা উপভোগ করে চলে মাত্র।

একটা বাস্তব উদাহরণ দিই। মি.ভোদাই অনেকদিন পর গ্রামে বেড়াতে গেছেন সপরিবারে, ঝকঝকে নতুন মাইক্রো নিয়ে। পরদিন ভোরে সূর্য ওঠার আগে তার মোবাইল বেজে উঠলো, মি. চালাকের ফোন, মি. ভোদাই এর বড় চাচার বড় ছেলে।

-ছোডো ভাই! আত্মীয়স্বজনের খোঁজ খবর মাজে মইদ্যে নেওয়া লাগে, এডা কি ভুইলা গেছো।

-তা তো ঠিক বলছেন ভাই! তা কেমন আছেন।

-শোন, পাশের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাব, আমাগোর নতুন আত্মীয়, সে সবাইরে আইজকা সকালে পিঠার দাওয়াত দিছে । তোমার কথা বারবার কইছে!

মি. ভোদাই একটু হোঁচট খায় মনে মনে, নতুন আত্মীয়তা হওয়া এই চেয়ারম্যানকে সে চিনে না, চেয়ারম্যান সাহেবেরও তার মতো ভোদাই কে চিনতে পারার কথা না, দাওয়াত দেওয়া তো দূরের কথা। মি. ভোদাই প্রশ্ন করে 

-দাওয়াত দিছে কবে?

-গত সপ্তায়!

মি ভোদাই গ্রামে এসেছে হুট করে দুদিনের নোটিশে, সে যে গ্রামে আসছে গতকালের আগে কাউকে জানায় নি, এক সপ্তাহ আগের দেওয়া দাওয়াতে তার কথা বারবার বলার কোন যৌক্তক কারণ নেই! তবে সে বুঝতে পারলো, কোনও কিছুর 'ক্ষেত্র" তৈরি হচ্ছে! 

- আরে শুন, গ্রাম তো আর গ্রাম নাই, সোলিং করা রাস্তা, গাড়ি নিয়া গেলে আধা ঘন্টার বেশি লাগবো না! আমরা ছয়জন, তুমি আর তোমার ড্রাইভার, আটজনের জায়গা হইবো তো তোমার মাইক্রোতে?

'ক্ষেত্র' কিসের জন্য তৈরি হচ্ছিল এক নিমেষে  সব খোলসা হলো মি. ভোদাই এর কাছে। কিন্তু যেহেতু সে ভোদাই, তাকে মি চালাকে'র চালাকি বুঝেও না বোঝার ভান করতে হবে।

-গ্রামে শীতের পিঠা অনেকদিন খাই না, এমন দাওয়াত তো ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু সমস্যা হইছে কি ভাইজান, কাইল বিকালে ড্রাইভার চাবি বুঝায়া দেওয়ার পর পাঞ্জাবির পকেটে রাখছিলাম, তারপর আর পাইতেছি না। রাইতের আন্ধারে খুইজা পাই নাই, সকালে আবার দিনের আলোতে খুজমু, পাইয়া যামু আশা করি!

-গাড়ি বাড়ি করছো, আর একটা চাবি সামলাইতে পারো না, আইচ্ছা, পরে কথা কমু নে।

বলেই হুট করে লাইন কেটে দিলো মি চালাক।

মি. ভোদাই ফোনটা সুইচ অফ করি দিলো, বালিশের নীচে হাত দিয়েই ঠোঁটের কোনে একটা হাসি ফুটিয়ে সংলাপ আওড়ে যাওয়ার মতো করে বললো "এই তো খুইজা পাইছি"!

তারপর কাঁথাটি টেনে নাক অব্দি ঢেকে নিয়ে দ্বিতীয় দফা ঘুমের প্রস্তুতি নিলো!

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি