Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

২১ এপ্রিল, ২০২০ ০২:৪৯ পূর্বাহ্ণ

করোনা বিপর্যয় কাটাতে ‘ওয়ার্ল্ড সোশ্যাল ব্যাংক’ অপরিহার্য

কিছু দিন ধরে পত্রিকার পাতা খুললেই দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে না খেয়ে থাকা লোকজনের ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভের খবর দেখা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, বিশ্ব একটা মন্দার মধ্যে চলে গেছে। বহু গতানুগতিক অর্থনীতি পিছিয়ে পড়েছে এবং ইউরোপে নজিরবিহীন আঘাত লেগেছে। যুক্তরাষ্ট্রও গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তেলসহ বৈশ্বিক ভোক্তা চাহিদার ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতি বিশেষভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হবে। এসব খবর বাংলাদেশের জন্য নেতিবাচক।

আমাদের রেমিট্যান্সনির্ভর, পশ্চিমামুখী রফতানি ও অবকাঠামোভিত্তিক অর্থনীতি একটা বড় সঙ্কটে পড়ে গেছে। সবচেয়ে বড় আঘাতটা লেগেছে শহরে ভিড় জমানো গ্রামীণ অভিবাসী শ্রমজীবী মানুষের ওপর, যাদের বেশির ভাগ নারী। এ রকম বিপর্যয়ে টিকে থাকার কোনো ব্যবস্থা তাদের নেই এবং কোনো সামাজিক ইন্স্যুরেন্সও নেই। তাদের ‘কাজ নেই তো আয় নেই’ পরিস্থিতিতে ছুড়ে ফেলা হয়েছে এবং এই পরিস্থিতি কতদিন চলবে তা কেউ জানে না। জীবনের কোনো দিকই সঙ্কট থেকে মুক্ত থাকবে না। ফলে বাংলাদেশের অর্থব্যবস্থার অগ্রাধিকারগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে দারিদ্র্য দূরীকরণের কাজ শুরু করে মূলত এনজিওরা। এটা আসলে ছিল নারীর ক্ষমতায়নের নামে সুদভিত্তিক অর্থনীতিকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার একটি উদ্যোগ। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের লালিত ইসলামী মূল্যবোধ, এমনকি আমাদের বহু দিনের লালিত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে উপেক্ষা করে কিছু এনজিওর আগ্রাসী পরিকল্পনায় দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই সমিতি ও সুদের ব্যবসা চালু হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক, আশা, ব্র্যাকের মতো প্রতিষ্ঠান আমাদের সমাজে সুদকে এমনভাবে অনুপ্রবেশ করিয়েছে, যা ক্ষেত্রবিশেষে দাদন ব্যবসায়ীদের চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। প্রতিটি গ্রাম, প্রতিটি বাড়িতে সুদ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কিস্তির নামে সুদি ব্যবসা চালু করা হয়েছে। এতে সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামো ভেতর থেকে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। আমরা এমনভাবে সুদে জর্জরিত, যেখান থেকে বের হওয়া বেশ কঠিন। নব্বই শতাংশ মুসলমানের দেশে সুদ শেকড় গেড়ে বসেছে, অথচ পবিত্র কুরআনে সুদকে স্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। যেকোনো কৌশলেই সুদ নেয়া হোক না কেন, তা হারাম।

ওআইসির সাবেক মহাসচিব ড. হামিদ আল গাবিদ ২০১২ সালে বাংলাদেশে সফরে আসার পর তার সঙ্গী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আমার সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিল। তারও অনেক আগে ১৯৯১ সালের নভেম্বরে বঙ্গবন্ধুর কন্যার সাথে আমার প্রথম সাক্ষাতে তিনি আমাকে নিজের লেখা ‘ওরা টোকাই কেন’ বইটি স্বাক্ষরসহ উপহার দিয়েছিলেন। বইটির নামের মধ্যেই এ দেশের নিপীড়িত মানুষের কথা বলা আছে। আমি সাথে করে বইটি নিয়ে যাই। প্রাথমিক কুশলাদি বিনিময়ের পর আমি প্রধানমন্ত্রীকে বইটি দেখাই। কিছুটা অবাক হয়ে তিনি বললেন, আপনি বইটি এখনো রেখেছেন। এই সুযোগে আমি তাকে বললাম, আজ আমি আপনার কাছে মহাসচিবকে নিয়ে এসেছি।একটি আবদার রাখতে হবে। আপনি নারী ক্ষমতায়নের কথা বলেন। গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আপনি নারীদের হাতে দিয়েছেন। কিন্তু এতে নারী ক্ষমতায়নের কাজটি পুরোপুরি হবে না। এনজিওদের কবলে পড়ে আমাদের গ্রামীণ নারীসমাজ মহাদুর্দশায় নিপতিত। এরা রক্তচোষা, ক্ষমতায়নের বদলে দানবীয়করণ করা হচ্ছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, চার কোটি গ্রামীণ নারী এদের কাছে ঋণগ্রস্ত। এরা ঋণগ্রস্ত অবস্থায় জন্ম নিচ্ছে, জীবন কাটাচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত ঋণ নিয়েই মারা যাচ্ছে। চার কোটি নারী ঋণগ্রস্ত থাকা মানে দেশের জনসংখ্যার চার ভাগের এক ভাগ মানুষ ঋণগ্রস্ত থাকা।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি