Loading..

খবর-দার

২৫ জুলাই, ২০২০ ০২:০৫ পূর্বাহ্ণ

কী যে রোগ আসিল, বাহে, হামারগুলার দাম নাই’

রংপুর নগরের বেতপট্টি চারমাথা মোড় থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে দর্শনা ভুরারঘাট। সেখান থেকে সাইকেল চালিয়ে এসেছেন দিনমজুর কবির মিয়া। সকাল ১০টা পেরোলেও নিরাশ মুখে বসে ছিলেন। রাস্তার চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি। রিকশা কিংবা মোটরসাইকেলে কেউ এলেই নড়েচড়ে বসেন। কিন্তু যখন জানতে পারেন, শ্রমিক ডাকতে নয়, অন্য কোনো কাজে এসেছেন, তখন মুখ যেন ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে।

কবির মিয়া বলেন, ‘কী যে একটা ভাইরাস রোগ আসিল, বাহে, হামারগুলার দাম নাই। আগোত কত ডাক আসছিল। এলা সকাল থাকি অনেক বেলা হয়া গেইলেও একটা কাম জোটে না।’
৩০ জুন বেতপট্টি চারমাথা মোড়ের ওই স্থানটায় কবির মিয়ার মতো জনা পঞ্চাশেক দিনমজুরের জটলা ছিল। প্রতিদিনই সকাল আটটার মধ্যে এই স্থানে চলে আসেন কাজের সন্ধানে। কোনো দিন কাজ জোটে, কোনো দিন কাজ পাওয়া যায় না। করোনাভাইরাসের সময় বলে এই অবস্থা। অথচ স্বাভাবিক সময়ে সকাল নয়টার মধ্যেই স্থানটা ফাঁকা হয়ে যায়।

কাজ না পেলে সংসার কীভাবে চলে, এমন প্রশ্ন করতেই জটলা থেকে ভেসে এল জাহেদুল ইসলামের গলা। ডালা-খন্তা হাতে চেপে ধরে বলে উঠলেন, ‘আল্লায় চালায়, বাহে।’ অপর দিনমজুর আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘কাইল (গতকাল) রাইতোত ভাত খাই নাই। খাওয়াইয়া চারজন। কোনো দিন কাম পাওয়া গেইলেও ৫০০ টাকার মজুরি ২০০ টাকাও পাওয়া যায় না। এই করোনাভাইরাস হয়া হামারগুলার দাম একেবারে কমি গেইছে, বাহে।’
বেলা বাড়ছিল আর শ্রমজীবী মানুষগুলোর চোখমুখে বিষণ্নতার ছাপ স্পষ্ট হচ্ছিল। একসময় মানুষের কোলাহল বাড়তে থাকে। কাজ না পেয়ে শ্রমজীবী অধিকাংশ মানুষ হতাশ হয়ে ফিরে যান। ওদিকে ব্যবসাপ্রধান বেতপট্টি এলাকার দোকানপাট একে একে খুলছিল। একপাশে কাপড়ের দোকান, অন্যপাশে হার্ডওয়্যার সামগ্রীর দোকান। স্যানিটারি সামগ্রীর কিছু দোকানও রয়েছে। রয়েছে হরেক রকম পণ্যের দোকানও। দোকানের কর্মচারীরা কেউ বসে আছেন, কেউবা পায়চারি করছেন। দিনমজুরদের মতো তাঁরাও তাকিয়ে থাকেন রাস্তার দিকে, কোনো খদ্দের আসে কি না।
চারমাথা মোড় থেকে একটু এগিয়ে দেখা মিলল আনিসুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্সের একটি শোরুমের এজেন্ট। করোনাকালের ব্যবসার হালহকিকত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে, ভাই। প্রতি মাসে ঘরভাড়া ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। তার সঙ্গে রয়েছে বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীদের বেতন। এখন দোকান খুললেও দিনের এক বেলায় পাঁচ-ছয় হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয় না। এমনও দিন যাচ্ছে, একটি টাকারও বিক্রি নেই। এভাবে কি ব্যবসা চলে?’

কিছুটা সামনেই ক্রিসেন্ট স্যানিটারি নামে একটি দোকান। মালিক সুব্রত সান্যাল দোকানেই ছিলেন। কেমন চলছে ব্যবসা, জিজ্ঞেস করতেই বলে উঠলেন, ‘কেমন আর চলবে? আপনারাই (সাংবাদিক) ভালো বলতে পারেন। ঘুরে ঘুরে দেখুন। সবার কষ্টটা বুঝতে পারবেন। বেচাবিক্রি একদম নেই। এভাবে চলতে থাকলে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করাও সম্ভব নয়। ব্যবসা লাটে উঠবে।
সংগ্রহীত,
আরিফুল হক, রংপুর