Loading..

শিক্ষায় অগ্রযাত্রা

০৯ মে, ২০২০ ১১:১২ অপরাহ্ণ

স্বগরিমায় মহিয়ান আধুনগর উচ্চ বিদ্যালয়

মহিউদ্দিন ওসমানীঃআলোকিত মানুষ তৈরির অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থান হলো বিদ্যাপিঠ। এখানে প্রতিভার পরিচর্যা ও লালন হয়, প্রতিভার বিকাশ ও উপযুক্ত জীবন গঠনের নিরন্তর চেষ্টা প্রক্রিয়া বিদ্যমান। এতটা জাতি- রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সুশীল সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অনিবার্য। 

আজকের শিশু-কিশোররাই আগামীদিনের কর্ণধার।তাদের কর্ণধার হয়ে ওঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। আধুনগর উচ্চ বিদ্যালয় সে দায়িত্ব অনেকটা সুচারুরূপে পালন করে যাচ্ছে নিঃসন্দেহে।একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা লক্ষ্যে গুনগত শিক্ষার প্রসারে প্রতিষ্ঠানটির নিরন্তর প্রয়াস অব্যাহত আছে। লোহাগাড়া তথা চট্টগ্রামের অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শিক্ষার উন্নয়ন প্রতিযোগীতায় বিশেষভাবে স্থান করে নিয়েছে আধুনগর উচ্চ বিদ্যালয়। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বরাবরই শতভাগ কৃতিত্ব দেখিয়ে যাচ্ছে এই বিদ্যাপিঠ। প্রাতিষ্ঠানিক কারিশমা প্রদর্শন করতে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই যেখানে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে, সেখানে এই শিক্ষালয়ের প্রতিটি শিক্ষাবর্ষে অসাধারণ সফলতা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি নতুন করে আশার আলো সঞ্চারিত করে। 

খেলাধুলা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও আধুনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের অর্জন ঈর্ষণীয়। পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনবদ্য অসংখ্য কর্মসূচী বাস্তবায়ন হয় প্রতিনিয়ত।

তাই দক্ষিণ চট্টগ্রামের আধুনগর উচ্চ বিদ্যালয় একটি নাম একটি ইতিহাস।

বার আউলিয়ার পূন্যভূমি চট্টগ্রাম জেলার সর্বদক্ষিণে অবস্থিত বর্ধিঞ্চু ইউনিয়নের নাম আধুনগর। চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়ক যার উপর দিয়ে চলে গেছে। এ ইউনিয়নের পশ্চিম দিকে ও দক্ষিন পূর্ব্ দিকে ছোট বড় পাহাড়ের টিলা, উত্তরে খরশ্রোতা ডলু নদী ও কিছু অংশে কুল পাগলী ও হাতিয়া খাল প্রবাহিত। এলাকার লোকজন যারা উচ্চ শিক্ষা নিতে চায় তাঁদের হাই স্কুলে যেতে হয় ১০ কিলোমিটার অতিক্রম করে। ১০ কিলোমিটার দূর্গম পথ পায়ে হেঁটে নিয়মিত যাতায়াত করা যে কি কষ্টের তা সহজে অনুমেয়। মানুষিক কষ্ট লাঘব করা ও এলাকার লোকজনকে আরো বেশী শিক্ষত করার লক্ষ্যে বাবু গৌরী শংকর পালের নেতৃত্বে ০১/০৬/১৯৬০ ইংরেজীতে আধুনগর হাই স্কুলকে জুনিয়র হিসেবে এবং ০১/০১/১৯৬১ইং তারিখ থেকে মাধ্যমিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এলাকার সর্বস্তরের মানুষ সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছেন।যার যা আছে তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সগৌরবে দাঁড়িয়ে গেল আধুনগর উচ্চ বিদ্যালয়। লেখা পড়া ও খেলা ধুলায় সুনাম ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। অনেক ছড়াই উৎরাই পেরিয়ে নিজ অবস্থানে আলো ছড়াচ্ছে আধুনগর হাই স্কুল। বর্তমানে স্কুল মুখী হয়েছেন এলাকার জনগন।ধনাঢ্য ব্যক্তিদের বদান্যতায় ৪০০ মিটারের মত বাউন্ডারী ওয়াল নির্মিত হয়েছে, যেখানে জেলা পরিষদ চট্টগ্রাম হতে ৭০ ফুট ও লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদ থেকে ২ কিস্তিতে ১৭০ ফুট অনুদানের মাধ্যমে নির্মিত হয়েছে। বিদ্যালয় ও লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদের যৌথ অর্থায়নে ছাত্রীদের জন্য অত্যাধুনিক ৪ টি শৌচাগার ও ৩ টি পায়খানা নির্মিত হয়েছে। যেখানে বর্তমান পরিচালনা কমিটির সন্মানিত সদস্যবৃন্দ টাইলস লাগিয়ে সৌন্দর্য্ বৃদ্ধি করেছেন। লোহাগাড়ার কৃতি সন্তান ও বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী জনাব আলহাজ্ব সোলতান আহমদ চৌধুরী বাদশা ৩১০০ বর্গফুট আয়তন বিশিষ্ট একটি একতলা ভবন তৈরী করে শ্রেণী কক্ষ ও মিলনায়তনের অভাব দূর করেছেন। জনাব আলহাজ্ব ছিদ্দিক আহমদ একটি আধুনিক গেইট করে দিয়েছেন। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সুরক্ষিত যেখানে বহিরাগতরা শিক্ষার পরিবেশকে কলুষিত করতে পারে না। ক্লাস চলাকালীন ফুটবল খেলতে পারে না। মাঠে গরু ও ছাগল চড়াতে পারে না। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ২০০৩ সালে লোহাগাড়া উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক ও ২০০৭ সালে বি এস বি ফাউন্ডেশন ঢাকা কর্তৃক শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালে আধুনগর উচ্চ বিদ্যালয় লোহাগাড়ার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ২০০৯ সালে লোহাগাড়া উপজেলা কর্তৃক শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়।২০০৫ সালে ৫ কক্ষ বিশিষ্ট একটি দ্বিতল ভবন সরকার থেকে পাওয়া যায়। ২০১১-২০১২ অর্থবছরে স্থানীয় মাননীয় সংসদ সদস্যের বদান্যতায় বি সি সি থেকে একটি কম্পিউটার ল্যাব পাওয়া যায়। ২০১৩ শিক্ষা বর্ষ্ থেকে ৯ম শ্রেণীতে কম্পিউটার বিষয় খোলা হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৮ শতাধিক ছাত্র/ছাত্রী অধ্যয়নরত আছে। ১১ জন এম পি ও ভূক্ত (২ জন শিক্ষিকা) এবং ২ জন প্রাতিষ্ঠানিক বেতনে শিক্ষক কর্মরত আছেন।লোহাগাড়া সদরের জমিদার পাড়ার কৃতি সন্তান জনাব আলহাজ্ব নরশেদ আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট সুদক্ষ, অভিজ্ঞ পরিচালনা পরিষদ দ্বারা পরিচালিত যা চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড্ অনুমোদিত। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে তাল মিলিয়ে বিদ্যালয়কে স্বয়ংসম্পূর্ণ্ ভাবে একটি আদর্শ্ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে কমিটি ও শিক্ষকরা  অঙ্গীকারাবদ্ধ। বিদ্যালয়ের শুরু থেকে অধ্যাবধি যারা যেভাবে, যে পর্যায়ে, যে পদে যত টুকু সাহায্য সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে আমরা কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় সকলের নাম উল্লেখ করা সম্ভব না হলেও আমরা কারো অবদানকে অস্বীকার করিনা। স্কুলের সাথে সম্পৃক্ত থেকে যারা মৃত্যু বরণ করেছেন তাদের আত্নার মাগফিরাত কামনা করি এবং যারা জীবিত আছেন তাদের দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করি। আমরা এলাকার সকল স্তরের মানুষের সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করি।

লেখক

শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট

প্রাত্তন ছাত্র আধুনগর উচ্চ বিদ্যালয়।

১৯৮০ -১৯৮৪। ব্যাচ ১৯৮৫।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি