Loading..

খবর-দার

০৭ জুন, ২০২০ ০৬:২৪ অপরাহ্ণ

কী হচ্ছে করোনার মেডিকেল বর্জ্য

কী হচ্ছে করোনার মেডিকেল বর্জ্য

ব্যবহৃত পিপিই মাস্ক যত্রযত্র ফেলায় বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি সংক্রমণের পর সাড়ে ১৪ হাজার টন বর্জ্য

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বিশাল সংখ্যায় ব্যবহৃত ওয়ান-টাইম মেডিকেল বর্জ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। গ্লাভস, মাস্ক ও হেডক্যাপের মতো সুরক্ষাসামগ্রীগুলো ব্যবহার শেষে ফেলে দেওয়া হচ্ছে যত্রতত্র। যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া ফেলে দেওয়া এই মেডিকেল বর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। বর্তমানে করোনায় সংক্রমিত রোগীদের উল্লেখযোগ্য অংশই বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য তাদের ব্যবহৃত সুরক্ষাসামগ্রীগুলো সাধারণ বর্জ্যরে সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। আবার হাতে গোনা কিছু হাসপাতাল ছাড়া বাকিগুলো নিয়ম মেনে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘আমরা যদি সাধারণ বর্জ্যরে সঙ্গে এই মেডিকেল বর্জ্য মিশিয়ে ফেলি তাহলে বিপদ আরও বাড়বে। আর এ থেকে নতুন ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যাবে।’

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) তথ্যমতে, কেবল রাজধানী ঢাকা থেকেই গত মাসে প্রায় ২৫০ টন মেডিকেল বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আর দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভসসহ প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ টন। এই সময়ে ঢাকায় ১ হাজার ৩১৪ টন সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস এবং সার্জিক্যাল মাস্কের ৪৪৭ টন বর্জ্য তৈরি হয়েছে। এসব বর্জ্যরে বড় একটি অংশ যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। এতে করে ভয়াবহভাবে করোনার গণসংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

অন্যদিকে কোনো ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে এসব বর্জ্য সংগ্রহ করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। মিরপুরের কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বেশির ভাগ বাসার ময়লা নিতে গিয়ে তারা ময়লার সঙ্গে রাবার বা প্লাস্টিকের হ্যান্ড গ্লাভস, সার্জিক্যাল মাস্ক পাচ্ছেন। এমনকি রাস্তাঘাটেও এখন অসংখ্য মাস্ক ও গ্লাভস পড়ে থাকতে দেখা যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারীর এই সময়ে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস যত্রতত্র ফেলে রাখা উচিত নয়। এতে করোনা সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের উচিত বর্জ্যগুলো অটোক্লেভস মেশিনের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করে তা বায়োসেইফটিক্যাল ব্যাগে ভরে রাখা। পরে এসব বর্জ্য উচ্চ তাপমাত্রায় পুড়িয়ে ফেলা।

তারা বলেন, ‘এই সুরক্ষাসামগ্রী থেকে যে বর্জ্য তৈরি হচ্ছে, এর ফলে ঝুঁকি আরও বাড়ছে। যারা পরিচ্ছন্নতাকর্মী তারা সরাসরি ঝুঁকিতে পড়ছেন। আর এই বর্জ্যগুলো মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ায় পরিবেশের মারাত্মক সমস্যা দেখা দেবে। কোনো কারণে এই ভাইরাস যদি আমাদের গৃহপালিত পশুপাখি ও বন্যপ্রাণীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে ভয়াবহ সমস্যা তৈরি হবে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, কোনো কারণে এই ভাইরাস যদি গৃহপালিত পশুপাখির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং আমরা সেই সংক্রমিত পশুপাখির মাংস ও মাছ খাই, তাহলে সমস্যাটি হবে আরও গুরুতর।’

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা মহানগরের বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাধারণ বর্জ্যগুলো সংগ্রহ করে তা মাতুয়াইল ও আমিনবাজারে নেওয়া হয়। আর মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য মাতুয়াইলে বেসরকারি একটি সংগঠন প্রিজমের নিজস্ব প্লান্ট রয়েছে। সেখানে এসব বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা হয়।

ইএসডিওর মহাসচিব শাহরিয়ার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের এ ধরনের মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই বললেই চলে। আমাদের এই বর্জ্য আলাদা করে সংরক্ষণ করতে হবে এবং এর জন্য আলাদা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে। এ জন্য সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের যৌথ পরিকল্পনা দরকার। আর এরা যদি যৌথভাবে পরিকল্পনা নিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি গাইডলাইন দেয় তাহলে কিছুটা হলেও এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ মিলবে।’