Loading..

মুজিব শতবর্ষ

১০ এপ্রিল, ২০২০ ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  তারসভ্যতার সংকটপ্রবন্ধে লিখেছিলেন,

 

আজও আশা করে আছি পরিত্রাণ কর্তা আসবে সভ্যতার দৈববাণী নিয়ে,

চরম আশ্বাসের কথা শোনাবে পূর্ব দিগন্ত থেকেই।

 

বাঙালির ভাগ্যাকাশে সেই ত্রাণকর্তা হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী সচেতনভাবে বাঙালির কাছ থেকে ভাষার অধিকার হরণ করতে চেয়েছিল। তারা চেয়েছিল সংখ্যালঘু জনগণের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে। কিন্তু তাদের সেই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন বাঙালির ত্রাণকর্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও অন্যান্যরা। আজীবন মাতৃভাষাপ্রেমী এই মহান নেতা ১৯৪৭ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনা পর্বে অতুলনীয় ভূমিকা রাখেন।

১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তানের কর্মী সম্মেলনে গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠিত হয়। ওই সম্মেলনে ভাষাবিষয়ক কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রসঙ্গে গাজীউল হকভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাগ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘সম্মেলনের কমিটিতে গৃহীত প্রস্তাবগুলো পাঠ করলেন সেদিনের ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান।প্রস্তাবগুলো ছিল "বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের লিখার বাহন আইন আদালতের ভাষা করা হউক। সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হইবে তৎসম্পর্কে আলাপ-আলোচনা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার জনসাধারণের উপর ছাড়িয়া দেওয়া হউক। এবং জনগণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলিয়া গৃহীত হউক।এভাবেই ভাষার দাবি বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে প্রথম উচ্চারিত হয়েছিল।

১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সমকালীন রাজনীতিবিদসহ ১৪ জন ভাষাবীর সর্বপ্রথম ভাষা আন্দোলনসহ অন্যান্য দাবিসংবলিত ২১ দফা দাবি নিয়ে একটি ইশতেহার প্রণয়ন করেছিলেন। ওই ইশতেহারে ২১ দফা দাবির মধ্যে দ্বিতীয় দাবিটি ছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। এই ইশতেহার প্রণয়নে শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ছিল অনস্বীকার্য এবং তিনি ছিলেন অন্যতম স্বাক্ষরদাতা। শুধু তাই নয়, ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত ছাত্রলীগের ১০ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলা, সামরিক বাহিনীতে বাঙালিদের নিয়োগ এবং বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা।

১৯৪৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তমুদ্দিন মজলিসের আহ্বানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহসী ভূমিকা রাখেন। ওইদিন মিছিলের সমগ্র ব্যবস্থাপনা পরিচালনার দায়িত্বেও ছিলেন বঙ্গবন্ধু।

১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে এক অনন্য অবিস্মরণীয় দিন। এই দিনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। এটাই ছিল ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে তথা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দেশে প্রথম সফল হরতাল। এই হরতালে তরুণ শেখ মুজিব নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে গ্রেপ্তার হন।

১৯৪৮ সালের ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে এক সাধারণ ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন সদ্য কারামুক্ত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৮ সালের ১৭ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহ্বানে নঈমুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় শেখ মুজিব অংশগ্রহণ করেন। তাছাড়া ১৯৪৯ সালে ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েও বঙ্গবন্ধু দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের বিস্ফোরণ পর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকলেও জেলে বসেও নিয়মিত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করতেন। এক কথায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলন মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর সক্রিয় অংশগ্রহণ ইতিহাসের অনন্য দৃষ্টান্ত। বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস যতকাল লেখা হবে, পড়া হবে, বলা হবে, ততকাল বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে বারবার ফিরে ফিরে আসবে।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি