Loading..

ম্যাগাজিন

২৮ জুলাই, ২০২০ ০৮:৪১ অপরাহ্ণ

Art and Craft

শিল্পকলার উদ্ভব হয়েছে আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগে সেই আদিম মানুষের হাত ধরে।


হোমো-স্যাপিয়েন্স মানুষ তার চারপাশে যা দেখেছে তা-ই তার শিল্পমাধ্যমে ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। হোমো-স্যাপিয়েন্স কথাটার অর্থ হচ্ছে বুদ্ধিমান মানুষ। আজ থেকে ৪০ বা ৫০ হাজার বছর আগে ইউরোপে এই নতুন শিকারি মানুষের আবির্ভাব হয়েছিল।বিভিন্ন শিকারের দৃশ্য ও জীবজন্তুর ছবি তারা সবচেয়ে বেশি এঁকেছে। সেখান থেকেই শিল্পকলার শুরু


তবে এখন শিল্পকলা একটি বিস্তৃত বিষয়।


মানুষের মনের সৃজনশীল কর্মকান্ডের সামগ্রিক রূপ হচ্ছে শিল্পকলা।


শিল্পী তাঁর কল্পনা ও প্রতিভার সাথে দক্ষতা ও রুচির সমন্বয়ে শিল্প সৃষ্টি করেন। শিল্পী তাঁর সৃষ্টির আনন্দ থেকে শিল্প সৃষ্টি করেন বলে কোনো বাঁধাধরা নিয়মের অধীনে শিল্পকে ফেলা যায় না। শিল্পীর কাজ হচ্ছে শিল্পকলার মাধ্যমে আমাদের অন্তর্দৃষ্টিকে সম্প্রসারিত করা, আমাদের কল্পনার পরিধি বাড়িয়ে তোলা।


শিল্পকলার নানা দিকশিল্পের প্রধান দুটি ধারা:


চারুশিল্প (Fine Arts) ও

কারুশিল্প (Crafts)

চারুশিল্প শিল্পীর সৃষ্টিশীল মনের একান্ত নিজস্ব সৃষ্টি। এর কোনো ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তা নেই


সৃষ্টির আনন্দে মনের তাগিদ থেকেই তার উৎপত্তি।


এটি আমাদের মনে আনন্দ যোগায়, দৃষ্টিকে আনন্দ দেয়।


যেমন ধরো একটি সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি দেখে বা কোনো একটি শিল্পকর্ম দেখে তোমার মন ভরে গেল। মন ভালো হলে পড়াশোনাও ভালো লাগবে। মনে আনন্দ নিয়ে পড়তে পারবে।এভাবে


চারুশিল্প আমাদের মানসিক প্রয়োজনে কাজে লাগে। আর


কারুশিল্প যদিও শিল্প, তবে অনেক ক্ষেত্রেই এর উৎপত্তি জীবিকা অর্জনের তাগিদে এবং মানুষের ব্যবহারিক প্রয়োজন থেকে। সুতরাং বলা যায়,


আমাদের মানসিক প্রয়োজন মেটায় যে-শিল্প তা হলো চারুশিল্প বা চারুকলা এবং যে-শিল্প দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারিক প্রয়োজনে কাজে লাগে, পাশাপাশি মনের আনন্দ জোগায় তা হলো কারুশিল্প বা কারুকলা।


সমগ্র শিল্পকলা এই দুটি প্রধান ধারার অন্তর্ভুক্ত


মানুষের সৃষ্টি সমস্ত শ্রেষ্ঠ শিল্পই চারুশিল্পের অন্তর্গত।


চারুশিল্পের মধ্যে আছে চিত্রকলা, ভাস্কর্য, খোদাই শিল্প, নৃত্যনাট্য, নাটক, কাব্য, গদ্যসাহিত্য, সংগীত, নৃত্য ইত্যাদি


কারুশিল্পের মধ্যে আছে মৃৎশিল্প, বুনন, তাঁত, চর্ম, বাঁশ, বেত, কাঠ ও নানারকম ধাতুর তৈরি ব্যবহারিক শিল্প।


আবার নকশিকাঁথা, নকশি পাখা, খেলনা পুতুল এজাতীয় শিল্পকে আমরা লোকশিল্পের পর্যায়ে ফেললেও এগুলো কারুশিল্পের ধারায় সৃষ্টি।


সাধারণ মানুষ মনের আনন্দ নিয়েই এ- সমস্ত শিল্প তৈরি করে। চারুশিল্পের অন্তর্গত প্রতিটি শিল্পই আবার একটি অন্যটির সাথে কোনো-না-কোনোভাবে সম্পর্কিত।


এ- সম্পর্কিত অন্যান্য বইপুস্তকে তোমরা শিল্পকলা বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবে।


নান্দনিক শিল্প


পূর্বের পাঠে আমরা চারুকলা সম্পর্কে জেনেছি।


নান্দনিক শিল্প আসলে চারুশিল্পেরই অন্য নাম।


চারুশিল্প আমাদের মনকে আনন্দ দেয়, দৃষ্টিকে আনন্দ দেয়।


যে শিল্প আনন্দদায়ক ও দৃষ্টিনন্দন, যা আমাদের মনের খোরাক যোগায় তাকেই আমরা নান্দনিক শিল্প বলতে পারি।


নন্দন শব্দ থেকে নান্দনিক শব্দের উৎপত্তি।


স্বর্গের উদ্যানকে বলা হয় নন্দনকানন।


নন্দন শব্দটি সুন্দর অর্থে ব্যবহৃত হয়।


শিল্পী যখন কোনোকিছু সৃষ্টি করেন তখন তাঁর সৃষ্টির সাথে মিশে থাকে শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবনের নানা অভিজ্ঞতা, তাঁর রুচি, চিন্তা-চেতনা, শিল্পবোধ, তার পরিবেশ ও সমাজ ইত্যাদি নানা কিছু।


শিল্পী তাঁর আবেগ, আনন্দ, দুঃখ, ক্ষোভ এসব অনুভূতিকেই শিল্পরূপ দেন।


দুঃখ-বেদনা থেকেও শিল্পসৃষ্টি হতে পারে।


তবে তাতে মিশে থাকে সৃষ্টির আনন্দ। দুঃখকে শিল্পে প্রকাশ করার আনন্দ। এসব শিল্পসৃষ্টির মূলে থাকে শিল্পীর নিজেকে প্রকাশ করার অদম্য ইচ্ছা। শিল্পী চান দর্শক তাঁর শিল্পকর্ম দেখে আনন্দ পাক, শিল্পীর চিন্তাভাবনার সাথে দর্শক নিজের চিন্তার মিল খুঁজে পাক অথবা তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি দর্শকের হৃদয়কে আলোড়িত করুক। দর্শক তাতে চিন্তার কিছু খোরাক পাক। শিল্পী নিজেকে প্রকাশ করার জন্য যে-কোনো মাধ্যম বেছে নিতে পারেন। সেটা হতে পারে চিত্রকলা, ভাস্কর্য বা অন্য কোনো মাধ্যম। চিত্রকলার মতো ভাস্কর্য, কাঠখোদাই বা রিলিফ ওয়ার্ক-এর মাধ্যমেও নান্দনিক শিল্প হতে পারে। মাধ্যম যা-ই হোক এ-ধরনের শিল্পকে আমরা নান্দনিক শিল্প বলতে পারি।


যেমন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আঁকা ছবি- ‘সংগ্রাম’।


এই ছবিটি শ্রমজীবী মানুষের জীবনসংগ্রামকে তুলে ধরেছে।


চিত্রকলার মাধ্যমে যেমন নান্দনিক শিল্প হয় তেমনি ভাস্কর্যের মাধ্যমেও হতে পারে। আমাদের দেশে ও বিদেশে প্রচুর ভাস্কর্য রয়েছে যা কোনো বিষয়কে নিয়ে শিল্পীর মনের অনুভূতিকে মানুষের মাঝে তুলে ধরেছে। যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে অবস্থিত ‘অপরাজেয় বাংলা’। এই ভাস্কর্যটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে অবস্থিত ভাস্কর সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ-এর তৈরি ‘অপরাজেয় বাংলা’ যুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণসহ মুক্তিযুদ্ধের অনুভূতিকে প্রকাশ করেছে। একইভাবে কাঠখোদাই বা রিলিফ করা কাজের মাধ্যমেও হতে পারে নান্দনিক শিল্প।


কারুশিল্প


ইতঃপূর্বে আমরা চারুশিল্প ও কারুশিল্পের পার্থক্য সম্পর্কে জেনেছি। ব্যবহারিক বস্তুতে সৌন্দর্য আরোপ করার মধ্য দিয়ে কারুশিল্পের সূচনা আমরা তাও জেনেছি।


সকল ব্যবহারিক বস্তুই কারুশিল্প নয়।


শুধুমাত্র যেসকল ব্যবহার্য সামগ্রী শিল্পগুণসম্পন্ন অর্থাৎ যা কারুকার্যখচিত অথবা নির্মাণশৈলীর কারণেই মনোমুগ্ধকর তাকেই আমরা কারুশিল্প বলতে পারি।


জীবনের প্রয়োজনে মানুষ যা সৃষ্টি করে তার প্রাথমিক রূপটি হয় খুব সরল।


যেমন আমরা যদি আদিমকালের বিভিন্ন হাতিয়ার বা বাসনপত্রের ছবি দেখি, দেখা যাবে সেগুলো খুব সহজ ও সরলভাবে তৈরি। কেবল ব্যবহারিক প্রয়োজনের কারণেই সেটা তৈরি হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীকালে সৌন্দর্যবোধ ও রুচিবোধের প্রয়োজনে সেসকল হাতিয়ার বা বাসনপত্রই মানুষ অনেক সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর ভাবে তৈরি করে তাকে শিল্পরূপ দিয়েছে। তখনই সেটা হয়েছে কারুশিল্প।


 


মানুষ তার জীবনযাপনকে সুন্দর করার জন্য, সুখে ও আনন্দে বসবাস করার জন্য শিল্পকর্মকে নানাভাবে ব্যবহার করে।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি