Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

১১ অক্টোবর, ২০১৪ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

থেমে যাবে রাতের পাঠদান!

থেমে যাবে রাতের পাঠদান!

আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, রাজশাহী | আপডেট: | প্রিন্ট সংস্করণ
 

শরীরে বাসা বেঁধেছে মরণব্যািধ ক্যানসার। তা একটুও দমাতে পারেনি শিক্ষক এমদাদুল হককে। পরম মমতায় পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছেন এক শিশুকে l ছবি: প্রথম আলোক্লাসের কালো বোর্ডে চক দিয়ে খস খস শব্দ করে তিনি লিখে চলেন। একেবারে শেষ বেঞ্চে বসে থাকা ছাত্রটিও মনোযোগী শ্রোতার মতো কখনো তাঁর কথা শুনছে, কখনো খাতায় পড়া টুকে নিচ্ছে। অথচ ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরলেই ছাত্রছাত্রীদের প্রিয় এমদাদুল হক স্যার হয়ে ওঠেন ‘রোগী’। কখনো ক্যানসারের রোগী। কখনো হাড়ভাঙা রোগী (বাঁ হাত ভেঙে গেছে)।
ক্লাসে থাকার সময় শরীরের তীব্র যন্ত্রণা কীভাবে যেন ভুলে থাকতে পারেন এমদাদুল হক। বাকি সময়টা ব্যথায় ছটফট করেন। আট মাস আগে তাঁর শরীরের হাড়ে ক্যানসার ধরা পড়ার পর চিকিৎসকের পরামর্শে এখন কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। কিন্তু বিপদ যেন তাঁর পিছু ছাড়ছে না। কিছুদিন আগে বাসায় পড়ে গিয়ে বাঁ হাত ভেঙে গেছে তাঁর। কনুইয়ের ওপরের দিকে হাড়ের ভাঙা অংশে এখনো জোড়া লাগেনি। এ অবস্থাতেও নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন তিনি।
এমদাদুল হকের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পীরগাছা গ্রামে। বর্তমানে তিনি উপজেলার ধন্দহ অমরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। গুণী এই শিক্ষক ক্লাসের নিয়মিত পাঠদান শেষে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য রাতের বেলায় আরেক দফা পাঠদান করেন। তবে শরীরে ক্যানসারের বিষ ধরা পড়ায় সেই উদ্যোগ আপাতত বন্ধ রাখতে হচ্ছে তাঁকে। অসচ্ছল ও অমনোযোগী শিক্ষার্থীদের জন্য তাঁর এই প্রচেষ্টা চলে আসছে বহু বছর ধরে। এ নিয়ে ২০০৯ সালের ১৭ অক্টোবর প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় ‘রাতের বেলায় আরেক দফা পাঠদান’ শিরোনামে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ঈদের ছুটির মধ্যেও গত মঙ্গলবার বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গণিত বিষয়ের ক্লাস নিয়েছেন এমদাদুল হক। এই শরীর নিয়ে কেন এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের পরীক্ষা সামনে। গণিতের জটিল কিছু বিষয় এখনো বাদ রয়ে গেছে। বাচ্চাদের ফাঁকি দিয়ে সরকারের কাছ থেকে বেতন নিয়ে আমি চিকিৎসা করাতে চাই না। আমার কাছে মনে হয় তার চেয়ে বিষ পান করে মরা ভালো।’
ধন্দহ অমরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমা আক্তার বলেন, এমদাদুল হক এই বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করছে। সরকারিভাবে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে জাতি একজন আদর্শ শিক্ষক হারাবে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলম হোসেন বলেন, শিক্ষক এমদাদুল হক একজন আলোকিত মানুষ। তাঁর মতো শিক্ষককে বাঁচিয়ে রাখা দরকার। আমরা দাবি জানাচ্ছি সরকারিভাবে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।
এমদাদুল হকের স্ত্রী শহিদা বেগম বলেন, ভাঙা হাত আর শরীরে ক্যানসারের জীবাণু নিয়ে তিনি ক্লাস করার জন্য ছুটে যান। আর ফিরে এসে বিছানায় যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন। তিনি জানান, কলকাতায় টাটা ক্যানসার সেন্টারে তাঁর স্বামীর চিকিৎসা চলছে। ইতিমধ্যে তাঁদের সাত লাখ টাকার বেশি খরচ হয়ে গেছে। এখন প্রতি মাসে এক লাখ টাকার ওষুধ লাগছে। আগামী ৩ নভেম্বর আবার ভারতে যেতে হবে। কিন্তু কীভাবে যাবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি