Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

২৭ আগস্ট, ২০২০ ০৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ

কিভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়

কিভাবে_রোগ_প্রতিরোধ_ক্ষমতা_বাড়ানো_যায়


কোভিড-১৯ থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়া যায় এখন সারাবিশ্বে একই প্রশ্ন। কারণ তার কোন ভেক্সিন বা সুচিকিৎসা এখনো আবিষ্কার হয় নি।তাই দেখা যাচ্ছে  WHO ও এখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিচ্ছে। 


বর্তমানে সারাবিশ্বে দেখা যাচ্ছে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল তাদের বেশিরভাগ মানুষ এই কোভিড-১৯ এ সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।আবার যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তারা অনেকেই মারা যাচ্ছে।এই পরিস্থিতিতে যেকোন সময় যেকেউ আক্রান্ত হতে পারে।তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। বিভিন্ন জার্নাল বা বই থেকে কালকেশন করে কিছু তথ্য আপনাদের কাছে উপস্থাপন করছি যা আপনার রোগ প্রতিরোধ বাড়াবে।


রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর প্রথম শর্ত হচ্ছে আতংকিত বা বেশী ভয় পাওয়া যাবে না।কারণ অতিরিক্ত ভয়ে মানুষের রোগ প্রতিরোধ সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে।


যথাযথভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা, মেডিটেশন করা, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং পর্যাপ্ত ঘুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর মূলমন্ত্র।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাধনম ঘেরবাইয়িস বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খান, যা আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।’


পুষ্টিবিদ ফারজানা আহমেদ বলেন, ‘রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এমন পুষ্টি উপাদান সম্পন্ন খাবার খাওয়া সুস্থ থাকার অন্যতম উপায়। কারণ, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তার কাজ করার জন্য নিয়মিত পুষ্টির উপর নির্ভর করে।


দেখে নিন কী খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে:


#ডিমপ্রোটিন: 


প্রোটিন শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা বাড়ায়, রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার শক্তি জোগায়। এই মৌসুমে শরীর সুস্থ রাখতে উন্নত মানের প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে হবে। ডিম, মাছ, মুরগির মাংস, ডাল থেকে পেতে পারেন প্রোটিন। তবে লাল মাংস এড়িয়ে যাবেন। ভালো প্রোটিনের যে উপকার, লাল মাংসে তা পাওয়া যায় না। প্রোটিনের এই ডোজ হচ্ছে শরীরের ওজনের প্রতি কেজির জন্য এক গ্রাম করে। অর্থাৎ, কারও ওজন যদি ৬৮ কেজি হয়, তবে দৈনিক তাঁর ৬৮ থেকে ৭০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন দরকার।


#লেবুভিটামিন সি : 


শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি দারুণ কার্যকর। ভিটামিন সি মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট। ভিটামিন সি-ত্বক, দাঁত ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে হৃদ্‌রোগ, ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। এই ভিটামিন পরিচিত ফল এবং বিভিন্ন শাকসবজি যেমন: আমলকী, লেবু, কমলালেবু, পেয়ারা, জাম্বুরা, আমড়া, পেয়ারা, পেঁপে, কাঁচা মরিচ ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে থাকে। তবে যেহেতু আমাদের শরীর ভিটামিন সি জমা করে রাখতে পারে না, তাই প্রতিদিন গ্রহণ করা প্রয়োজন। পূর্ণবয়স্ক পুরুষের দৈনিক ৯০ মিলিগ্রাম এবং নারীর ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দরকার।


#ভিটামিন বি১২-যুক্ত খাবারভিটামিন বি১২:


শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও রোগ থেকে দ্রুত সেরে উঠতে ভিটামিন বি১২ দারুণ কার্যকর। বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাবার ও ডিমে ভিটামিন বি১২ পাওয়া যায়। তবে যাঁরা নিরামিষাশী, তাঁরা শরীরে ভিটামিন বি১২-এর অভাব পূরণে চিকিৎসকের পরামর্শমতো সম্পূরক নিতে পারেন।


#কালিজিরার পুষ্টিগুণঃ


কালিজিরাতে প্রায় শতাধিক পুষ্টি ও উপকারী উপাদান আছে। কালিজিরা খাদ্যাভাসের ফলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কালিজিরা ফুলের মধু উৎকৃষ্ট মধু হিসেবে বিশ্বব্যাপী বিবেচিত, কালোজিরার তেল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। বর্তমানে কালিজিরা ক্যাপসুলও বাজারে পাওয়া যায়। এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক ক্যারোটিন ও শক্তিশালী হরমোন, প্রস্রাব বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক। এর প্রধান উপাদানের মধ্যে আমিষ ২১, শতাংশ, শর্করা ৩৮ শতাংশ, স্নেহ বা ভেষজ তেল ও চর্বি ৩৫ শতাংশ। এছাড়াও ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ আছে। প্রতি গ্রাম কালিজিরা পুষ্টি উপাদান হলো-প্রোটিন ২০৮ মাইক্রোগ্রাম; ভিটামিন বি১ ১৫ মাইক্রোগ্রাম; নিয়াসিন ৫৭ মাইক্রোগ্রাম; ক্যালসিয়াম ১.৮৫ মাইক্রোগ্রাম; আয়রন ১০৫ মাইক্রোগ্রাম; ফসফরাস ৫.২৬ মিলিগ্রাম; কপার ১৮ মাইক্রোগ্রাম; জিংক ৬০ মাইক্রোগ্রাম; ফোলাসিন ৬১০ আইউ। কালিজিরার অন্যতম উপাদানের মধ্যে আরও আছে নাইজেলোন, থাইমোকিনোন ও স্থায়ী তেল। পাশাপাশি কালিজিরার তেলে আছে লিনোলিক এসিড, অলিক এসিড, ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি২, নিয়াসিন ও ভিটামিন-সি ছাড়াও জীবাণুনাশক বিভিন্ন উপাদান যা হাজারও উপকার করে।করা হয় তাহলো শুকনো বীজ ও বীজ থেকে পাওয়া তেল। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা কালিজিরাকে একটি অব্যর্থ রোগ নিরাময়ের উপকরণ হিসেবে বিশ্বাস করে। হাদিসে আছে কালিজিরা মৃত্যু ব্যতীত অন্য সব রোগ নিরাময় করে। এজন্য কালিজিরাকে সব রোগের ওষুধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।


#মধু:


মধু নিয়ে পবিএ কুরআনের সুরা নাহল (৬৯)এ রয়েছে ‘আর মৌমাছির পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানি নির্গত হয়,যা মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার।’ 


হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)থেকে বর্ণিত,রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,কুরআন হলো যেকোন আত্মিক রোগের জন্য আর মধু হলো দৈহিক রোগের জন্য।–ইবনে মাজাহ।

আর এখন বিজ্ঞানে আসি,এই মধুতে মোটামুটি সব ধরনের উপাদান আছে যেগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই মধু সবসময় ব্যবহার করা হত কারণ এটি কোন কাঁটা অংশ দিলেও ইনফেকশন রোধ হয় এবং কাঁটা তাড়াতাড়ি শুকায়।


রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা যায়,মধুতে রয়েছে প্রায় ৮১ ধরনের উপাদন।


মধুতে বিভিন্ন উপাদান(প্রতি ১০০গ্রামে)

ক্যালরি      :৩০৪ কি.ক্যা.

প্রেটিন       :০.৩০গ্রাম

ফ্যাট        :০.০০গ্রাম

পানি        :১৭.১০গ্রাম

বি২        :০.০৩৮মি.গ্রাম.

বি৩        :০.১২১মি.গ্রাম.

বি৫        :০.০৬৮মি.গ্রাম.

বি৬        :০.০২৪মিগ্রা.

বি৯        :২মা.মি.গ্রাম 

ভিটামিন সি   :০.৫মি.গ্রা.

ক্যালসিয়াম    :৬ মি.গ্রা.

আয়রন      :০.৪২মি.গ্রা.

ম্যাগনাসিয়াম   :২মি.গ্রা:

পটাশিয়াম     :০.৫২ মি.গ্রা. 

সোডিয়াম     :৪ মি.গ্রা.

জিঙ্ক         :০.২২মি.গ্রা.

ফসফরাস : ৪ মি.গ্রা. 


আসুন আতংকিত না হয়ে সতর্ক হই এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করি।আর বেশি বেশি সৃষ্টার নিকট প্রার্থনা করতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে কারণ যাই হোক এই কোভিড-১৯ আমাদের পাপের ফসল যা ধারনা করা হচ্ছে মানুষ দ্বারাই সৃষ্ট।


বেনজীর আহমেদ 

সহকারী শিক্ষক

ফয়জাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর (রসায়ন,শাবিপ্রবি)