Loading..

প্রকাশনা

০৬ আগস্ট, ২০২০ ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ

সমরেন্দ্র কুমার মিত্র

সমরেন্দ্র কুমার মিত্র (ইংরেজি: /Sāmēndra kumāra mitra/) (১৪ মার্চ ১৯১৬ - ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮) একজন ভারতীয় বাঙালি বিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ ছিলেন। তিনি ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের (আইএসআই) ভারতের প্রথম সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তির কম্পিউটার (ইলেকট্রনিক এনালগ কম্পিউটার) তৈরি করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের পলিত গবেষণাগারের গবেষক পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতার আইএসআই-এ যোগদান করেন, যেখানে তিনি অধ্যাপক, গবেষণা অধ্যাপক ও পরিচালক হিসাবে নিযুক্ত হন। তিনি কলকাতা ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে কম্পিউটিং মেশিন এবং ইলেকট্রনিক্স বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম প্রধান ছিলেন। কলকাতা গাণিতিক সমিতি সমরেন্দ্র কুমার মিত্রকে ভারতের কম্পিউটারের জনক বলা সম্মানিত করে।[১]

জন্ম ও বংশপরিচয়

সমরেন্দ্র কুমার মিত্র ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ মার্চ কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পিতা স্যার রূপেন্দ্র কুমার মিত্র এবং মা লেডি সুধাহাসীন মিত্রের এক পুত্র ও কন্যা সন্তানের মধ্যে বয়ঃজ্যেষ্ঠ ছিলেন। তার পিতা, স্যার রূপেন্দ্র কুমার মিত্র গণিতে এমএসসি স্বর্ণপদক প্রাপক ছিলেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়েও এমএসসি স্বর্ণপদক প্রাপক ছিলেন এবং ১৯১৩ থেকে ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টে অনুশীলনকারী পেশাজীবী ছিলেন। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে রূপেন্দ্র মিত্র কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় প্রধান বিচারপতি  ছিলেন এবং ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিচারক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। এরপর ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি লেবার আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।

শিক্ষাজীবন

সমরেন্দ্র কুমার মিত্র কলকাতার বৌবাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে তার ইন্টারমিডিয়েট ইন সায়েন্স (আই.এসসি) করেন। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে দ্বিতীয় পদে রসায়ন বিজ্ঞানে স্নাতক (বি.এসসি অনার্স) হন এবং রসায়নে কানিংহাম মেমোরিয়াল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রসায়নে স্নাতকোত্তর স্নাতক (এমএসসি) সম্পন্ন করেন এবং ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কলেজ থেকে ফলিত গণিতে মাস্টার্স ইন সায়েন্স (এমএসসি) করেন। পরবর্তী বছরগুলিতে তিনি অধ্যাপক মেঘনাদ সাহার অধীন পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি শুরু করেন, কিন্তু ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে তার পরামর্শকের মৃত্যুর পর তিনি পিএইচডি সম্পন্ন করেননি। তিনি অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে তার সম্মানিত শিক্ষক হিসেবে গণ্য করেন।

কর্মজীবন

সমরেন্দ্র মিত্র ছিলেন একজন প্রবীণ শিক্ষার্থী। তিনি গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, পোলট্রি বিজ্ঞান, সংস্কৃত ভাষা, দর্শনশাস্ত্র, ধর্মসাহিত্য প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক আগ্রহের সঙ্গে এই স্ব-শিক্ষিত পণ্ডিত হয়ে উঠেছিলেন। তিনি স্বাধীন ভারতের অনেক গবেষণাকেন্দ্রে  উন্নতি সাধনের জন্য সহায়তা করেন।

সমরেন্দ্র মিত্র ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের পলিট ল্যাবরেটরিতে একটি বায়ুচালিত অতিবেগুনী সংশ্লেষের নকশা ও উন্নয়নের উপর বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (সিএসআইআর, ভারত)-এর অধীনে গবেষক পদার্থবিদ হিসাবে কাজ করেছিলেন। ১৯৪৯-৫০ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যের হাই স্পিড কম্পিউটিং মেশিনের গবেষণায় জন্য তাকে ইউনেস্কো বিশেষ ফেলোশিপ প্রদান করে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটনে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত গবেষণার জন্য কাজ করেন। প্রিন্সটনে ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্সড স্টাডিজে তার বিখ্যাত পদার্থবিদ ও গণিতবিদদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হয়, যেমন আলবার্ট আইনস্টাইন, ভোল্‌ফগাং পাউলি, জন ভন নিউম্যান এবং তিনি নিলস বোররবার্ট ওপেনহাইমারের বক্তৃতাগুলিতে উপস্থিত ছিলেন। অর্থাৎ, প্রিন্সটনে থাকাকালীন তিনি আলবার্ট আইনস্টাইন ও অন্যান্য বিজ্ঞানীদের সঙ্গে অনেক আলোচনা করেছিলেন।

তিনি কলকাতার  ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে (আইএসআই) ১৯৫০ থেকে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিভিন্ন কারিগরি কাজে কাজ করেন, যেমন কারিগরি সহকারী, অধ্যাপক, গবেষণা অধ্যাপক ও পরিচালক। কলকাতার আইএসআই-তে কম্পিউটিং মেশিন এবং ইলেকট্রনিক্স বিভাগ সমরেন্দ্র মিত্র প্রতিষ্ঠা করেন।[২][৩]

তিনি ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে ব্যালিস্টিক ট্রাজেক্টরির গণনা করার জন্য ভারত সরকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন এবং তার পরামর্শ অনুসারে ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের প্রথম বন্দুকের জন্য ফায়ারিং টেবিল সম্পন্ন করা হয়েছিল।

তিনি ১৯৬২-৬৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কমিটি ফর স্পেস রিসার্চের সদস্য ছিলেন। ১৯৬২-৭৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ভারত সরকারের ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের একজন প্রযুক্তিগত উপদেষ্টা ছিলেন।

কম্পিউটারের বিকাশ

১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে দশটি চলরাশি এবং সম্পর্কিত সমস্যাগুলির রৈখিক সমীকরণগুলি সমাধানের জন্য প্রথম ভারতের দেশীয় প্রযুক্তিতে ইলেকট্রনিক এনালগ কম্পিউটার তৈরি করেন সমরেন্দ্র কুমার মিত্র। কম্পিউটিং মেশিন এবং ইলেকট্রনিক্স ল্যাবরেটরিতে আশিষ কুমার মিত্রের তত্ত্বাবধানে এবং পরিচালনায় কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে এটি নির্মিত হয়েছিল। এই কম্পিউটারের দ্বারা গাউস-সাইডেলের সংশোধিত সংস্করণ ব্যবহার করে একযোগে পুনরাবৃত্তি রৈখিক সমীকরণের সমাধান গণনা করা হয়।

পরবর্তীকালে, ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে, কলকাতার আইএসআই এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ সহযোগিতায় ভারতবর্ষের প্রথম দ্বিতীয় প্রজন্মের দেশীয় প্রযুক্তির ডিজিটাল কম্পিউটারের নকশা ও উন্নয়ন শুরু হয়। যৌথ সহযোগিতায় সৃষ্ট হাইড স্পিড ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটারের সাধারণ উদ্দেশ্য, নকশা ও নির্মাণ আইএসআই-এর কম্পিউটিং মেশিন এবং ইলেকট্রনিক্স ল্যাবরেটরির প্রধান, সমরেন্দ্র কুমার মিত্রের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়েছিল। এই ডিজিটাল কম্পিউটারের নাম দেওয়া হয় ISIJU (ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট - যাদবপুর ইউনিভার্সিটি কম্পিউটার)। ISIJU-১ কম্পিউটারটি ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে সফল ভাবে কর্মক্ষম হয়।[৪]

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি