Loading..

প্রকাশনা

১৩ মে, ২০২০ ১১:০০ পূর্বাহ্ণ

‘হ্যাপি অনলাইন স্কুলিং’

বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালীন শিক্ষা ব্যাবস্থায় অনলাইন স্কুলের বিকল্প কিছুই নেই । আর সেই উপলব্ধি থেকে আমার এই লেখা ।

হ্যাপি অনলাইন স্কুলিং

রিজিয়া পারভীন

সহকারী শিক্ষক

কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়

কাপাসিয়া, গাজীপুর ।

হ্যাঁ, বর্তমান করোনা পরিস্থিতে দেশব্যাপী বিষয় শিক্ষকদের এ এক বিরাট চ্যালেঞ্জ এবং নিঃসন্দেহে উদ্ভাবনী গল্প । কেননা আকস্মিক এই পরিস্থিতির জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না । আমি নিশ্চিত যে, সকলেই আমার সাথে গলা মিলিয়ে গাইবেন-‘হে শিক্ষার্থীবৃন্দ, হে অনাগত ভবিষ্য বাংলাদেশ, তোমাদের কথা-শুধু তোমাদের কথা ভেবে আমরা আমাদের যার যা-কিছু ছিলো তা-ই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছি-কেবল ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের এক নিরস্ত্র সৈনিক হিসেবে । যদি একটা নতুন ভোর পাই-যেদিন এই দুর্যোগ কাটিয়ে আমরা আবার বাসযোগ্য পৃথিবী পাব । যেখানে আবার তোমাদের কোলাহলে চারিদিক মুখরিত হবে । তোমাদের সাথে সাথে আমরাও আমাদের বাচ্চা বাচ্ছা আচরণ দিয়ে ‘তোমাদেরকে ভুলিয়ে ভালিয়ে হাসিখুশিতে মেতে তুলব প্রতিটি বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ’

আমি আমার গল্প বলি-গল্পটা খুব রসালো না হলেও আমার কাছে খুবই মাজার । কেননা আমার স্বভাবটা ঠিক স্বাভাবিক না । কোনো কাজ যতদিন আমার ওপরে এসে না পড়ে-ততদিন আমি কাজ শেখার চেষ্টা করি না ।

‘কোভিড-১৯’ যখন ডিসেম্বরে চিনের উহানে আঘাত হানল-ভাবলাম এটা বিদেশি রোগ, আমাদের দেশে আসার নয় । দিন যায় আর যায়-এভাবে সারা বিশ্বে তার তাণ্ডব দেখিয়ে আঘাত হানল বাংলাদেশেও । সহসা ছুটি হয়ে গেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । বিশেষজ্ঞগণ মনে করলেন, ‘এ তাণ্ডব’ দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকবে বাংলাদেশেও। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ তাই চাই উদ্ভাবনী আইডিয়া । এমতাবস্থায়, শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ‘a2i’ ঝড়ের বেগে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন ।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে যার ভূমিকা অনস্বীকার্য । দেশের উন্নয়ন করতে হলে তৃণমূল পর্যায়ের জনসাধরণকেও সৈনিকের বেশে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এবং এই বাস্তবতাটি যে প্রতিষ্ঠান উপলদ্ধ্বি করেছিল । ‘a2i’ই দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শিক্ষকদেরকে উৎসাহ প্রেরণা আর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ‘অনলাইন স্কুলিং’ পরিচালনার দক্ষ সৈনিকে পরিণত করেছিল ।

শুরু হয়ে গেল ঢাল-তলোয়ারবিহীন নতুন যুদ্ধ ।  যেখানে প্রয়োজন শুধু শিক্ষাবান্ধব মানসিকতা । এই লক্ষ্যে আমিও শরিক হলাম ‘অনলাইন স্কুলিং’ কার্যক্রমে । অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তবেই সামনের দিকে এগিয়ে চলেছি ।

যখন জানতে পারলাম ‘অনলাইন স্কুলিং’ এ আমাকেও অংশগ্রণ করতে হবে । তখন নিজের মধ্যে শুরু হলো এক নতুন উচ্ছ্বাস মনে মনে ভাবতে ভাবতে ক্ষণে ক্ষণে দেহ-মনে বয়ে চলেছে তড়িৎ প্রবাহ । হ্যাঁ, আমি তাকে ‘তড়িৎ প্রবাহ-ই বলব । কেননা নতুন সে-তো নতুনই । যার কোন অভিজ্ঞতা আমার ছিলো না । ভিডিও এডিটিং বা শিক্ষার্থীবিহীন ক্লাস-যার কোনোটারই কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না । তবুও সাহস করে শুরু করলাম । কেননা এই দুর্যোগে সবাই যখন কাজ করবে-আমি তখন বসে থাকব!

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘আমার চোখে তো সকলই শোভন, সকলই নবীন সকলই বিমল, সুনীল আকাশ শ্যামল কানন, বিষাদ জোছনা কুসুম কোমল, সকলই আমারই মতো’ আমিও ভাবতে লাগলাম নতুন এই কাজে নিজেকে নিযুক্ত করতেই হবে । কেননা উদ্ভাবনে সুখ আছে । কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও নিজেদেরকে নিযুক্ত করার একটা প্ল্যাটফর্ম পাবে । নিজের পেশাগত দায়িত্ব থেকে শিক্ষার্থীদের সাথে শুরু করলাম যোগাযোগ । বিভিন্নভাবে তাদেরকে অনলাইন ক্লাসের সাথে যুক্ত করতে লাগলাম । তারাও বেশ আগ্রহ নিয়েই নতুন জগতে শুরু করতে লাগল বিচরণ । শেয়ার করতে থাকে আমার সাথে তাদের সুবিধা-অসুবিধা । এভাবেই চলছে ‘অনলাইন স্কুলিং’ ।

ভেবেছিলাম স্কুল ছুটি, তাই সময় কাটাতে খুব কষ্ট হবে  । ঘটছে তার উলটো । সারাদিন এসব নিয়ে এত ব্যস্ত থাকি যে সময় কখন যাচ্ছে টেরই পাচ্ছি না ।

প্রথম ক্লাসটা ভিডিও করতে আমার প্রায় সারারাত জেগে থাকতে হয়েছিল । কেননা ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ক্লাস করা-আমার কাছে একটা দুরূহ ব্যাপার মনে হয়েছিল । হয়তো সেই ভয় থেকেই এমনটা হয়েছিল । ক্লাস রেকর্ড শেষ-তাকিয়ে দেখি ক্যামেরাই অন করিনি । কী মজা! হাসি-আর বিরাগ নিয়ে একটা ক্লাস রেকর্ড করতে সক্ষম হয়েই পরের দিনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম । ‘পারতেই হবে’ এটাই তখন ছিল একমাত্র ভাবনা ।

হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে চললাম । একরাতে সাহস করে পাঁচটা ক্লাস রেকর্ড করে ফেললাম । তারপর থেকে আমার কাজগুলো সহজ হয়ে গেল এখন ‘লাইভ ক্লাস’, ‘জুম ক্লাস’ কোনোটাতেই বাধা নেই । তবে নেটওয়ার্ক একটা বিরাট বিষয় । যার জন্যে কাজে ব্যাঘাত ঘটে থাকে । আজও নিযুক্ত আছি এই মহৎ কাজে । হয়তো আরও ভালোকিছু করার সুযোগ থাকবে সামনে-এরকমই প্রত্যাশা করি ।

আবারও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে চাই-

      ‘প্রতিদিন যদি কাঁদিবি কেবল

      একদিন নয় হাসিবি তোরা

      একদিন নয় বিষাদ ভুলিয়া

      সকলে মিলিয়া গাহিব মোরা’ ।

হ্যাঁ, একদিন প্রভাতে যেন সকল বিষাদ ভুলে নতুনের গান গাইতে পারি-এই প্রত্যাশায় দিন গণনা করছি । ভালো থাকো পৃথিবী । ভালো থাকো ‘অনলাইন স্কুলিং’ ।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি