Loading..

প্রকাশনা

১৪ আগস্ট, ২০২০ ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ

রক্তের ঋণ

গত কয়েক বছর জাতির জনককে শাহাদাত বার্ষিকী তথা জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন সুনামগঞ্জের উদ্যোগে 'রক্তের ঋণ' নামে স্মরণিকা প্রকাশিত হয়েছে।এতে মাননীয় মন্ত্রী, মাননীয় সংসদ সদস্য সহ অনেক গুণিজন তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। প্রতিটি সংখ্যাতেই ছোট করে লেখার চেষ্টা করেছি। গত সংখ্যায় বঙ্গবন্ধু প্রেমী গুনি লেখকগণের লেখার সাথে 'রাজনীতির কবি' শিরোনামে আমার লেখা। সুহৃদ পাঠকের নিবেদনে...

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবি  নির্মলেন্দুু গুণ  লিখেছেন-
একটি কবিতা লিখা হবে তাঁর জন্য
অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী
শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জন সমুদ্রের উদ্যান সৈকতে
কখন আসবে কবি ?
হ্যাঁ । তিনি কবি’ ই , রাজনীতির কবি, বিপ্লবের কবি, বাঙ্গালী মুক্তি সংগ্রামের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান যার ৭ মার্চের একটি কবিতা পথ দেখিয়েছিল স্বাধীনতার, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের পরতে পরতে যার অবদান দিবালোকের মত স্পষ্ট , আজীবন বিপ্লবী অথচ মানবতার এক অতুলনীয় দৃষ্টান্তময় ব্যাক্তিত্বের অধিকারী শেখ মুজিব , মুসলিম ছাত্র লীগের মাধ্যমে তাঁর রাজনীতি জীবনের শুরু হলেও কখন উগ্র সাম্প্রদায়িকতা তাঁর মধ্যে দেখা যায় নি । তাঁর জীবন পর্যালোচনা করলে আমরা পরিস্কার দেখি তিনি সব সময় ন্যায়ের পথে থেকে মজলুমের পক্ষে থেকে জালিমের বিরোদ্ধে আন্দোলন করেছেন ।
যার জন্য তাঁকে অনেক বার জেলে যেতে হয়েছে , কিন্তু কোন জেল, জুলুম্‌, হুলীয়া তাঁকে তাঁর আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি । তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের ছাত্র এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনির কর্মচারীদের আন্দোলনে পক্ষাবলম্বন করায় তাঁকে বহিষ্কৃত হতে হয়। জেলে যেতে হয় । ভাষা আন্দোলনের সমর্থনে তিনি জেলে থেকে আমরণ অনশন করেছিলেন। স্কুলের ছাত্রাবস্থায় ছাত্র সমিতি গঠন করে মুষ্টি ভিক্ষা নিয়ে দরিদ্র ছাত্রদের সাহায্য করেন। দেশ ও মানুষকে ভালবাসতেন হৃদয়ের গভীর থেকে। দেশের মানুষের প্রতি তাঁর অগাদ বিশ্বাস আর ভালবাসার প্রমান পাওয়া যায় ৭ মার্চের ভাষনে যখন তিনি দ্ব্যার্থ কন্ঠে বলেন, আমার বুকে গুলি চালাবার চেষ্টা করবানা। সাত কোটি মানুষকে দাবাইয়া রাখতে পারবানা। এই বিশ্বাস আর ভালবাসার প্রতিদান হিসাবেই আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা, স্বাধীন মানচিত্র। একি সাথে আমার মনে হয় তাঁর এই অতিরিক্ত বিশ্বাসই হয়ত কাল হয়েছিল। অসংখ্য সুরভিত ফুলের মধ্যে যে দু-চারটা প্রাণসংহারী কীট থাকতে পারে তা তিনি ভাবেনই নি। সাধারণে ভালবেসেছিলেন বলে রাজকীয় জীবন নয় সাধারণ সাদাসিধে জীবন বেছে নিয়েছিলেন। বঙ্গভবনে না থেকে বাস করতেন ধানমন্ডির সাধারণ ছোট বাড়িটিতে। একজন রাষ্ট্র প্রধান যে ধরনের নিরারাপত্তা বলয়ে থাকার কথা সে তুলনায় সেদিনের ব্যবস্থাটা খুবই নগণ্য ছিল। সু্যোগ সন্ধানী কুচক্রি স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক চক্র যারা মক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিস্মাত করতে চেয়েছে, যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশটাকে পূণর্গঠনের মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়ার জাতির জনকের স্বপ্নকে নস্যাৎ করতে চেয়েছে তারাই ব্যবহার করেছে এ সরলতার সুযোগ। স্বপরিবারে হত্যা করেছে স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেই শোক আজও ভুলেনি বাঙ্গালি, কোন দিন ভুলবে না।
বাঙ্গালি জাতির জন্য বঙ্গবন্ধুর যে অবদান, মাতৃভূমির প্রতি তার যে নির্মোহ প্রেম এর তুলনা হয় না। তার রক্তের ঋণ শোধিবার নয়। কেবল ক্ষুধা, দারিদ্র, শোষণ ও বঞ্চনা মুক্ত উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মানের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব। তবেই হয়ত শান্তি পাবে জাতির জনকের বিদেহী আত্মা। যার জন্য প্রয়োজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক সুনাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা।

লেখকঃ মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন
সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি)
সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি