Loading..

ম্যাগাজিন

১৫ মে, ২০২০ ০১:২৬ অপরাহ্ণ

এমপিওভুক্তি: শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকা ঘুষ আদায়ের অভিযোগ

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলে এলাহীর বিরুদ্ধে নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের আবেদন অগ্রায়ণের উছিলায় কয়েক লাখ টাকা ঘুষ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এমপিওভুক্তির জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরা বলছেন, প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের আবেদন পাঠাতে দুই লাখ টাকা করে দাবি করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। এ নিয়ে আঞ্চলিক উপ-পরিচালকের কাছে অভিযোগ করলে তোপের মুখে পড়তে হয়েছে শিক্ষকদের। কয়েকলাখ টাকার বিনিময়ে পাঠানো হয়েছে ফাইল।

যদিও অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলে এলাহীর দাবি, হার্ডকপি কাগজ জমা দিতে বলা হলে শিক্ষকরা ক্ষুব্দ হয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তবে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে হার্ডকপিতে নয়, শুধুমাত্র অনলাইনে নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের আবেদন করতে বলা হয়েছিল। 

আর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন উপজেলার উপজেলার চেংমারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসিনুজ্জামান ও গোপালপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান।

চেংমারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসিনুজ্জামান অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচিত হলে আমরা আবেদনের প্রস্তুতি নেই। প্রধান শিক্ষকসহ ৬ জন শিক্ষক এবং একজন কর্মচারীর আবেদন অগ্রায়ণের জন্য দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। উপজেলায় ৬টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে।  সবগুলো প্রতিষ্ঠানের কাছে এভাবে ঘুষ দাবি করেছেন তিনি। 

তিনি অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, গত ৬ মে অনলাইনের মাধ্যমে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বরাবরে পাঠান ও যাবতীয় কাগজপত্রের ফটোকপি তার কাছে জমা দেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার প্রতি নির্দেশনা ছিল এসব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানোর। এ সুযোগে তিনি গত ৭ মে দুই লাখ টাকা এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কার্যালয়ে ডেকে প্রত্যেকের কাছে ৩৫ হাজার টাকা করে ঘুষ চান। পরদিন শুক্রবার (৮ মে) সকাল থেকে ওই প্রধান শিক্ষকসহ এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে কাগজপত্রগুলো পাঠানোর জন্য তাঁকে অনুরোধে করেন। কিন্তু তিনি আবারও ঘুষ চান।

হাসিনুজ্জামান বলেন, পরে ঘুষের বিষয়টি জানিয়ে সেদিন রংপুরের আঞ্চলিক উপ-পরিচালকের কাছে অভিযোগ দাখিল করি। কিন্তু এতে ক্ষেপে যান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলে এলাহী। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে ফাইল পাঠাতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। পরে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ঘুষ এবং অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছে এমন লিখিত  মুচলেকা দেয়ার শর্তে শুক্রবার (৮ মে) রাত ১১ টার পরে ফাইল সাবমিট করেন শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলে এলাহী।

প্রধান শিক্ষক হাসিনুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলে এলাহীর ঘুষ চাওয়ার প্রমাণ রয়েছে। তাঁর সব কথা মুঠোফোনে রেকর্ড করা আছে। ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মধ্যে ৮০ হাজার টাকা দিয়েছি আর ৫০ হাজার টাকা এমপিও হলে দেবো।

গোপালপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, উপজেলার নতুন এমপিওভুক্ত সবকয়টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই ফাইল পাঠানোর জন্য টাকা চাওয়া হয়েছে। যথারীতি আমার কাছেও টাকা চেয়েছে। সবাই দিয়েছে তাই আমিও দিয়েছি। ১ লাখ টাকা ঘুষ দেয়ার চুক্তি হয়েছে। ৫০ হাজার টাকা ইতোমধ্যে পরিশোধ করেছি। এমপিও হলে বাকি ৫০ হাজার টাকা শোধ করব।

যদিও ঘুষ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলে এলাহী। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি ঘুষ চাইনি। কাগজপত্র যাচাই বাছাইকালে আরও কিছু কাগজ চেয়েছিলাম। আমার বিরুদ্ধে তারা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। আপনারা জানেন নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ নিয়ে অনেক ঝামেলা আছে। অনেকেই ব্যাকডেটে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ এবং ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের কিছু নিয়োগ নিয়ে বেশ ঝামেলা রয়েছে। এসব ব্যাপারগুলো যাচাই করে ফাইল পাঠাতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মহোদয় আমাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাই কাগজপত্র যাচাই করতে তাদের কাছে হার্ডকপি চাওয়া হয়। এতেই তারা ক্ষেপে গিয়ে আবার নামে উল্টাপাল্টা অভিযোগ করছেন। পরে অবশ্য অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলে লিখিতভাবে দিয়েছেন। আমি কোনো টাকা নেইনি। তারা মিথ্যা অভিযোগ করছেন। 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি