Loading..

ম্যাগাজিন

১৩ জুলাই, ২০২০ ১০:২৩ অপরাহ্ণ

প্রবন্ধ: সাধের লাউ

লাউ একটি সুস্বাদু সব্জি। এর জন্ম আফ্রিকায়। লাউ এর মূল নাম "অলাবু" পরিবর্তিত হয়ে লাউ হয়েছে। লাউকে কদু-ও বলে। লাউ নিয়ে গান আছে, লাউ দিয়ে লাউয়া বানায়, সেই লাউয়া অন্তরে বৈরাগীর সুর হয়ে বাজে। লাউ দিয়ে লবন রাখার লাউয়াও বানায়, লাউগাছের সবচে শক্ত, বড় লাউটিকে পাকানো হয় বেশ করে। তারপর বিশেষ কায়দায় ওটার ভেতর পচিয়ে লাউয়া বানানো হয়। লাউয়ায় লবন ভালো থাকে, আমাদের বাড়ীতে দেখেছি লাউয়া বানাতে। ওটায় জানালার মত চমৎকার একটা মুখ থাকত।

সেই লাউয়া ইঁদুর ধরার ফাঁদ হিসেবেও ব্যাবহার করা হত।

কবিরা কবিতায় লাউ এনেছেন, লাউয়ের ডগাও এনেছেন। তন্বী তরুণীকে লাউয়ের ডগার মত কল্পনা করে কত রসিক কবি রাতভর কবিতা লেখেছেন। সর্বনাশ! লাউডগা নামে একটা সাপও আছে কিন্তু। লাউয়ের একতারা বাজিয়ে বাউলেরা দেশান্তরী হয়। লাউয়া নামে একটি পরিযায়ী পাখীও আছে কিন্তু, শীতের সময় আসে, স্থানীয় ভাষায় লাউয়া বলে। সেই লাউয়া নিয়ে গান আছে, যারা দৈহিক শক্তি বা পেশিশক্তির কাজ করে, তারা উদ্দীপনা বাড়াতে কাজের সময় এটা গায়। গানটি আমি শুনে শুনে শিখেছিলাম বল্লি মিস্ত্রিদের থেকে বেশ আগে। আমি একটি কাব-ক্যাম্পুরীতে " লাউয়া উড়ে আকাশে " এই গানটি করার পর এটা তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ছড়িয়ে যায়। এখন গানটি সারাদেশ জুড়েই গাওয়া হয়, ভুল কথায় ভুল সুরে। আমি অনেককে গানটি লিখে দিয়েছি, রেকর্ড করেও দিয়েছি। গানটি অনেকেই গায়, কেউ জানে না ওটা কার হাতে পড়ে ছড়িয়েছে, আমিও অনেক জায়গায় গানটি গাইতে দেখি, চুপ করে শুনি। কী বলতে কোথায় এসে পড়েছি।

লাউ দেখলেই আমার ছোট সেই মেয়েটির কথা মনে পড়ে। ঘন চুল ছিল তার, সে আমার বাসায় থাকত। সে বলত, " আন্টি লাউ কর, লাউ কর" - সে রাও (আওয়াজ) কে লাউ বলত। আবার অনেক স্থানে নাও কে লাও বলে। এভাবে বর্ণগুলো স্থানভেদে স্থান পরিবর্তন করে উচ্চারিত হয়। আমার ছেলে ছোটবেলায় সব্জি মাত্রই লাউকে বুঝতো, উচ্চারণ করত "তাউ"। লাউ যত কচি হবে, তত গলে যাবে, তত তার স্বাদ। কচি লাউ চিনবেন কেমনে? যে লাউয়ে লোম (পশম) থাকবে সেটা হল বেশী কচি। লোম-কে আবার রোম বলেও জানে অনেকে। কচি লাউ দিয়ে মাছের মাথা - অনেকের প্রিয়। লাউপাতার ভর্তা অসাধারণ একটি বিষয়, আছে লাউয়ের ডগা দিয়ে শুটকি। লাউয়ের ছোলা দিয়ে ভর্তা, বিচি দিয়ে ভর্তা। মোট কথা লাউ এমন একটি সব্জি যার কিছুই ফেলনা নয়। সহজপাচ্য একটি সহজ-সরল সব্জি।

লাউয়ের পুষ্টিগুণ দেখে নিই-

উইকিপিডিয়া বলছে:

* লাউয়ে প্রচুর পানি থাকে, যা দেহের পানির পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ডায়রিয়া জনিত পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।

লাউ খেলে ত্বকের আর্দ্রতা ঠিক থাকে।

* প্রস্রাবের সংক্রমণজনিত সমস্যা দূর হয়। কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

উচ্চ রক্তচাপবিশিষ্ট রোগীদের জন্য এটি আদর্শ সবজি।

* এই সবজি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসমনিয়া বা নিদ্রাহীনতা দূর করে পরিপূর্ণ ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

* লাউয়ে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস, যা দেহের ঘামজনিত লবণের ঘাটতি দূর করে। দাঁত ও হাড়কে মজবুত করে।

* ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও লাউ যথেষ্ট উপকারী। ডায়েটিং কালেও লাউ ভালো ফল দেয়।

* চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুল পেকে যাওয়ার হার কমায়।

* কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ, পেট ফাঁপা প্রতিরোধে লাউয়ের রয়েছে সহায়ক গুণাবলি।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি