সিনিয়র শিক্ষক
২৩ মে, ২০২০ ০৫:১৭ অপরাহ্ণ
চট্টগ্রাম অনলাইন স্কুলের এক মাস পূর্তিতে আমার নিজস্ব ভাবনা।
চট্টগ্রাম অনলাইন স্কুলের এক মাস পূর্তি্তে আমার ভাবনা
গতকাল ২২শে মে ২০২০ ইং শেষ হয়ে গেল চট্টগ্রাম অনলাইন স্কুলের ১ মাস পূর্তি। পরিচালনায় ছিলেন জনাব আখতার হোসেন কুতুবী স্যার, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, চট্টগ্রাম। অতিথি হিসাবে ছিলেন এটু আই সংযুক্ত কর্মকর্তা জনাব রফিকুল ইসলাম সুজন স্যার , জনাব মোহাম্মদ কবির স্যার, জনাব অভিজিৎ সাহা স্যার, অংশগ্রহণকারী শিক্ষক হিসাবে যারা চট্টগ্রাম অনলাইন স্কুলের ক্লাস নেওয়ার সাথে জড়িত তারাই ছিল, সে হিসাবেই আমি ও ছিলাম তাদের একজন হিসাবে। কোভিড - ১৯ এই ক্রান্তিকালে আমার জানামতে শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা শিক্ষক সমাজ ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলেই মিলে সংসদ টেলিভিশন, কিশোর বাতায়ন, জেলায় ও উপজেলায় যার যেমন সাধ্য অনলাইন ভিত্তিক স্কুল পরিচালনা করে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়াশুনায় যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে বিষয় বিবেচনায় এনে এই মহৎ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এখানে আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কতটা সফল এই কার্যক্রমে? যাদের জন্যই আমাদের এই নিরন্তন প্রচেষ্টা তাদের কাছেই বা আমরা কতটা পোঁছাতেই পারছি, সেটার কী কোনো সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের কাছে আছে? অনলাইন স্কুলগুলো প্রত্যেকের নিজ খরচের নিরন্তন প্রচেষ্টার এক সুন্দর ফসল, কিন্ত অভিভাবকহীন ভাবে এই ফসল কতটুকুই বা ঘরে উঠবে সে প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে আমার কাছে? শিক্ষা পরিবারের মূল অভিভাবক হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জেলা শিক্ষা অফিস, থানা শিক্ষা অফিস ও উপজেলা শিক্ষা অফিস। বাস্তব চিত্র হচ্ছে আমরা ওনাদের কোনো উপস্থিতি দেখতে পাচ্ছি না, যার কারণে সরকারী স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ হাতে গোনা দুই একজন ছাড়া সবাই কোভিড -১৯ কানীল ছুটি উপভোগ করছেন। বেসরকারী শিক্ষকরা ও যে সবাই কাজ করছেন তা না, এখানে বলে রাখা ভালো যে যারা এটু আই এর সাথে সম্পৃক্ত তারাই শুধুমাত্র এই কাজ করে যাচ্ছেন। তাহলে জানা দরকার এদের সংখ্যা কত? এদের পক্ষে কি ১৮ কোটি জনসংখ্যার এদেশের প্রান্তিক পর্যায়ে প্রত্যেকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব? আমি এখানে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব এটু আই কে দিব কারণ এটু আই এর উৎসাহের কারনে শিক্ষক সমাজ এ অসাধ্যকে সাধন করছেন, তবে আরো একটি উল্লেখযোগ্য দিক না বললেই নয় যে, আমাদের যে সকল বিগত দিনের বাতায়ন সেরা ও এম্বাস্যাডর সম্মান্বিত শিক্ষকবৃন্দ প্রায় বাতায়নে লগইন করা ভুলেই গিয়েছিল তবে আশার কথা হলো যে কিছু বাতায়ন সেরা শিক্ষক আবার নতুন করে সেখানে পদচারনা শুরু করেছেন সেরা উদ্ভাবক হওয়ার জন্য, এখন আবার দেখছি যে অনলাইন স্কুলের রুটিন ভারী করার জন্য ও সেখানে তাদের পদচারণা বেড়েছে। যার কারনে অনলাইন স্কুলের একই শিক্ষক বারবার ক্লাস নিচ্ছেন জেলায় জেলায় আরো অনেক ভাল শিক্ষক থাকা সত্বে ও। বাতায়ন কে এখন সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন যারা এখনো সেরা হতে পারেন নি তারাই, আমার এখন প্রশ্ন হচ্ছে পাক্ষিক সেরা ও সেরা উদ্ভাবক হওয়ার পর তারা ও কি পূর্বসুরীদের মত হারিয়ে যাবেন? আমি এখানে কাউকে ছোট করার জন্যই কোনো কথা লিখছিনা শুধু বাস্তব চিত্র টা তুলে ধরার চেষ্টা করছি মাত্র। তবে অনলাইন স্কুলের একটা সুফল আমার কাছে মনে হচ্ছে যে, যারা কাজ করছেন তারাই নিজেকেই সমৃদ্ধ করছেন, এতে কোনো সন্দেহ নাই, তবে সবাইকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। তবে এটু আই এর সংযুক্ত কর্মকর্তা জনাব অভিজিৎ সাহা স্যার এর কথার সাথে একমত পোষণ করে বলছি যে, চট্টগ্রামে ও অনেক ভালো ভালো শিক্ষক
এবং এম্বাস্যাডর শিক্ষক থাকা সত্বে ও ওনাদের চট্টগ্রাম অনলাইন ক্লাসে দেখা যাচ্ছে না।
দেশের বেশ কয়েকটি অনলাইন স্কুলের চিত্র ও তাই দেখা যাচ্ছে। নিজ জেলায় সুযোগ না পেয়ে
অন্য জেলার অনলাইন স্কুলে কাজ করছেন কাজ প্রেমী শিক্ষকবৃন্দ। তাহলে আমাদের বুঝে নিতে
হয় যে, বাংলা প্রবাদ বাক্যকে, “বাড়ির গরুইয়ে ঘাটার ঘাস খায় না”। তবে এটু আই এর কাছে আমার অনুরোধ থাকবে যে, আমরা যাতে এর সুফল ঘরে ঘরে পোঁছাতে পারি তার জন্য অবশ্যই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগীতায় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল অফিসকে যুক্ত করতে হবে। হয়তোবা তাদের মাধ্যমেই সম্ভব হবে সমাজের প্রান্তিক পর্যায়ে আমাদের এই কার্যক্রম টা পোঁছানো। এখন শুধু মাত্র অনলাইন সেবার আওতাভুক্ত তারাই যারা মৌলিক চাহিদা পুরন করার পর হাতে উদ্বৃত্ত অর্থ থাকে তারাই। সমাজের প্রান্তিক পর্যায়ে পোঁছাতে হলে আমাদের কি কি করনীয় সেটা এখন ভাবার বিষয়। তবে আমরা পিছিয়ে থাকবো না চেষ্টা করে যেতে দোষ কোথায়? শেষ করছি জনাব রফিকুল ইসলাম সুজন স্যার এর কথা দিয়ে, প্রয়োজনে আমরা প্রত্যেকের কাছে যাবো, প্রত্যেকের সাথে মত বিনিময় করবো এই বিষয়ে। আর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ও একমত পোষণ করছি জনাব কবির স্যার এর কথার সাথে, তিনি বলেছেন যে আমরা প্রত্যেকের কথা শুনবো এবং মতামতকে সম্মান জানাবো। আমার বৃটিশ বন্ধু আমায় জিজ্ঞেস করেছিল বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় দীর্ঘ সময় স্কুলে অবস্থান করে, কিন্তু তাদের জ্ঞানগত গভীরতা এত কম কেন? আমি শুধু এর উত্তর খুঁজে বেড়ায় কিন্তু আজো এর সঠিক কোনো সমাধান পায় নি। সবার সহযোগিতায় এবং নিজ নিজ প্রচেষ্টায় হয়তোবা একদিন আমরা সঠিক গন্তব্যে পোঁছে যাবো সেদিন বোধহয় বেশী দূরে নয়। চট্টগ্রাম অনলাইন স্কুল তথা বাংলাদেশে সকল অনলাইন স্কুলের সমৃদ্ধি কামনা করে শেষ করছি।