Loading..

ম্যাগাজিন

০৭ মে, ২০২০ ০৩:৩৮ পূর্বাহ্ণ

করোনার কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরির দাবি ইতালির
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করার কথা দাবি করেছেন ইতালির গবেষকেরা। তারা বলছেন, করোনার বিরুদ্ধে এটাই বিশ্বের প্রথম কার্যকর ভ্যাকসিন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞান ও গবেষণামূলক সাইট সায়েন্সটাইমস ডটকমের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি মোকাবিলায় কার্যকর ভ্যাকসিনের খোঁজে ছুটছেন গবেষকেরা। ইতালির গবেষকদের দাবি, বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রথম ভ্যাকসিন তারা তৈরি করে ফেলেছেন। তাদের দাবি অনুযায়ী, এমন ভ্যাকসিন তারা আবিষ্কার করেছেন, যা মানুষের কোষে ভাইরাসটিকে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হয়েছে। তারা অ্যান্টিবডিসমৃদ্ধ রক্ত থেকে সিরামকে আলাদা করে এ ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন। গ্রীষ্মে মানবদেহে এ ভ্যাকসিনের পরীক্ষা শুরু হবে বলে আশা করছেন তারা।

প্রশ্ন উঠছে, ইতালির এ ভ্যাকসিন কতটা কার্যকর হবে? সাইট সায়েন্সটাইমস ডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন হিসেবে যত পরীক্ষা চলছে, এর মধ্যে এটি সর্বাধিক উন্নত পর্যায়ে রয়েছে।

ইতালির রোমে সংক্রামক রোগের চিকিৎসাকেন্দ্র স্পালস্নানজানি হাসপাতালে করা একাধিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, ইতালীয় করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনটি ইঁদুরের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে, যা মানুষের কোষেও কাজ করে।

ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টাকিসের প্রধান নির্বাহী লুইজি আউরিসচিও বলেন, ভ্যাকসিন পরীক্ষার পর গবেষকেরা দেখেছেন, মানব কোষেও এটি ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করছে, যা পৃথিবীতে করোনাভাইরাস ঠেকানোর জন্য ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে প্রথম।

ইতালির সংবাদ সংস্থা আনসাকে লুইজি বলেন, এটি ইতালিতে তৈরি ভ্যাকসিনের পরীক্ষার মধ্যে সবচেয়ে উন্নত পর্যায়ের। গ্রীষ্মে মানবদেহে পরীক্ষা শুরু হবে বলে তিনি আশা করছেন। এটি তৈরিতে টাকিস মার্কিন ওষুধ কোম্পানি লিনেরেক্সের সঙ্গে উন্নত প্রযুক্তি পস্ন্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করছে।

এই গবেষণাটি সফল হওয়ার জন্য তাদের কেবল সরকারই নয়, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং অংশীদারদেরও সহায়তা প্রয়োজন যারা এতে সহায়তা করার জন্য তাদের হাত বাড়িয়ে দিতে চান।

লুইজি আউরিসচিও বলেন, এটি কোনো প্রতিযোগিতা নয়। যদি আমরা আমাদের কর্মী এবং দক্ষতা একসঙ্গে মেলাতে পারি, তবে আমরা সবাই করোনভাইরাসটির বিরুদ্ধে জিততে পারব।

ইঁদুরের ওপর গবেষণা যেভাবে

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের জন্য প্রথমে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করা হয়। একবার ভ্যাকসিন দেওয়ার পরই ইঁদুরের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা ভাইরাসটিকে মানবকোষে সংক্রমণে বাধা দেয়। গবেষকেরা ৫টি ভ্যাকসিনের মধ্যে সর্বোচ্চ ভালো করা দুটি ভ্যাকসিন নির্বাচন করেন। তারা প্রথমে অ্যান্টিবডি সমৃদ্ধ রক্ত থেকে সিরাম আলাদা করেন। এরপর তা স্পালস্নানজানি ইনস্টিটিউটের ভাইরোলজি গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হয়। বিজ্ঞানীদের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়া কত দিন স্থায়ী হবে, তা বুঝতে হবে।

বর্তমানে তৈরি করা ভ্যাকসিন প্রার্থীগুলো ডিএনএ প্রোটিনের জিনগত উপাদান 'স্পাইক'-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা। এ ক্ষেত্রে 'ইলেকট্রোপোরেশন' পদ্ধতি ব্যবহার করে কোষ ভেঙে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে (ইমিউন সিস্টেম) সক্রিয় করা হয়। গবেষকেরা ধারণা করেন, এ পদ্ধতিতে ফুসফুসের কোষে স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে তাদের ভ্যাকসিন অ্যন্টিবডি তৈরিতে কার্যকর হবে।

টাকিসের বিশেষজ্ঞ ড. এমানুয়েল মারা বলেন, পাঁচটি ভ্যাকসিন প্রার্থীর বেশিরভাগ দ্বারা তৈরি প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাসকে প্রভাবিত করে। বিজ্ঞানীরা তাদের পরবর্তী পরীক্ষায় আরও ভালো ফলাফল আশা করেন। এ ভ্যাকসিনটি কোভিড-১৯ এর যেকোনো রূপান্তর বা বিবর্তনের বিরুদ্ধেও কাজ করবে।

চাপে ভ?্যাকসিন নির্মাতারা

করোনার বিস্তার থামার কোনো লক্ষণ না দেখায় ওষুধ প্রস্তুতকারীদের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন তৈরির জন্য চাপ রয়েছে। তবে এটি এত সহজ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেসের পরিচালক অ্যান্টনি এস ফাউসি বলেন, ভ্যাকসিন তৈরিতে দেড় বছরের মতো সময় লাগতে পারে। তবে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন আন্দ্রেসের মতে, সাধারণত কোনো ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে বাজারে আসতে ১৫ বছর পর্যন্ত লেগে যায়। আসলে ভ্যাকসিন আসার দিনক্ষণ নিয়ে আগেভাগে কিছু বলা যায় না। ওষুধ প্রস্তুতকারী এবং নিয়ন্ত্রকেরা সর্বশেষ যে জিনিসটি চান, তা হলো নিরাপদ ওষুধ যাতে সমাধানের পরিবর্তে আরও একটি স্বাস্থ্য সংকট তৈরি না হয়।

ভ্যাকসিন তৈরির ব্যাপারটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ। ভ্যাকসিন কার্যকর এবং তা ব্যবহারের জন্য নিরাপদ, এই দুটি শর্তই নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই ভ্যাকসিনটি দেওয়া হবে লাখ লাখ সুস্থ মানুষকে। এখানে ভুলের কোনো সুযোগ নেই। ভ্যাকসিনের অতীত ইতিহাস আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক করেছে।

ভ্যাকসিনের সম্ভাবনা কতটুকু?

ধারণা করা হচ্ছে, একটি কার্যকর ও নিরাপদ ভ্যাকসিন শুধু সময়ের ব্যাপার। বিশ্বের সম্পদশালী সব দেশের আর্থিক সহযোগিতায় বিশ্বের বরেণ্য বিজ্ঞানীরা এবং খ্যাতনামা বৈজ্ঞানিক সংস্থাগুলো নিয়োজিত হয়েছে একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য। আমেরিকার প্রথম সারির বায়োমেডিকেল কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসন এক বিলিয়ন ডলার বাজেট ঘোষণা করেছে করোনাপ্রতিরোধে ভ্যাকসিন তৈরিতে। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহযোগিতায় ভ্যাকসিন তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দুটি ভ্যাকসিন, যা এই মুহূর্তে বহুল আলোচিত, তা হলো সজঘঅ-১২৭৩ ও ঙীভড়ৎফ ঈড়ারফ-১৯ ভ্যাকসিন (ঈযঅফড়ী১)।

মডার্না বায়ো কোম্পানি এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা যৌথভাবে সজঘঅ-১২৭৩ এই ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে। বৈজ্ঞানিকভাবে উন্নত মানের টেকনোলজি প্রয়োগ করে এই ভ্যাকসিন তৈরি করা হচ্ছে।

ইংল্যান্ডের খ্যাতনামা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন (ঈযঅফড়ী১) নিয়ে অনেক এগিয়ে গেছেন। এই ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে অভিনব উপায়ে। ভ্যাকসিন তৈরির পূর্ব ইতিহাসের পরীক্ষিত পন্থাবলম্বন করে এই ভ্যাকসিনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। শিম্পাঞ্জি থেকে নেওয়া হয়েছে সাধারণ সর্দিজ্বরের ভাইরাস (একই ধরনের করোনাভাইরাস) এবং এই ভাইরাসকে কেমিক্যাল দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। তারপর এটার সঙ্গে মেশানো হয়েছে কোভিড-১৯-এর ভাইরাসের (সারস-কভ ২) প্রোটিন। এটি বহু পুরানো টেকনিক। এই পন্থায় পোলিও ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে অনেক দশক আগে। এই ভ্যাকসিনেরও পরীক্ষা শুরু হয়েছে। শেষ খবরে জানা গেছে, এই ভ্যাকসিন বাঁদরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে। এটা খুবই সুখবর। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছরের মধ্যেই জানা যাবে মানুষের ওপরে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা।
0Shares

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি