বঙ্গবন্ধু
জসীমউদ্দীন
মুজিবুর রহমান
ওই নামে যেন বিসুভিয়াসের অগ্নি-উগারী বান।
বঙ্গদেশের এ প্রান্ত হতে সকল প্রান্ত ছেয়ে,
জ্বালায় জ্বলিছে মহাকালানল ঝঞ্ঝা-অশনি বেয়ে।
মায়ের বুকের ভায়ের বুকের বোনের বুকের জ্বালা,
তব সম্মুখ পথে পথে আজ দেখায়ে চলিছে আলা।
জীবন দানের প্রতিজ্ঞা লয়ে লক্ষ সেনানী পাছে,
তোমার হুকুম তামিলের লাগি সাথে তব চলিয়াছে।
রাজ ভয় আর কারাশৃঙ্খলা হেলায় করেছে জয়
ফা্ঁসির মঞ্চে মহত্ত্ব তব কখনো হয় নি ক্ষয়।
বাংলাদেশের মুকুটবিহীন তুমি প্রমূর্ত রাজ,
প্রতি বাঙালির হৃদয়ে হৃদয়ে তোমার তক্ত-তাজ।
তোমার একটি আঙুল হেলনে অচল যে সরকার
অফিসে অফিসে তালা লেগে গেছে-স্তব্ধ হুকুমদার।
এই বাঙলায় শুনেছি আমরা সকল করিয়া ত্যাগ,
সন্ন্যাসী বেশে দেশ-বন্ধুর শান্ত-মুধুর ডাক।
শুনেছি আমরা গান্ধীর বাণী জীবন করিয়া দান,
মিলাতে পারেনি প্রেম-বন্ধনে হিন্দু-মুসলমান।
তারা যা পারেনি তুমি তা করেছ, ধর্মে ধর্মে আর,
জাতিতে জাতিতে ভুলিয়াছে ভেদ সন্তান বাঙলার।
তোমার হুকুমে রেল-জাহাজের চাকা যে চলেনি আর
হাইকোর্টের বন্ধ দরজা খুলিবে সাধ্য কার।
তোমার হুকুমে তুচ্ছ করিয়া শাসন-ত্রাসন-ভয়,
আমরা বাঙালি মৃত্যুর পথে চলেছে আনিতে জয়।
পথে পথে তারা লিখিল লিখন বুকের রক্ত দিয়ে,
লক্ষ লক্ষ ছুটিল বাঙালি সেই বাণী ফুকারিয়ে।
মরিবার সে কী উন্মাদনা যে, ভয় পালাইলে ভয়ে,
পাগলের মতো ছোটে নর-নারী মৃত্যুরে হাতে লয়ে।
আরো একদিন ধন্য হইব ধন-ধান্যতে ভরা,
জ্ঞানে-গরিমায় হাসিবে এদেশে সীমিত-বসুন্ধারা।
মাঠের পত্রে ফসলেরা আসি ঋতুর বসনে শোভি,
বরণে সুবাসে আকিয়া যাইবে নকসী কাঁথার ছবি।
মানুষে মানুষে রহিবে না ভেদ, সকলে সকলকার,
একসাথে ভাগ করিয়া খাইবে সম্পদ যত মার।