Loading..

প্রকাশনা

১৯ আগস্ট, ২০২০ ০১:৪৪ অপরাহ্ণ

করনা তবো আগমনে , অবগাহন অচেনা অচল পৃথিবীতে।করনা জয়।
img
Farhana Jahan

সিনিয়র শিক্ষক

করোনা মানে না মানা। ধারে না কোন ধার। আক্রান্ত করে না বলে যে কারো ঘর। দুপুরে সাহেব প্রচন্ড মাথা ব্যথাা আর জ্বর জ্বর ভাব নিয়ে বাসায় আসল। নিত্যদিনের মতো তাহাকেই( করোনা) তাড়ানোর জন্য হাত-মুখ ধুলো। না, তেমন খেতে পারেনি বিছানায় শুয়ে পড়ল। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা... ও উঠল না। ডায়বেটিস পেসেন্ট, শরীরে আরো রোগ আছে। ওর চিন্তা করতে করতে রকিং চেয়ারে বসে আছি। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। প্রায় দশটা নাগাদ আমি অনুভব করলাম আমার মাথা,শরীর কেমন যেন ব্যাথা। আস্তে আস্তে গা গরম জ্বর। হ্যা..বেশি সময় নয় ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই আমি শারীরিক যন্ত্রনায় অস্থির। বিছানা,ব্লাংকেট, প্রচন্ড কাপুনি দিয়ে জ্বর। এ কি হলো...প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় কাতরাচ্ছি।নাপা খেলাম.. কিন্তু সকালে উঠতে পারছি না। কোন মতে ওর জন্য খাবার রেডি করার জন্য উঠলাম কিন্তু পারলাম না। অগত্যা ছোট মেয়েই ভরসা। আমাদের দুজনের সেবা করতে গিয়ে রাতে মেয়েটিও আক্রান্ত। বুঝতে বাকি রইল না...তিনি এসেছেন আমাদের ঘরে। ইতিমধ্যে বড় মেয়ের হাসবেন্ড করোনা ইউনিটের ডাক্তার দ্বারা প্রেসক্রিপশন করে পাঠালো। সে মতে ওষুধও সেবন চলছে। স্টিম ইনহেলার চলছে। টেস্ট করালাম...তিন জনেরই পজিটিভ। কাজের বুয়া ভয়ে চলে গেছে। কি যে কষ্ট.. শারীরিক,মানসিক এবং খাবারের। কিছু খেতে পারছি না। চেনা লোকজন কেমন যেন নিমিষেই পর হয়ে গেল। করোনা তুমি পৃথিবী থেকে আপন মানুষকে পর করে দিলে। মরে গেলে হয়তো আমার নিকট আত্নীয়রাও দেখতে আসবে না। যদি পেখম মেলে উড়ে বেড়াতে পারতাম, তাহলে এই বদ্ধ ঘর থেকে হয়তো একটু ঘুরে ঘুরে পৃথিবীটা দেখতাম। এদিকে আমার হাসবেন্ড ভীষণ অসুস্থ... খেতে পারে না, ঘুমায় না। উঠতেও পারে না। অক্সিজেন লেভেল সবসময় ওঠানামা করে। কি করে ওকে বাঁচাবো। নিজের কথা ভুলে গেলাম। নিজে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না...দম আটকে যায়..বুক ভার। আর এদিকে কল রিসিভ করতেও মন চায় না। শুধু ফোন....এই করো সেই করো... । কাছে কেউ আসে না শুধু উপদেশ। ফলের রস, স্যুপ একচুমুক করে খাওয়াতে হতো এক ঘন্টা পর পর আমার হাসবেন্ডকে। তিন রকম এন্টিবায়োটিক চেইন্জ হলো ... জ্বর থামছে না। ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। কি করব....ভেবে পাচ্ছি না। ডাক্তার বলল আর দুই দিন দেখেন। হাসপাতালে আমি নিতে চাচ্ছি না। ওখানে গেলে ও না খেয়েই মারা যাবে। অক্সিমিটারই ভরসা। কিছুক্ষণ পরপর ওটার ব্যবহার চলছে। সারাক্ষণ চিন্তা... আমি কি একা হয়ে যাব। আজ রাজবাড়ীতে দুজন করোনা রোগী মারা গেছে। আমি ধৈর্য ধরে সেবা করে যাচ্ছি। নিজেও দুর্বল, মেয়েটাও দুর্বল। আল্লাহ ভরসা....... একদিন আর জ্বর আসলো না। পরেরদিন আবার জ্বর...ঘাবড়ে গেলাম। নাহ্...কি করি। তিন দিন পর জ্বর গেল... আর আসলো না। চলছে সুস্থ হওয়ার সংগ্রাম। এক-দেড় মাস লেগে যাবে হয়তো.....আল্লাহ এ যাত্রায় রক্ষা করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনে.. তুমি পাশে আছো......

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি