Loading..

খবর-দার

২২ মে, ২০২০ ০৭:৪০ অপরাহ্ণ

সুপার সাইক্লোন 'আম্ফান'-এ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল লন্ডভন্ড
  • প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আম্পান যশোরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এবং উপকূলীয় এলাকায় প্রলয় ঘটিয়ে গেছে। লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সবকিছু। এতে যশোরসহ সাত জেলায় ২৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। এরমধ্যে যশোরে রয়েছেন ১০ জন। সাতক্ষীরা, কয়রা, পাইকগাছায় বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ফসল ও মাছের ঘেরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে আম, জাম, লিচু, জামরুলসহ এ মৌসুমের যাবতীয় ফলের। ঝড়ে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন কোটি গ্রাহক। বিপর্যয় ঘটেছে নেটওয়ার্কেও। তীব্র ঝড়ো বাতাস আর বৃষ্টি ঝড়িয়ে সাগর থেকে উপকূলে উঠেছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এর মূল চোখ ভারতের দিকে। তবে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা ও সুন্দরবন অংশের ওপর তোপ দাগার পর আম্পানের বাংলাদেশ অংশটি উঠে গেছে স্থলভাগে। উপকূল না হলেও লন্ডভন্ড হয়েছে যশোর। অন্যদিকে, অন্য উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঝড়ের তীব্রতা খুব বেশি না হলেও বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে যশোরে গাছ চাপা পড়ে মা-মেয়েসহ তিন নারী নিহত হয়েছেন। পটুয়াখালীতে ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে ও মানুষকে সচেতন করতে গিয়ে নৌকাডুবিতে দু’জন মারা গেছেন। ভোলায় গাছচাপা পড়ে ও ট্রলারডুবে দুই জন মারা গেছেন। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়াতে দেয়াল চাপা পড়ে মারা গেছেন আরেক ব্যক্তি। আর সাতক্ষীরা সদরে আম কুড়াতে গিয়ে গাছ চাপায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। চাঁদুপুরেও আম কুড়াতে গিয়ে একজন মারা গেছেন। সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সাগরের নিকটবর্তী এলাকাগুলোতে বুধবার সন্ধ্যায় ৫ থেকে ৭ ফুট জোয়ার হয়েছে। ভারী বৃষ্টি হয়েছে প্রায় সারারাতই। সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, ঝড়ের মধ্যে আম কুড়াতে গিয়ে সদরের শহরের বাঁকাল এলাকায় শামসুর রহমান (৬০) ও কামালনগর সঙ্গীতা মোড়ে করিমন নেছা (৪০) নামে দু'জনের মৃত্যুর খবর নিন্ডিত হওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরা শ্যামনগরের উপকূলীয় অঞ্চল, আশাশুনি ও সাতক্ষীরা সদরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কাঁচাঘর বাড়ি মৎস্যঘের ও ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। আশাশুনির ৬টি পয়েন্ট ও শ্যামনগরের একটি পয়েন্টে বেঁড়িবাধ ভেঙে বিস্তীর্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গাবুরা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আম্পানে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে পুরো গাবুরা ইউনিয়ন। আমার বাড়ির অধিকাংশ গাছ পড়ে গেছে। এই ঝড়ে আমাদের কংক্রিটের প্রাচীর পর্যন্ত পড়ে গেছে। সেই বিকাল থেকে ঝড় শুরু হয়েছে একটানা গভীর রাত পর্যন্ত চলছে। শ্যামনগরের গাজী আল ইমরান নামে এক স্বেচ্ছাসেবক বুড়িগোয়ালীনির ইউনিয়নের দাতানিখালি এলাকায় বেড়িবাঁধে ভাঙনের বিষয়টি নিন্ডিত করেন।প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে নদীতে জোয়ার বৃদ্ধির কারণে প্রতাপনগরের কুড়ি কাউনিয়া, সুভদ্রা কাটি, চাকলা, হাজরাখালি পয়েন্টে বেঁড়ি বাধ লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। ভোলায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে গাছের নিচে চাপা পড়ে ছিদ্দিক ফকির (৭০) ও ট্রলারডুবিতে রফিকুল ইসলাম নামের দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। আম্পানের প্রভাবে যশোরে প্রবল ঝড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছ-পালা উপড়ে পড়েছে। চৌগাছা উপজেলার চানপুর গ্রামে ঘরের উপর গাছ পড়ে এক নারী ও তার মেয়ে নিহত হয়েছেন। বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন চানপুর গ্রামের মৃত ওয়াজেদ হোসেনের স্ত্রী খ্যান্ত বেগম (৪৫) ও তার মেয়ে রাবেয়া (১৩)। অপরদিকে শার্শার বাঁগআচড়া ইউনিয়নে এছাড়া বাঘারপাড়া উপজেলার বুদোপুরে আমগাছ ভেঙে ঘরে পড়ে। এতে চাপা পড়ে মারা যান সাত্তার মোল্লার স্ত্রী ডলি বেগম (৪৮)। যশোরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আম্পানের কেন্দ্র রাত সাড়ে ১০টা থেকে যশোরের পশ্চিম দিয়ে অতিক্রম শুরু করে। আম্পানের প্রভাবে সন্ধ্যা ৭টা থেকে ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়। এরপর আস্তে আস্তে তা বাড়তে থাকে। রাত ১২টায় সর্বশেষ বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ১৩৫ কিলোমিটার। চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানার আগেই জোয়ারের পানিতে ডুবে মো. সালাউদ্দিন (১৮) নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (২০ মে) দুপুরে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার পৌর সদরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদর্শী সম্বৌধি চাকমা এ তথ্য নিন্ডিত করেছেন। উপকূলে ঘাস কাটতে গিয়ে সালাউদ্দিন জোয়ারের পানিতে পড়ে যান বলে তিনি জানান। বাগেরহাট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগী এলাকার বেরিবাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত ছাড়া আর কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি । জেলা সদরসহ সবকটি উপজেলা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে। জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
    ঝড়ে বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা থেকে মৃত্যুর খবর এসেছে। বহু গাছপালা ও ঘরবাড়ি উপড়ে যাওয়ার খবরও এসেছে। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে উপকূলের ১০ লাখ মানুষ। জোয়ারের সময় ৪-৫ ফুট উচ্চতায় পানি ওঠায় সাতক্ষীরা ও কয়রাসহ কয়েক জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মহসীন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অনেকটা সেইফ হয়ে গেছি এবার। সরাসরি আমাদের দিকে এলে ক্ষতি বেশ হত। ধীরে ধীরে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত চিত্র পাওয়া যাবে।