Loading..

প্রকাশনা

০৪ জুলাই, ২০২০ ০৫:২৮ অপরাহ্ণ

৬ দফা

লালদীঘি মাঠে ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণাবঙ্গবন্ধু ও চট্টগ্রামে তার সঙ্গীদের মধ্যে কত গভীর আস্থার সম্পর্ক ছিল তার প্রমাণ ছয় দফা ঘোষণার জন্য চট্টগ্রাম-কে বেছে নেয়া। চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের প্রতি অবিচল আস্থা থেকে ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম লালদীঘি ময়দান থেকে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল মন্ত্র, বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা। চট্টগ্রাম ঢুকে যায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে। চট্টগ্রাম হয়ে ওঠে মুক্তি আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু, আন্দোলন সংগ্রামের পাদপীঠ।

৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে ছয় দফার বিষয়ে জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু সরকার তো বটেই আওয়ামী লীগের অনেকেই ছয় দফার বিরোধিতা করেছিল। এ অবস্থায় ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু ঢাকায় ফিরে আসেন। ঢাকায়ও ছয় দফার বিরোধিতার মুখে বঙ্গবন্ধুর পাশে এগিয়ে আসেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছয় দফার পক্ষে প্রথম বিবৃতি দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজ, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আল হারুন, এম এ হান্নান, জানে আলম দোভাষ, আবুল কাশেম (সাব-জজ) প্রমুখ।

এ ঘটনার কয়েকদিন পরেই বঙ্গবন্ধু সিদ্ধান্ত নেন চট্টগ্রামের জনসভায় ছয় দফা ঘোষণার। সে সময়ের কথা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, “টেলিফোনে শেখ সাহেব বলেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, ২৫ তারিখ লালদীঘির ময়দানে ছয় দফা ঘোষণা করব’।”

“আমি বললাম, ঢাকা থেকে করলে ভালো হয় না? শেখ সাহেব বলেন, ‘দেখ, ঢাকাইয়ারা তোদের মতো অর্গানাইজ করতে পারবে না। তা ছাড়া সারাদেশে চট্টগ্রামের একটি নাম আছে, চট্টগ্রাম বার আউলিয়ার দেশ, ওইখান থেকে আমি শুরু করতে চাই’।”

বঙ্গবন্ধুর এ আস্থায় সাড়া দিয়ে জনসভা আয়োজনে ব্যাপক প্রস্তুতি নেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা।

১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবিসমূহ :

প্রস্তাব - ১ :

শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি:

দেশের শাসনতান্ত্রিক কাঠামো এমনি হতে হবে যেখানে পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেশনভিত্তিক রাষ্ট্রসংঘ এবং তার ভিত্তি হবে লাহোর প্রস্তাব। সরকার হবে পার্লামেন্টারী ধরনের। আইন পরিষদের (Legislatures) ক্ষমতা হবে সার্বভৌম। এবং এই পরিষদও নির্বাচিত হবে সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জনসাধারনের সরাসরি ভোটে।

প্রস্তাব - ২ :

কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা:

কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের ক্ষমতা কেবল মাত্র দু'টি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে- যথা, দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতা থাকবে নিরঙ্কুশ।

প্রস্তাব - ৩ :

মুদ্রা বা অর্থ-সমন্ধীয় ক্ষমতা:

মুদ্রার ব্যাপারে নিম্নলিখিত দু'টির যে কোন একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা চলতে পারেঃ-

(ক) সমগ্র দেশের জন্যে দু'টি পৃথক, অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে।

অথবা

(খ)বর্তমান নিয়মে সমগ্র দেশের জন্যে কেবল মাত্র একটি মুদ্রাই চালু থাকতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শাসনতন্ত্রে এমন ফলপ্রসূ ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে করে পূর্ব-পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচারের পথ বন্ধ হয়। এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভেরও পত্তন করতে হবে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক আর্থিক বা অর্থবিষয়ক নীতি প্রবর্তন করতে হবে।

প্রস্তাব - ৪ :

রাজস্ব, কর, বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা:

ফেডারেশনের অঙ্গরাজ্যগুলির কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কোনরূপ কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে না। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গ-রাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে। অঙ্গরাষ্ট্রগুলির সবরকমের করের শতকরা একই হারে আদায়কৃত অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠিত হবে।

প্রস্তাব - ৫ :

বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা:

(ক) ফেডারেশনভুক্ত প্রতিটি রাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে।

(খ) বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলির এখতিয়ারাধীন থাকবে।

(গ) কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত কোন হারে অঙ্গরাষ্ট্রগুলিই মিটাবে।

(ঘ) অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা করজাতীয় কোন রকম বাধা-নিষেধ থাকবে না।

(ঙ) শাসনতন্ত্রে অঙ্গরাষ্ট্রগুলিকে বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি প্রেরণ এবং স্ব-স্বার্থে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে।

প্রস্তাব - ৬ :

আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা:

আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলিকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি